আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোর্জিনা মতিন কবিতার কাব্যাণুগ্রন্থ :: আজ, কাল ও পরশুর কবিতা

এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। ... ব্লগে মনোযোগ দিতে পারছি না; লিখবার ধৈর্য্য নেই, পড়তে বিরক্ত লাগে।
উৎসর্গ : এম এ মতিন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা এবং নাঈমা মতিন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা আপনাদের সন্তান হতে পেরে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ কবি পরিচিতি : মোর্জিনা মতিন কবিতা। কাছের মানুষেরা 'কবি' বলে ডাকেন।

জন্ম সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন লেখালেখি শুরু। স্থানীয় পত্র-পত্রিকা ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, পাক্ষিক ও মাসিকে নিয়মিত সাহিত্যচর্চা। ভোরের কাগজ এবং প্রথম আলোর পাঠক ফোরাম ও বন্ধুসভায় লিখে পেয়েছেন সাত সাতবার সেরা লেখক পুরস্কার ও সম্মাননা। ইডেন কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে সম্মান সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন।

ঢাকার একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতায় ফেলোশীপ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত। মোর্জিনার কবিতাগুলো সুখপাঠ্য, সহজেই পাঠককে আকৃষ্ট করে এবং চুম্বকের মতো সামনে টেনে নিয়ে যায়। চলমান সময় থেকে মানুষের মনের মৌলিক আবেগটুকু যত্ন করে কবিতায় তুলে এনেছেন কবি তাঁর এই বর্তমান অণুগ্রন্থে।

প্রকাশিত গ্রন্থ-তালিকায় এটিই তাঁর প্রথম বই। সহজ ও সরল বর্ণনায় এখানে উঠে এসেছে সাধারণ কিন্তু সূক্ষ্ম এক আবেদন, যার মোহ জড়িয়ে রাখে পাঠকের অনুভবটুকু। এ অণুগ্রন্থটি কবির কিশোরীবেলা থেকে শুরু করে তরুণ বয়স পর্যন্ত কিছু নির্বাচিত কবিতার সমন্বয়। প্রকাশিত গ্রন্থাবলি : আমি যাই নির্বাসনে ছোটগল্পের অণুগ্রন্থ একুশে বইমেলা ২০০৫ *** *** ত্রিকাল পরশু, কাল ও আজ ছিল কুয়াশা পরশু, কাল ও আজ আছে পিপাসা। শুভ হোক শুভ হোক সকাল শুভ হোক বিকাল এখানে সেখানে যখন ভালোবাসার আকাল।

এখন আমি এখন আমি বেঁচে নেই যখন আমি বেঁচে ছিলাম তখন আমি ভালো ছিলাম এখন আমি ভালো নেই। কান্না ও শোক ভুল কান্নায় কেন যে কেবল ভিজাই চোখ বুকের মাঝে বাস করে আজে বাজে শোক। আবুল হাসান কেমন আছিস, আবুল হাসান? তোর বুকের দূর্বাঘাস, মধ্যমার তিল, কেমন আছে তোর রং-পেন্সিল? আমার যৌবনে তুই যে পদ্মঝিল, তা কি তুই জানিস রে পাষাণ? উৎসব তুমি চোখ মেললেই নবান্নের উৎসব আমি শ্রাবণের কাছে সমর্পিত। তোমার চাহনিতে তৃষিত কাশবনের দোলা তবু বিষণ্ন একাকিত্ব আমার। হলুদের গাঁথা হলুদ দুপুর হলুদ খামেভরা হলুদ জন্ডিসের খবর।

চেয়ে দেখি বাগানের সমস্ত সাদা গন্ধরাজ হলুদ হয়ে গেছে। হলুদ চোখের পাতায় হলুদ রোদের খেলা আর দেখি না। জলরঙে আমি আমার মাঝে ক্ষুদ্রতা নেই দুঃখকে দু হাতে ছুঁয়ে দেখবো, আমার মাঝে এক আকাশ ভালোবাসা আজন্ম চোখের জল ফেলবো। আমার মাঝে স্বার্থ নেই পরাজয় বরণ করে নেবো, আমার মাঝে সুন্দরের কষ্ট পৃথিবীর সমস্ত সুন্দরের পূজারি হবো। অভিমান অনেক দিন অভিমান করে আছি তোমার সাথে, তুমি একবার আসো আগের মতো করে।

একবার ক্লান্ত চোখে দেখো আমায়, দেখো, কেমন নিঃস্ব হয়ে যাই। শখের সীমা আমার খুব শখ- ঘরে একটা লাইব্রেরি করবো বই, বই আর হরেক রকমের বই থাকবে সেখানে। পিপাসা পেলে ব্যস্ততা-অব্যস্ততা ফেলে ছুটে যাবো লাইব্রেরিতে। শখের কথা জেনে বাবা হেসেছে মা চোখ রাঙিয়েছে। পাড়ার মেয়েরা মুখরোচক মন্তব্য ছুঁড়েছে এক ছেলে 'বিদ্যাসাগর' সম্বোধনে প্রেমপত্র লিখেছে ভাইবোনেরা বলেছেনশখের সীমা নেই।

আমি আগের মতো উঁনুনে হাঁড়ি ঠেলি শখ জ্বালিয়ে ফেলি আর কাঁদি অসীমতার ধোঁয়ায়, পিপাসার ধোঁয়ায়। একদিন একদিন তোমাকে দেখতে যাবো, একশো বছর পর ততোদিন ভালো থেকো তুমি। ততোদিনে আমার দ্বিধার আঁধার মুছে যাবে অপসংস্কৃতির মাতাল জোছনায়। চাঁদ ও মঙ্গল, তুমি ও আমি সমান্তরাল শতাব্দীর যুগল সাক্ষী হবো, তোমার জন্য নিয়ে যাবো বৃষ্টি ও কুয়াশা। একশো বছর পর লজ্জার ঘরে আগুন জ্বালবো আর তোমার হৃদয় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তুলে আনবো হৃৎপিণ্ডের আঁচ।

অবকাশ মা, তোমার বুকে মাথা রেখে একটু কাঁদবার আজীবন ইচ্ছে ছিল আমার ইচ্ছেরা কদমফুলের গন্ধ মেখে অবাক আকাশে পারাপার। করে শ্রাবণের ডানা, প্রহর না-জানা নিঃশব্দ নিঃস্ব বেঁচে থাকা তোমার দু চোখ স্তব্ধ, অস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষায় শ্যাওলা রঙের ভালোবাসা তোমার ছেঁড়া হৃদয়ের। তুমি কি জানো না- তোমার স্যাঁতসেঁতে শাড়ির আঁচলে আমার প্রশান্তি, হাহাকার, সুখ স্বাধিকার, স্বাধীনতা? তবে কেন হারিয়ে ফেলে আমায়, অভিমানের নীল সৌরভে ভরে রাখো বুক ঝরাও বিজয়ের শৌখিন পাতা? দুঃসময় ইদানীং সময়গুলো বড় দুঃসময় ক্যালেন্ডারে সবুজ দাগ দেয়া তারিখ হেঁটে চলে একাকী নিঝুম অরণ্যে। জানালায় ভোরের নরম রোদে গলে আসা ছেঁড়া ছেঁড়া ছায়াখণ্ড অতীতের দুঃসময়গুলো ঢেকে দেয় ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে থাকে বর্তমান দিনগুলো। অবশেষে আমি ও আমার অস্তিত্ব এগিয়ে যাই প্রচণ্ড বাস্তবতার মুখোমুখি।

অপূর্ণ দীর্ঘশ্বাস তোমার বড় বেশি বিষণ্ন দু চোখে নিবিড় সূর্যোদয় যেন চন্দ্রমল্লিকায় সবুজ ঘাসফড়িং। কোমল অরণ্যের বুক চিড়ে রাতের স্নিগ্ধ জোছনার গাথা কুড়িয়ে নেয় মাটির হৃৎপিণ্ডন তৃষ্ণারা হাত বাড়ায় বিতৃষ্ণার কাছে। নিঃস্ব বেলাভূমি জীবনের মুখোমুখি জনতা, বুকস্টল, প্রখর রোদের বইমেলা ভালোবাসতে ভালোবাসি কী যে ভীষণন তোমার আকাশে নীলের মেলা, আমার সমস্ত অভিমান, হতাশা এবং একচিলতে কষ্ট কেবলই তোমার জলজ দু চোখে চেয়ে। যেতে দাও আমি আসবো না আমাকে ডেকো না একবারে যে আসে না, তার কখনো আসা হয় না। দূর থেকে দূরান্তে দিগন্তের পূর্ণতায় আশ্রিতা জোছনা হবো কাঙ্ক্ষিত শুভ কামনায় শরতের শস্য হবো বসন্তের বনকুসুম।

আমাকে যেতে দাও নিঃস্ব বিরাণ ভূমিতে একফালি কাঁচা রোদ হবো। নিঃস্বার্থ উপমা হবো। কিশোরীর জীবন্ত চাহনি থেকে স্বপ্নের ঘ্রাণ নিয়ে ছুঁয়ে যাবো তোমার ভালোবাসার রক্তিম ভাস্কর্য। আমার পৃথিবীর অন্তর্গত আশ্চর্য তোমার ভালোবাসার ক্ষমতা সমুদ্রে আকাশের অস্পষ্ট দীর্ঘশ্বাস পায়ে পেষা তাজা গন্ধরাজ সবকিছুই জয় করে নেবার মতো তোমার ভালোবাসা শুধু আমাকে ব্যতীত, তোমার হৃদয়ের দূরত্বহীন আমাকে। আমার অস্তিত্বের ভিতরে তুমি দেখোন হৃদয় নামের বস্তুটি সেখানে অনুপস্থিত পাথরেও নাকি ঝর্ণা বয়।

আমার চোখের ভাষায় তুমি পড়োন কারো জন্য সেখানে কান্না তৈরি নেই প্রজাপতিরাও নাকি কাঁদতে জানে। অথচ কতো সত্যি! তোমার প্রতি নিঃশ্বাসে আমি, রক্তাক্ত চিঠিতে, ইউনোকটিনের পাতায়। অলক্ষে মৃত্যুর সীমান্ত ছুঁয়ে তোমার ফিরে আসা আমাকে দেখার নেশায়, কিংবা আমি নিমিত্তমাত্র, বেঁচে থাকার আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয়তা ছিল তোমার। কারণ আমার অভ্যন্তরে কান্না, হৃদয়, ভালোবাসা, ভালোলাগা ব্যতীত দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য সবই আছে। সিদ্ধান্তের সিঁড়িপথে আমি যাকেই পরাই না কেন ভালোবাসার তাজ স্বীকৃতি দিলাম- অমানুষ আজ সে-চিত্রা চোখে আমি কি পরেছি কখনো আঁধার রঙের কাজল? প্রেরণার ঝর্ণাধারায় তুমি কি সিক্ত নও তোমার অনন্য মানস? তুমি কি দিতে পারো বাঁধভাঙ্গা প্রশান্তি, চাতক-চোখে বিপ্লবের প্রতীক্ষা? আমি আত্মার বিনিময়ে খুঁজে ফিরি নারীজাতির মুক্তি পুরুষের আত্মসম্মানবোধ মায়ের যৌতুকবিহীন অক্ষত শরীর।

তুমিও কি খুঁজে দেখো না রক্তের মতো পবিত্র স্বাধীনতা? আমি বোশেখের না শ্রাবণের জল হবো তৃষ্ণার্ত মরু-হৃদয়ে আমার আকাশ মেঘহীন। রজনীগন্ধা না হাসনাহেনা হবো ধূসর রাতে আমার বাগান ফুলহীন। ভালো কি বাসবো তোমাকে? আমি হৃদয়হীন। কেননা, তুমি স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর পুরুষ নও। অতিথি জীবনে খারাপ সময় আসে।

হঠাৎ। কিছুদিন থাকে। চলে যায়। অতিথিরা যেমন তিথি না জানিয়ে আসে, বেশিদিন থাকে না, দুঃখ কষ্টও। পাড়ের কোন মহীরুহের খসে পড়া পাতা পুকুরের স্থির জলে ভাসমান, জীবনের মতোন মৃদু বাতাসের অস্থিরতায় ভেসে যায় ধীরে, কোথায় আমাদের জীবনে এসে কিছুদিন থাকা অন্তরঙ্গ অতিথির মতোন।

বেঁচে থাকা বেঁচে থাকা ছিল সাদা ফুল সাদা পাখি সাদা-প্রীতির মন্থন। বেঁচে থাকা আজ জলরং কূল জলজ আঁখি জলের সন্তরণ। আমার প্রেমিককে হতে হবে আমার প্রেমিককে হতে হবে সাধারণ মানুষ দ্বিপদী, দ্বিহস্তী, অন্যদের প্রেমিক যেমন হয় শ্যামলা, লম্বা, অবিন্যস্ত চুল, লোমশ বুক। হ্যান্ডসাম, ফ্যাশনেবল না হলেও চলবে। অধিকারী হতে হবে শিল্পিত একজোড়া চোখের সেই চোখে সুন্দরী অপেক্ষা সুন্দরকে দেখবার তৃষ্ণা থাকবে অশেষ।

পারফিউমের বদলে আমাকে গিফ্‌ট করবে কবিতার বই। ডেটিং-এর পরিবর্তে টেলিফোনে চলবে বলা ও না বলার বিলাসী খেলা। আমার প্রতি মনোযোগী নয় শুধু, উদাসীও হবেন ঘৃণা করবে খুনির মতো সম্মান করবে মানুষের মতো ভালোবাসবে স্বার্থহীনের মতো। হঠাৎ হঠাৎ সে আসবে জলোচ্ছ্বাসের মতো স্বপ্ন থেকে উঠে আসা ঘুমন্ত পুরুষ হয়ে বাঁধভাঙ্গা কষ্টের দরজা খুলে ধরে অনুযোগী নারী আমি চেয়ে থাকবো, চেয়ে থাকবো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম প্রেমিকের চোখে। আমার প্রেমিককে একটু অন্যরকম হতে হবে হতে হবে প্রেমের ঊর্ধ্বে উঠে যাবার ক্ষমতাশীল।

** আজ, কাল ও পরশুর কবিতা প্রকাশকাল একুশে বইমেলা ২০০৫
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।