পথ বাঁধতে চেয়েছিল বন্ধনহীন গ্রন্থি...
[গতকালকের দিনলিপি...নেট লাইন খারাপ ছিল, তাই আজ দিলাম...]
আজকে সকাল থেকে দিনটা তেমন খারাপ যায়নাই...বলা যায়, তুলনামূলক ভাবে ভালই গেছে...সকালে এক পুরান অরকূট বান্ধবীর সাথে দেখা, আরো দেখা হল কিছু পরিচিতদের সাথে, তাদের সাথে এগল্প সেগল্প করে ঘড়ি বাবাজী কোনদিক দিয়ে ৩টা বাজালো তা টেরও পাওয়া যায়নাই...এই প্রথম শুধু ছদ্মনামে চিনি এরকম অনেকের সাথে একসাথে দেখা হল...মজাও পেলাম কম না...যে সারারাত জেগেজেগে 'হাদুমপাদুম' করে তার জন্য একটা বান্ধবপূর্ণ দিন কোনওদিক দিয়েই খারাপ বলা চলেনা..এ অযাচিত আনন্দে উদ্বেলিত আমি ঠিকই করে ফেল্লাম...যে নাহ! এদিনটা আমি ভালই কাটাবো...এই ভাবনাই ছিল আমার কাল...[এখন মনে হচ্ছে, কি দরকার ছিল অত ফাল পাড়ার?...দিন যেমন যাচ্ছিল তেমন যেতে দিতাম, আগ বাড়ায়ে 'সে' ভালভাবে যাচ্ছে না খারাপ ভাবে তা specify করে দেয়ার কি দরকার ছিল আমার?, যত্তসব!!!] সকালে বাইরে যাওয়া নিয়ে আম্মুর সাথেও খিটিমিটি লাগেনাই, আড্ডাও ভালই দেয়া হল, বাসায় এসেও কোনও ঝগড়া করতে হয়নাই আম্মুর সাথে, নানাভাইকেও সুস্থই লাগল আগের চেয়ে, আমার ভাইয়ের কোচিং এর পরীক্ষা খারাপ হয়নাই, আরে বাবা, আমি কিকরে বুঝব যে রাতের বেলা এমন একটা ক্যাচাল লাগবে যে আমার মনে হবে যে আজ যখন একচোখ বন্ধ রেখে প্লাজা এ.আর. এর সামনে দিয়ে রোজকার মত রাস্তা পার হচ্ছিলাম গাধার বাচ্চা সিএঞ্জি বা গাড়ির ড্রাইভার তার সিএঞ্জি বা গাড়ি দিয়ে আমাকে মোলায়েম একটা ধাক্কা দিলনা কেন...!!! সত্যি বলছি, আমার কোনও ধারনাই ছিলনা যে রাতটা এত খারাপ কাটবে, নাহলে বোকার মত আমি এটা ভাবতাম না যে আরেকটা দিন গেল আমার 'চোখের কল' খোলা ছাড়া! এতক্ষণ ধরে প্রাণপন চেষ্টা করে গেলাম যে না আর আধাঘন্টা, আর ২৫ মিনিট...কিন্তু হলনা... কয়েক ফোঁটা হতচ্ছাড়া চোখের পানি বের হয়েই গেল... বাসায় এসে তানিম ভাইয়ার প্রতিদিনের প্যানপ্যানানি থেকে বাঁচতে 'saw 1' দেখতে বসলাম, দেখে উঠে মেজাজটা এত খারাপ হল যে[ আমি নিজের ছাড়া অন্যের রক্তারক্তি পছন্দ করিনা!] ভাবলাম আরেকটা ভাল সিনেমা দেখতেই হবে, নাহলে কে কার পা হ্যাকস দিয়ে কেটে ফেলল, কে কাকে কাঁটা তারে পেঁচায় মোরব্বা বানায় ফেলল এইসব হাবিজাবি আমার ভোরের ঘুমটাকে নষ্ট করবে...তাই দেখলাম পরশপাথর, দেখে আরেকবার মুগ্ধ হলাম! সেই সাদাকালোর যুগে, যখন ভাল ক্যামেরা বা স্পেশাল ইফেক্টের অভাব, অভিনেতাদের অঙ্গভঙ্গিই ভরসা কোনও বিশেষ দৃশ্যের জন্য, তখন সত্যজিতের মত একজন পরিচালক না থাকলে আমি হয়তোবা আজ বিদেশী কোনও ছবি দেখার কথাই ভাবতাম... বাংলা ছবি দেখার আগ্রহটা আমার আর হতনা...তারপরে খানিক এদিক সেদিক ঘুরে রাতের খাওয়া খেয়েই[দুপুরে মুরগী ভাজী খেয়ে কেমন যেন লাগছিল...খালি মনে হচ্ছিল পেটের ভিতরে ঐটা 'কক কক' করে উঠবে!] লাগল ক্যাঁচাল...আমার হাতের পাঁচ হল ৫জন মানুষ যারা আমার মনের বিক্ষিপ্ততাকে কমাতে পারে...১। আমার ছেলেবন্ধু - ওকে কিছু বলা যাবেনা, আমার পরিবারের কারও সাথে যেহেতু ক্যাঁচাল হয়েছে, সেহেতু তা যদি আমি ওকে জানাই তাহলে সেই ব্যাক্তির সম্পর্কে ওর যে ধারণা পাল্টাবে, তা পরবর্তিতে পজিটিভ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি না![ওকে আমি ভালভাবেই চিনি, আমার পরিবারের সাথে ওর ভবিষ্যত সংশ্লিষ্টতা চিন্তা করে এটা করা উচিত না...] ২। আদিবা - আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু...কিন্তু ও এখন মালয়েসিয়ায় বেরাতে গেছে, তাই ও ও বাদ... ৩। রকি ভাইয়া - ফোন করেছিলাম, কিন্তু ভাইয়া ঘুমাচ্ছে, তো তিনিও বাদ, ৪। দোলা - বুয়েটের পরীক্ষার তারিখ দেয়া হয়ে গেছে, ওর এখন বই আর টোস্ট বিস্কিট, এইটুকুই জীবন! ৫। তানিম ভাইয়া - এই ২২ তারিখে ভাইয়ার জিআরই পরীক্ষা তাই উনিও বাদ...তাইলে বাকি থাকল কে?...আর কে?...ম্যায় অর মেরি তানহায়ী!!!যত্তসব আজাইরা!!! মাত্র গিয়ে ছোটখালার পাঠানো হার্শ্লের শেষ বারটার কিয়দংশ[যা আমি সুখে দুখে হাসিতে কান্নায় একটু করে ভেঙ্গে খাই!] ভেঙ্গে মুখে দিয়ে আসলাম, কিন্তু হায়রে সেলুকাস! কি বিচিত্র এ দেশ! ধুর...বলা উচিত 'হায়রে সামুব্লগ! কি বিচিত্র এ মন!' এত প্রিয় তক্কেত আমার, খেয়ে মনে হল গরুর মাংস খাচ্ছি![ঈদের পরে মাংস খেতে খেতে অসহ্য অবস্থা!] ভাব্লাম খানিকখন ছবি আঁকি। ৩টা A4 ছেড়ার পর ক্ষান্ত দিলাম, বুঝা গেল মন খারাপ অবস্থায় আমি অন্তত দ্যা ভিঞ্চির রোলপ্লে করতে পারবোনা...শাড়িটাতে আর হাতই দিলাম না...আবার রেগে মেগে আমার এতদিনের হ্যান্ড পেইন্ট করা সাধের শাড়িটা, আমি আবার ছিড়েই না ফেলি...ছবি আঁকার কথা মনে হওয়ায় মেজাজ আরও খারাপ হল...স্কেচবুক শেষ, আরেকটা কিনতে হবে, সোনালী ফেব্রিক পেইন্ট শেষ-কিনতে হবে, আমার এক প্রিয় দাদা পুরাপুরি ভাবে আমেরিকায় চলে যাবে তাকে আমি ভাল কিছু উপহার দিতে চাই-কিনতে হবে, জিম্যাটের বই কিনে একজনের কাছে রাখা সেটাও আনা হচ্ছেনা, কারন সেই এক ও অদ্বিতীয়-'পাত্তি নাই', আজকাল বিয়ের দাওয়াতে শাড়িই পরি[বড় হয়ে গেছি, আজকাল বিয়ের দাওয়াত মানে খালা মামার বিয়ে না, বোন বা বান্ধবীর বিয়ে... আপচুস!], তার জন্য কয়েকটা ম্যাচিং হাই হীল কিনতে হবে, ডেটে যদি যাই তখন বেচারা আমার ছেলে বন্ধুকে কোরবানী করতেও আমি পারিনা, ও ও বেচারা টিউশনী করে, আর সামনে একটা ক্যামেরার লেন্স কিনবে সেজন্য টাকা জমাচ্ছে, তাই দেখা করার কথা ভুলেও উচ্চারন করিনা আমি[অথচ ওকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে...], অনেকদিন বই কিনিনা আর এদিকে আস্ত একটা বইমেলা হচ্ছে সেখানেও যেতে ইচ্ছা হয় কিন্তু যাচ্ছিনা, কারন গেলে দুঃখ হবে যে এত বই এর একটাও কিনতে পারবোনা...[এতশত দুঃখ আমি কই রাখি?] এমন না যে আমার কাছে একেবারে টাকা নাই...আছে কয়েক হাজার টাকা, আম্মুর কাছে রাখা, ক্যামেরা কিনার জন্য...ক্যামেরা কেনার কথা ছিল সামনের মাসে...কিন্তু এখানেও টাকা কম পড়েছে হাজার সাতেক...এখন ঐ কষ্টে জমানো টাকায় হাত দিলে ওটাকা শেষ হতে দেরী হবেনা...তার মানে আমার ক্যামেরার স্বপ্নের জলাঞ্জলী ঐখানেই...তার পর দিতে হবে জিম্যাট বা আইইলটিএস...সেটার জন্য আবার আরেক দফা টাকা... উফফ! এর চেয়ে আমার কান্নাই ভাল ছিল[], এখন টাকার চিন্তায় আমার চোখের পানিও ডবল হয়ে যাচ্ছে......কতদিন হয়ে গেল একটা কাজ পাচ্ছিনা...ধুর!...একটা পার্ট টাইম মানে বেশ কিছুদিন চিন্তা মুক্ত থাকা...মাঝে মাঝে ভাবি আমার অন্যান্য কিছু বন্ধু কত আরামে আছে...বাপের কাছে চাইলেই টাকা পায়, যেখানে i have to state even what i'm gonna do wid da 10 tk i'm takin from dem...it's not dat i complain...but it surely does suck to da hundrerths of degrees...!!!...[আজকাল দেখছি রাগ করলে ইংরেজী বের হয়!...কালে কালে আমি যে আর কত রঙঢং দেখাবো!!!] জানি আমার এত 'এই নাই সেই নাই' এই ভাবটার কোনই বেইল নাই...যেই দেশে হাজার হাজার মানুষ রাতে ঘুমের আগে দুবেলা ভাত পায়না, সে দেশে স্কেচ বুকের জন্য আমার মরাকান্না অনেক হাস্যকর!...কিন্তু ঐযে কথায় আছেনা as i can never be on there shoes, i won't understand what it takes to be them...তুমি আমার যতই বন্ধু হও, কোনও দুর্ঘটনায় তোমার হাত কাটা যাওয়ার চেয়ে আমার কাছে আমার সেলাইয়ের সময় আমার আঙ্গুলে সুঁই ফোটার ব্যাথাটাই বেশি গুরুত্বপুর্ণ হবে...যেটা আমরা করতে পারি সেটা হল মেনে নিতে শেখা...বা যা আছে আমার তা নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করা...কিন্তু আমি জানি তা আমার দ্বারা সম্ভব না, টিউশনীও আমার ভাল লাগেনা যে আমার একটা রেগুলার ফ্লো অফ ইনকাম থাকবে...আম্মু প্রায়ই রেগে গিয়ে বলে এতকিছু তোর লাগে কেন?...যার একটা ইন্সট্যান্ত জবাব হল...'মা তোমার থেকেতো আমি একটা টাকাও নেইনা, তাইনা?...' ...বইমেলা এলে আমি বই না কিনেও থাকতে পারবোনা, আমার প্রিয় মানুষকে সময় অসময়ে উপহার না দিয়ে আমি পারবোনা... তাহলে আর কি করা?...নিজের কিছু ইচ্ছাকে গলা টিপে মারতেই হবে...
ক্যামেরা বোধহয় আমার আর কেনা হবেনা......
[বিঃদ্রঃ- দুঃখিত...মন খুবই বিক্ষিপ্ত...:-
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।