মৃত্যুর সু-শীতল ছায়াতলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। । । আমি খুবই সাধারন একজন।
উৎসবকে উৎসর্গ করা ঈদ
ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পাওয়ায় আমার ছোট চাচা আমাকে একটি দামি ঘড়ি উপহার দিয়েছিল।
সেদিন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। হয়তো কেউ তা বুঝতে পারেনি। কারন আমার সভাবটাই এরকম। আমার আব্বু আম্মু সহ সব আত্মীয়রা মনে করে আমি আনন্দ কি তা জানি না। ওদের এমনটি মনে হওয়ার পেছনে কারন হল আমি হই হুল্লোড় পছন্দ করি না,কোন আত্মীয়সজনের বাসায় কখনো বেড়াতে যাই না, এমনকি কেউ আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলে আমি আমার রুম থেকেই বের হই না।
দাদী বলেন আমি নাকি “মেয়েদের” মতই লাজুক। সরাসরি কিছু না বল্লেও আমি তা বিশ্বাস করি না। কারন এক এক জনের আনন্দ প্রকাশের ভাষা এক এক রকম। আবার কিছু কিছু বিষয় আছে সবাই কম বেশি আনন্দ ভাগাভাগি করে। তেমন একটি বিষয় হল রোজার ঈদ।
রমজানে যখন সবাই রোজা রাখা নিয়ে ব্যস্ত,তখন দেখতাম আমাদের ছোটদের একটাই চিন্তা কখন ঈদ আসবে,নতুন জামা পরবে,ঈদগাহে যাবে,আর হরেক রকম নাস্তা খাবে। আর বড়দেরও কম মাথাব্যথা তা না। এক কথায় কেউ কারও থেকে কম নয়। পৃথিবীর সব জায়গায় সব মুসলমানের মনের কথা মনে হয় এই একটা বিষয়ে এক। এখন অবশ্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দ উপভোগ করে,ইফতার পার্টি হয়,অনেক অনেক টাকা খরচ করা হয়।
তাছাড়া এখন ছোট বড় সবাই ঈদ সালামি নিয়েও কম ভাবে না। নিঃসন্দেহে প্রত্যেকের জীবনেই ঈদের কোন না কোন সুখকর ঘটনা থাকে। আমারও যে নেই তা না। কিন্তু আমি আজ একটি বিষাদের ঘটনা বলব,তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আবারও সেই ক্লাস ফাইভে ফিরে যাই।
আমাদের স্কুল থেকে আমরা দুইজন বৃত্তি লাভ করেছিলাম। আগেই বলা হইছে যে আমি উপহার হিসেবে একটি দামি হাত ঘড়ি পেয়েছিলামন। আমার সেই বৃত্তি পাওয়া বন্ধুটি,তার নাম উৎসব, প্রায়ই বলত গরিবের উপহার নাকি কয়েক বেলা উপবাস থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সে দুঃখ করে বলত “আনন্দ” হচ্ছে তথাকথিত বড় লোকদের জন্যে। কিছু দিন পর ঈদ।
সবাই ঈদ উপলক্ষে কিছু না কিছু কেনা কাটা করছে। আমার জন্যেও আমার আব্বু একটি পাঞ্জাবী এনেছে। একদিন উৎসবকে জীজ্ঞেস করলাম,এই ঈদে তোকে কি কিনে দিচ্ছে? ও সেদিন তেমন কিছুই বলেনি। শুধু বলেছিল “আমাদের আবার ঈদ?”উৎসবের সাথে দেখা হয় না কয়েকদিন হল। হয়ত ওর আব্বুর সাথে ঈদের জামা কাপড় কিনতে ব্যস্ত।
হয়ত ঘরে বসে বসে ঈদের দিনের পরিকল্পনা করছে,হয়ত নতুন জামা দেখানোর ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না,নুতন জামা ঈদের আগে দেখাই ফেললে যে পুরান হয়ে যাবে?,ইত্যাদি ইত্যাদি। উৎসব আমাদের বন্ধুমহলে সবচেয়ে চতুর ছিল তাই এত ভাবনা আপনা আপনি মনের জানালায় উকিঁ দিচ্ছিলো। অনেক প্রতিক্ষার পর এল সেই খুশির ঈদ। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে নুতন জামা গায়ে দিয়ে অস্থির হয়ে বসে আছি কখন আব্বু ফিতরা বিতরণ শেষ করে নামাজের জন্য তৈরী হবেন এই আশায়। প্রতিক্ষার প্রহর নাকি সবসময় দীর্ঘ হয়।
খুব কষ্ট হচ্ছিল অপেক্ষা করতে কিন্তু তারপরেও করার কিছুই ছিল না। পরিশেষে আব্বু আমাকে সাথে নিয়ে নামাজে ঈদের নামাজে গেলেন। ওখানে আমার বয়সের আরো অনেক কেই দেখলাম। আমার অনেক বন্ধুর সাথেও দেখা হল। আমি মনে মনে এক জনকে খুজছিলাম।
কোথাও তার দেখা নেই। শেষে এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম উৎসবকে দেখেছে কি না। সে বলল দেখেনি। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরেই আমি আর আমার আরেক বন্ধু উৎসবদের বাড়িতে গেলাম।
ওদের বাড়িতে গিয়ে যা দেখলাম তা হয়ত আমার জীবনে আমি কখনই ভুলতে পারব না। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। উৎসবের দাদী অনেকদিন থেকে অসুস্ত,কিন্তু কয়েকদিন খুব বেশি অসুস্ত। যায় যায় অবস্থা। মায়ের ঔষুধের জোগান দিতে গিয়ে উৎসবের বাবা প্রায় নিস্ব।
তাই ছেলেকে নুতন জামা কিনে দিতে পারে নি। একারনেই উৎসব ঘরের বাইরে বের হয় নি। ঈদের নামাজেও যায় নি। গ্রামের সব বাড়িতে যখন ঈদের আমেয,উৎসবদের বাড়িতে তখন অসুস্ত মানুষটির জন্যে ঔষুধ কেনার টাকার চিন্তায় সবাই চিন্তিত। সেদিন উৎসবের চেহারায় খুশির কোন রেখাই ছিল না।
ওর মলিন মুখ এখনো আমার চোখে জীবন্ত। সেদিন আমি আর কারো বাড়িতে যাই নি। বন্ধুদের সাথেও তেমন একটা কথা বলিনি। আমার আম্মু জিজ্ঞেস করছিল সুস্থ আছি কি না। আর কেউ তেমন কিছহু বলে নি,কারন আমি তো স্বভাবতোই ওরকম.........এখনো ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেলে উৎসবকে দেখি মাঠে কাজ করছে।
এখন সে পুরুপুরি মাঠির মানুষ। আমাকে দেখলে স্মৃতি রোমন্তনের চেষ্টা করে। ঈদ আসে ঈদ যায়,উৎসবদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। প্রিয় সুজন,আমরা কি ঈদে আনন্দ করার নামে অপচয় না করে উৎসবদের এতটুকু সাহায্য করতে পারি না? আমাদের সমাজের হাজারো উৎসবদের মুখে কি এতটুকু হাসি ফুটাতে পারি না?
নিবেদক-
কামরুল ইসলাম মিশু কুতুবি
ইংরেজী বিভাগ,৩য় বর্ষ,
আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
চকবাজার,চট্টগ্রাম।
Email :
Website : http://www.kutubdia.co.nr
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।