বোতাম ছাড়া শার্টের কথা চিন্তা করুন তো। ভাবছেন, এ-ও সম্ভব? উত্তর, না। পুরুষ কিংবা নারী—যার শার্টই হোক, তাতে বোতাম থাকবেই। শার্ট কিংবা টি-শার্টের অত্যাবশ্যকীয় একটি উপকরণ এই বোতাম।
অবশ্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী বাংলাদেশের পোশাক খাত কয়েক বছর আগেও আমদানি করা বোতামের ওপরই নির্ভরশীল ছিল।
তবে চিত্র অনেক পাল্টেছে। দেশেই এখন মানসম্মত বোতাম তৈরি হচ্ছে। তা দিয়ে দেশের পোশাক কারখানাগুলোর চাহিদার ৬০ শতাংশই এখন পূরণ হচ্ছে।
আর এ কাজ করতে গিয়ে দেশে বোতাম তৈরিও এখন একটি বড় শিল্প খাত হিসেবে গড়ে উঠেছে। পোশাকের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে দেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বোতাম রপ্তানিও।
বোতামশিল্পের চালচিত্র: আশির দশকের মধ্যভাগে স্থানীয় পোশাক কারখানাগুলোতে বোতাম সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে মেজর জব্বার নামের একজন বাটন কিং নামে একটি কারখানা স্থাপন করেন। তবে রপ্তানিমুখী আধুনিক বোতাম প্রস্তুতকারী প্রথম কারখানা হলো ইন্টারলিংক এক্সেসরিজ লিমিটেড। ১৯৯৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন ইফতেখার আহমেদ। একই বছর বোতাম উৎপাদন শুরু করে ডেকো এক্সেসরিজ লিমিটেড।
ডেকোর পরিচালক সৈয়দ আখতার জামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তখন ডেকো গ্রুপের পাঁচ-সাতটা পোশাক কারখানায় পোশাক তৈরির জন্য আমাদের বোতাম আমদানি করতে হতো।
নিজেদের তাগিদেই পাঁচটা যন্ত্র নিয়ে আমরা বোতাম কারখানা চালু করি। এখন যন্ত্র আছে ৮০টি। ’
ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি প্রতিষ্ঠান এখন দেশে বোতাম বানাচ্ছে। বোতাম প্রস্তুতকারী কারখানাগুলো মূলত গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায়। কিছু কারখানা আছে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে।
এসব কারখানায় কাজ করছেন প্রায় আট হাজার শ্রমিক।
বাজারের হাল: বিজিএমইএর হিসাবে, দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে প্রতি মাসে আড়াই হাজার কোটি টাকার ১৯ ধরনের সহায়ক সরঞ্জাম (এক্সেসরিজ) লাগে। এর একটি বোতাম।
বোতামশিল্পের মালিকেরা বলছেন, বিশ্বে যত ধরনের বোতাম তৈরি হয়, তার ৯৫ শতাংশই এ দেশে তৈরি করা সম্ভব। সে ধরনের প্রযুক্তি দেশে রয়েছে।
বোতাম প্রস্তুত ও রপ্তানিকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি মাসে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি টাকার বোতামের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই দেশের বোতাম প্রস্তুতকারীরা পূরণ করে। টাকার অঙ্কে তা ৭০ কোটি।
একটি পোশাক রপ্তানি হলে তাতে ব্যবহূত বোতামও এর সঙ্গে রপ্তানি হয়। দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোকে যে পরিমাণ বোতাম সরবরাহ করা হয়, তার মূল্যকেই বোতামের রপ্তানি আয় ধরেন বোতামশিল্পের মালিকেরা।
এটি হলো প্রচ্ছন্ন রপ্তানি।
সম্প্রতি সীমিত পরিসরে শুধু বোতাম রপ্তানিও শুরু হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্কে বোতাম রপ্তানি করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
ক্রেতাদের ফরমাশ বড় বাধা: উদ্যোক্তাদের মতে, বোতামশিল্পের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ফরমাশ। অনেক ক্ষেত্রেই তারা তাদের সরবরাহকারী কারখানাগুলোকে বলে দিচ্ছে কোন বোতামটা পোশাকে ব্যবহার করতে হবে।
ফলে সক্ষমতা থাকলেও দেশীয় বোতাম প্রস্তুতকারীরা অনেক ক্ষেত্রেই বোতাম সরবরাহ করতে পারছে না।
দেশের পোশাক কারখানায় ব্যবহূত বোতামের বড় একটি অংশ আসছে চীন থেকে আর কিছু অংশ আসে ভারত থেকে।
উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চীন থেকে ব্লাঙ্ক (বোতাম তৈরি হওয়ার পূর্বাবস্থা) আমদানির কথা বলে বোতামই আমদানি করছে। চীনে প্রতি কেজি বোতামের দাম পাঁচ থেকে ছয় ডলার। আর ব্লাঙ্কের দাম ৯০ সেন্ট।
এতে করে তারা কর ফাঁকি দিচ্ছে। আর প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে দেশীয় বোতামশিল্প।
আবার কয়েক মাস ধরে এইচএস কোড ব্লকের নামে আমদানি চালানের সব রাসায়নিকের শতভাগ পরীক্ষা করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বোতাম তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পিগমেন্ট। আর এই পরীক্ষা করতে গিয়ে কালক্ষেপণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
আবার তা খালাসে প্রতি কনটেইনারে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য
১. মাঝারি আকারের একটি বোতাম কারখানা করতে আট থেকে ১০ কোটি টাকা লাগে।
২. এমন কারখানায় প্রতি মাসে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার জিজি (গ্রেট গ্রস—এক জিজি মানে ১৭২৮টি বোতাম) বোতাম তৈরি হয়। এই বোতামের রপ্তানিমূল্য প্রায় দেড় লাখ ডলার।
৩. বোতাম তৈরির মূল কাঁচামাল রেজিন।
আমদানি করা যাবে তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুর থেকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।