আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তমনার অভিজিৎ ও বিপ্লব পাল- বিজ্ঞান, বিবর্তনবাদ, ল্যামার্ক, লাইসেঙ্কো, নভেম্বর বিপ্লব, সমাজতন্ত্র, কেরোনস্কি, প্রতি বিপ্লব, পুঁজিতন্ত্র, ঠিকাদারতন্ত্র.... ইত্যাদি



(১) আবার, অভিজিৎ বাবুর সাথে কদিন বেশ কথাবার্তা হলো। এর আগে মার্কসবাদ কি বিজ্ঞান নামের পোস্টখানিতে অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। সামহোয়ারেও কিছু কথাবার্তা (এক দুই ) তুলে দিয়েছিলাম। সচলায়তন সে আলোচনা বন্ধ করে দেয়ায়, তেমন এগুনো হয়নি- যদিও ঐ বিষয়টিতে আরো কিছু কথা বলার আগ্রহ আছে। এবারে নতুন করে- আরেকটি বিষয়ে তার সাথে আলাপ-সালাপ হলো।

অভিজিৎ বাবুর পোস্টের শিরোনামঃ লাইসেঙ্কোইজম। আসলে এই লাইসেঙ্কো বা লাইসেঙ্কোইজম নিয়ে আগের সেই পোস্টে (মার্কসবাদ কি বিজ্ঞান) অভিজিৎ কিছু কথা বলেছিলেন- সেটার প্রতিক্রিয়ায় এক ব্যক্তি কিছু কথা লিখে মুক্তমনায় পাঠান- আর যায় কোথায়? সেই ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় তিনি আলোচ্য পোস্টখানি লিখে ফেলেন। তো লাইসেঙ্কো নিয়ে আমাদের কোন আদিখ্যেতা ছিল না- এবং সেই ব্যক্তির আলোচনার সাথেও যথেস্ট দ্বিমত পোষণ করি। কিন্তু অভিজিৎ যে ভাবে যে ভাষায় সেই লেখাটির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন এবং তা করতে গিয়ে আরেকবার মার্কসবাদ ও মার্কসবাদীদের একচোট নেয়ার চেষ্টা করলেন- সবই বেশ মজার। কাজে কাজেই অভিজিতের সাথে কথা বলতে গেলাম।

অনেক আলোচনা হয়েছে- সব এখানে কপি পেস্ট করতে ইচ্ছা করছে না। উৎসাহী পাঠকদের জন্য লিংক দিচ্ছি- গিয়ে একটু পড়ে আসবেন, পারলে আমাদের আলোচনার মধ্যে একটু নাক ঢুকিয়ে আসবেন। লিংকঃ http://www.sachalayatan.com/avijit/19514 (২) মুক্তমনার আরেক দিকপাল, অভিজিৎ বাবুর বিশ্বস্ত সঙ্গী বিপ্লব পালের কিছু কথা আগে চোখে পড়েছিল, কিন্তু- মুক্তমনা আগে ব্লগ সাইট ছিল না বলে- বিপ্লব পালের সাথে ঠিক গল্প করা হয়ে ওঠেনি। কিছুদিন আগে মুক্তমনা ব্লগ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পরে- লেখায় কমেন্ট দেয়ার অপশন তৈরী হলো; এবং যথারীতি বিপ্লব পাল মহোদয়ের একটি উপাদেয় পোস্ট পেলাম। শিরোনামঃ নভেম্বর বিপ্লব না প্রতি-বিপ্লব? সুতরাং বিপ্লব পাল মহোদয়ের সাথেও আলাপ-সালাপ শুরু করলাম।

কেরনাস্কি হচ্ছেন মহান সমাজতন্ত্রী এবং লেনিন প্রতি বিপ্লবী! বিপ্লব পাল পুঁজিবাদের সংকট নিয়েও যে লিখেন সেটা প্রমাণ করতে তিনি তার দুটো লেখার লিংক দিয়েছেন। ঐ লিংকের লেখা দুটো আরো বেশী উপাদেয়। একটির শিরোনাম “রোমান্টিক সামজতান্ত্রিক বনাম সুবিধাবাদি ধনতান্ত্রিক” এবং অপরটির শিরোনাম “ঠিকাদারতন্ত্র”। তো, পরের লেখা দুটোতে কমেন্ট করার কোন স্কোপ নেই- তাই ভাবলাম, আলোচ্য পোস্টেই (নভেম্বর বিপ্লব না প্রতি-বিপ্লব?) সে বিষয়গুলো নিয়েও গপ-শপ করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মুক্তমনায় সে আলাপ ছাড়পত্র পায়নি।

ছাড়পত্রের জন্য এখনো অপেক্ষা করছি। বুঝতে পারছি না ছাড়পত্র পাবে কিনা। যাহোক- সেটুকু এখানে আপনাদের উদ্দেশ্যে উল্লেখ করছিঃ ------------------------>>> বিপ্লব পাল মহাশয়ের দেয়া লিংক থেকে “রোমান্টিক সামজতান্ত্রিক বনাম সুবিধাবাদি ধনতান্ত্রিক” (Click This Link) এবং “ঠিকাদারতন্ত্র” (Click This Link) লেখা দুটো পড়লাম। লিংক দেয়ার আগে আমাদের তিনি লেখাদুটোর সম্পর্কে জানিয়েছেন: “ধণতন্ত্রের সংকট নিয়ে আমার লেখা”। অর্থাৎ, সে লেখা দুটো নাকি ধনতন্ত্রের সংকট নিয়ে লেখা।

পাঠককূলকে ধনতন্ত্রের সংকট (!) নিয়ে বিপ্লব পালের লেখা দুটো পড়ার আহবান জানাই, আশা করি তাহলেই বুঝতে পারবেন বিপ্লব পাল ধনতন্ত্রের সংকট মানে কি বুঝেন, কেমনে বুঝেন? তার মতে আজেকর পুঁজিবাদী সংকট কিছু সেন্ট্রাল পরিকল্পনার অভাবেই সৃষ্ট!! তার মতে- “….বাড়ির দাম হলো আকাশ ছাঁয়া-অথচ ৫৫% লাকের বাড়ীর মর্টেজ পে করার সামথ নই। ফলে কান সেন্ট্রাল প্লানিং এর অভাবে-আজ আমেরিকার ২০% লোক বাড়ি এবং সব খোয়াতে চলেছে। একটু-সামান্য একটু সেন্ট্রাল প্লানিং করলেই এটা আটকানো যেত। ” "……..৮০% টলিকমের লোক চাকরি হারায়। সেটাও ঠিক আছে-কি কোটি কোটি বৃদ্ধ লোকের শেষ সম্বল নিঃস হয়।

আমার এক কলিগকে ৭৫ বয়সেও ক্যান্সার নিয়ে কাজ করতে দেখে দুঃখ হত। লোকটি হাভাডের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পিএইচডি। পেনশনের সবটাকা শেয়ার মার্কেটের জলে। হাভাডের পিএইচডির যদি এই অবস্থা হয়-ঊলূ খাগড়াদের কি হবে বলাই বাহুল্য ! এটা সেন্ট্রাল প্লানিং এ আটকানো যত না? সামান্য একটু ভবিষতবানীর ব্যাপার মাত্র "! "আমেরিকায় শিক্ষা এবং স্বাস্থ ব্যাবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিত্তবান ছাড়া কারু পক্ষে আর ব্যাচেলর ডিগ্রি , বা ভালো কলেজে পড়া সম্ভব নয়।

৭০ মিলিয়ান লোকের কোন স্বাস্থ নিরাপত্তা নই। এগুলো সেন্ট্রাল প্লানিং, সামান্য একটু ভবিষত বাণী করেই আটকানো যেত"। ………. বিপ্লব পাল আমাদের জানাচ্ছেন, সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে সমাধানের কথা যারা ভাবেন তারা রোমান্টিক পাগল; আর নিয়ন্ত্রণহীন মুক্তবাজার অর্থনীতি দিয়ে দেশের অর্থনীতির কথা যারা ভাবেন- তারা সুবিধাবাদী ছাগল!! ফলে সমাধান কি? তাঁর মতে- বাস্তব হচ্ছে পার্ফেক্ট কোন সিস্টেম নেই। আমাদের প্রয়োজন আসলেই ভবিষত প্রজন্মের জন্যে -তাই ভবিষত কিছুটা হলেও ভাবতে হবে-আবার উৎপাদনশীলতা-আবিষ্কারও বাড়াতে হবে। কিছুটা পরিকল্পনা-কিছুটা মুক্ত বাজার অর্থনীতির হাতেই আমাদের ভবিষ্যত।

১০০% পরিকল্পনা করতে গেলে একনায়কতন্ত্র চলে আসবে। কিছু অটো কারেকশন-কিছুটা কন্ট্রোল-এই ভাবেই পরীক্ষা (এম্পিরিসিজমের মাধ্যমে আমাদের এগোতে হবে)। এই হলো বিপ্লব পালের পলিটিকাল ইকোনমির থিসিস। এই থিসিসের মধ্য দিয়ে কিন্তু শেষ বিচারে পুঁজিবাদের প্রতি তাঁর সমর্থন, আকুন্ঠ প্রশংসা ঝরে পড়ে। তিনি বলছেন, “আমেরিকাতেই যাবতীয় কিছু আবিষ্কার হয়েছ- বেঁচে থাকার সমস্ত ওষুধ থেকে ইন্টারেনট-টিভি-যা কিছু আমাদের আধুনিক জ়ীবন দিয়েছে-তার সব কিছু আমেরিকার অবদান।

সমাজতন্ত্র কিছু যুদ্ধাস্ত্র আর ভালো অঙ্কের বই ছাড়া বিশ্বকে কি দিয়েছে? মৗলিক বিজ্ঞানে অবশ্যই কিছু অবদান রেখেছে। ব্যাস ওইটুকুই। ” সমাজতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে পুঁজিবাদকে নয়- আমেরিকাকে- আমেরিকার পুঁজিবাদকে, এবং আমেরিকার পুঁজিতন্ত্রের প্রতি এমন গদ গদ ভাব সত্যি চমকপ্রদ, এবং এই লেখাটি হচ্ছে বিপ্লব পালের পুঁজিবাদের সংকট নিয়ে লিখিত(!!!!), তার মানে এই নয় যে, বিপ্লব পাল পুঁজিবাদের কোন সমালোচনা করেন নি, আমেরিকার অর্থনৈতিক - রাজনৈতিক অবস্থার সমালোচনা করেননি। সেগুলোও তিনি করেছেন, করেই তিনি তার থিসিস সাজিয়েছেন। তার ঠিকাদারতন্ত্র লেখাটিতে তিনি আমেরিকার ওবামা-হিলারি ফাইটের কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন এবং সেখানে এক পর্যায়ে সেই ফাইটের কিছু বিষয় বিপ্লব পালের খুব বাজে মনে হওয়ায় তিনি নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে ইস্তফা দেন! মানে হলো- হিলারী ক্যাম্পে সাপোর্টারেরা ওবামার ছবি সাটা ন্যাপকিনের পাল্টা কি দেয়া যেতে পারে- এসব নিয়ে ব্যস্ত না থেকে যদি হিলারীর মূল এজেণ্ডা- আমেরিকান শিশুদের আরো শিক্ষিত করার ব্যাপারে আলোচনা করতে দেখলেই- তিনি খুব উৎসাহিত হয়ে পড়তেন।

এমনটিই হচ্ছে- আমাদের বিপ্লব পালের আমেরিকান পুঁজিবাদ সমালোচনা!! তিনি আরো সমালোচনা করেছেন, করে জানাচ্ছেন- আমেরিকার পুঁজিবাদী রাজনীতি হচ্ছে- ঠিকাদারদের রাজনীতি, এবং তিনি তার স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করেছেন- ডেমোক্রেটিক পার্টির দ্বিতীয় সাংবিধানিক ব্যক্তির মুখ দিয়েও এ কথার সমর্থন বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু,এ ধরণের কিছু সমালোচনার পরেও যে সিদ্ধান্তটি আমরা পাই তা অনেকটা এরূপঃ কি আর করা যাবে-গণতন্ত্র মানেই ঠিকাদারতন্ত্র -পৃথিবীর সবেদেশই। তবুও মিলিটারী শাসন বা কিমিউনিজম থেকে হাজার গুনে ভাল। ধু সমস্যাটা বিশাল আকার নেয় যখন অস্ত্রের ঠিকাদারও এর মধ্যে ঢোকে। আর কি বলা যেতে পারে? “সমাজতন্ত্র” জুজুর ভয়ে তিনি এই ঠিকাদারতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন এমনটা মনে হলেও আসলে আমার মনে হয়- ঠিকাদারতন্ত্রকেই শেষ বিচারে আকড়ে ধরার উদ্দেশ্যেই তিনি সমাজতন্ত্রকে জুজু হিসাবে উপস্থাপন করেছেন।

সেটি আরো পরিষ্কার হয় যেখন দেখি তিনি জানাচ্ছেনঃ “অসামিরক ভারত-আমেরিকা নিউক্লিয়ার চুক্তির অন্ধ বিরোধিতা একধরেনর রাজৈনিতক আত্মহত্মা। ” আশা করি পাঠক কূল বুঝতে পারছেন, আমাদের বিপ্লব পালের পুঁজিবাদ সংকটের স্বরূপ কেমন!! পাঠকদের জন্য লিংকঃ http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=136 (বিঃদ্রঃ বিপ্লব পালের প্রবন্ধে "দিনমজুর" নিকে আমাদের পাবেন না- সেখানে Schlemiel (রুবাইয়াৎ), কল্লোল এবং অনুপম সৈকত শান্ত নামেই আমরা আলাপ চালাচ্ছি)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।