আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোকিয়া ফোন সেট ও ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা

আমি মানুষ না অণুজীব কইতাম পারতাছিনা। নোকিয়া ফোনসেট নিয়ে নেটে বেশ কিছু আবালীয় পোস্ট ঘোরে । যেকোন কিছু ছাপানো বা ইংরেজিতে লেখা থাকলে সেইটারে “সোর্স” হিসেবে কাউন্ট করে মাতামাতি বাঙালির একটা ঘোরতর বাজে অভ্যাস । এর ওপর যদি সেই লেখা নিজের মতাদর্শের সাথে মেলে তাহলে সেইসব আবর্জনারে ধর্মগ্রন্থের সমপর্যায়ে ফেলতেও বাঙালির জুড়ি নাই । যাইহোক আজকে প্রসঙ্গ সেটা না ।

আজকে নোকিয়া ফোন নিয়ে কিছু নসিহত করবো । নন-ডিসক্লোজার-এগ্রিমেন্টের জন্য অনেক কিছুই বলতে পারবো না । তবে বহুল প্রচলিত দুটো মিসকনসেপশন এখানে ভাঙার চেষ্টা করবো । মিসকনসেপশন ১ : হাঙেরি, ফিনল্যান্ডের সেট সবচেয়ে ভালো । চায়নারটা তার থেকে খারাপ ।

আর ইন্ডিয়া বা “আজারবাইজানের” সেট সবচেয়ে খারাপ । এই কথাটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও এইটা বাংলাদেশ বা গোটা উপমহাদেশে একটা জনপ্রিয় কিন্তু ভুল ধারনা । প্রথমে একটু খেয়াল করে দেখি যেকোন একটা নোকিয়া সেটকে দেখি । দেখবেন যেকোন ইলেকট্রনিক কমিউনেকেশন ডিভাইসের মতো এর দুটো পার্ট । এক. সফটওয়্যার দুই. হার্ডওয়্যার ।

এখন একটা একটা করে দেখি এগুলোতে দেশ বেসিসে প্রডাকশনে হেরফের হতে পারে কিনা । প্রথমত, একটা নির্দিষ্ট ফোনের জন্য নোকিয়া একটাই সফটওয়্যার বানায় । অঞ্চলভিত্তিক কিছু ভ্যারিয়ান্ট আলাদা করে বানানো হয় । যেমন এ্যামেরিকা/ইউরোপের টিমোবাইল, জার্মানির ফোডাফোন (এইটাই সঠিক উচ্চারণ) । এর বাইরে ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক আলাদা থাকতে পারে ।

এই সফটওয়্যারের বিভিন্ন ভার্সন আছে । অঞ্চলভেদে সেগুলোর রিলিজ ডেইট ভিন্ন । অর্থাৎ একই সময়ে জার্মানির ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা সফটওয়্যার ভার্সন বাংলাদেশ থেকে ডাউনলোড করা সফটওয়্যার ভার্সনের সাথে নাও মিলতে পারে । এই সফটওয়্যারগুলোর এপিআই (API – Application Programming Interface) দিয়ে ডেভেলপাররা শুধুমাত্র তাদের বানানো এ্যাপ্লিকেশন দিয়ে ফোন মেমরিতে কিছু পরিবর্তন আনতে পারবে যেমন ফোনবুকে এন্ট্রি যোগ বা এইধরনের খুব সামান্য পরিবর্তন । এর বাইরে নোকিয়ার সফটওয়্যার/অপারেটিঙ সিস্টেম ক্লোজড করে রাখা ।

এই সফটওয়্যারের কোন সিগনিফিক্যান্ট পরিবর্তন আপনি করতে পারবেন না । অতএব, কেউ নকল বা নিম্মমানের সফটওয়্যার আপনার ফোনে ভরে দেবে এটা খুব কষ্ট কল্পনা । সুতরাং আপনি ধরে নিতে পারেন নোকিয়ার সফটওয়্যার বিশ্বব্যাপি একই । এখন আসি দ্বিতীয় পয়েন্টে । নোকিয়ার হার্ডওয়্যারটাকে আপনি সাপ্লায়ারের বেসিসে দু’টো ভাগে ভাগ করতে পারবেন ।

এক. ব্যাটারি দুই. মূল ফোন । ব্যাটারি সম্পর্কে বলা যায় আগে নোকিয়া একটা জাপানিজ কোম্পানি (মাতসুহিতা, এরা প্যানাসনিক, ন্যাশনাল টিভি, মিউজিক সিস্টেম বানায় । অর্থাৎ খুবই ভালো মানের সাপ্লায়ার । ) আর একটা চায়নিজ কোম্পানি থেকে ব্যাটারি নিতো । বাংলাদেশের কনভেনশনাল উইযডম আপনাকে বলবে জাপানিজ মাতসুহিতার ব্যাটারিই ভালো ।

তথ্য পুরোটাই ভুল । সাম্প্রতিক ইতিহাসে চায়নিজ ব্যাটারির পার্ফমেন্সই ভালো । জাপানিদের সাপ্লাই দেয়া ব্যাটারির একটা বিশাল অংশ ফেরত নিয়ে নোকিয়াকে রিপ্লেস করে দিতে হয়েছে । এরপর থেকে তারা মাৎসুহিতার কাছ থেকে ব্যাটারি নেয় না । এবং নোকিয়ার ব্যাটারি এই মুহুর্তে চায়নিজ সোর্স থেকেই আসে ।

সুতরাং আজারবাইজান, পোল্যান্ড ব্যাটারি বদলে কম দামি ব্যাটারি ভরে দিচ্ছে এই ধারনা থেকে আপনি সহজেই মুক্ত হতে পারেন । দ্বিতীয়ত, মূল ফোন । মূল ফোনের দুইটা অংশ । একটা হলো বডি আরেকটা মূল সার্কিট বোর্ড । আমাদের বেশিরভাগেরই মূল চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই ঐ মূল সার্কিট বোর্ডের দিকেই যাবে ।

এখন হয়তো কেউ ভাবতে পারে যে হয়তো ধোলাইখালের “এঞ্জিনিয়ার”রা কোন পার্টস বদলে নকল পার্টস ভরে দিচ্ছে ! তারা কি কি পার্টস বদল করতে পারে ? এ তালিকায় আসে স্কৃন, আরম (ARM) প্রসেসর, ডাব্লিউ ল্যান (wlan) চিপ, জিপিএস চিপ, সাউন্ড প্রসেসর ইত্যাদি । কিন্তু আমরা একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবো যে এগুলো বদলে অন্য কমদামি চিপ দেয়া আসলে সম্ভব না । কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেমের মতোই ফোনের অপারেটিঙ সিস্টেমের মধ্যে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ড্রাইভার থাকে । এই হার্ডওয়্যার ড্রাইভার না থাকলে ঐ অপারেটিং সিস্টেম সেই হার্ডওয়্যার নিয়ে কোন কাজ করতে পারবে না । নোকিয়া অপারেটিং সিস্টেমে চিপ বদলে নতুন কমদামি চিপ বসিয়ে সেটা চালানোর সুযোগ নেই ।

কারন নোকিয়া অন্য হার্ডওয়্যার ড্রাইভার ইনস্টল করার কোন অপশন খোলা রাখে না । অতএব পার্টস বদলে আজারবাইজানের ফ্যাক্টরি বেশ দু’পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে এই ধারনা ভুল । পুরো পৃথিবীতেই একটি নির্দিষ্ট মডেলের ফোনের হার্ডওয়্যার তাহলে দেখা যাচ্ছে একই রকমের । মিসকনসেপশন ২: ব্যাটারি চার্জ শেষ হলে তবেই আবার চার্জ দেয়া উচিত । (ব্যাটারি সংক্রান্ত এই অংশটা যেকোন লিথিয়াম ব্যাটারির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) এটা সত্য ছিলো যখন আদিযুগে মানুষ মোবাইল ফোনে নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করতো ।

কিন্তু এখন সব ফোনেই লিথিয়াম আয়ন/লিথিয়াম পলিমার আয়ন ব্যাটারি থাকে । এতে এই থিওরী অচল । বর্তমানে ব্যবহৃত লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার সম্পর্কে কিছু টিপস দেই - ১. প্রতিদিন বাসায় ফিরে ব্যাটারির চার্জের অবস্থা যাই থাকুক চার্জ দিয়ে নেবেন । পুরোটা না দিতে পারলেও ক্ষতি নেই । তবে চার্জারে ফোন কানেক্ট করে রাতে ঘুমাবেন না ।

এটা বিপদজনক । কেন বিপদজনক একটু পরে বলছি । ২. এই ব্যাটারির সেল্ফ লাইফ নেই । অর্থাৎ, এটার ক্ষমতা আপনি না ব্যবহার করলেও দিন দিন কমতে থাকবে । মনে করুন আপনি ২০০০ সালে বের হওয়া একটা ফোন ২০০৯তে এসে কিনেছেন ।

এই ফোনের সাথে যে ব্যাটারি পাবেন সেই ব্যাটারি থেকে যেই সার্ভিস পাবেন সেটা যারা ২০০০ সালে যারা ঐ ফোনটি কিনে ব্যবহার করেছেন তাদের থেকে অবশ্যই কম পাবেন । এইসব ক্ষেত্রে আমরা “বুঝেনইতো … এখন সব জিনিস চায়না ইন্ডিয়া বানাচ্ছে … জিনিসপত্রের কোয়ালিটি একদম যাচ্ছে তাই হয়ে গেছে … ” টাইপের একটা সিদ্ধান্তে এসে পড়ি । বুঝতেই পারছেন ওটা আসলে সঠিক চিন্তা নয় । ৩. কখনোই ব্যাটারির চার্জ পুরোটা শেষ করবেন না । ইমার্জেন্সি ভিন্ন ইস্যু ।

তবে সাধারণ ক্ষেত্রে ফোন চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হতে দেবেন না । তার আগেই ফোন অফ করে রাখবেন । এটা করলে ব্যাটারি ডিপ ডিসচার্জ লেভেলে চলে যেতে পারে । এই লেভেলে চলে গেলে পুরোটা চার্জ করতে ফোন অনেকক্ষন চার্জে রাখতে হয় । নাহলে দেখবেন খুব অল্প সময়ে ব্যাটারি ডিসচার্জ হচ্ছে ।

এবং অনেক সময় অনেকক্ষন চার্জ দিয়েও মাঝে মাঝে ব্যাটারিকে আগের অবস্থায় আনা সম্ভব হয় না । মনে করে দেখুন আপনার আশে পাশেই অনেকে বা আপনি নিজেই এই হঠাৎ করে চার্জ শেষ হওয়াটাইপ সমস্যায় পড়েছেন । এটার কারন এই ডিপ ডিসচার্জ লেভেল । ৪. কিছু ক্ষেত্রে ব্যাটারি খুব গরম হয় । আপনার ব্যাটারি এরকম অস্বাভাবিক গরম হতে থাকলে সেটা ফেলে নতুন ব্যাটারি কিনুন ।

এর কারন হলো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি উচ্চ তাপে বিস্ফোরিত হয় । এই বিস্ফোরণের মারাত্মক আহত হয়েছে এরকম ঘটনা আছে । সাধারণত ফোনের ব্যাটারি পুরো চার্জ হলে সেটাতে আর পাওয়ার সাপ্লাই হয় না । এটা এক ধরনের সুইচের মাধ্যমে করা হয় । ব্যাটারি গরম হতে থাকলে এই সুইচ কাজ না করতেও পারে ।

অতএব ব্যাটারি চার্জে রেখে ঘুমাতে যাবেন না । ৫. অজায়গা-কুজায়গা থেকে ধুন পুন চার্জার কিনে সেটাতে চার্জ দিতে যাবেন না । ৬. এক্সট্রা ব্যাটারি থাকলে সেটা মোটামুঠি আধাআধি চার্জ করে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করুন । এ পর্যন্ত এটুকুই । পরে মনে পড়লে আরেকটা পোস্ট দেয়া যাবে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।