আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা ও কোটাপ্রথা । রাজাকার সন্তানদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কোটা প্রথা চালু করা হয়।

০০৩৯ ৩৩৯২৩২৩০৫৩

আমরা ও কোটাপ্রথা শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড অনেক সময় নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। গভীর রাত Ñ খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। মন চায় মা বাবার কাছে ফিরে যাই। কিন্তু দারিদ্রতাÑবেকারত্ব, আমার পায়ের মাঝে এক সোনালী শিকল বেধে দেয়া আছে। তার জন্য দায়ী কে? আমাদের দেশের সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে কোটাপ্রথাÑ? আমরা অনেকে জানিনা কোটাপ্রথা কি? কেনÑকখন থেকে শুরু।

আমার লেখার মাঝে আমি কিছু উদাহরন দিয়ে যাবোÑযার মাঝে পাবেন এর কার্যকারিতার বিরুপ প্রতিক্রিয়া। ইংরেজরা আমাদের মাঝে এর বীজ বপন করে গেছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাবার আগে পূর্ব পাকিস্তান আমাদের এক ধরনের অঞ্চল ভিত্তিক বৈষম্য ছিল। যার ফলে আমাদের মাঝে সেই বৈষম্য আজও বিরাজমান। শিক্ষা শিল্প কারখানা ও আলোকিত শহর পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আমরা এক সময় স্বাধীনতার সংগ্রামে লিপ্ত হই। বহু ত্যাগ স্বীকার করে আমরা আমাদের লাল সবুজের পতাকা পাই। দেশ স্বাধীন হলো। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা সর্ব ক্ষেত্রে আমাদের আপময় জনতার সংগ্রাম শুরু হলো। স্বাধীনতার পর দেখা গেল শিক্ষার দিক দিয়ে কুমিল্লা ও নোয়াখালী প্রথম ও দ্বিতীয় তারপর অন্যরা।

কোন খেয়ালে কোন যুক্তিতে তখনকার সরকার কোটা প্রথা চালু করলেন? মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের চেতনার মাইলফলক। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরী করা হয় কিন্তু কেন? তার দরকার ছিল না। বাংলাদেশে অল্প কিছু লোক/বা ব্যক্তি ছাড়া সবাই মুক্তিযোদ্ধা। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা যুদ্ধ সংগ্রাম করেছে বা সহয়তা বা সমর্থন করেছে তারা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা। আর যারা দেশ স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে - পাকিস্তানী আর্মির সমর্থন করেছে - তাদের বিভিন্ন কাজে সহয়তা করেছেন - মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন তারা সকলেই হল রাজাকার আলবদর, আলসামস।

ঘৃনা করি তাদের। তাদের তালিকা করলেই হয়। আমার জনা মতে ২১ হাজার রাজাকারের তালিকা আছে সরকারের কাছে। রাজাকার সন্তানদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কোটা প্রথা চালু করা হয়। না হয় সরকার যদি তখন প্রতিটি থানায় রাজাকারের তালিকা তৈরী করে টানিয়ে রাখতো, তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না।

এখন কোটা প্রথার কারনে রাজাকার ও তাদের সন্তানরা সুপ্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোটার কারনে সরকারী চাকুরী করে। দয়াকরে রাজাকারদের আর সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন না এই অবিচার বন্ধ করুন। হয়তোবা তখন দেশের শিক্ষার ভারসাম্য রক্ষার জন্য ও সরকারী চাকুরী সুবিধা পাবার জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয় তখন কিন্তু ভুল? রাজাকাররা তাদের উদ্দেশ্য সফল করেছে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে কোথাও এই কোটা প্রথার নজির নেই। এখন অবস্থা এমন হয়েছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা জন্ম নেওয়া হল গিয়ে পাপ।

এ সুন্দর পৃথিবীতে সবার বাচার অধিকার আছে। যোগ্যতা ও পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পরেও একজন শিক্ষিত যুবক চাকুরী না পায় এর জন্য দ্বায়ী কে? শিক্ষা-মা-বাবা-অঞ্চল-নেতারা- নাকি নীতিনির্ধাকরা? আমি শিক্ষিত যুবক কিšু‘ আমার জেলার কোঠা নেই – এর জন্য আমার কি করা উচিৎ- বলবেন কি? আমাদের দেশে হাজারও প্রমান আছে বেকার যুবকের আত্মহত্যা। একজন কৃষক তার স্বপ্ন থাকে সন্তান সুশিক্ষিত হয়ে তার দারিদ্র মোচন করবে। অনেক কষ্ট-অনেক ত্যাগ - খেয়ে না খেয়ে মা-বাবা সন্তানকে বড় করে স্বপ্ন পূরনের জন্য। এস এস সি থেকে মাস্টার্স বরাবরই সে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।

তার স্বপ্ন ছিল সরকারী চাকুরী করবে কিন্তু কোটা প্রথা তার সামনে হিমালয়ের মতো এসে দাড়িয়ে আছে। তার মা-বাব, ভাই-বোনদেরক সে কি বলবে? হয়তোবা সে ভাল ছাত্র একদিন বেকারত্বের অভিষাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য অন্ধকার নেশার জগতে পা দিবে। না হয় প্রবাসী হবে- হয়তো সামথ্য থাকলে। এর ফলে সমাজে কি হচ্ছে? অফিসার বিএ পাশ, পিয়ন কেরানী এমএ পাশ। মেধা ও যোগ্যতা দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এভাবে।

কোঠা প্রথার অবস্থা হল এমন, একজন পিতার সাত সন্তান। বরাবর পিতা তাদের দৌড় দেওয়ার ব্যবস্তা করেন। প্রথম ৫ বছর ৬ষ্ঠ ও ৭ম সন্তার প্রথম হয় একটানা, একদিন পিতা ঘোষনা করলেন ৬ষ্ঠ ও ৭ম সন্তান দৌড়ে পথম হলেও তাদের পুরু®কৃত করা হবে না। কারন বড় সন্তান ও ২য় সন্তান দৌড়ে অংশগ্রহন করলেই পাশ। দেখা গেল অভিমান করেএকদিন ৬ষ্ঠ ও ৭ম সন্তান থেকে সংসার থেকে চলে গেল।

এ অবস্থা আমাদের বাংলাদেশের। বাংলাদেশে কোন শিক্ষানীতি নাই, যে সরকার আসে তার মনমতো করে একটা নীতি মালা তৈরী করে। যার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আমাদের সংবিধানে নাই। আমাদের জাতীয়তাবাদ নিয়েও বিতর্ক - বাঙ্গালী না বাংলাদেশী? আমাদের জাতীয় পোষাক নিয়েও বিতর্ক। আজ যারা জাতীর বিবেক দয়া করে কোটা প্রথা তুলে দিন।

এ অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দিন তাহলে যোগ্য লোক তার সম্মান অনুযায়ী সম্মানিত স্থানে বসবে। না হয় একদিন সব ধ্বংস হয়ে যাবে। স্বাধীনতা শুধু পেয়েছি এ স্বাধ যেন পায় সুশিক্ষিত যুবকরা। প্রবাসে আজ বহু শিক্ষিত যুবক অনেক নিম্নানের কাজ করে, তার জন্য দ্বায়ী কোটা প্রথা। দারিদ্র ও বেকারত্ব দূর করার জন্য আজ আমরা প্রবাসী।

রোম শহরের কিছু চিত্র আমি তুলে ধরছি। মোঃ শামিম কবির স্টান্ড করা ছাত্র, মোঃ একে জামান কম্পিউটারের উপর শিক্ষা গ্রহন করে আজ তারা প্রবাসে। খান সাহেব, তমাল সাহেব, আরিফ সাহেব, ধ্র“ব সাহেব, রুবেল সাহেব আরও অনেকে তাদের শিক্ষায় তারা আলোকিত। কিন্তু তারা তাদের মেধা দেশের জণ্য ব্যয় করতে পারে নাই। শুধু কোটা প্রথার কারনে।

প্রবাসে আমাদের কিছু না কিছু করতে হয়। আমরা এখানে শ্রম দিতে এসেছি। শ্রম দিচ্ছি কিন্তু কোথায় দিচ্ছি। সেটা দেখার বিষয়। আমেরীকা, কানাডা, ব্রিটেন আরও উন্নত দেশ গুলো আমাদের দেশের মেধা নিয়ে যাচ্ছে।

ডিগ্রি নেয়ার জন্য যখন যায় তখন সেই দেশের সরকার বলে তোমার কি দরকার? যা কিছ দরকার আমি দিব। তুমি শুধু তোমার মেধা আমার দেশের জন্য ব্যয় কর। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ডিন বাংলাদেশী- জন্ম সিলেটে। কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রধান বাংলাদেশী। ডেনমার্ক মেডিসিন গবেষক প্রধান বাংলাদেশী (নোয়াখালী)।

বৃটেনের বহু সরকারী কমূকর্তা বাংলাদেশী। বৃটেনের কারী শিল্প বাংলাদেশী সুউজ্জ্বল চিত্র। বৃটিশ সরকারের ১/৩ কর আসে কারী শিল্প থেকে। এভাবে আমরা আমাদের মেধা হারিয়ে ফেলছি। সব অঞ্চল বৈষম্য তুলে দিয়ে যোগ্যতাকে সম্মান করে চাকুরী দেয়া উচিৎ।

আমি মুক্ত ও স্বাধীন চেতনার মানুষ। শিক্ষা জীবনের আলো। সেই আলো যদি বিকাশিত না হয় এর জন্য দ্বায়ী কে - কোটা প্রথা? কোটা প্রথার কারনে আজ শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে। যেমন বড় ভাই ভাল ছাত্র ছিলেন, লেখাপড়া শেষ করে বেকার তারপর পাড়ি জমায় প্রবাসে। পরিবার যখন দেখল ভাল ছাত্র হয়েওে দেশে কিছু করতে পারিনি পরবর্তী সমন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে পিতা মাতা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

এভাবে কমে যাচ্ছে শিক্ষার হার। আমরা একজন উপার্যনকারী পরিবারের পাচজন সদস্যের ব্যায় ভার বহন করি এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র। কারন আমাদের দেশের সরকার কারও দায়ভার বহন করে না। বেকার ভাতা ও বৃদ্ধ ভাতা আমাদের দেশে নেই। মেরুদন্ড হল একজন মানুষের সোজা হয়ে পথ চলার শক্তি।

আমাদের সরকার ব্যবস্থায়, সরকার জনগনের কাছে জবাব দিহিতা নাই। আর যারা ক্ষমতায় আছে তারা যখন ক্ষমতা ছাড়বে তখন বোঝা যাবে কী পরিমান দুর্নীতি করেছে। তারা জাতীর জন্য কোন উল্লেখ যোগ্য অবদান রাখতে পারেনি । তাই কোটাপ্রথার কারনে আজ অযোগ্য লোকগুলো যোগ্য স্থান দখল করে আছে। তারা জাতীর মেরুদন্ড সোজা করবে কীভাবে।

তাদের নিজের অবস্থান দেখলে বুঝতে পারি আমরা আজ কোথায় আছি। আসুন দেশটাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাচাই। না হলে এখনতো এক তৃতীয়াংশ দূর্নীতিগ্রস্থ - তখন দেখা যাবে গোটা জাতি দূর্নীতিতে জড়িয়ে যাবে তখন গৃহযুদ্ধ অত্যাবশ্যক হয়ে যাবে। জাতি আজ কোটা প্রথার কারনে অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। কোটাপ্রথা তুলে দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজকে আলোকিত করি।

ঘরে ঘরে আবার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়–ক । আগামী প্রজন্ম যেন সু প্রভাত - সুহৃত- সমুজ্জল মুক্ত জীবন নিয়ে যেন গড়ে উঠতে পারে,তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে সরকারের কাছে এই প্রত্যাশা। সবুজ শ্যামল ছায়া- ঘেরা আমকি মোদের গাঁ- স্নেহের আচঁল উচিয়ে সেথাঁয় ডাকছে খোকার মা- সে যে খোকা বিদেশ গেল মাকে একা ফেলে আজও মা গুমরিয়ে কাঁদে খোকার পথ চেয়ে । মো:মিজানুর রহমান রাজু, রোম প্রবাসী!!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।