QuickBooks যেহেতু একটি Accounting Software তাই এই সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করতে হলে Basic Accounting এর কিছু বিষয় চলে আসবেই। আমি এই টিউটোরিয়ালটিতে চেষ্টা করবো Accounting আলোচনাকে যতদূর সম্ভব এরিয়ে চলতে কারণ অনেক Non-Accounting লোকজনও এই সফটওয়্যাটি শিখতে খুবই আগ্রহী। তবে তারপরও কিছু Accounting আলোচনা করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ এইটুকু না করলে কিছু বিষয় বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। তবে এখানে যারা Accounting এর ছাত্র তারা এই পর্বটি না পড়লেও চলবে।
আর যারা Non- Accounting Person তাদের জন্য ভালো খবর হচ্ছে তারা যদি এই পর্বটি না বুঝে থাকেন তাহলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না। তবে বুঝতে পারলে অবশ্যই লাভ আছে। যাদের Accounting ভিত্তি মজবুত তারা এই সফটওয়্যারটি ভবিষ্যতে কোথাও Implement করতে পারবেন এবং Consultant হিসাবে কাজ করতে পারবেন। আর যদি Accounting ভিত্তি দুর্বল হয় তাহলে QuickBooks Software টি শুধুমাত্র ভালোভাবে Operate করতে পারবেন। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
সারাবিশ্বে QuickBooks এর ৫০ লক্ষ ব্যাবহারকারীর বেশিরভাগই Non-Accounting Person. এটা অবশ্যই আশাব্যন্জক ব্যাপার।
আসুন শুরু করা যাক:
লেনদেন কি?
লেনদেন হচ্ছে আর্থিক মানদন্ডে পরিমাপযোগ্য প্রতিটি ঘটনা যা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। যেমন: সম্পদ ক্রয়, বেতন প্রদান, অফিস ভাড়া প্রদান, পন্য ক্রয় ইত্যাদি। মূলত এই ঘটনা সমূহ রেকর্ড করা এবং এগুলোর ফলাফন নিয়ে আর্থিক রিপোর্টসমূহ প্রস্তুত করাই একজন একাউন্ট্যান্ট এর কাজ। আর এই কাজে কুইকবুকস বা এই জাতীয় সফটওয়্যারগুলো ব্যাবহার করা হয়।
লেনদেনকে বিশ্লেষণ করা:
একটি লেনদেনকে বিশ্লেষণ করলে এর মধ্যে দুইটি ইউনিট পাওয়া যায় যার দ্বারা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়। এই ইউনিটগুলোকে হিসাব বা হিসাব খাত বলে। একটু সহজ করে বলি- একটি পরিবারের হিসাবখাত সমূহ হতে পারে এমন:
আয়ের খাত সমূহ:
বেতন বাবদ আয়
সঞ্চয় পত্রের সুদ হতে আয়
ব্যাবসা হতে আয়
অন্যান্য আয়
ব্যায়ের খাত সমূহ:
বাড়ীভাড়া
যাতায়াত খরচ
শিক্ষা খরচ
চিকিৎসা খরচ
বাজার খরচ
বিদ্যুৎ বিল
গ্যাস বিল
অন্যান্য খরচ
উপরোক্ত খাত সমূহের মতো একটি প্রতিষ্ঠানেরও হিসাবের খাত থাকে। রাষ্ট্রের হিসাবের খাত সমূহও প্রায় এরকমই হয়ে থাকে। শুধু হিসাব খাতের নামের ভিন্নতা থাকতে পারে মাত্র।
একটি লেনদেনকে বিশ্লেষণ করলে উপরোক্ত হিসাবখাত সমূহের মতো যে কোনও দুইটি হিসাব খাতের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। (এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে HSC লেভেলের হিসাব বিজ্ঞান প্রথম পত্র বইয়ের প্রথম কয়েকটি অধ্যায় পড়তে পারেন। আর যারা ইংরেজীতে পড়তে চান তারা Weygandt Kimmel & Kieso এর বইটি পড়তে পারেন। )
হিসাবের শ্রেণী বিভাগ:
একটি হিসাবকে নিম্নোক্ত যে কোনও শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
Asset (সম্পদ) = প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর যে বস্তুসমূহ প্রতিষ্ঠানের অধিকারে রয়েছে সেই বস্তুসমূহ। যা বিক্রয় করে বা সমর্পণ করে অথবা আদায় করে দ্রুত নগদ টাকায় রুপান্তর করা সম্ভব।
যেমন: নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট, মজুদ পণ্য, আসবাবপত্র, বিভিন্ন অফিস ইকুইপমেন্টস (যেমন: এয়ার কন্ডিশনার, ফটোকপি মেশিন, জেনারেটর ইত্যাদি), গাড়ী, জমি, কম্পিউটার, পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যাবহৃত মেশিনারী ইত্যাদি। এগুলো বিক্রয় করে দ্রুত নগদ টাকায় রুপান্তর করা সম্ভব।
আরেকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েছে যা দৃশ্যমান নয় কিন্তু এর ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে - তা হচ্ছে বিভিন্ন কাষ্টমারের নিকট বকেয়া পাওনা। একে হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায় Accounts Receivable বলে। ধারে বিক্রয়ের মাধ্যমে এই Accounts Receivable তৈরী হয় এবং কাষ্টমারের নিকট হতে সেই টাকা আদায়ের মাধ্যমে এর সমাপ্তি হয়।
সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ বিবেচনা করে একটি বস্তকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করা যায়:
১. এটি প্রতিষ্ঠানে ব্যাবহারের উদ্যেশ্যে ক্রয় হবে।
২. এর একটি উল্লেখযোগ্য মূল্য থাকতে হবে (স্বল্পমূল্যের বস্তু সম্পদ হিসেবে বিবেচ্য নয়)।
৩. এটা দীর্ঘ সময় ব্যাবহার উপযোগী হতে হবে (১ বছরের অধিক কাল)।
৪. এটি খুব নিয়মিত ক্রয় করা হবে না। অর্থাৎ এটি প্রত্যেক মাসে বা কোয়ার্টারে অথবা প্রত্যেক বছর ক্রয় করা হবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে উপরোক্ত বিষয় সমূহ ছাড়াও আরও অনেক জিনিষ আছে যা বিক্রয় করে খুব দ্রুত নগদ টাকায় রুপান্তর করা সম্ভব। যেমন: ক্যালকুলেটর মেশিন, ষ্টেপলার মেশিন, বৈদ্যুতিক বাতি, কলম-পেন্সিল ইত্যাদি। আমরা কি এগুলোকে সম্পদ বলবো ? উত্তর হচ্ছে – না। আমরা এগুলোকে সম্পদ বলবো না। কারণ হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায় কোনও বস্তুকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হলে সেই বস্তুর একটি উল্লেখযোগ্য মূল্য (Significant Value) থাকতে হবে।
এই Significant ভ্যালু নির্ধারনের কোনও নির্দষ্ট Financial Amount নেই। একজন Accountant তার নিজস্ব বিচার বিবেচনা, এ সংক্রান্ত তার দেশের Accounting Practice, তার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নীতি (Financial Policy), আয়কর আইন ইত্যাদি বিবেচনা করে একটি বস্তুকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করে।
কোনও বস্তুকে সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা হবে কি হবে না এটা Accountant দের একটি কমন মিসটেক। এটা পৃথিবীর সব দেশের Accountant দের মধ্যেই বিদ্যমান। এই অংশে কোনও মিস কনসেপ্ট থাকাটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আরেকটু পরিষ্কার করে বলি-আরমান সাহেব একজন চাকুরিজীবি মানুষ। তার মাসিক বেতন ৩০,০০০ টাকা। তিনি গতমাসে নিম্নোক্ত খরচ করলেন:
বাড়ীভাড়া-১০,০০০ টাকা
খাবার খরচ-৬,০০০ টাকা
অন্যান্য খরচ-২,০০০ টাকা
টেলিভিশন ক্রয়- ১০,০০০ টাকা
উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় গতমাসে আরমান সাহেবের আয় কত? খরচ কত? এবং লাভ কত? বেশীরভাগ মানুষ উত্তর দিবেন তার আয় ৩০,০০০ টাকা, খরচ (১০,০০০+৬,০০০+২,০০০+১০,০০০) = ২৮,০০০ টাকা এবং লাভ (৩০,০০০-২৮,০০০) = ২,০০০ টাকা।
কিন্তু একজন একাউন্ট্যান্ট উত্তর দিবে তার আয় ৩০,০০০ টাকা, খরচ (১০,০০০+৬,০০০+২,০০০) = ১৮,০০০ টাকা এবং লাভ (৩০,০০০-১৮,০০০) = ১২,০০০ টাকা। সে টেলিভিশন ক্রয়কে খরচ হিসেবে বিবেচনা করবে না।
কারন টেলিভিশ ক্রয় করা আরমান সাহেবের নিয়মিত খরচ নয় অর্থাৎ তিনি প্রত্যেক মাসে বা কোয়ার্টারে বা বছরে টেলিভিন ক্রয় করেন না। তাই এটা তার খরচ নয় এটা তার সম্পদ ক্রয়। তাই মাসিক লাভ-লোকসান নির্ধারণে সম্পদ ক্রয় সংক্রান্ত খরচকে বিবেচনায় আনা হবে না। শুধুমাত্র তার নিয়মিত খরচ সমূহকেই খরচ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
Liability (দায়): কোনও ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে ধার গ্রহণ করা হলে বা ধারে কোনও পণ্য বা সেবা গ্রহণ করা হলে এবং তার মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত এটা প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়।
যেমন: ধারে পন্য ক্রয়, ঋণ গ্রহণ, বকেয়া বেতন, বকেয়া ভাড়া ইত্যাদি।
Equity (মূলধন): প্রতিষ্ঠানের মালিক কতৃক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহকৃত অর্থ যা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাজে ব্যাবহার করা হয়। মালিক তার প্রতিষ্ঠানে এই মূলধন বিভিন্নভাবে সরবরাহ করতে পারে। যেমন: নগদ টাকার মাধ্যমে, আসবাবপত্র, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন স্থায়ী সম্পদ প্রদানের মাধ্যমে ইত্যাদি। মূলধনও এক প্রকার দায়।
Income (আয়): পণ্য বা সেবার বিক্রয় মূল্য। এই বিক্রয় নগদ টাকায় বা চেকের মাধ্যমে বা ধারে সংঘটিত হতে পারে। আয় এবং প্রাপ্তি এক জিনিষ নয়। যেমন: ধারে বিক্রয় করা হলো। এটা অবশ্যই এক ধরনের আয় কিন্তু এই ধারে বিক্রয়ের টাকা কিছুদিন পর যখন কালেকশন করা হবে তখন এটাকে আয় বলা যাবে না।
কারণ এটার আয় পূর্বেই রেকর্ড করা হয়েছে। নতুন করে রেকর্ড করার প্রয়োজন নেই। আরেকটি উদাহরণ দিই-ব্যাংক হতে ঋণ নেয়া হলো-এটাকে কি আয় বলা যাবে? না। কারণ এটা আয় নয় এটা দায় (Liability)। আয় এবং দায় নিয়ে কোনও confusion থাকা যাবে না।
Expense (ব্যয়): ব্যায় হচ্ছে আয়ের বিপরীত। এটা মুনাফা অর্জনের জন্য নির্বাহ করা হয়ে থাকে। ব্যায় হতে প্রাপ্ত সুবিধা স্বল্পকালীন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-কর্মচারীদের বেতন, শ্রমিকদের মজুরি, অফিস ভাড়া, কারখানা ভাড়া, যাতায়াত খরচ, বিদ্যুৎ বিল, ষ্টেশনারী ক্রয়, ইন্টারনেট বিল ইত্যাদি। ব্যায়ের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই জাতীয় ঘটনা নিয়মিত ঘটে থাকে।
অর্থাৎ, প্রতি মাসে, প্রতি কোয়ার্টারে, প্রতি বছর ইত্যাদি। সম্পদ ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি কখনই ব্যায় নয়।
Accounting এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট Profit & Loss Account এবং Balance Sheet আয়-ব্যায় এবং সম্পদ-দায়ের ভিত্তিতে করা হয়। সূতরাং এগুলো সমন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকাটা জরুরী। আয় এবং ব্যায় শ্রেণীর হিসাব সমূহ নিয়ে করা হয় Profit & Loss Account এবং সম্পদ, দায় এবং মূলধন নিয়ে করা হয় Balance Sheet.
হিসাবের ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র:
সম্পদ = বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং হ্রাস পেলে ক্রেডিট
দায় = হ্রাস পেলে ডেবিট এবং বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট
মূলধন = হ্রাস পেলে ডেবিট এবং বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট
আয় = হ্রাস পেলে ডেবিট এবং বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট
ব্যায়= বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং হ্রাস পেলে ক্রেডিট
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে HSC লেভেলের হিসাব বিজ্ঞান প্রথম পত্র বইয়ের প্রথম কয়েকটি অধ্যায় পড়তে পারেন।
আর যারা ইংরেজীতে পড়তে চান তারা Weygandt Kimmel & Kieso এর বইটি পড়তে পারেন। বৃটিশ রাইটারদের বই পড়বেন না।
আগামী পর্বে আশাকরি মূল কুইকবুকস নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারবো। আপনাদের মতামত জানতে পারলে আমার জন্য সুবিধা হবে। পরবর্তী লেখাগুলো সেই অনুযায়ী সাজাতে পারবো।
কারণ QuickBooks এর মতো একটি সফটওয়্যার লিখে লিখে বুঝানো যথেষ্ট চ্যালেন্জিং কাজ। আপনাদের সহযোগিতা না পেলে আমি এটা কখনই পারবো না। তবে সবাই মিলে এটাকে সার্থক করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।