ভাসমান
অবশেষে আত্মহত্যা করলেন মহাশূন্য অভিযাত্রী
__মুআম্মার আল-গাদ্দাফী
মহা শূন্যে ঘুড়তে ঘুড়তে মানুষের প্রায় মাথা ঘুড়ানি ব্যামো বাঁধানোর দশা। মানুষ পৌঁছে গেল চাঁদের বুকে। মানুষ কিংবা তার পাঠানো যন্ত্র প্রায় সবকটা সৌর গ্রহে উপগ্রহে গিয়ে তার ছবি তুলে আনল। মহা শূন্যের দখল নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামল পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো। নিজেদের নামে নাম করণ করতে লাগল মহা শূন্যের উদঘাটিত অঞ্চলগুলোর।
চাঁদের সম্পত্তি্তবিশেষত তার পানি-সম্পদ্ত এর ভাগ বাটোওয়ারা নিয়ে পরাশক্তি গুলো পরস্পর মাথা ফাটাফাটি করার দশা। অবশেষে এত সব আয়োজন ব্যর্থ করে দিয়ে, সৌরবিজ্ঞানীদের যাবতীয় অনুমান, স্বপ্নের মুখে চুন-কালি মেখে মহাশূন্য অভিযাত্রীরা জানালেন, মহাশূন্যের আর কোথাও জীবনের চিহ্ন পর্যন্ত নেই, চাঁদের বুকে তাদের কাঙ্খিত 'পানি সম্পদ' মেলে নি। বিজ্ঞানদম্ভী মানুষ হতাশ, ব্যর্থ মনরথ হয়ে, মাথা ঘুড়া ও বমির ব্যামো বাঁধিয়ে আবার ফিরে এল পৃথিবীর বুকে। আবার প্রমাণ হল সেই শাশ্মত সত্যটা : খাদ্য ও পানি ছাড়া প্রাণ-উদ্ভিদ বিকশিত হতে পারে না, মানুষের জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে রুটি-দুধ-খেজুর-মাংস-পানি এবং এই মহা জগতের এক মাত্র যে গ্রহটি মানুষকে তা দান করতে পারে তার নাম 'পৃথিবী'। একমাত্র পৃথিবীর আবরণ থেকে তৈরি হয় জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন.. তাই মহাশূন্যের দীর্ঘ অভিযান শেষে মানুষ আবার ফিরে এল পৃথিবীর বুকে।
মহাশূন্য অভিযাত্রী দলের প্রধান তার মহাশূন্য যানের পোষাক খুলে ফেললেন। পৃথিবীতে বসবাস উপযোগী 'সাধারণ' পোষাক পরলেন... এখন তিনি প্রায় অবসর। তার হাতে কোনো কাজ নেই। মহাশূন্য সংস্থার সাথে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া মহাশূন্য অভিযানটা ব্যর্থ হওয়ায় তারা বেশ হতাশ।
আপাতত তারা আর নতুন প্রজেক্টে হাত দিচ্ছে না। তাই তিনি ভাবছেন তাকে নতুন কোনো কাজের সন্ধান করতে হবে। কিন্তু তিনি কি কাজ করতে পারেন ? তিনি কি পৃথিবীতে প্রচলিত কোন কাজের উপযোগী ? তিনি কি এই নগরের কোনো কাজ করতে পারবেন ?.. তার কিছুটা ভয় করতে লাগল। অবশেষে কাজের সন্ধানে বের হয়ে তার সেই আশংকা সত্যি প্রমাণিত হল। এখানে প্রচলিত কোনো কাজই তার জানা নেই : সূতোর, রাজ মিস্ত্রি, সেনিটারী, লোহার কাজ.. তিনি কোনো কাজই জানেন না..এমনকি ইট নির্মাণ কারখানা বা বিউটি পার্লারেও তার কাজ মিলল না।
তিনি এদের কিছুই জানে না। তিনি ড্রইং শিখেন নি, গান গাওয়া জানেন না বা বুনন কর্ম জানেন না.. কারণ তিনি বিজ্ঞানের যে এলাকায় বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার সাথে এই সবের কোনো সম্পর্ক নেই। অবশেষে হতাশ তিনি বুঝতে পারলেন এই শিল্প নগরিতে প্রচলিত কোনো পেশাতেই তার দক্ষতা নেই। এখানে তার কোনো কাজ মিলার আশা নেই। তাই তিনি গ্রামে চলে গেলেন।
আশা ছিল হয়ত তিনি গ্রামে নিজের এবং পরিবারের অন্ন জোগাতে সক্ষম এমন কোনো কাজ পেয়ে যাবেন। কাজের সন্ধানে তিনি একটা কৃষি ফার্মে গেলেন। জমির মালিক কৃষক তার আগ্রহ দেখে খুব খুশী হল। আনন্দিত কণ্ঠে বুড়ো কৃষক তার কাছে জানতে চাইল : 'জমি কি তোমাকে টানে বাবা ?' (মানে বুড়ো জানতে চেয়েছিল সে কৃষি কাজ ভালবাসে না-কি)। 'পৃথিবী' 'আকর্ষণ' এই শব্দগুলো সৌর বিজ্ঞানী মহাশূন্য অভিযাত্রী দলের প্রধানের খুব পরিচিত।
তিনি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
তিনি বললেন : আমরা যত উপরে ওঠতে থাকি ততই পৃথিবীর আকর্ষণ কমে যেতে থাকে এবং ক্রমশ আমাদের ওজন লোপ পেতে থাকে। এক সময় ওজনহীনতার সীমারেখায় প্রবেশ করার পর আমরা সম্পূর্ণভাবে পৃথিবীর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলি এবং ধীরে ধীরে অন্য কোনো গ্রহের আকর্ষণ বোধ করতে থাকি এবং ক্রমশ আমাদের সত্বায় আবার ওজন ফিরে আসতে থাকে... ব্যাপারটা এমন আর কি !! আমার মনে হয় আমি আপনার প্রশ্নটার সন্তোষজনক উত্তর দিতে পেরেছি .. তাই না ?.. বুড়ো কৃষক মাথা নাড়লেন্ত তিনি কিছুই বুঝেন নি। মহাশূন্য অভিযাত্রী দলের সাবেক অধিনায়ক ভাবলেন বুড়ো তাকে পরীক্ষা করছে। তাই সাধারণ এক কৃষকের খামারে কাজ পাওয়ার আশায় মহাশূন্য অভিযাত্রী দলের সাবেক অধিনায়ক ঝেড়ে কষে তার জ্ঞান জাহির করতে লাগলেন : বৃহস্পতি গ্রহের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় প্রায় ১৩২০ গুণ বড়.. পৃথিবীর ১২ বর্ষের সমান বৃহস্পতির এক বর্ষ.. বৃহস্পতি পৃথিবীকে তার পেটের এক কোনো পুরে রাখতে পারবে.. ৭৪৪ পৃথিবীর সমান শনি গ্রহ, কিন্তু তারপরও শনির ওজন পৃথিবীর ওজন থেকে মাত্র ৯৫ গুণ বেশী.. চাঁদের পঞ্চাশ গুণ ব্যাসের সমান পৃথিবীর ব্যাস, পৃথিবীর আয়তন চাঁদের আয়তন থেকে ৮০ গুণ বেশি, পৃথিবীর আকর্ষণ ক্ষমতা চাঁদের আকর্ষণ ক্ষমতার ছয় গুণ.. পৃথিবী সূর্য থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, সেকেন্ডে ৩০০ কিলোমিটার বেগে ধাবিত সৌর কিরণের পৃথিবীতে পৌঁছতে সময় লাগে আট মিনিট, পৃথিবীর আয়তন সূর্য আয়তন থেকে প্রায় ১৩০৩৮০০ গুণ কম, পৃথিবীর পুরুত্বও সূর্যের পুরুত্ব থেকে ৩০ গুণ কম, সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ বুধ তারপর শুক্র তারপর পৃথিবী, তার মানে সূর্যের নিকটবর্তিতায় পৃথিবীর অবস্থান তৃতীয় স্থানে... শুক্র পৃথিবী থেকে ৪২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৪০০ হাজার কিলোমিটার, তুমি যদি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে চলা কোনো কার নিয়ে যাত্রা কর তাহলে পৃথিবী থেকে তোমার চাঁদে পৌঁছতে ১৪৬ দিন লাগবে, কিন্তু তোমার যদি কোনো কার না থেকে, পায়ে হেঁটে চাঁদে যেতে চাও তাহলে তুমি আট বছর এক শ' দিন পর চাঁদে গিয়ে পৌঁছবে... ইত্যাদি ইত্যাদি...
দীর্ঘ লেকচার দিয়ে অবশেষে থামলেন মহাশূন্য অভিযাত্রী দলের সাবেক অধিনায়ক।
বিনীত স্বরে বললেন : আমার বিশ্বাস আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি.. আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমি পৃথিবী.. জমি বিশেষজ্ঞ !! .. জমিন .. জমিন শব্দটা শুনে বুড়ো কৃষক সম্বিত ফিরে পেল। তার কাছে কাজ চাইতে আসা এই অদ্ভুত লোকটার গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাত্রা.. আট বছর এক শ' দিবস হেঁটে চাঁদে গমন তারপর আবার পৃথিবীতে ফিরে আসা.. এই সব দেখে শুনে বেচারা বুড়োর মুখটা সেই যে হা হয়ে ছিল 'জমিন' শব্দটা পরম যত্নে তা বন্ধ করে দিল। মহাশূন্য অভিযাত্রী দলের অধিনায়কের ঝড়ো লেকচার শুনে বুড়োর ইতিমধ্যে মাথা ঘুড়তে শুরু করেছে। সে বলল : বাবা আমি আমার ক্ষেতের চারা গাছগুলা কত দূর পর পর বসাইতে হইব সেটা মোটামুটি বুঝতে পারি, কিন্তু পৃথিবী থিকা সুরুজ কত দূরে সেইটা জাই না আমি কি করমু ? আমার জমিনের মাপটাই মাঝে মাঝে আমার মাথায় গোলমাল ধরাইয়া দেয়.. চাঁন সুরুজ, বৃহস্পতির আয়তন না কি সেটা জাইনা আমার কি ফয়দা ?.. তুমি বাজান অন্য কোথাও দেখ .. আমারে মাফ কইরা দেও .. আমার বাবা মাথা ঘুড়তাছে।
হতাশ মহাশূন্য বিজ্ঞানী ফিরে গেলেন এবং পৃথিবীতে অন্নসংস্থান করার মত কোনো কাজ না পেয়ে তিনি অবশেষে চরম হতাশার সাথে আত্মহত্যা করলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।