আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..
মহামনীষীদের জীবনিতে এক অদ্ভুত সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়: প্রত্যেকেই ছিলেন কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ, জগত-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন,রীতি-নীতি-শিষ্টাচার বর্জিত এবং অবশ্যই উদাসীন-খেয়ালী। মোদ্দাকথা, কোন সুনির্দিষ্ট ছকে বাধা জীবন তাদের ছিল না যা আমাদের মত সাধারণ মানুষদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে; অথচ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার স্ফীত হয়েছে তাদেরই সেইসব হেয়ালীগাথায়। যেমন, শেক্সপিয়ারের পড়াশোনার প্রতি নিদারুণ ঔদাসীন্য তার শিক্ষককে বলতে বাধ্য করেছিল-’বাবা, তোমার ভবিষ্যত অন্ধকার। ’আবার,স্কুলপালানো রবীন্দ্রনাথ, প্রতিনিয়ত গণিতে অকৃতকার্য হওয়া আইনস্টাইনেরা হাতছানি দেয় আমাদের দুরন্ত শৈশবকে । এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয় যে তাদের এইসব রীতিকে (ভীমরতি বলাই বাঞ্ছনীয়) পুঙ্খানুপুঙ্খ আদর্শ ধরে বেড়ে উঠে অগণিত তরুণ; কিন্তু তাতে করে পৃথিবীতে কি প্রতিদিন আর একজন আইনস্টাইন- শেক্সপিয়ারের আবির্ভাব ঘটছে?বরং আশঙ্কাজনক হারে বেকার-ভবঘুরেদের দল ভারী হচ্ছে দেশে দেশে ।
a=b, b=c সম্পর্ক থেকে a=c হওয়ার নিশ্চয়তা গণিত অহরহ দিলেও জীবনের অঙ্ক অহর্নিশি গণেশ উল্টে দেয়। সেদিন অলিয়স ফ্রসেস থেকে french class শেষে ঐতিহ্যবাহী ১৩ নম্বর বাসে করে ফেরার পথে আমার সিটের উপর একটি অর্ধপুরনো ডায়েরৗ পড়ে থাকতে দেখে আলগোছে ব্যাগে পুরে ফেললাম; ব্যক্তিগত ডায়েরী স্ত্রী’র মত একান্ত আপন (copyright সংরক্ষিত!)হলেও আমাদের মত শৌখিন লেখকদের অভিধান থেকে সৌজন্যবোধ জন্মের সময়ই নাড়ীরূপে ছেটে ফেলা হয়েছে!এরপর একটানা সাতদিন সেই ডায়েরী পড়ে অদ্ভুত কিছু সিদ্ধান্তে পৌছেছি; কিন্তু কী সিদ্ধান্ত সেটি উদঘাটনের দায়িত্ব পাঠকের। সংকেত হিসেবে ডায়েরীর কিয়দংশ এখানে তুলে ধরছি
(ডায়েরীর অজ্ঞাত স্বত্ত্বাধিকারী যে-ই হোন পারলে একটা গায়েবানা জানাযা দিতে ভুলবেন না)
২৩শে জুলাই,২০০৫
শনিবার, রাত:২ঘটিকা
২ আউন্স হৃদয় শরণে তোমার কাছে....
৩৬/২৭সাইজের একটি হৃদয় খুঁজছি টেকনাফ থেকে ঠাকুরগাঁও য়ে
অবশ্য যৎকিঞ্চিত ছোট-বড় হলেও চলবে; হৃদয় দিয়েই পূরণ করে নেবো হৃ দয়ের হেরফের
এই কে..কে..কে ওখানে; কেড়ে নিতে চায় আমার জ্যোৎস্নার মিছিল?
ইদানীং শূন্যতা’রা গোষ্ঠীসুদ্ধ আবাস গড়েছে হৃৎপিণ্ডের ঠিক মাঝখানটায়..
যেখানে থাকে অনুভূতির স্রোতস্বিনী.... এই কে..কে..কে ওখানে?
ঠিক কি কারণে তোমাকে ভাল লাগে বলা মুশকিল; কিছুটা খামখেয়ালও বটে
হতে পারে তোমার হৃদয় ৩৫/২৪ কিংবা তার আশেপাশে বলেই
তুমি কি আসলে ?নারী, প্রস্ফূটিত কমলকলি নাকি বৈরাগ্যের গেরুয়া বসন;
আমি ভেবে নিরুত্তর..
তবু অবশেষে তোমাতেই করি আকণ্ঠ নিমজ্জন: হবে কি একটা পেলব হৃদয়...
মাত্র ২আউন্স!
বেশি চাইবনা,শুধুই ২আউন্স! এই কে..কে..কে ওখানে?
কাল কবিতা উৎসবে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে হবে ; অবশ্য এই কবিতা শ্রোতামহলে পৌছলে আপনাআপনিই আমার কার্যসিদ্ধি হবে; লোকে তখন পেত্রার্র্ক-ইয়েটস ভুলে যাবে;এমনকি মধুসূদনেরসনেটও আমার পাশে নিষ্প্রভ হতে বাধ্য ; আর রোমাণ্টিসিজম-সু’রিয়েলিস্টিকতা রবীন্দ্র-নজরুলতো সেভাবে উপলব্ধিই করতে পারেনি! অতএব...থাক, আজকের মত ঘুমাই।
পাদটীকা: স্থানাভাবে ডায়েরীর সম্পূ র্ণ কবিতাটি দেখানো সম্ভব হলনা। তবে অতি আগ্রহী পাঠক চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাবৎ অনুসন্ধিৎসার অবসান ঘটাতে পারেন।
১১ইজুলাই,১৯৯৯
রবিবার,রাত:১০ঘটিকা
আমার মা-বাবা সম্ভবত কখনই আধুনিক হতে পারবেননা; সবসময় একই কথার পুনরাবৃত্তি :পড়,পড়। কিভাবে যে বোঝাই তাদের ছেলে সাধারণ হওয়ার জন্য পৃথিবীতে আসেনি; তার বন্ধু হোমার, ভলতেয়ার কিংবা মাইকেল এঞ্জেলো- যারা পড়াশোনার ত্রিসীমানা পর্যন্ত মাড়াননি কোনকালে। সেদিক থেকে আমি বরং অনেক উদারপন্থী_ নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও ২বারের চেষ্টায় ইন্টার পাশ করেছি! কিন্তু বাবা-মা’র প্রত্যাশার মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক; আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ছিলেন বখে যাওয়া সন্তান, তার বাবা-মা কি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পেরেছিলেন এই ছেলের ভেতরেই লুকিয়ে আছে “ the old man and the sea” এর সঞ্জিবনী? গড়পড়তা একজন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার গড়ার মধ্যেই মা-বাবাদের স্বপ্নের পরিধি বিস্তৃত; অসাধারণ মার্কটোয়েনরা কেন যেন তাদের ভীষণ চক্ষুশূল!
১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০০২
শুক্রবার, রাত:১১ ঘটিকা
বাবার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং আশু সমাধানের সম্ভাবনাও সুদূর পরাহত বলে মনে হচ্ছে। আমার মাথার দৗর্ঘ চুল, গলার মালা তার অসহ্য লাগে! তাই সরাসরি তাকে প্রশ্ন করে বসি-” এই বয়সে এসেও প্রতিদিন একবার মোনালিসার ছবি না দেখলে তোমার ভাল লাগে না; কিন্তু তুমি কি জান এই ছবির চিত্রকর দ্য ভিঞ্চির চুলের দৈর্ঘ্য মা’র চুলের চাইতেও কয়েক ইঞ্চি বেশি ছিল!” বাবার সাফ জবাব -”জিনিয়াসদের চরিত্র নিয়মতান্ত্রিকতায় বিচার করা বোকামি; তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
” হায়রে পিতৃদেব আমার! কোথাকার কোন দ্য ভিঞ্চির বিচিত্র চরিত্রের প্রশংসায় সপ্তমুখ(!) হতে আপত্তি নেই, আর নিজের ছেলে সেরকম কিছু করতে চাইলেই গৎবাধা নিয়মের বেড়াজালে তাকে আটকে রাখার নির্মম দুরভিসন্ধি!তবে কি ভিঞ্চির প্রতি তার ভালোলাগা একধরনের প্রহেলিকা মাত্র? নেশা ছাড়া ভাবের জগতে বিচরণ কেন যেন ঠিক পূর্ণতা পায়না। গঞ্জিকায় দম না দিলে ভ্যানগগের পক্ষে ছবি আঁকাই দুরূহ হত, বায়রনের এক হাতে থাকত মদের গেলাস , অন্য হাতে লেখার সরঞ্জাম! আমি লেখার প্রয়োজনে মাঝে মাঝে...ফেনসিডিল না হয় একটু আধটু সিদ্ধি সেবন করি; ব্যস এতেই বাবা অগ্নিশর্মা! অথচ তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরী বায়রন সম্ভ¢ারে পরিপূর্ণ। বাবা জোর করে কেন আমাকে মিডিওকার বানিয়ে রাখতে চায় বুঝিনা, কিন্তু বড় আমাকে হতেই হবে। প্রয়োজনে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করতেও সামান্যতম দ্বিধান্বিত হবনা; শেক্সপিয়ারও তো মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ঘর ছেড়েছিলেন!!
১৬ই মার্চ,২০০৪
মঙ্গলবার,রাত:১টা৪১
নীলিমাকে আজকাল অচেনা মনে হয়; প্রেয়সীসুলভ আবিষ্টতার অন্তরালে কোথায় যেন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, চেহারায় টিউলিপের লাবণ্য অল্প অল্প করে ক্যামেলিয়ার কাঠিন্যে রূপ নেয়া- সবমিলিয়ে নীলিমা এখন অনেকটাই সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ! ওর চাওয়াগুলোকেও শিশুতোষ লাগে _প্রতিদিন দেখা করা, ফোনে কথা বলা, অন্য মেয়েরসঙ্গেকথা বলার জন্য হাজার কৈফিয়ত- এইসব typical human nature এর ঘোরটোপ তার অন্তঃস্থলে দুর্ভেদ্য হয়ে উঠছে।
এই মুখরা রমণীকে বোঝানোও দুঃসাধ্য যে আমি কারো একার সম্পদ নই , আমি সসীমের মাঝেই অসীমকে ধারণ করতে চাই।
প্রতিটি মানুষই এক একটি নতুন বই; শুধু ওর একার মধ্যে নিমগ্ন থাকলে অসংখ্য বই পড়ার সুযোগ-বঞ্চিত হতে হবে আমায়; বিশেষত নারীবাদী বইগুলোতে নিহিত আছে সকল চিন্তা,দর্শন, শিল্পকলার মুক্তি; অথচ আমার একাধিক নারী সংস্রবকে সে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে অপারগ! অন্যদিকে,চিরন্তন জানার স্পৃহা থেকে জ্যাকরুশো তিনটে বিয়ে পর্যন্ত করেছিলেন!এতসব মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের ফলশ্র“তিতে নীলিমা-আমার সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে আমি সন্দিহান। but who cares! মিল্টনের সঙ্গে তার স্ত্রী’র বনিবনা না হওয়াতেই হয়ত পৃথিবীতে ” paradise lost” রচিত হয়েছিল। নজরুলের নার্গিসের মত নীলিমাও না হয় আমার জীবনে হয়ে থাকবে এক বিসর্জনের ফুল!
১২ই এপ্রিল,২০০৬
বুধবার,রাত: ৮টা১৫
এই বুড়ো-ভাম intellectual দের বক্তৃতা শুনলে নিজেকে control করাটা tough হয়ে পড়ে। ভালো কিছু করার সামর্থ নেই , পুরনো কীর্তির কাসুন্দি ঘেটে আর ঢালাওভাবে নতুনের সমালোচনা করে আজ অমুক টিভি চ্যানেল, কাল ওই পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিযেই এরা নিজেদের রুটি-রুজির সংস্থান ঘটায়। ভাবখানা এমন যেন নতুন মানেই সব অপগণ্ডের দল, সুকান্ত-জীবনানন্দের প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে প্রতিভাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে! কত নামজাদা পণ্ডিতের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠালাম; অধিকাংশই সেভাবে ফেরত এল-বিজ্ঞ মহোদয়গণ সেটি খুলে দেখবার প্রয়োজনবোধ করেননি, কেউবা আবার দু’কলম লিখেও দিলেন_ ভাষা অবিন্যস্ত, উপস্থাপন দুর্বল, বৈচিত্রে ঘাটতি, লয়-মাত্রা-ছন্দবর্জিত, লেখক হওয়া অনেক দুঃসাধ্য....ইত্যাদি ইত্যাদি।
হুইটম্যানের যে বইটি তাকে বিশ্ববিখ্যাত করেছে সেটি ছাপাতে প্রথমে কোন প্রকাশকই পাওয়া যাচ্ছিল না এবং প্রথম বছর একটি কপিও বিক্রি হয়নি; এইসব গোফে তা দেওয়া intellectual দের সাধ্য কি হুইটম্যানকে মূল্যায়ন করবে! এরা তো কেবল জীবন ঘনিষ্ঠতা, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য প্রভাবের বুলি আউড়ে পকেট ভারী করতে জানে! প্রকাশকগুলোও সব shylok এর প্রতিমূর্তি; টাকা পেলে মহোৎসাহে কামসূত্র ছাপাতে শশব্যস্ত হয়ে পড়ে, নতুন লেখক মহাকাব্য লিখলেও বিনা পয়সায় “no entry” . এই নির্বোধ প্রকাশকদের দ্বারস্থ হতে হতে রঙিন পাঞ্জাবি বিবর্ণ করে ফেললাম, মুচির সঙ্গে প্রাত্যহিক সখ্য স্থাপিত হল; কিন্তু লক্ষ্য অলক্ষ্যেই রয়ে গেল! জীবদ্দশায় ডঃ লুৎফর রহমানের কোন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি; আমার একই গতি হবে কিনা সে ব্যাপারে মৃদুভাবে হলেও মনের মধ্যে সংশয় দানা বাধছে!
১০ই অক্টোবর,২০০৫
সোমবার, রাত: ৮টা৩০
টি,এস,সি চত্বরে বসে কবিতা লেখা, বিকালে আজিজ সুপারে সাহিত্য আড্ডা- কেটে যাচ্ছে দিন দিনের মতই, কেমন আছি জানিনা। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় তন্বী -ভক্তবেষ্টিত থাকি; তারা সানন্দে আমার দীঘল চুলের উকুন সাফ করে দেয়, কিন্তু বিয়ের কথা বললেই এদের মুখে load-shedding নেমে আসে; কবিদের হাতধরে অগণন মুহূর্ত কাটিয়ে দেয়া যায়, সংসার করা যায়না! গেল মাসে নীলিমার বিয়ে হল; পাত্র প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার। পক্ষান্তরে, বিচ্ছেদের শোকে বিরহকাতর হওয়ার বদলে আমি আশ্চর্যরকম নির্বিকার: আরে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রোমান্টিক কবি শেলীর সঙ্গেইতো তার প্রেয়সীর মিলন হয়নি; প্রণয়ের সার্থকতা মিলনে নয়, উপলব্ধিতে। আমার মত অসংখ্য ভাবকবি টি,এস,সি’র বারান্দায় রোজ বিউটি বিড়ি ফুঁকে, দিনে ৫-৬টি আধুনিক কবিতা লিখে বিভিন্ন কর্মশালা উপলক্ষে আর দিনশেষে নেশায় বুঁদ হয়ে বার্নার্ডশো হওয়ার স্বপ্ন লালন করে।
মাঝে মাঝে শ্রোতার অভাব হলে কাক পাখিকে আমার কবিতা শোনাই, নিস্পন্দ বসে থাকা কাকগুলো আমার উৎসাহকে বিবর্ধিত করে,আমি প্রফুল্ল চিত্তে তাদের দিকে চিনেবাদাম ছুড়েদেই!ঈশপ ছিলেন সামান্য ক্রীতদাস, সে তুলনায় আমিতো মহাসুখে আছি।
আসলে সমস্যা হচ্ছে সবাই শেক্সপিয়ার হতে চায়, কিন্তু যত্রতত্র হ্যামলেট, ওথেলো ’রা ঘোরাফেরা করলে সাহিত্য থেকে aestheticism হারিয়ে যাওয়ার ঝুকি আছে !তাই পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের মত অবৈধ শেক্সপিয়ার হটাও ও সমান গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে; কারণ একমাত্র আমিই আধুনিক শেক্সপিয়ার হওয়ার যোগ্যতম দাবিদার, অন্য কেউ নয়! এইতো আর একটা ক্লাসিক কবিতা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সময় অপচয় না করে লিখে ফেলি-
একবার যখন বলেছি- মাধবকুণ্ড ঝরনায় তোমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবই
যেহেতু তুমি হেসেছো- আজ দিগন্তকে খামে ভরে পোস্ট করব তোমার ঠিকানায়
হতচ্ছাড়া তরুণ শৈবালগুলো সুগভীর চুম্বনে জড়িয়ে থাকবে মেঘনার জলকণায়;
আর তোমাতে আমি
না না ..আমি হেয়ালী করছি না; ক
রলেইবা তোমার কি?৭৭৭বার করব- আমার ইচ্ছে!
*কোন এক রহস্যজনক কারণে ডায়েরীর মাঝের কিছু পৃষ্ঠা সরংংরহম, তাই এই স্বঘোষিত ক্লাসিক (বোধকরি ক্লাউনিক!) কবিতাটির কত লাইনে সমাপ্তি ঘটেছে সেই মীমাংসা এক অজানা অধ্যায় হয়ে রইল সাহিত্যাঙ্গনে।
১০ই মে,২০০৭
বৃহস্পতিবার,সন্ধ্যা:৭ঘটিকা
নতুন sub-register লোকটা মনে হয় বিশেষ সুবিধের হবেনা, কেমন একটা হামবড়া ভাব চালচলনে! বাবা-মা’র কথামতো পড়াশোনা না করে নিজের যে কতবড় ক্ষতি করেছি রেজিস্ট্রি অফিসে সস্তা দলিল লেখকের কাজ পেয়ে এতদিনে তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। আমার দুশ্চিন্তায় বাবা চলে গেছেন, শেষের দিনগুলোয় আমার মুখদর্শন বন্ধ করে দিয়েছিলেন! আমাদের ছা-পোষা পরিবার আজ অস্তিত্বরক্ষায় আমার মুখাপেক্ষী, ইতোমধ্যে সামাজিকভাবে চেীকো-মধ্যবিত্ত অবস্থান থেকে আমাদের নিম্নবিত্তে অবনমন ঘটেছে! টি,এস,সি’র সেই অন্ধকার প্রহরগুলো বেঁচে থাকার প্রয়োজনে জীবন থেকে নির্বাসিত, আজিজ সুপারের আশেপাশে গেলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, একদার নিত্যসখিরা হঠাৎ ভুলে কোথাও দেখা হয়ে গেলে আলোর বেগে মুখ ফিরিয়ে নেয়, হাজার টাকা মাইনের দলিল লেখককে নিয়ে ভাববার ফুসরত কারোও নেই; শুনছি মা’র দুঃসম্পর্কের এক গ্রাম্য ভাইঝি খুব শীঘ্রই আমার ঘর সাজাতে আসছে! আমার মাঝে যেন এক নবমানুষের জন্ম হয়েছে- ডায়েরীর বেশিরভাগ কবিতাই মা’র জ্বালানীখরচ লাঘব করেছে, মাসকাবারি সেলুনে যাওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, কবিতা লেখার সময়টা বিটিভির উচ্চমার্গীয়(!) অনুষ্ঠান দেখে বেশ ভালই কেটে যায়। সত্যি বলছি, লেখালেখি করাটাকে এখন পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শখ মনে হয়! চলার পথে পদে পদে ক্ষতবিক্ষত হয়ে অবশেষে এই সিদ্ধান্তে পেীছেছি- ঘোষণা দিয়ে কখনো শেক্সপিয়ার হওয়া যায়না।
ঈশ্বরের নিদারুণ পক্ষপাতিত্বে শেক্সপিয়াররা অসাধারণ হয়েই জন্মগ্রহণ করেন। তাদের ঔদাসীন্য বযঃসন্ধির কিশোরদের বিভ্রান্ত করার জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত এক মানবীয় মরীচিকা যার আকর্ষণে ”ভবিষ্যত সংকট”সৃষ্টি হয় হাজারো সম্ভাবনাময় তরুণের। আমার ভেতরকার শেক্সপিয়ার বহুদিন আগেই দলিল লেখকের চাকরি নিয়ে নিভুনিভু আলোয় বেঁচে-বর্তে আছে; কিন্তু আমি সেইসব শেক্সপিয়ারের কথা ভাবছি যারা এখনও টি,এস,সি’র প্রাঙ্গনে ঝোলাব্যাগভর্তি কবিতা নিয়ে বসে থাকে কিংবা স্কুল-কলেজের উদাসীন শেক্সপিয়ার- তাদেরই বা গন্তব্য কি? বছর বছর যে পরিমাণ শেক্সপিয়ার দেশের সংস্কৃতিতে যুক্ত হচ্ছে তাতে ভয় হয় এই হতদরিদ্র দেশটিতে এত দলিল লেখকের পদ খালি আছে তো?......সকালে বাস ধরতে হবে, এখন ঘুমানোই শ্রেয়তর!!.....................................
আচ্ছা আমিও তো লেখালেখি করি, আমার পরিণতি এইসব নব্য শেক্সপিয়ারদের মত হবে নাতো?কে জানে কী লেখা আছে কার বিধিলিপিতে!
শত আলোকবর্ষ দূরে- তুমি শেক্সপিয়ার!
তোমার তুলনা দেবার মত species খুবই rare!
তোমার মত হব আমি- how i dare???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।