আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাঢ়িখাল, শ্রীনগর, বিক্রমপুর...

পথ বাঁধতে চেয়েছিল বন্ধনহীন গ্রন্থি...

জাভেদ অনেকদিন ধরেই ঘ্যান ঘ্যান করছিল ওর গ্রামের বাড়িতে আমাদের নিয়ে যাবার জন্য...উনি হলেন বিক্রমপুইরা পোলা, [আগে ৮০ ছিল এখন inflationএর কারনে] ১২০ টাকা তোলা...এদিকে আমরা হলাম বিরাট অলস জাতির নমুনা...আমরা কি আমাদের আরাম আয়েস ছেড়ে দুনিয়া ঘুরতে বের হই?...ঈদের সময় একবার attempt নেয়া হয়েছিল... কিন্তু আম্মু বাদ সাধায় আমি এবং প্রায় একই ধরনের কারনে অন্য সবাই ও ট্রিপ cancel করে...তাই আসলে এবার যখন ও আবার বললো না করতে পারলামনা...যদিও আমার আর তানির দুজনেরই একটু শরীর খারাপ তাও ভাবলাম যাব...[আমি অবশ্য একটু কেউ কেউ করেছি না যাবার জন্য, কারন আম্মুর সাথে ঝগড়া এবং কথা বন্ধ...তাই মুড অফ, এছাড়াও GTS-08 এ কাজ করে পায়ে ব্যাপক ব্যথা...কিন্তু জাভেদ রাতে ফোন করে বলার পর ঠিক করলাম যাব...]...সকালে ৭টায় উঠে হাল্কা নাস্তা করে বের হলাম ৮টা ১০ এ...ঠিক করা আছে যে রাফি ওর বাসার সামনে থেকে ATCL এ উঠবে এবং আমার বাসার সামনে এসে আমাকে ফোন দিলে আমিও ঐ বাসেই উঠবো...বাস ছাড়তে দেরী হল...তাই সাইন্সল্যাবে [মানে মাত্র ০.১০% রাস্তা যেতেই আমাদের ৯টার কাছাকাছি বাজলো...] ...কথা ছিল ৯টার মধ্যে আমরা সবাই হকি স্টেডিয়ামের সামনে থাকবো...হল ঘোড়ার আন্ডা...আমরা পৌছালাম ১০ মিনিট দেরীতে...পৌছে জানলাম তানি আর তাসু মাত্র রওনা দিয়েছেন বাসা থেকে...ঐযে কথা আছেনা মক্কার মানুষ হজ পায়না...ঐ অবস্থা আরকি...যাই হোক আরো ১৫ মিনিটের মাঝে সবাই চলে এল[ওসমান আসছিল সবার আগে ঠিক ৯টায়...উনি বাংলাদেশের মানুষ না...ব্যাপক punctual...] সবাই মানে, আমি, রাফি, জাভেদ, তানিয়া, ওসমান, তাহসিনা আর রাব্বি তারপর ১০১ টা রাস্তা পার হয়ে আসলাম টিকিট কাউন্টারের কাছে ৩৫টাকা দিয়ে যে জায়গাটার টিকিট নেয়া হল তার নাম 'তিনদোকান'...কি আজিব নাম!...বাসের নাম আরও মজার 'আরাম'...কিন্তু ভাইরে নাম করনে যদি এট্টুশখানিক সার্থকতা থাকতো তাইলে আজকে আমার পিঠের ব্যাথাটা থাকতো না... ৪৫ মিনিটের ঝাক্কাস[মানে ঝাক্কি ফুল!] জার্নির পর পৌছালাম গন্তব্য...পুরাটা সময় অবশ্য হাহা হিহির কমতি হয়নাই...কমসে কম ৫ কি ৬ বার শ্রেকের ডংকির মত জাভেদ কে জিগাইসি...' are we there yet...?' হাহাহাহাহা...বাস থেকে নেমে ১০ মিনিট হাটার পর গ্রামের স্কুল [যেটা স্যার জগদিশচন্দ্র বসুর বাড়ি নিয়ে বানানো...]পার হয়ে যে বাড়িটার সামনে এনে জাভেদ আমাদের দাঁর করালো, সেটাকে শুধু বাড়ি না বলে জমিদার বাড়ি বললে appropriate হয়...আহা কি সৌন্দর্য...বুঝলাম জাভেদ কেন আমাদের এতকরে এখানে আনতে চাচ্ছিল...আমার গ্রামের বাড়ি এরকম হলে আমিও মানুষজনকে ডেকে ডেকে দেখাতাম...এখন অবশ্য মেরামত চলছে...ভাঙ্গা অংশ গুলা সারিয়ে চুনকাম এবং রং...যদিও মনে হয় ভাঙ্গাচোরা বাড়িটাই বেশী সুন্দর ছিল...কিন্তু কি করা...ওনাদের safely থাকতে হবে তো... ভিতরে ঢুকতেই দেখা হল জাভেদের চাচার সাথে...সবার সাথে পরিচিত হবার পর আমাদের ভিতরে গিয়ে বসতে বললেন...ভিতরে ভাবির সাথে আরেক দফা পরিচয়পর্ব শেষ করতে না করতেই আবার চাচী...হাহাহা... সবাইকে খুব আন্তরিক আর সুইট লাগলো... ভাবি pregnant আর সামনের জানুয়ারীর ২১ তারিখে উনার শুভদিন[আমরা ঠিক করেছি বাচ্চা হবার পরে অবশ্যি আরেকবার যাব...]...এরপরে আনন্দে ত আমাদের সকলের সবকয়টা দাঁত বের হয়ে গেল যখন চাচী বললেন এবারে সবাই নাস্তা খাও...হেহেহে...যে ঝাক্কি খাইসি...তাতে পেটের নাড়ীভুড়ি সুদ্ধই হজম হয়ে গেসে আর সেই সকাল ৭টায় খাওয়া একটা রুটি?...তার কি কোন হদিস আছে?...খাওয়া দেখে তো আরো আনন্দ হল...খিচুড়ি, আলু ভর্তা, ডিমভাজি, বরবটি ভর্তা, সিম ভর্তা আর জলপাইয়ের আচার...আহা...কি সুখাদ্য!!!...খেয়ে পেটের কোনা পর্যন্ত ভরে আমরা একটু রেস্ট নিতে বসলাম[রেস্ট না নিয়ে নড়ার উপায় রাখেন নাই চাচীজান...]... খানিকক্ষন গড়াগড়ি করে বের হলাম গ্রামটা ঘুরে দেখতে...প্রথমেই পুকুর ঘাট...পুকুরটা মোটামুটি বড়...ঘাট মোট দুইটা...দুইটাই পুরানো ধরনের... ভাঙ্গাচোরা...আর পুকুরটা দেখে মনে হয়...ভিতরে সিন্দুক...হাহাহা... সিন্দুক ভুত...কেউ পুকুরের ধারে কাছে গেলেই ক্যাঁক করে ধরে ভিতরে ভরে ফেলবে...পুকুরের দুইটা ঘাট দেখে আর কয়েক ডজন ছবি তুলে আমরা আগে বাড়লাম...পুকুরটাকে কেন্দ্র করেই ঘোরা হল বেশ কিছুক্ষন... অনেক হাসাহাসি আর বদমায়েশির পর রওনা হলাম মাইজপাড়ার উদ্দেশ্যে...১টার কাছা কাছি বাজে তখন...রোদের তেজও অনেক...বদ গুলা আমাকে ছাতা আনতে দেয়নাই...তাই একজায়গায় এসে যখন দেখা গেল দুইটা রাস্তা দুইদিকে...দুদিক দিয়েই যাওয়া যায়, তখন আমি বেছে নিলাম বামের রাস্তাটা...যেটা ছায়াঢাকা...আমার সাথে আসলো জাভেদ, আর ওরা গেল যেটা দিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়...হাহাহা...কারন একটু পরেই আমি আর জাভেদ দেখলাম যে ওরা যে রাস্তা ধরে যাচ্ছে তার একটু সামনেই পুকুর...আর পার হবার জন্য একটা এক বাঁশ এর সাঁকো... হাহাহা...আর ঐ দলে আছে দুইটা মেয়ে যারা আসলেই মেয়ে...আমার মত মেলে না...তার মানে হল একটু পরেই চ্যাঁচামেচি শুনতে পাব...পার হওয়া নিয়ে...হলও তাই...হাহাহা...তানিয়া এবং তাহসীনা বিশাল সিন ক্রিয়েট করে সবাইকে হাসায় পার হল সাঁকোটা...ওসমান আর জাভেদ পুরা ঘটনা ভিডিও করল...[করাই উচিত...that was funny!!!]...খানিকক্ষন পর আবারো বাঁশের সাঁকো...এবার আমাকেও পার হতে হল...কিন্তু আমি যেহেতু একটু মেলে টাইপ, তাই আমার তেমন কোন প্রবলেম হলনা... যাই হোক সাঁকো পার হয়ে দুপাশে পুকুর ভরা কচুরীপানা আর তার জোস বেগুনী ফুল ফেলে কিছুদুর যাওয়ার পরে দেখি আমরা মাইজপাড়ায়... সামনেই মৈত্রী সংঘ...আর জাতীয়তাবাদী দলের কার্যালয় আর ছোট বড় মিলিয়ে অনেক দোকান...দোকানে গিয়ে কোক চাইলাম দেখি মোজো, লেমু আর ফিজ আপ ছাড়া আর কিচ্ছু নাই[স্বদেশী পন্য, কিনে হও ধন্য!...] ...ঐসবের একটাও আমাদের ঠিক সহ্য হয়না তাই আমরা প্রাণ ম্যাংগো জুস[!] খেলাম...মানে পান করলাম...তাহসীনার আম্মাজান ফোন করে বললেন বিক্রমপুরের ঘি নাকি ভালো, কিছুটা কিনে আনতে...আমরা উনার কথা মান্য করে দুনিয়া তোলপাড় করে খুজে আনলাম ১০১টা নীলপদ্ম, থুড়ি...এক বোতল ঘি...তারপরে গ্রামের দোকানে ৪জন খেলাম দুধ আর বাকি ৩জন চা...তারপর ব্যাক টু জাভেদের বাসায়... সেখানে হল আরেকদফা ভুরিভোজন...এবার পোলাউ, ইলিশ মাছ, মুরগীর মাংশ, পটল ভাজি, সালাদ...[আহা! চাচীজানের কি রান্না...উমম...!] খাওয়া দাওয়া শেষে বিছানায় বসে অনেক মজা করা হল...তারপরে গেলাম ছাদে...ঘুরাঘুরি করে নিচে নেমে বিদায় নিতে গেলে চাচী বললেন উহু আরও কিছু খাদ্য বাকি আছে বতস...ধীরে...দই খাওয়া হল তারপরে দে ছুট... হেটে স্যার জগদীশচন্দ্রের গেইট পার হয়েই একটা বাস পেয়ে ঝাপাঝাপি করে তাতে উঠে গেলাম...ভুল বললাম...বলা উচিত ছিল একটা রোলার কোস্টার পেয়ে তাতে উঠে গেলাম...সেটা আমাদের নিয়ে ভোঁওওও করে একবার ডানে আর ভোঁওওও করে একবার বামে ছুড়ে ফেলতে ফেলতে যাত্রাবাড়ি এনে নামিয়ে দিল...[জাভেদ পোস্তগোলাতেই নেমে গিয়েছিল... ঐখান থেকে ওর বাসায় রিক্সা যোগে যাওয়া যায়...]সেখান থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম।রাব্বি একা আর তানিয়া, তাহসীনা একসাথে বাসার উদ্দেশ্যে রিক্সা নিয়ে রওনা দিল...ওসমানের বাসার দিকে যাত্রাবাড়ি থেকে সরাসরি বাস যায়, ও ও চলে গেল...বাকি রইলাম আমি আর রাফি...আমরা রিক্সা নিয়ে মতিঝিল হয়ে বাসে কিকরে ফিরলাম আর কতক্ষনে, সে এক বিরাট ইতিহাস...ঐটা আরেকদিনের জন্য রাখলাম...এম্নিতেই অনেক দিন লেখিনা...হাত ব্যাথা করছে...এখন যাইগা...ঠিক আছে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.