আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভ টিসিং: চলুন সবাই উদ্যোগী হই

সকল অন্ধকারের হোক অবসান

আমার আত্মীয়। জেরিন (ছদ্মনাম)। থাকে খিলগাঁও। বাসা থেকে প্রতিদিনই বেরুতে হয়। ক্লাশ এইট শেষ করে, নাইনে উঠবে এবার।

ওর বড় বোন বিবিএ থার্ড ইয়ারে পড়ে। কিন্তু প্রত্যেকটা দিনই ওদের শুরু করতে হয় অজানা আশঙ্কা নিয়ে। বাসার সামনে কয়েকটা ছেলে বসে থাকে। এমনিতে সামনা সামনি কিছু বলে না তবে চোখ দিয়ে কিছু যে বলে এটা নিশ্চিত। শুধু তাই নয়, ছেলেগুলো জেরিনের স্কুলের এক ছেলে ক্লাশ মেটের কাছ থেকে ওর বড় বোনের মোবাইল নাম্বার জোগাড় করে।

এরপর ঐ ছেলে ক্লাশ মেটের নাম দিয়ে ফোন করে মোবাইলে। জেরিন প্রথমে বোঝেনি। পরে বখাটে ছেলেগুলো যখন বলে- তারা তাদের বাসার সামনে প্রতিদিন বসে থাকে, তখন জেরিন বুঝতে পারে। জেরিনের ঐ ক্লাশ মেটকে জিজ্ঞস করলে সে বলে, ঐ ছেলেগুলো তার বড় ভাইয়ের বন্ধু-বান্ধব। কিন্তু ক্লাশ মেট বুঝতে পারেনি, মোবাইল নম্বর দেয়ার ফল এই দাঁড়াবে।

এখন প্রতিনিয়ত ঐসব ছেলে ফোন করে যন্ত্রণা করছে। মোবাইল সিম পাল্টেও লাভ হচ্ছে না। কারণ ওরা বাসার সামনেই বসে থাকে। ইদানিং দূর থেকে মন্তব্যও করে। জেরিন, ওর বড় বোন বোঝে, মন্তব্যগুলো ওদের উদ্দেশ্য করেই ছোড়া হয়।

এই রকম মানসিক অশান্তি নিয়ে রাজধানী শুধু নয় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মেয়েরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ যেন ভয়ানক দুঃস্বপ্ন। এই অন্ধকারের গল্প কখন শেষ হবে মেয়েরা তা জানে না। কেন ছেলেরা এসব করে? মানসিক বিকৃতি? মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই? মায়ের প্রতি ভালোবাসার অভাব? কি, আসলে সমস্যাটা কোথায়? আমার মনে হয় না, শুধু শিক্ষিত হলেই, এই সমস্যা নাই হয়ে যাবে। কারণ আমার আশপাশে আমি দেখেছি, বহু শিক্ষিত ছেলেরাও সুযোগ পেলে ইভ টিসিং করতে ছাড়ে না।

ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠানের ছেলেদের তো এ ব্যাপারে জুড়ি নেই। আমার বারবার কেন যেন মনে হয়, নিজের মাকে যথাযথ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মধ্য দিয়েই একটি ছেলে নারীকে শ্রদ্ধা করতে শেখে। ভোগের পণ্য হিসেবে না দেখে বন্ধু হিসেবে দেখতে শেখে। আসুন আমরা উঠতি বয়সের ছেলেদের বোঝাই, আমাদের লেখালেখি, চলচ্চিত্র, নাটক সকল মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আমরা যেন কোনো চলচ্চিত্রে না দেখি- নায়ক নায়িকাকে উক্তত্য করছে, আর কিছুক্ষণ পর নায়িকা নায়কের সঙ্গে প্রেম জুড়ে দিয়েছে।

আমরা যেন আমাদের ছোটো ভাইদের দেখার চোখকে পাল্টে দিতে পারি। তারা তাদের মেয়ে সহপাঠীকে ভাববে বোন কিংবা বন্ধু। ভোগ্য বস্তু নয়। আসুন, এই ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের যুগে, যে যুগে মেয়েরা হর-হামেশা পণ্য হচ্ছে, পদদলিত হচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে, সে যুগে কিশোরদের মনে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা বোধ জাগিয়ে তুলি। কারণ তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।