পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
হাইপ্যাশিয়া ছিলেন গ্রীক সাম্রাজ্যের তাঁর সমসাময়িক জ্ঞান পিপাসুদের মাঝে সবচেয়ে বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। গণিত, দর্শন এবং জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর দখল তাঁকে পুরুষগরিষ্ঠ বিদ্বানদের মাঝে অপ্রতিদ্বন্দী এক বিদূষী নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে । দূর দুরান্ত থেকে তাঁর ছাত্র হবার জন্য অনেকেই আসতেন । আকেজান্দ্রিয়া নামক অতুলনীয় এক পাঠাগারের শেষ অভিভাবক থিওন এর কন্যা ছিলেন তিনি । শেখাতেন প্লেটো এবং এরিস্টটলের রেখে যাওয়া যুক্তি, বিজ্ঞান্মনস্ক চিন্তা ।
নিজে পেগান হলেও তাঁর ছাত্রদের মাঝে প্রচুর খ্রিস্টান ছিলেন। এই মহিয়সী নারীর কথা প্রথম শুনি আমার অত্যন্ত প্রতিভাবান ও সম্মানিত অংক শিক্ষকের কাছে । তাঁর মৃত্যু হয়েছিলো কি ভাবে জানেন ?
বাড়ি ফেরার পথে রথ থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে চার্চের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো । তারপর উলঙ্গ করে জীবন্ত চামড়া উঠিয়ে নেওয়া হয় , তারপর পুড়ে ফেলা হয় তাঁকে আগুনে । চিন্তা করুন কি ভয়াবহ পাশবিক এই হত্যা ।
কারন নিয়ে বিতর্ক আছে । শাসক ও চার্চের যাযকের মাঝে পথের কাঁটা হয়ে উঠলে খ্রিস্টানদের হাতে এভাবেই নিহত হন তিনি। উইকিতে কিংবা ইতিহাসে এই সব পাবেন আপনারা । কিন্তু আমার শিক্ষকের বলা একটা কথা কোন্দিন ভুলব না । তিনি বলেছিলেন,
" রাজনৈতিক কারনে অনেকেই অনেক ভাবে নির্যাতনের শিকার হন।
কিন্তু সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং অতুলনীয় বিদ্বান এই নারীকে প্রকাশ্যে হত্যা করা সম্ভব হয়েছিলো একটি কারনে। তিনি ছিলেন নারী । পুরুষ বিদ্বানরা সহ্য করতে পারতেন না একজন নারী হয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া হাইপ্যাশিয়াকে । সহ্য করতে পারতেন না তাঁর খ্যাতি ও প্রতিভাকে । হাইপ্যাশিয়া নিজেকে পুরুষের সমান মনে করতেন ও নির্দ্বিধায় পুরুষ পন্ডিতদের যুক্তিতর্কে কিংবা আলোচনায় যোগ দিতেন ।
হয়ত তাদের হারিয়েও দিতেন । এই প্রতিভা আর সাহস , সহজ স্বচ্ছন্দ্য বিচরনই তার কাল হয়েছিলো । "
এর ভিতর ঘোমটা আর জুজু আসলো কোথা থেকে ?
হাইপ্যাশিয়া পুরুষ পন্ডিতদের ইগোর ঘোমটা খসিয়ে দিতে পারতেন তাঁর জ্ঞান আর প্রতিভা দিয়ে -- তাই পন্ডিতদের কাছে তিনি " বিপদ" ।
পেগান হিসেবে খ্রিস্ট ধর্মের বহু প্রোপাগান্ডা , তুক তাক , মিস্টিক ব্যাপার স্যাপার আর নৃশংসতার আধিপত্য ( যেইটা আজ আর কেউ পড়েও না , স্বীকারও করে না , সব যীশু প্রেমে দিওয়ানা) কে তিনি খন্ডন করে চলেছিলেন যুক্তি, বিজ্ঞান , গবেষনা শিক্ষা দিয়ে --- তাই তিনি ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে "বিপদ" হয়েছিলেন ।
দশ মন তেল পুড়িয়ে যেটা বলতে চাইছি -- ব্লগার মেঘকে দেখে সেই ইতিহাস মনে পড়ে গেলো ।
এই বেয়াদপ ব্লগার প্রতিভায় বাড়া আর জিহবায় ভীষন কড়া । লেখেন ও সেই রকম । আর ধম্ম , রাজনীতি নিয়ে হুজুগের , অন্ধত্বের সমালোচনা করতে ছাড়েন না। মুসলমান হয়েও তিনি মানবিক । রাজনীতি সচেতন হয়েও তিনি নির্দলীয় ।
জুলুমের বিরুদ্ধে সদা প্রতিবাদী ।
যারা তাঁর শ্লীল অশ্লীল নিয়ে গেম খেলার চেষ্টা করছেন - তাঁরা খুব ভালো করেই জানেন -- মেঘ অনেকের চক্ষুশূল মন্তব্য কিংবা লেখার কারনে নয় --- কোমল মুখে রূঢ় সত্য ধারনের জন্য । সাত চড়ে রাটি কাড়বে না , খালি রান্নার রেসিপি আর সৌন্দর্য্য চর্চা নিয়ে পোস্ট দেবে , মাঝে মাঝে প্রেমের কবিতা লিখবে আর ধর্ম , রাজনীতি , জ্ঞান , বিজ্ঞান , ন্যায় -অন্যায় ঠিক করার মত পৌরুষিক কাজ গুলো সমাজের অভিভাবকদের হাতে ছেড়ে দিয়ে লক্ষ্মী হয়ে সংসার করবে -- তেমন সুশীল তো নয় !
কোরান এর মত একটা বইকে যারা রামছাগলের ঘাস বানিয়ে ছেড়েছে , (খাও আর জাবর কাটো , খবরদার প্রশ্ন কোর না) তাদেরকে মনে করিয়ে দেই , " নিজেরাই না বলেন কোরান রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ এর ? তাইলে কে কি বললো সেইটা নিয়া এত গেলো গেলো সব গেলো বলে চিৎকার করেন কেন? যাঁর বানী তাঁরে রক্ষা করতে দেন। "
আর , জামাত শিবির ? ধুর , এইটা নিয়ে আবার কি বলবো ! পিশাচের দল। এদের বিচার করে তবে শান্তি ।
প্রিয় মেঘ , কিছু বলবো কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন , বললাম। আপনে লিখতে থাকেন । রথে চড়েছেন - দেখতাসে দেখুক । যেইখানে সেইখানে অনুরোধ পাঠায়ে আপনারে আর নিজেরে ছোট করতে ইচ্ছা করলো না ।
মানুষ হইলে আর মস্তিষ্ক (ব্রেইন) কাজ করলে বোধদয় হবে ।
না থাকলে , বলে আর কি বুঝাবো ?
আপনারে শ্রদ্ধা । ঘড়ি থেকে ছিপ বানাইতে কতদিন নেয় , দেখি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।