...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
অনেক্ষন অপেক্ষার পর দীপ্ত যখন সিমাকে তার প্রেমের প্রস্তাবটা দিতে যাবে তখনই তার বাথরুম পেয়ে গেল। ছোট বাথরুম না, একদম বড় বাথরুম। তারা দু’জন বসে আছে ধানমন্ডি লেকের পাশে। আশেপাশে বাথরুম করার জন্য তেমন কোন জায়গা দীপ্ত খুজে পেলো না। এমনিতে দীপ্তর এই সব ব্যাপারে তেমন কোন সমস্যা হয় না।
তার মান সম্মান জ্ঞান খুবই টনটনে। স্কুল,কলেজ কিংবা ভার্সিটিতে কখনোই সে ক্লাশের সময় সবার সামনে দিয়ে বাথরুমে যাবার কথা স্যারদের বলতে পারে নি। খুব কষ্ট টষ্ট করে চেপে রাখতো। কিন্তু আজ মনে হয় আর পারা যাবে না। খুব দ্রুত গত কয়েকদিনে কি কি খেয়েছে তা মনে করার চেষ্টা করলো।
হোটেল টোটেলে তো তেমন খায় না। তবে অফিসের নীচে মাঝে মাঝে সিঙগারা খেতে যায় কলিগদের সাথে। তাহলে কি ঐ সিঙ্গারাই তার কাল হলো?কত আশা,কত সাহস করে আজ সে সিমাকে নিয়ে এসেছে ধানমন্ডি লেকে। আজ যেভাবেই হোক তার ভালোবাসার কথা বলে দিতে হবে। কি কি বলবে, কিভাবে বলবে সব কিছু কত অসংখ্যবার রিহার্সেল করে এসেছে।
সব কিছুর বারোটা বেজে গেলো। মানসিক আর শারিরীক কষ্ট মনে চেপে সে হাসি হাসি মুখে সিমার দিকে তাকালো।
-কি ছাগলের মতো হাসছো কেন?
ধুর মেয়েরা যে কেন এত নির্দয় হয়। কত কষ্ট করে বাথরুম চেপে রেখে সে একটা রোমান্টিক হাসি দিলো, আর মেয়েটা কিনা বলছে সে ছাগলের মতো হাসছে। এদের কি হৃদয় বস্তুটা নেই?
-এমনি হাসছি।
-এমনি এমনি কারা হাসে জানো? পাগলে। তুমি কি পাগল?
দীপ্ত আবার তার সেই ছাগল মার্কা হাসিটা দিলো। যেন নিজে পাগল প্রমানিত হয়ে খুবই কৃতার্থ বোধ করছে। এমনিতে সে খুব স্মার্ট ছেলে। অফিস কলিগ বা বন্ধুদের আড্ডায় সে কোন কথা মাটিতে পড়তে দেয় না।
সাথে সাথে জবাব দেয়। খুব স্মার্টলিই দেয়। কিন্তু এই মেয়েটার কাছে আসলে তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। সেই তেজী,স্মার্ট দীপ্ত যেন কোথায় হারিয়ে যায়।
-আবার হাসছো, ছাগলের মতো?শোন আজ একটা বিশেষ দিন।
অন্তত আজ কোন প্রকার উদ্ভট কাজ করে আমার মেজাজটা গরম করে দিও না।
আজ কিসের বিশেষ দিন?অনেক চেষ্টা করেও দীপ্ত মনে করতে পারলো না। আজ তো সিমার জন্মদিন না। বা তার কোন আত্মীয়ের ও জন্মদিন না। আজ কি কোন জাতীয় দিবস? তাও তো না।
আসার সময় পেপারটা দেখে আসা উচিত ছিলো। আজ সে সিমাকে অফার করবে, এই টেনশনে সকালে পেপারটাও পড়া হয় নি। আজ কিসের বিশেষ দিন মনে করতে গিয়ে তলপেটে আবারো প্রবল চাপ টের পেলো সে। নাহ মনে হচ্ছে এখানেই সে বাথরুম করে দিবে। তাহলেই তো আজ একটা বিশেষ দিন হয়ে যাবে।
পৃথিবীতে মনে হয় কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার সামনে বাথরুম করে দেয় নি। গিনেজবুকে নাম উঠে যাবার কথা।
-আজ কিসের বিশেষ দিন?
-জনাব, সেটা আপনার না জানলেও চলবে।
আজ কিসের দিন সেটা না জানলে কেন চলবে?ধুর ছাই চিন্তা ভাবনা কিছুই করতে পারছে না দীপ্ত। আবারো সে এদিক ওদিক তাকিয়ে বাথরুম করার জায়গা খুজলো।
-কি এদিক ওদিক তাকাচ্ছো কেন?চলো আজ তোমাকে একটা স্পেসাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো।
রেস্টুরেন্টের কথা শুনে বেশ হালকা হালকা লাগলো দীপ্তর। খাবারের জন্য না। রেস্টুরেন্টে নিশ্চয়ই টয়লেট থাকবে। সে উঠে দাড়ালো।
সিমার হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে বললো, চলো, তাড়াতাড়ি চলো।
রিক্সায় করে রেষ্টুরেন্টে আসার সময় কি যে কষ্ট হলো দীপ্তর। প্রতিটা ঝাকুনিতেই মনে হচ্ছিলো এবার বুঝি আর রাখা গেলো না। আর ব্যাটা হারামজাদা রিক্সাওয়ালা সব ভাঙ্গা ভাঙ্গা আর উচু নিচু রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো তাদের। মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে দীপ্ত সিমার সাথে সুন্দর সুন্দর(!) কথা চালিয়ে যাচ্ছিলো।
রেস্টুরেন্ট টা খুব সুন্দর। যদিও সেটা দেখার মতো অবস্থা তখন আর দীপ্তর নেই। এক কোনে আলো আধারি একটা জায়গায় তারা বসলো। দীপ্ত যথারীতি এদিক ওদিক তাকিয়ে টয়লেট টা কোন দিকে হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সিমার সামনে মুখ লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞেস করছে না।
-শোন দীপ্ত, তুমি কি মনে কর যে মেয়েরা খুব বোকা? তারা কিছুই বোঝে না?
হায় খোদা! কি বলে?তবে কি সিমা বুঝে ফেলেছে যে তার বাথরুম চেপেছে?দীপ্ত দর দর করে ঘামতে থাকে। নাকি বুঝে ফেলেছে যে আজ সে সিমাকে অফার করবে?এখন কি করবে সিমা? তাকে ধাম করে একটা চড় মারবে?নাকি এই চরম করুন অবস্থায় সোজা বলে দিবে যে সে দীপ্তকে ভালোবাসে না। বুকের মাঝে খা খা করে উঠে দীপ্তর। একই সাথে বাড়ে তলপেটের চাপ।
-শোন দীপ্ত, তুমি অনেক দিন ধরেই আমাকে পছন্দ করো।
মুখে না বললেও আমি বুঝি। মেয়েরা এত বোকা না। আমি ঠিক বলেছি কিনা? তুমি আমাকে পছন্দ করো কিনা?
দীপ্ত করুণ ভাবে মাথা নেড়ে সায় দিলো।
-আমি তোমাকে অনেকদিন থেকে চিনি। তুমি যে খুব ভালো একটা ছেলে এটা কি তুমি জানো?
দীপ্ত এখন আর কিছুই চিন্তা করতে পারছে না।
অবস্যম্ভাবী একটা ছ্যাকা খাওয়ার জন্য সে প্রস্তুত হবার চেষ্টা করে। তলপেটের চাপটা আবারো তাকে তীব্রভাবে মনে করিয়ে দেয়, ছ্যাকা খাও যাই খাও এখনই তোমাকে টয়লেটে যেতে হবে।
-আমি ঠিক করেছি তোমার মতো খুব খুব ভালো একটা ছেলের সাথে বাকিটা জীবন একসাথে কাটিয়ে দিবো। তুমি থাকবে না দীপ্ত আমার সাথে? ধরবে না আমার হাত?
খুব আবেগী ভাবে বলে সিমা।
দীপ্তর মাথায় তখন কিছুই ঢুকছে না।
প্রচন্ড চাপ পড়েছে তলপেটে। তার সাথে আবেগ টাবেগ মিলে ভয়াবহ অবস্থা তার। শেষে আর না পেরে সে সিমাকে বলেই বসলো ‘সিমা, আমি একটু টয়লেটে যাবো’।
বি:দ্র: লেখার আগে ভাবছিলাম খুব জটিল একটা প্রেমের গল্প লিখবো। শেষ পর্যন্ত কি দাড়ালো তা নিজেও বুঝতে পারছি না।
এটা যদি প্রেমের গল্প না হয় তাহলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।