পরিদৃশ্যমান সত্তা
বৃষ্টিতে জল ভিজেছিল আর তোমাকে কালিগঞ্জ বাজার পৌঁছে দিয়েছিল একগাছা পাল- তোলা নদী। অংকুরুদ্গমের অদম্য বাসনা নিয়ে তোমাকে স্পর্শ করে বৃষ্টির বিচি, স্তনাগ্রে লুটিয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা তীর, তীরন্দাজ। সেই থেকে হয়তো বা তোমার জলযাত্রা শুরু হয়েছিল। স্পষ্ট মনে পড়ে, ঐ দিন বক্ষব্যাপি লাফিয়ে উঠেছিল গোরস্থানের সাদা সাদা বেতবুটা, হরপ্পা নদী। তুমি নগ্ন হয়েছিলে, মেঘের চাদরে হয়তো তুমি লজ্জা নিবারণ করেছিলে।
সেই লাবণ্য-পুরাণ
আমি জানি, আদমের বহুপ্রস্থ আদিম তুমি। চরণ স্পর্শ করে যায় মেঘ আর কালিদাস। নখরে বাতাস কাটলে অতঃপর তুমি হাত ভিজালে পোয়াতি জলে। হলুদিয়া ঝিঙেফুলেরা দেখল, তোমার দুই হাতে হলহল করছে জয়তুনের বাগান আর গন্ধমের গরম।
ঐ উঠোনে তুমি দীর্ঘ দাঁড়িয়েছিলে।
বুনিয়াদি ভীটার সৌরভ
ঐ উঠোনে তুমি দীর্ঘ দাঁড়িয়েছিলে। তোমায় ভালবেসে ঐ মেঘমালা কোনো এক ধর্মদা গ্রামে নেমে এসেছিল আর নিরন্তর ভিজিয়েছিল তুলসিপত্র ও প্রার্থনার পিঁড়ি।
মেঘে মেঘে ঘাট-পার গলে যায়। যখন একে একে সবগুলো সান বাঁধানো সিঁড়ি খসে পড়ে, তুমি মুখ ফুটে প্রস্ফূটন কর- ইস!
আবার সোনার কইগুলো জল ছেড়ে যখন ডাঙায় উঠে আসে, কানকো দিয়ে চরণে চিমটি কেটে যায়, ঈষৎ লজ্জিত তুমি- মুখ ফুটে প্রস্ফূটন কর- ইস!
বহু বর্ষ পরে, কবুতর ডানা আর খুদের খোয়াবে নিদ্রা ভেঙ্গে যায়। মনে পড়ে তোমার উঠান-ভরা রোদ আর শিয়ালের বিয়া... ঝরে-পড়া চুরুক আমটির কথা, সোনালী গোদার স্বাদ আজও তোমার স্নায়ূ-মূলে লেগে আছে।
... আর ঐ যে হরতকি বন, বরই, কামরাঙা- বাগান হতে কুচভরে শুধুই কি বেদনা আর বৃষ্টি কুড়িয়েছিলে! আজও তো রাত জাগ! কুদাল ভরে এলাচির শহর খুঁড়ে আন। আজও ভরা যৌবন নিয়ে তোমার বন্দরে ভিড়ে বক্ষ-খোলা
এক লাল সওয়ারী নাও।
২.
ঐ ভূ-পৃষ্টের কথা আমার মনে নেই। মনে পড়ে, বেলোরুশিয়ার বৃষ্টিতে একদা একজোড়া ফর্সা উরু ভিজেছিল। আমি নিদ্রিত ছিলাম।
সিথান ভরা দীর্ঘ ঘুমের স্মৃতি ব্যতিরেকে আমার কোনও বৃষ্টিভেজা করমচা বৃক্ষ কিংবা আমের মুকুর ছিল না। তুমি বললে-
কালো নদীটি পাড়ি দিয়ে দিরারাই গ্রামে সূর্য উঠিয়াছে। পিতার কবরে লকলক করে হেইছা ঘাস ও পল্লী বিদ্যুৎ। বাড়ির পেছনে, পইরদাদার কবর হতে রমণীরা শুকনা পুরল পেড়ে আনে। অতঃপর নরম ছোলায় তারা পায়ের পাতা মাঞ্জন করে।
পৃথিবীতে পূনঃর্বার বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে ফর্সা উরু আর পিতার কবর ভিজে যায়।
ভরা আসমান নীচে নেমে আসে। আমার স্মৃতিতে লাল লাল তরকারীর বাগান সহ মঁ মঁ করে তৃষ্ণার তুকার। কাটা খঞ্জরের কথা মনে পড়ে- সমূহ শিকারের স্মৃতি... তুষের আগুনে মনে পড়ে যায়- মেঘনা নদীর পুরাতন মাঝিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন আমিও তো ছিলাম।
আমি বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম...
----------------------------------------------------------------------------------
কাচের ডালপালা এবং বাকরুদ্ধ সোনার কইতর
আমি তার সঙ্গে কথা বলি এবং পাখি ধরি। আমি তার সঙ্গে কথা বলি এবং আমার চৌদিকে উন্মোচিত হয় সু-প্রভাতের সেমিজ অথবা সেমিজের মতো ভোর।
২.
তার পিঠে সপ্তম আরশের ছায়া পড়ে আছে; সোনার রফরফ ভেসে ওঠে গভীর লোমকূপে। কোনো ভূমে চুম্বন করি না আমি। ঠোঁট-জোড়া ভেসে যায় কীর্তনখোলার অগাদ ভাটীতে।
৩.
জানি
যখন সে বীজ-পালংকে শুয়েছিল, তার সিথানে মঁ মঁ করছিল চন্দনের ছায়া। ঐ পালংক হায়! নুহের নৌকায় সে আমায় তুলেছিল কী না সে কথা এখন মনে নেই। সে ঈশ্বর, ঈশ্বরী অথবা দেবী... মৃত্যুবরণের আগে হয়তো বা কঁকিয়েছি-
ঐ তাতের শাড়ি আজ বড় তৃষ্ণাজাগানিয়া...
হয়তোবা বলেছি- তোমার অধরে বুনে যাব ঘন-দেশ, উষাসের চারা।
হৃৎপিন্ড তার জলের পরত...
সারা মানব মন্ডলীর একই হৃৎপিন্ড অনুভূত হলে ব্লেডের আগায় ঝুলে থাকে পঞ্চ পৃথিবীর চাঁদ, শহর ও সখিনা আফ্রোদিতি। তখন শান্ত বাতাসে মানুষের কলিজা ও কলাপাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায়।
রজনী হয়তো বা গভীর হয় পৃথিবীর কোথাও না কোথাও। কালাঞ্জিবেলা গোয়াল ঘরে জন্ম নেয় খয়েরী বাছুর। একদা বলেছিলে তুমি- ঐ গোয়াল-ঘর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিম কলাভবন।
৪.
শরমিন্দা ঈশ্বর তার বেদনার্ত মুখ ঢেকে রাখবার পর ঈশ্বরীর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য-অন্ধকারে গন্দমের বাগিচা দূলে দূলে ওঠে। সে ঈশ্বর অথবা ভাদিমির জয়নুদ্দীনের দু’টি হাত বক্ষচূড়ার সু-উচ্চ মিনারে হযরত বিলালের স্বরে আযান উচ্চারণ করলে ঈশ্বরী তার বেদীমূল সহ কঁকিয়ে উঠেন।
ঈশ্বরী কঁকিয়ে উঠেন- জয়নুদ্দীনের তৃষ্ণাগুলো হেসে ওঠে
ঈশ্বরী কঁকিয়ে উঠেন- জন্মগুলো জন্মলাভ করে
জয়নুদ্দীনের ডর করে।
ঈশ্বরীর ডর করে না। নিতম্ব-ঘনিষ্ট দুই খন্ড পদ্মার জল মহাশূণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে নাদান বালক জয়নুদ্দীন আল্লা আল্লা বলে নূহের নৌকার তালাশ করে। বত্রিশ স্কয়ারফিট বেডরুমে মহাপ্লাবন আসে। ডরালোক জয়নুদ্দীন ঈশ্বরীর নিতম্বের পাটাতনে আশ্রয় ভিক্ষা চাইলে মুচকি হাসেন ঈশ্বরী।
তার চুলগুলো তখন দজলা-ফোরাতের মত ইয়েমেন শহরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নদী, নক্ষত্র, ফুল, পাখি ভাললাগে না জয়নুদ্দীনের; ঈশ্বরী ভাললাগে। লোকমকূপে ছড়িয়ে থাকা রোদের দানা হরিণ শাবকের মত চেটে খায় জয়নুদ্দীন। তার সারা মুখে তৈজস সুখ লেপ্টে থাকে।
৫.
পয়ত্রিশ বছর বেঁচে আছি প্রবল পাপে।
কেন যে আত্মহনন করিনি বিপুল পূণ্যে!
... আর তার সঙ্গে হয়তো কোনাদিন কথা হবে না আমার। আমার কোলে দীর্ঘ শুয়ে থাকে বাকরুদ্ধ সন্তান আর লোহাটে শব্দরাজি। আমার অন্তিম যানাজায় সোনার মৌমাছি আর ক্রিমিপাল ব্যতিরেকে মানব মন্ডলীর কেউ কোনোদিন শরিক হবে না; সখিনা আফ্রোদিতি ও না...
----------------------------------------------------------------------------------
জলজ
১.
অন্ধকার ছিল নরম ও নিস্তেজ। মৃত অক্ষরের ওপর মাছিদের ভঁ ভঁ শব্দে ক্রমশঃ ভেঙ্গে পড়ছিল পিঁপড়ের হাড়। এ দিবস তথা বৃক্ষরাজি ছারখার হলে অক্ষরগুলো উড়ে যেতে চায় মাছির উর্ধ্বতন।
শূণ্যস্থান তখন ক্রমদীর্ঘ, তখন করোটীর পাশে পড়ে থাকা এক টুকরো আলো নিয়ে বালক্রীড়া করে সন্তানেরা। কেউ কেউ মাছি তাড়াতে যায়। বিবিধ বর্ণে তারা দিগি¦দিগ মিশে যাবার সময় আমাদের কোলাহলের অধিক ভঁ ভঁ শব্দ শুনা যায়।
এ আলো আঁশটে এবং ছেড়া ছেড়া। বৃক্ষের বানান লিখে যেতে যদিও কেউ কেউ নদী পাড়ি দেয়, নিদ্রা ভেঙ্গে গেলে হাড়ের হরফ হয়ে তারাও বয়োপ্রাপ্ত হয়।
তারা মৃত্যুর নামে পূনঃর্বার জেগে উঠতে চায় অথবা মাছি বিতাড়ন- স্মৃতি সাকুল্যে ভুলে যেত চায়।
২.
পৃথিবীতে ঠান্ডা আসে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, আসমান, জমিন ও জয়তুনের বাগান ঠান্ডা। কলিজা-খোলা কীর্তনখোলায় কেউ আর মাছিগুলো তাড়াতে আসে না। দিগ্বিদিক ছড়িয়ে থাকে জলের মাংস।
----------------------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------------
সাহিত্যের ছোটকাগজ অগ্রবীজ ও ধীস্বর-এর সৌজন্যে
----------------------------------------------------------------------------------
মিলটনরহমান বলেছেন: গেওর্গে আব্বাস বলেছেন- নিশ্চিন্তপুর-------------------------------------------------------------------
...আর নিশ্চিন্তপুরে দাঁড়িয়ে-থাকা বটবৃক্ষের পেটের ভেতরে শুয়ে আছে পাঁচ-পাঁচটি হলুদ স্বর্প...
------------------------------------------------------------------------------
( 'নিশ্চিন্তপুর' একটি নাম একটি শব্দ-এর চিন্তা-বিস্তারি নন্দন কথা বলতে একটি মুক্ত গদ্য হতে পারে। এ গদ্য নির্মাণে নিমন্ত্রণ লাভণ্য প্রভা এবং নির্ঝর নৈশব্দ্য'র । অন্তত কুড়ি লাইন চাই নিশ্চিন্তপুর'র বিষয়ক। বেশি হলে সুবিচারই হবে। )------রচনাটি বিশেষ করে মিলটনরহমান-এর অনুভূতির সন্মানার্থে সংযোজিত হল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।