গণতন্ত্র হল এমন এক অস্তিত্বহীন মদ, যাতে সবাই মাতাল, কিন্তু কেউ কখনো পান করে নি।
এদেশের মানুষের ভাগ্যের সাথে মোহভঙ্গ লেপ্টে আছে যেমন চাঁদের সাথে কলঙ্ক, আলুর সাথে খোসা, রাজনীতির সাথে দুর্নীতি। যখনি এসেছে আশা-মোহ তখনি তার সাথে এসেছে মোহভঙ্গ, যেমন মজনুর সাথে লাইলী। তবে পার্থক্য হল মজনুর সাথে লাইলীর মিল হয় নি, মোহের সাথে ভঙ্গে'র কখনো ছাড়াছাড়ি হয় নি।
মোহের সাথে ভঙ্গের এ পিরীত শুরু হয়েছে বৃটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা পাবার পর হতে।
অনেক আশা, প্রত্যাশা নিয়ে জন্ম হয়েছিল দুটি জমজ রাষ্ট্রের, পাকিস্তান ও ভারত। আমরা বেছে নিলাম পাকিস্তান। রক্তচোষা বৃটিশদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে এদেশের মানুষ ভাবল এবার বুঝি মু্ক্তি, স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। মোহভঙ্গের ইতিহাস শুরু এখানেই।
এই মোহ ছিল স্বাধীনতা'র মোহ। এটা মোহভঙ্গের প্রথম পর্ব। গরম তেলের কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পতন। প্রায় সিকি শতাব্দীর পাকিস্তানী অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ আর অসম বন্টন সমৃদ্ধ মোহভঙ্গে'র প্রথম পর্ব শেষে এল স্বাধীনতা, স্বদেশী শাসন। নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন, অনেক মোহ নিয়ে এল স্বাধীনতা।
এবারও মোহভঙ্গ হতে সময় লাগল না। স্বাধীনতার সুফল জনগনের হাতে পৌছুল না। সামরিক শাসনে জর্জরিত মানুষ মোহচ্ছন্ন হল গণতন্ত্রের আশায়। এল নির্বচন ভিত্তিক গণতান্ত্রীক সরকার। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হল না।
গণতন্ত্রের সুফল পেল না জনগন। বরন্ঞ বহুপরিবারীয় রাজতন্ত্রের জালে জড়িয়ে গেল দেশ। হল মোহভঙ্গ। মোহভঙ্গের এই তৃতীয় পর্বে দেশবাসী সংসার করল বিএনপি ও আওয়ামীলীগের সাথে। বিএনপিতে অসন্তুষ্ট হয়ে জনগন ক্ষমতায় আনল আওয়ামীলীগকে।
আওয়ামীলীগের একুশ বছরের পিপাসা মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব দেশবাসী নতুন আশায় বুক বাধল। আওয়ামীলীগে বিরক্ত জনগন নতুন মোহে আবিষ্ট হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আনল বিএনপি-কে। বিএনপি'র নেতৃত্বে চারদলীয় জোট গত আওয়ামী শাসনকে পাল্লা দিয়ে শুরু করল দুর্নীতি। জনগনের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল গোজামিল দিয়েও হল না। মোহভঙ্গের চতুর্থ পর্ব মন্ঞায়িত হল এখানে।
সরকারের সীমা ছাড়ানো লজ্জাহীন দুর্নীতি ও দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটের ক্ষমতার রাক্ষুসে ক্ষিদে'র প্রতিফলে নিয়তি সৃষ্টি করল বর্তমান সরকার। নিয়তি ছাড়া আর কে? এই সরকারকে নিয়ে ছিল জনগনের অনেক প্রত্যাশা। এখানেও ছিল ভাগ্যোন্নয়নের মোহ। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মূদ্রাস্ফীতি কমে যাবে, একটা টেকসই উন্নয়নের ধারা শুরু হবে এখান থেকে। বছর খানেক পার হতে না হতেই আবার মোহভঙ্গের স্বাদ।
এট ৫ম পর্ব।
এবার দেশবাসী ৬ষ্ঠ বারের মত মোহাচ্ছন্ন হবার প্রস্ততি ইতোমধ্যে সেরে ফেলেছে। এ মোহ রাজনৈতিক সরকারের মোহ। 'জনগনের সরকার' আসবে, ক্ষমতা যাবে জনগনের হাতে, নির্বচিত প্রতিনিধিদের হাতে। জরুরী অবস্থা উঠে যাবে, মূল্যস্ফীতি কমবে, উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হবে মহাসমারোহে।
কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি এ মোহ ভঙ্গ হতে সময় নেবে মাত্র কয়েক মাস। তারপর? তারপর তো সেই পুরোনো কাসুন্দি। হরতাল, ভাংচুর, মিসিল, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, দুর্নীতি, সংসদ সদস্যদের খিস্তি-খেউর, খাওয়ার রাজনীতি, জনগনের চোখে ঠুলি। আবার নতুন করে আশায় বুক বাধবে মানুষ। নতুন দিনের স্বপ্নে মোহাচ্ছন্ন হবে হতভাগারা।
প্রাসঙ্গিকতা থাকায় পুনরায় পোস্ট করা হল। আগের বার প্রথম পাতায় প্রবেশাধিকার না থাকায় লেখাটি পড়েছে খুব কম লোক। উল্লেখ্য এর মাঝে জরুরী আইন প্রত্যাহার করা হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের আগামী পাঁচ বছরের সকল অপকর্মের দায়ের ভাগীদার হতে রাজি নই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।