ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
সিনেমাটির কাহিনীর শুরু ভবিষ্যতের কোনো এক সময় যখন গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর অধিকাংশ শহর পানিতে ডুবে গেছে। মানবজাতি অবশ্য তখনো ধ্বংস হয়ে যায়নি। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে বহু কষ্টে কিছু মানুষ তখনো বেঁচে আছে।
এ অবস্থায় এক রবোট কোম্পানি মানুষের ভালোবাসার চাহিদা মেটানোর জন্য তৈরি করলো নতুন প্রজাতির এক রবোট। বাচ্চা ছেলের আদলে তৈরি যে রবোট প্রকৃত মানুষের বাচ্চার মতোই দত্তক বাবা-মাকে ভালোবাসবে।
ডেভিড নামের সে রবোট শিশুটিকে এক দম্পতি গ্রহণ করলো। অসুস্থতার কারণে তাদের ছেলের অনুপস্থিতিতে সে রবোট শিশুই তাদের ভালোবাসার চাহিদা পূরণ করবে।
রবোট কখনোই মানুষ হতে পারে না। তারপরও রবোট শিশুটি তার নিখুঁত আচার-আচরণ আর প্রোগ্রাম করা ভালোবাসা দিয়ে বাবা-মার মন জয় করে নেয়। এভাবে কিছুদিন ভালোই চলছিলো।
কিছুদিন পর তাদের আসল সন্তান হাসপাতাল থেকে ফিরে আসে। এবার শুরু হয় রবোট সন্তান আর মানব সন্তানের দ্বন্দ্ব। রবোট সন্তান ডেভিড চায় আরো ভালোবাসা। কিন্তু তা সে পায় না। কিন্তু এ সময় ডেভিডের উপলব্ধি হয় রবোট হয়ে মানুষের পরিপূর্ণ ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব না।
ভালোবাসা পেতে গেলে তাকে হতে হবে একজন জীবন্ত মানুষ।
তাদের সন্তান চলে আসায় রবোট শিশুটির আর তেমন প্রয়োজন থাকে না। কিন্তু নির্মাতা কোম্পানির কাছে ফেরত পাঠালে তারা ভালোবাসার রবোটটিকে নষ্ট করে ফেলবে। তাই নির্মাতা কম্পানির কাছে ফেরত পাঠানোর বদলে তার পালিত মা বুদ্ধি করে ডেভিড আর তার সঙ্গী টেডি বিয়ারকে এক বনে ছেড়ে দেয়।
কিন্তু রবোট সন্তান ডেভিডের মনে তখনো ঘুরছে কিভাবে তার পালিত মায়ের ভালোবাসা পাওয়া যায়।
যে কারণে সে হতে চায় একজন রক্তমাংসের মানুষ।
রুপকথার গল্প ফেয়ারি টেলে পিনোশিও নামের এক কাঠের পুতুলকে জীবন দিয়েছিলো ব্লু ফেয়ারি। মানুষ হবার আশা হিসেবে রবোট শিশুটি এ গল্পকেই জীবনের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে নেয়। হন্যে হয়ে খুজতে থাকে ব্লু ফেয়ারিকে। যে তাকে দিতে পারবে জীবন।
তাহলে সে তার মায়ের সত্যিকার ভালোবাসা পাবে।
নানা ঘটনার পর পৃথিবীর নানা প্রান্ত ঘুরে অবশেষে ডুবে যাওয়া ম্যানহাটন শহরের পানির নিচের এক পার্কে সে খুজে পায় ব্লু ফেয়ারির মূর্তি। তার সামনেই সে তার মনের একমাত্র ইচ্ছাটা প্রকাশ করে, " প্লিজ প্লিজ আমাকে জীবন দাও.....। "
ব্লু ফেয়ারির সামনে সেভাবেই আটকে থাকে সে। এরপর গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবে মানুষ জাতি সহ পৃথিবীর সকল প্রাণী মারা যায়।
কেটে যায় দুই হাজার বছর।
প্রকৃতির নিয়মে পৃথিবীতে ফিরে আসে বরফ যুগ। এ সময় মানুষ জাতি পৃথিবীতে না থাকলেও নতুন প্রজাতির রবোট তখনো পৃথিবী শাসন করতে থাকে।
রবোটের মৃত্যু নাই। ব্লু ফেয়ারির সামনে থেকে বরফে জমে যাওয়া ডেভিডকে তারাই উদ্ধার করে।
ডেভিড তখনো ভুলতে পারেনি তার ভালোবাসা। সে দেখতে চায় তার মাকে। আর হতে চায় জীবন্ত মানুষ।
রবোটরা ডেভিডকে জানায় তাকে জীবন্ত মানুষ বানানো কোনোমতেই সম্ভব না। কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকা চুলের ডিএনএ ক্লোনিং করে তারা বানিয়ে দিতে পারবে ডেভিডের মাকে।
তারা আরো জানায়, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেঁচে থাকবেন শুধু একদিন। ডেভিড অবশ্য ব্যাপারটা বিশ্বাস করে না। ডেভিড বলে, মে বি শি উইল বি স্পেশাল (হয়তো সে আলাদাও হতে পারে)।
এরপর ডেভিডের ইচ্ছা অনুযায়ী ডিএনএ স্যাম্পল থেকে ক্লোনিং করে রবোটরা তৈরি করে দেয় তার মাকে। ডেভিড পার করে তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় একটি দিন।
---------------------------------------------------------------
সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রীদের দেখেই আমরা অনেক সময় সন্তুষ্ট থাকি। সেই সিনেমার পর্দার পেছনে কতো মানুষের যে শ্রম আর মেধা জড়িত থাকে সে কথা আমরা প্রায়ই মনে রাখি না। এ ছবির পরিচালক স্পিলবার্গ একজন এমনই পর্দার পেছনের মানুষ।
আমার বিবেচনায় স্টিফেন স্পিলবার্গ পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী মুভি নির্মাতাদের একজন। স্পিলবার্গের মুভিগুলো যেমন দেখার মতো তেমন বাণিজ্যিক দিক থেকেও সফল।
সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত আমি অনেক আগে থেকেই। দেড় বছর আগে বিদেশে আসার সময় স্পিলবার্গের আর্টিফিসাল ইন্টেলিজেন্স সিনেমাটা কিনে নিয়ে এসেছিলাম। ব্যস্ততার কারণে এতোদিন দেখার সময় পাইনি। কিন্তু গত কয়দিন কোনো কাজ নাই দেখে ডিভিডির বাক্সটা ঘেটে মুভিটা বের করলাম। আমি আগেই জানতাম স্পিলবার্গের মুভি যেহেতু, ভালো না হয়েই পারে না।
কিন্তু মুভিটি দেখার পরে আমি আরো বেশি মুগ্ধ হলাম।
ভাবুন তো, একটা রবোট কিভাবে ভালোবাসতে পারে!! অবাস্তব জিনিস নয় কি? স্পিলবার্গের মেধাবী পরিচালনায় সেই অবাস্তবই হয়ে উঠেছে বিশ্বাসযোগ্য।
---------------------------------------------------------------
অসাধারণ এ মুভিটির কাহিনী লিখেছেন ব্রায়ান অ্যালডিস, স্ক্রিন স্টোরি লিখেছেন ইয়েন ওয়াটসন, স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন স্টিফেন স্পিলবার্গ। অসম্ভব সুন্দর অভিনয় করে রবোট শিশু ডেভিডের চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলেছেন হ্যালি জোয়েল ওসমেন্ট।
সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজক স্ট্যানলি কুবরিক ১৯৭০ সালে কাজ শুরু করেন।
কিন্তু সে সময় ডেভিডের চরিত্রটির তৈরির মতো উন্নত প্রযুক্তি ছিলো না। কোনো শিশু শিল্পীর পক্ষেও চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব ছিলো না। ফলে সিনেমাটি তৈরি বারবার পিছিয়ে যায়। স্ট্যানলি কুবরিক ১৯৯৫ সালে এর কাজ স্পিলবার্গের হাতে ছেড়ে দেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।