তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।
বেড়াতে আসা মানেই তো নতুন কিছু দেখা। গাড়ি নিয়ে ঘুরলে শুধু নির্দিষ্ট জায়গায় ঘোরা হলো। বাসে, ট্রামে, ট্রেনে, পায়ে হেটে ঘুরলে অল্প জায়গায় অনেক কিছুই দেখা যায়।
বন্ধু আসার আগেই হুশিয়ারী দিয়েছিলাম এখানে আসলে প্রচুর হাটতে হবে।
দেশের মতো কেউ তুমাকে গাড়ির দরজা খুলে দিবে না। নিজে প্রত্যেকদিন প্রায় দুই কি.মি হাটি। তারপর বাইসাইকেল, ট্রাম, ট্রেন তো আছেই। মেঠো পথে, বৃষ্টিতে কাদায় হাঠা অথবা সাইকেলই ভরসা।
প্রথম দুদিন কোম্পানি থেকে গাড়ি নিয়ে ওদের বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে দেখালো।
কোম্পানির কাজ শেষ হলে আমার দায়িত্ব। তিনজনকে নিয়ে ট্রামে উঠে উদ্যেশ্যহীন ঘুরতে লাগলাম। বন্ধুর বড়ভাইয়ের প্রায় ২০/২৫ বার জার্মানি আসা হয়েছে। কিন্তু উনি টেক্সিতেই চলাচল করেছেন। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল, হোটেল থেকে অফিস, অফিস থেকে এয়ারপোর্ট সবই টেক্সি।
এখানে টেক্সি খুবই ব্যয়বহুল। উদাহরন স্বরূপ: এয়ারপোর্ট থেকে সিটিতে আসতে টেক্সিতে ভাড়া মিনিমাম ৩০ ইউরো। ট্রেনে আসলে মাত্র ৩ ইউরো। যাত্রা মাত্র ১০ মিনিটের। জার্মানির প্রতিটা শহরেই যাতায়াতের জন্য ট্রাম, আন্ডারগাউন্ড, ট্রেন, বাস পাওয়া যায়।
যোগাযোগ ব্যবস্হা এতোই উন্নত যে গাড়ি কেনার দরকার হয় না।
প্রথম দিন মাইন নদীর পাশ দিয়ে অনেকক্ষন হাটলাম। বেশ মিষ্টি রোদ ছিলো তখন। আকাশে অনেকগুলো প্লেন ধোয়া ছেড়ে উড়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো লাইন ধরে নামছে।
আমেরিকার টেক্সাস প্রবাসী বড় ভাই বল্লেন- প্লেনের ধোয়াটা নাকি ট্রক্সাসের আকাশেও দেখা যায় না। উনি শুধু ইউরোপেই দেখেছেন। আমার এক স্কুলের বন্ধু বেড়াতে এসে প্লেনের ধোয়া দেখে বলেছিলো "প্লেনে যে ধুয়া হয় সেটা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। " অনেকক্ষন হাটা-চলা, ফটোসেশন করে বাসায় যাত্রা। বন্ধুকে জিঞ্জেস করলাম পা ব্যথা করে নাকি? বলে- না।
বল্লাম কাল সকালে টের পাবা।
প্রত্যেকদিনই অফিসের পর দু'জন প্রায় ঘন্টাখানেক আড্ডা দিতাম। হয়তো কোন ট্রামে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষন পর সিগারেট খেতে ইচ্ছে করলে নেমে পড়লাম। ৫/১০মিনিট পর আরেকটা ট্রাম আসলে উঠে পড়তাম।
টিকেটের কোন চিন্তা নেই। আমার পুরো বছরের টিকেট কাটা আছে। সন্ধ্যার পর আর ছুটির দিনে আমার সাথে একজন ফ্রি চড়তে পারে। তাই রাতেই আমাদের আড্ডা হতো।
দু'দিন পর বলে ওর নাকি মোজা ছিড়ে গেছে।
বল্লাম আমি তো কয়েকমাস একটা মোজা ব্যবহার করি। দুই দিন যায় নাই? এতো খাইষ্টা পা। এখানে শীত-গীষ্ম বারো মাসই পায়ে মোজা ব্যবহার করতে হয়। বাসায় সব সময়ই কয়েক জোড়া ইনটেক পাওয়া যায়।
হাটা যে কতো ভালো সেটা উনি দু'দিনেই টের পাইছেন।
উনার গ্যাষ্ট্রিক আছে। সারাক্ষন ঔষদের পোটলা বেধে ঘুরতে হয়। এখানে আসার পর উনার ঔষধ খেতে হয়নি। যদিও অনেক রকমের জার্মান ব্রেড, ডোনার কাবাব, কাচা মাছ, হরেক রকমের ভেজিটেবল স্যুপ খাওয়া হয়েছে।
কয়েকদিন পর দেখলাম বেশি হেটে যদি অসুস্হ হয়ে যায় তাহলে বেশ ঝামেলায় পড়বো।
ডুজ কম করে দিলাম। হাটা কমিয়ে দিলাম। আমাদের ভ্রমনের তালিকা থেকে হলেন্ড যাওয়া বাতিল করে দিলাম। ওখানে গিয়ে আপাতত দেখার কিছুই নেই। যদিও আমাদের যাওয়া দেখার জন্য ছিলো না।
উনি যে ইউরোপের অনেক জায়গায় ঘুরছেন তার একটা ছবি দরকার। আগে যেমন কুমিল্লার বর্ডারে গিয়ে ইন্ডিয়ার পাশে মুর্ত ত্যাগ করে এসে বলতাম- ইন্ডিয়াম মুতে এলাম। সাথে কিছু অরিজিলাম ডাইলও খেতে পারতাম(কাশির ঔষধ)।
দুই দিনে যতোটুকু হাঠা হয়েছে গত ১০ বছরেও নাকি সে এতোটুকু হাঠে নাই। বল্লাম বিদেশ থেকে যাও।
বল্লো-দোস্ত দেশের মতো সুখ কি আর কোথাও আছে। বল্লাম- সেইটা কি আর বলতে? তোর কোম্পানিতে একটা চাকরী দিয়ে দে। বেতন তোর অর্ধেক হলেই চলবে। এখন বলে- যেখানে আছো, ভালো আছো। ফিরে আসার কোন দরকার নেই।
চ যুক্ত কিছু গালি দিয়ে দু'জন আবারও হাটা দিলাম
(ছবি ইন্টারনেট থেকে। আমি ফটো উঠাতে পারি না )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।