কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
আমি ফাইজলামিটাই করতে চাই, কারন আমিও লালনের দার্শনিক অবস্থান তেমন একটা বুঝি না। রিফাত হাসান যদিও ফাইজলামির সীমানা নির্ধারণ কইরা দিয়া গেছেন তবু আমি ধৃষ্টতা দেখাইতে কোন কসূর আমি করতেছি না আপাততঃ। লালনের প্রতি আমার অনেক আগ্রহ না থাকলেও কওমি মৌলভীগো ইতিহাস নিয়া বরং খানিকটা আগ্রহ তৈরী হয় তার কথায়, তার লেখনীতে।
তিনি তার আলোচনা শুরু করেন এইভাবে:
শিক্ষিত মধ্যবিত্ত্ব, যারা বেশীরভাগ সময়ই জরুরী মুহূর্তে কোন রেডিক্যাল অবস্থান নিতে পারে না হরেক সুবিধাবাদিতার কারণে, তাদের একটা আক্রোশ অবশ্যই আছে অশিক্ষিত মৌলভিদের প্রতি, যারা জরুরী অবস্থায় কথা বলে, প্রতিবাদ করে, ভাঙ্গে, পৌত্তলিক সমাজের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য আইকনগুলো। যারা কোন সুবিধাভোগি নয়, যারা এইসবকে প্রত্যাখ্যান করেছে, উদ্ধত, জঙলি এবং অসভ্য উপায়ে, সভ্য মানুষের ভাষায়।
তিনি খুব ভালো মধ্যবিত্ত চিনছেন বুঝন যায়, তাগো সুবিধাবাদীতায় তার চরম অনাগ্রহ আছে টের পাওন যায়। শিক্ষিত মধ্যবিত্তগো আক্রোশটাও তিনি স্পন্দনে আঁচ করবার পারেন...আর তার মধ্য দিয়া তিনি রূপকল্প তৈরী করেন কওমী মৌলানাগো যারা নাকি জরুরী অবস্থায় কথা কয়, চিল্লায়! মৌলানাগো চরিত্র নিয়া তিনি আলোচনা করতে গিয়া আইকন বিরোধী চরিত্রটারেও তুইলা আনতে চান। তাৎক্ষণিকতায় হয়তো ডিটেইল দিতে তিনি অপারগ হ'ন যেইটা পরে কখনো দিতে পারবেন যখন হুজুগ থাকবো না। আইকন কইতে তিনি আসলে কি বুঝেন!? আমি যদি মুহাম্মদরে গালি দেই তাইলে কওমীরা কি করবো? তখনো তারা আইকন বিরোধী থাকবো? আইকন কি কেবল মূর্তি পূজায় থাকে!? কওমীরা কখন জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে কথা কয়? চাইলের দাম যখন বাড়ে, যখন দেদারসে অনৈতিক-নৈতিক গ্রেফতার বাণিজ্য চলে, অর্থনীতি যখন দুরাবস্থার চরমে পৌছায়, তখন কওমীরা কি কয়? কেবল ধর্মের আইকনেই তাগো আপত্তি...তাগো নিজেগো আইকন ভাইঙ্গা যখন প্রতিদ্বন্দ্বী আইকন খাঁড়ায় তখনি তারা উদ্যত হয়, সেইটা কখনো অসভ্য হয়...কখনো অনেক বেশী সুশীলও হয়...আমেরিকান দূতের নারীমূখও তারা দর্শন করে খোলাচোখেই হেফাজত ছাড়া...
রিফাত হাসান সত্য কথা ক'ন পুঁজির আইকন বিষয়ক বাণিজ্যিক টেন্ডেন্সী নিয়া...কিন্তু যেই সিদ্ধান্তে তিনি পৌছান সেইটা হইলো এই:
এখানে একটি ব্যাপার স্মর্তব্য, ফ্যাশন কোম্পানি যখন চে'কে নিয়ে ব্যবসা করে, আর রোমান্টিক একটিভিস্টরা অই পোশাক পরে ঘুমের মধ্যে বিপ্লব সাধন করে, তখন অই দৃশ্য দেখে আমার বোধোদয় ঘটে যে, চে কেন ছবি তোলাটাকে এত অপছন্দ করেছেন সব সময়। একই ব্যাপার, লালনের মূর্তি নিয়ে আমাদের কান্নাকাটি দেখেও।
এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতো রীতিমতো হাজ্বীদেরকে আত্মশুদ্ধির জন্য মনের মূর্তি সরানোর পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু ঘটনা হলো তিনি এই ব্যাপারটির প্রতি নিজের পৌত্তলিক বিরাগটারে সরায়ে ফেলতে পারেন নাই। যদি পারতেন, তাহলে, এর সংস্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা পেতাম, যেগুলি দরকারি।
অধ্যাপকের বিরাগটা যে পৌত্তলিক সেইটা তিনি কেমনে ধইরা ফেলেন!? ঐ অধ্যাপক ভদ্রলোকও যদি ক'ন তিনি তাৎক্ষণিক বক্তব্য'ই দিছেন, আর তাই সেইখানে অন্য আলোকপাত নাই, তখন তিনি কি কইবেন?
রিফাত হাসান জ্ঞানগর্ভ উপস্থাপণরীতি জানেন, আর তাই তিনি বলেন
মৌলভিদের মূর্তিবিরোধিতার মোকাবেলায় অইটার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ফ্যানাটিসিজম দিয়ে আলাপ সারা আর ফাজলামো করা একই কথা। কারণ এই আলোচনাটির সাথে দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক আলোচনাটি জড়িত। আনকন্ডিশন, নিরাকারকে আকার প্রদান, ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিজত্বের ধারণা, পৃথিবীতে ধর্মের বিবর্তনের যে ইতিহাস, এইসব ব্যাপারগুলিতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্ট্যাণ্ডপয়েন্ট আলোচনায় আনতে হবে।
নিরাকারের আকার থাকলোই কি আর না থাকলোই বা, কি আসে যায়? যার সবসময়েই আকার থাকে তারে মৌলভীরা কি করে? ইসলাম সেই ব্যাপারে কি কয়?ধর্মের বিবর্তনের ইতিহাসে মানলাম ইসলাম অনেক উদারতা দেখাইছে...মানুষরে আকারের পূজা থেইকা নিরাকারের পূজা করাইছে...সমাজে বৈষম্য কিছুটা কমাইতে সচেষ্ট হইছে...কিন্তু তার মানে কি তারা নিজেগো মতবাদ চাপাইয়া দেওনের অধিকার পাইছে সকলের উপর? নন্দনতত্ত্বের বিষয়ে বিধিনিষেধ তৈরী করনের সামর্থ্য অর্জণ করছে?
রিফাত হাসানের উপসংহার অনেক একাডেমিয় ভাষায় তৈরী হয়...কিন্তু আমি তার বিসর্গেও কিছু উপলব্ধ করবার পারি না।
মৌলভিদের প্রতিবাদের উত্তরে প্রতিক্রিয়াশীল মধ্যবিত্তিয় অবস্থান ও অবস্থান-সঞ্জাত ভাষাকে মোকাবেলা করার ও এই সকল অবস্থান উৎপত্তির মনন কাঠামো বোঝার একটি চমৎকার ও কার্যকর বুদ্ধিবৃত্তিয় অবস্থান তৈরী হয়েছে আজকের উপরোক্ত ঘটনার আলোকে, যা কিনা একই সাথে আমাদের রাষ্ট্রের বর্তমান সংকটের মূল বিন্দুসমূহের একটি গুচ্ছকেও নির্দেশ করে বলে আমার মনে হয়।
মৌলভীগোটা তার কাছে হয় প্রতিবাদ আর মধ্যবিত্তগো চেতনাটা হয় প্রতিক্রিয়াশীলতা...এই বিষয়টা তার কাছ থেইকা আরো ডিটেইলে যাই...নাইলে ধর্মের আইকন নিয়াও যেই ব্যবসা চলে এই দেশে তার ধান্দায় রিফাত হাসানের মতোন আমারো চোখ আন্ধা হইয়া যাওনের সম্ভাবনা জারী করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।