আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক আরব কন্যার বাবার গল্প



এটা এক বাবার গল্প। এক আরব জাহেল বাবার কথা। রোজার ঈদের জামাতের শেষে ঈমাম সাহেব খুৎবা দিলেন। নানা প্রসঙ্গে বলতে বলতে হঠাৎ বলে বসলেন, "যার মেয়ে নাই, বাবা হবার আনন্দের অনেকটা থেকেই সে বঞ্চিত। " এটা পূত্র সন্তানকে অবহেলা করার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন নি, কন্যা সন্তানের মিষ্টতাকে ইঙ্গিত করেছেন।

এরপর শুরু হল আসল কাহিনী। ঘটনা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়ের। একজন এসে তাঁর কাছে বললেন, "আমি জীবনে যত পাপ করেছি তা যদি পৃথিবীর সব মানুষের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয় তবে সেই ভগ্নাংশই তার দোজখে যাবার জন্য যথেষ্ট। আমি কোনদিনই সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা পাবনা। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার কাহিনী বলতে বললেন।

লোকটা শুরু করলেন তার জীবনের করুনতম ঘটনা। (আমি সেই ব্যক্তিকে ১ম পুরুষ ধরে বর্ননা দিচ্ছি) আমার স্ত্রীর গর্ভে একে একে সাতটা সন্তান জন্ম নেয়; কন্যা সন্তান। আমি এক জাহেল পিতা, লোকলজ্জার ভয়ে সব সন্তানকেই জন্মের পরপরেই জ্যান্ত কবর দিয়ে দেই। অষ্টম বার আমার স্ত্রী যখন গর্ভবতী, ব্যবসায়িক কাজে দীর্ঘদিনের জন্য আমি বাইরে ছিলাম। কয়েক মাস পর ফিরে এসে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, "কই, আমার সন্তান কই? এবার নিশ্চয় পুত্র সন্তান হয়েছে?" স্ত্রী বললেন, "না, এবারও কন্যা সন্তান হয়েছিল।

তুমি কন্যা সন্তান হলে তো জ্যান্ত পুঁতে ফেল, আমি সেই কাজটা এবার নিজ হাতে করেছি। " শুনে আমি চুপ করে গেলাম। দিন যায়, মাস যায়। এর মধ্যে চার বছর মত অতিবাহিত হয়ে গেছে। একদিন হঠাৎ আমার সামনে ফুটফুটে সুন্দর একটা মেয়ে এসে হাজির।

এসেই বাবা বাবা বলতে বলতে আমার গলা জড়িয়ে ধরল। আমিতো হতবাক। দেখলাম, আমার স্ত্রী একটু দুরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমার প্রশ্নবোধক দৃষ্টির জবাবে সে জানাল এটা আমারই কন্যাসন্তান, আমি বিদেশে থাকাকালিন সে জন্ম নেয়। তারপর তাকে এতদিন আমার চোখের আড়ালে রেখে মানুষ করে হয়েছে।

কি অদ্ভুত ফুটফুটে মেয়ে! আর মুখে কথার যেন খই ফুটছে। আমার দু'গাল চুমুয় ভরিয়ে দিচ্ছে আর বলছে, "বাবা তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? কেন আমার কাছে আসনি?" আমার মন যেন মোমের মত গলে গেল। এরকম সুন্দর একটা বাচ্চা, আমার? অদ্ভুৎ এক ভাল লাগায় ভরে গেল মন। তারপরেই আমার ভেতরের আসল রূপটা প্রকট হল। এতো কন্যা সন্তান, একে কিভাবে রাখি।

বড় হলে সে অন্যের ঘরে যাবে, গোলামী করবে আর সমাজে আমার মাথা হেঁট হবে। একে কোনমতেই রাখা যাবেনা। কিন্তু আমার স্ত্রীকে আমার মনোভাব বুঝতে দিলামনা। তাকে বললাম, "মেয়েকে আমার সুন্দর করে সাজিয়ে দাও। বাজারে নিয়ে যাব।

" মেয়েকে আমার সাজিয়ে দেয়া হল। আমি বাজারের উদ্দেশ্যে তাকে নিয়ে চললাম। বাজার এল, বাজার পেরিয়ে গেলাম। মেয়ে জিজ্ঞেস করছে, "বাবা, বাজারতো ফেলে এলে!" আমি বললাম, সামনে একটা কাজ সেরে এসে বাজারে খেলনা কিনে দেব তোমাকে" এই বলে তার হাত ধরে এগিয়ে গেলাম, লোকালয় ফেলে একটা নির্জন মরুপ্রান্তরে জনমনিষ্যির দৃষ্টিসীমার আড়ালে নিলাম তাকে। সেখানে দাঁড়িয়ে গিয়ে তাকে একটা পাথরের ওপর বসিয়ে শুরু করলাম গর্ত খোঁড়া।

মেয়ে বসে বসে দেখতে লাগল আর বলতে থাকল ফিরি গিঢে বাজারে সে কি কি নেবে; খেলনা পুতুল, হাঁড়ি পাতিল। আমাকে কি ভাবে কোরমা রান্না করে খাওয়াবে তাও বলল। তার মুখ একটুও বন্ধ ছিলনা। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে এবার আমার মামনির হাত-পা শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললাম। এবার সে আসল ঘটনা টের পেল।

তার মায়ের কাছে তাকে লুকিয়ে রাখার কারন আবছা ভাবে শুনেছে, মনে পড়ে গেল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মা আমার তাকে ছেড়ে দেবার জন্য অনুনয় করতে শুরু করল, "বাবা, বাবা গো, আমি তোমার সন্তানগো বাবা। আমাকে কেন তুমি মারবে বল? আমাকে ছেড়ে দাও। আমার মায়ের কাছে যেতে দাও। মা আমার পথ চেয়ে আছে।

" কিন্তু আমি তাকে আরও শক্ত করে বেঁধে ফেললাম। এবার সে আরও আকূল অনুনয় শুরু করল, " বাবা, ও বাবা, আমি তোমার কাছে কক্ষনও কিচ্ছু চাইবনা। আমাকে কোন খেলনা দিতে হবেনা। এমনকি তোমাকে বাবা বলেও ডাকবনা-তুমি যদি না চাও। কখনও তোমার সামনেও আসবনা।

কিন্তু আমাকে মেরে ফেলনা, বাবা। " তার এমন আকূল আর্জিতে পাথর গলে যাবার কথা কিন্তু তখন আমার যে কি হয়েছিল জানিনা। কোন শয়তান আমার ওপর ভর করেছিল। তার কান্না আমার ভেতরের রাগকে শতগুনে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। আমি তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম গর্তের ভেতর।

সে তখনও কাঁদছিল আর বলছিল" বাবা, বাবা, আমাকে মায়ের কাছে যেতে দাও। আমি মা'কে একবার দু চোখ ভরে দেখতে চাই। তুমি আমাকে ছাড়া ফিরে গেলে মা কে কি জবাব দেবে? মা আমাকে না দেখে মরেই যাবে। আমাকে তুমি নিয়ে চল বাবা। " আমি আর তার কন্ঠ সহ্য করতে পারছিলাম না।

তার মুখ চিরতরে বন্ধ করার জন্য ইয়া বড় এক পাথর তুলে তার দিকে ছুঁড়ে মারলাম। পাথর গিয়ে তার মাথায় লাগল। রক্ত ছিটে এসে আমার গায়ে পড়ল। মা আমার কয়েকবার ছটফট করে নিথর হয়ে গেল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে ক্ষমার বিষয়ে কি বলেছিলেন তা না হয় থাক।

কিন্তু আমি দেখলাম আমার দু'চোখ বেয়ে জলের ধারা সমানে বয়ে যাচ্ছে। একজন কন্যার পিতা হয়ে এমন ঘটনা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। কিন্তু এমন ঘটনা তখন অহরহ ঘটেছে। বিশ্বের অনেক স্থানে এখনও ঘটছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।