আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরবাণীর ঈদ ---- নিজস্ব কিছু অনুভূতি



কোরবানীর ঈদ এর সপ্তাহখানেক আগেও ঈদ আসছে এই অনুভূতি টা আসছিল না। কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করলাম তারাও বলল একই কথা। এরই মধ্যে কাজ এর চাপ যেন বেড়ে দ্বিগুন হল, তাই ঈদ এর ভাব বোঝার ইচ্ছাটাও চাপা পড়লো। রমযানের ঈদটা এজন্য বেশী ভাল লাগে, এক একটা দিন যায় ঈদটা ক্রমশ এগিয়ে আসে, একসময় দিনগোনা শেষ হয়, আসে সেই প্রত্যাশিত দিন। তবে ঈদের দিন বিকেলটায় মন কেন জানি বিষন্ন হয় সবসময়; এত প্রত্যাশার দিনটি ফুরিয়ে যায়-এই পরিণত বয়সেও সেজন্য মনটা হুহু করে।

সেকথা বলা হয়না কাউকে, এটা একান্ত নিজের মনের ভেতর নিজস্ব অনুভূতি। এবার কোরবাণী ঈদ টা দিন তারিখ জানছি, তবু কোন টান অনুভব করছি না, ব্যপারটা ভাল লাগছে না। এরই মধ্যে শুক্রবারে দেখি আমাদের বাসার আশেপাশে গরুর হাটের গরু আসতে শুরু করেছে (ঈদ হল মঙ্গলবার)। বাহ বাহ এবার তাহলে ঈদ বোঝা যাবে! আমার কন্যা বলছে, ওয়াও! (তার প্রতিবেশী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়া বান্ধবীর কাছ থেকে সদ্য শেখা বুলি) কত্ত গরু! শনিবার গরু এসে রাস্তা ভরে গেল, সারাদিন কাজ ছিল, গরুর ভিড় ঠেলে বাড়ী ফিরতে হল। পরদিন ঈদ ঈদ ভাবটা অনুভব হবার সাথে সাথে এটাও মনে হল কন্যার একখানা ঈদের জামা কেনা দরকার আবার গরুঠেলে ছুটলাম শপিং সেন্টারে।

আমার বাসার আশেপাশের দুটো রাস্তা পার হলে বোঝার উপায় নেই আমরা চতুস্পদ প্রাণীদের সাহচর্যে জীবন যাপন করছি। কন্যার জামা কিনতে যেয়ে মেজাজ গরম, এমন সব উদ্ভট ডিজাইনের সব ড্রেস এনে সাজিয়ে রেখেছে, আবার বলছে আপা সব বোম্বের ড্রেস। স্বাভাবিক ডিজাইন এবং অতি অবশ্যই নিজের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে কোন পোশাক না পেয়ে ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন। অগত্যা পরদিন আবারো অন্য কোথাও ঢু মারতে হবে বুঝতে পারলাম, কিন্তু হাট ঠেলে বের হতে হবে সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তা শুরু হল। কন্যার পোশাক কেনার ছুতোয় হোক, আর সত্যি প্রয়োজনে হোক ঈদের ঠিক আগেরদিন গরুর হাটে হেঁটে পার হওয়া এক দুঃসাধ্য কাজ।

কখন গরুর গুতো খেতে হয় সে ভয় তো আছেই, তা ছাড়া গরু কিনতে আসা ক্রেতাদের অবাক এবং কখনো ঈষৎ বিরক্ত দৃষ্টি দেখতে দেখতে হাট নামক এলাকাটি পার হতে হল। এহেন দুঃসাহসিক কাজ করে আমার খুবই আনন্দ লাগছিল। পুরো এলাকাটায় রিকশায় ওঠার কোন উপায় নেই, গাড়ীতে চড়া তো অসম্ভব। প্রত্যেকে তাদের গাড়ীটিকে বাড়ীর গ্যারেজে সযত্নে রেখে দিয়েছেন। কাজেই গরুর গোবর আর আনুষঙ্গিক আবর্জনা পেড়িয়ে হাঁটতেও মন্দ লাগছিল না।

এদিকে বাসার অন্যরা আমি বেরুচ্ছি এই সুযোগে অন্য কাজগুলোর ফরমায়েশ আমাকে দিয়ে ভালই আরাম করে বাড়ীতে বসে ছিলেন। রাস্তায় গরু নিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছে এটা দেখলেই সবাই প্রশ্ন করে কত দাম, তাই আমিও আমার সামনে কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করলাম কত দাম? কন্যার পোশাক, নিজের কিঞ্চিত চুলচর্চা আর অন্যদের ফরমায়েশ শেষে অবশেষে বাড়ী ফেরা। আমার অভিজ্ঞতা প্রবল উৎসাহে অন্যদের শেয়ার করতে যেয়ে পাল্টা প্রশ্ন খাসীর দাম কত? আমি তো কোন খাসী দেখলাম না, খাসী সব বসেছে ঐ দিকে, বলে দিলাম। আমার কন্যা সকাল বিকাল বাসায় বারান্দায় বসে গরু দেখে ভীষণ আনন্দিত। সেই সাথে আমরা বড়রাও।

একটি খাসী কেনা হল। সবাই মিলে তাকে কাঁঠাল পাতা খাওয়ানো হল। এই খাসিটি একরকম বোনাস কোরবাণী বলা চলে। ঈদের দিন সকালে খাসিটির ব্যবস্থা করে আমরা ছুটবো বাবার বাড়ীতে। সকাল সকাল আমাদের এক প্রতিবেশীর বাড়ীতে সেটি কোরবাণী হল।

খবর এল এবার মাংস নিয়ে আসতে হবে। আমরা সব একে একে সে বাড়ীতে হাজির। দেখা গেল ১০.৫ কেজি ওজনের এক খাসীর মাংস আনতে আমরা বাড়ী সুদ্ধ সাড়ে চারজন মানুষ গিয়েছি। এরপর এগুলো গুছিয়ে রান্নাবান্না সেরে, নির্দিষ্ট অতিথিদের আতিথেয়তা শেষ করে আমাদের পিত্রালয়ে যাত্রা। পৌঁছুতে প্রায় বিকেল, বিকেলে আরেক দফা হৈ চৈ, খানাপিনা।

তবে সবাই ভয়ানক ক্লান্ত। ঈদের পরদিন আমার একা একা রিকশা করে ফাঁকা রাস্তায় ঘুরতে হবে। সাথে কোন সঙ্গী জোটানো গেল না। তাই দুরে কোন বন্ধুর বাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা। দুচোখ ভরে দেখলাম ফাকা শহরটা।

এত তাড়াতাড়ি পথ ফুড়িয়ে গেল ! বন্ধুটি রিকশা ঘোরার সাথী হতে চাইলো। তার আবার পা ভেঙ্গেছে, তাই বাদ দিলাম। বন্ধুর বাড়ী খানিক্ষন বসে আবার চললাম, ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, একটু ঠান্ডা লাগছিল, মিষ্টি মিষ্টি একটা হিম হিম ঠান্ডা। এই রোমান্টিকতা টা খুব ভাল হয়নি, কারণ বাড়ী ফিরেই হাঁচি শুরু হয়েছিল। তবু মন ভাল ছিল, সেটাই অনেক পাওয়া।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।