জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...
এ বছর ১৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি সংহতি সমাবেশ হয়-- জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা যৌন নির্যাতন বিরোধী যে আন্দোলন করছে তার সমর্থনে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রী অভিযোগ তুলেছিল তাদের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে, অভিযোগের সারমর্ম ছিল অনাকাঙ্খিত আচরন, শিক্ষক হিসাবে ছাত্রীদের প্রতি যৌন হয়রানীর। সাম ইনের ব্লগারদের সেই সংহতি সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহবান জানিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন শওকত হোসেন মাসুম আমার একজন প্রিয় ব্লগার।
শওকত হোসেন মাসুম শুধু আমারই নয়, তার মুভি বিষয়ক পোষ্ট এবং তার তীক্ষ্ণ রসবোধের জন্য অনেকের কাছেই বেশ জনপ্রিয়। ব্লগে তার মজার পোষ্ট পড়তে আসা সহব্লগারদের সীমানা ছাড়িয়ে তার বন্ধুদের তালিকা অনেক লম্বা এটা বেশ অনুমান করতে পারি।
একজন সামাজিক মানুষ হিসাবে, একজন বন্ধুবৎশল মানুষ হিসাবে সংগত কারনেই শওকত হোসেন মাসুম তার বন্ধুদের ভালমন্দ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, তাদের বিপদে এগিয়ে আসেন।
শওকত হোসেন মাসুম এর যারা বন্ধু, তাদের বন্ধুভাগ্য নিয়ে আমরা কেবল ঈর্ষাই করতে পারি। ঈর্ষা করতে পারি তার বন্ধু অমি রহমান পিয়ালকেও। যৌবন জ্বালা(যাত্রা)য় লিচিং নিয়ে ব্যাস্ত বিডি অবসেসড পিয়াল যখন “ওয়ান্টেড টু বি ওয়ান অব দেম। “, ভারতীয় সাইট থেকে নারীর বে-আব্রু ছবি নিয়ে (ভারতীয় সাইট কেন কে জানে! পাকি সাইট থেকে হলেইতো বেশি ভাল হতো, পাকি মেয়েদের উপর যুদ্ধাপরাধের পাপ কিছুটা উসুল হতো!!!) তার শিষ্য ভাগ্নেদের সেবাদানে ব্যস্ত, বন্ধু বৎসল মাসুমের কাছে পিয়াল তখন নিছক “......আর পর্ণ নাইটে (সাইটে) একেবারেই যায় না এমন কে আছে?...” ধরনের দুষ্টু ছেলে।
মাসুম বলছেন তিনি পিয়ালের ব্লগে ঘুরেছেন এবং তার মনে হয়েছে যুদ্ধাপরাধী বা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এই ব্লগে আসলে লেখার তেমন কিছু বাকি নেই। অর্থাৎ পিয়াল যুদ্ধাপরাধের ইতিহাস লিখার কাজ শেষ করে এনেছেন--তো বাকী কি আছে? কেন এখনও যুদ্ধাপরাধীদের আদালতের কাঠগড়ায় তোলা যাচ্ছে না। বাকী আছে শুধু বোধ করি শক্ত করে ব্যানার টাঙ্গানো। এতদিনে যে যথেষ্ঠ পরিমান ব্যনার টাঙ্গানো হয় নাই এবং টাঙ্গালেও তা যে যথেষ্ট শক্ত টান টান করে টাঙ্গানো ছিল না, সেই স্থির সিদ্ধান্তে আমরা উপনীত হয়ে পড়ি।
ইতোমধ্যে মাসুমও তার সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়ে দেন- “এই পিয়ালের সঙ্গে আমার থাকতে ইচ্ছা হয়।
”
তা মাসুমের বন্ধুর সাথে মাসুম থাকতেই পারেন। আমরাও অতঃপর পিয়ালকে একটা বিপ্লবী স্যালুট মেরে প্রায় ষাট হাজার হিটের স্বপ্ন পুরনের এক স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকি। আমরা পিয়ালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রবল তৃষ্ণা, আর প্যাশন অনুভব করে স্থম্ভিত হয়ে পড়ি । পিয়ালের ফ্যামিলি সাইট যৌবনযাত্রা সফর করে এসে আমরা আবিস্কার করি-- আমাদের পরিবার সৃষ্টির আকাঙ্খা থেকে আমরা আর সন্তান জন্ম দেই না, সন্তান আমাদের কাছে মানবিক সম্পর্ক আর ভালবাসার ফসল নয়, সন্তান জন্ম দেই আমাদের যৌনতার তাড়নায়। তা না হলে...... দেখেন কিভাবে প্রতি ৪ মিনিটে এই দেশে একটা করে নতুন বাচ্চা পয়দা হচ্ছে ।
জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়ছে এই ছোট্ট দেশটা। হাঃ হাঃ হাঃ……
তো এই যৌনতা আমরা কোথায় পাই? কেন? যাবতীয় এডাল্ট সাইট থেকে। এডাল্ট সাইট কি জিনিষ? যেখানে স্বামী কানাডা প্রবাসী হলে সেই প্রোষিতভতৃকা গৃহবধু আমাদের তার সম্মতি জানিয়ে ক্যামেরার সামনে কাপড় খোলা শুরু করেন!! যাতে করে পরবর্তীকালে আমরা সেই ভিডিওর ইধার কা মাল উধার করতে পারি।
আর এরপর আমরা দরজার ফুটায় চোখ দিয়া মেয়েদের পোষাক বদলানোর দৃশ্য দেখি। গ্লোবাল জমানায় বঙ্গ নারীর প্রতি আমাদের আন্তরিক অবসেসন দেখাই।
আমাদের উত্থান রহিতে নতুন শক্তির জোয়ার ওঠে-- পিপিং টম হিসাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা পয়দা করে ফেলি।
আমাদের সন্তানরা এখন আর আমাদের ইচ্ছা হয়ে মনের মাঝারে বাস করে না। ভালবাসা আর প্রেমে সিক্ত হয়ে তাদের জন্ম হয় না।
মাসুমের বন্ধু পিয়ালের প্যাশন নিয়ে আমাদের হয়ত মুগ্ধতার আরও কিছু কাল কেটে যেত—আর পিয়ালের মতো এই যুদ্ধ যেহেতু আমাদের যার যার জায়গা থেকে করতে হবে। আর পিয়াল যেহেতু পর্নোসাইট ছাড়া অসাচ্ছন্দ্য ভোগ করে-(কি আর করা) ফলে যে যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেখান থেকেই।
যুদ্ধ চলবেই।
তো সে যুদ্ধ হয়তো চলতোও। কিন্ত সমস্যা দেখা দিল যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানি অধ্যাপক জেমস ম্যাস এর বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করায়। মাসুম আমাদের জানাচ্ছেন ড. ম্যাস তার ছাত্রীদের স্পর্শ করতেন, চুমুও খেয়েছেন। একজন বলেছিলেন যে ড. ম্যাস তার স্তন চেপে ধরেছিলেন।
উমম। তাই নাকি? আমরা খানিক নড়েচড়ে বসি। এইবার আমরা সত্যি সত্যি ডঃ ম্যাসের এডাল্ট আচরনে এবং চরম স্বাভাবিক এডাল্ট পুলক লাভে বিপুল ভাবে শিহরিত হয়ে উঠি। যে কোন স্তন তো চেপে ধরার জন্যই সৃষ্টি।
কিন্ত সম্ভবতঃ ড. ম্যাসের ছাত্রীদের মধ্যে বাঙ্গালী কেউ ছিলেন না, ফলে আমাদের আশ্রম মামাও অবসেসিত হয়ে ড. ম্যাসের সেই স্তন চেপে ধরার দৃশ্য যৌবন জ্বালা (যাত্রা)য় দেখাতে আগ্রহ বোধ করেন নি।
আফসোস, আমরাও যৌন পুলক লাভের সেই দৃশ্য পিপিং টমের মতো দেখার সু্যোগ থেকে বঞ্চিত হলাম। অন্যায় আর সুশীলপনা কাকে বলে!!! আমাদের বয়স্ক প্রাপ্ত হলে আমরা কেন স্তন চেপে ধরার দৃশ্য দেখতে পারবনা? যত সব সুবিধাবাদী আতেঁল! আর সব চেয়ে বড় কথা “......আর (জীবনে)স্তন চেপে ধরতে একেবারেই যায় না এমন কে আছে?...”
কিন্ত মাসুম আমাদের হতবাক করে দিয়ে জানাচ্ছেন ড. ম্যাস নাকি উচিত কাজ করেন নাই। আমরা জানলাম ...এর পরে শুরু হয় তদন্ত। কলেজের প্রফেশনাল এথিকস কমিটির সিনিয়র সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট কাউনসিলার তদন্ত শেষে পাঁচদিন ব্যাপী শুনানীর আয়োজন করেন। শুনানী শেষে রায় দেওয়া হয় যে অধ্যাপক জেমস ম্যাস যারা করেছেন তা যথাযথ ছিল না এবং তা যৌন হয়রানির মধ্যেই পড়ে।
......
যাঃ বাওবা, আমরা ভীষন হতাশ হয়ে পড়ি!! কলেজের প্রফেশনাল এথিকস কমিটির সিনিয়র সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট কাউনসিলার দেখছি আমাদের চে বড় সুশীল। ভারি ভদ্দরনোক আসচেন। ঠাঁ ঠাঁ পড়ুক তাদের মাথায়। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ষ্ট্যান্ডার্ড কি শুধু শুধু নিচে নামতেছে? গিয়ে দ্যাখ কতগুলান ছাগুতে ওই য়্যুনিভারসিটি চালাইতেছে।
অতঃপর আমরা বিরস বদনে এই রুপ একটা সিদ্ধান্ত নিয়া গুম হইয়া বইসা থাকি।
তবে মাসুম আমাদের ব্যাখা দিচ্ছেন ......তবে ড. ম্যাসের (পড়তে হবে অমি রহমান পিয়ালের) বক্তব্য ছিল অন্যরকম। তিনি বলেছিলেন তিনি মূলত ক্লাশের পরিবেশ সহজ করতেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশতেন। (পড়তে হবে ষাট হাজার হিটে ব্যানার টাঙ্গানোর জন্যই তিনি) এর পেছনে অন্য কিছু ছিল না। ড. ম্যাস কর্ণেলের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে ১৫ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিউইয়র্ক কোর্টে ১৯৯৫ সালে। আদালত ১৯৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেই রায় বহাল রেখেছিলেন।
অর্থাৎ এত বড় একজন শিক্ষাবিদ হয়েও তিনি শেষ পর্যন্ত আইনী লড়াইতেও হেরে যান। একজন অতি জনপ্রিয় শিকের ছিল এই পরিণতি। এর পর পর্যায়ক্রমে ড. ম্যাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরে যান। কেননা তাকে বলে দেওয়া হয়েছিল এ ধরণের ঘটনা আরও ঘটলে চাকরি চলে যাবে......।
ইত্যাদি ইত্যাদি, বড়ই বোরিং সে কাহিনী—আমরা অতঃপর হাই ওঠা চেপে মাসুমের পুরা পোষ্টটাই পড়ে ফেলি।
......ইন্টারনেট ঘাটতে গিয়ে পেলাম এই কাহিনী। বিশ্বের সেরা ২০টি যৌন হয়রানির কাহিনীতে ড. ম্যাসের অবস্থান ১৫তম। এই তথ্য ঘাটতে হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌণ হয়রানির অভিযোগ থেকে শিক্ষক ছানোয়ার হোসেনের রেহাই পাওয়া নিয়ে। সাক্ষী ছাড়া ধর্ষনও আসলে এখানে আইনসঙ্গত।
এখন সময় এসেছে আসলে যৌন হয়রানি নিয়ে নীতিমালা গঠনের।
রাসেল, কৌশিক, ভাস্করদা এবং আরিফ জেবতিক ভাই পোস্ট দিয়েছেন। সমর্থন করে আমার এই পোস্ট দেওয়া। নীতিমালা গঠন এবং তা দেখভাল করার জন্য বাইরের মতো কোনো এথিকস কমিটি বা কাউন্সিলও থাকা প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই সচেতন হই। আমার বোন এখন পড়ে, কদিন পর আমার মেয়েও পড়বে।
এভাবেও কি ভেবে দেখবেন সবাই......?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।