তারেক মাসুদ এবং তার স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কতটুকু অবদান রেখেছেন সেটা নিয়ে মূল ধারা এবং বিকল্প ধারার সিনেমা প্রেমীদের মধ্যে বিতর্ক উঠতে পারে, এটা স্বাভাবিক। বিতর্ক উঠূক আর না উঠুক - তারা দুজনে এবার তাদের অবদানের তালিকায় একটি প্রামাণ্যচিত্র সংযোজন করলেন, নাম 'কানসাটের পথে'
শহবাগস্থ পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান মিলনায়তনে বিকেল চারটেয় উদ্বোধনের কথা ছিল, কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আধাঘন্টা দেরীতে শুরু হল কারন কানসাট আন্দোলনের নায়ক গোলাম রব্বানির কিন্চিত দেরী হওয়ার কারনে। তিনি আজই চাপাইনবাবগন্জ থেকে এসেছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য।
সোয়া চারটেয় মঞ্চে উঠলেন বিশিষ্ঠ আইনবিদ ডঃ কামাল হোসেন, গোলাম রব্বানী, আনু মোহাম্মদ, তারেক মাসুদ সহ আরও দুজন (নাম ভুলে গেসি). প্রত্যেকেই তার জন্য নির্ধারিত একমিনিট সময় অতিক্রম করে অল্প বিস্তর বললেন কানসাট আন্দোলনের ব্যাপারে। সকলেই অহিংস আন্দোলনের কথা বলছিলেন যা তারেক মাসুদ সংশোধন করে দেন 'তুলনামূলক অহিংস আন্দোলন' হিসেবে।
৫০ মিনিটের ডকুমেন্টারী কানসাটের পথে। কাহিনীর মূল অংশ বর্ণনা করা হয়েছে চাপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা গানের মাধ্যমে - নানা নাতি নেচে নেচে শুরু করলো তাদের কাহিনী। মূলত সাক্ষাৎকারভিত্তিক এ ডকুতে গোলাম রব্বানী, তার স্ত্রী, নিকটাত্মীয় রোকেয়া বেগম, মুক্তিযোদ্ধা টিসু ভাই এর জবানীতে পুরো আন্দোলনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোতে বসে তারা বর্ণনা করে গিয়েছেন তাদের যু্দ্ধের কাহিনী, মাঝে মাঝে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের কাছ থেকে সংগৃহিত ফুটেজ ব্যবহৃত হয়েছে। গোলাম রব্বানী যে তার এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং পরিচিত তা পরো ডকুমেন্টারী জুড়ে বোঝা যায় - চলন্ত গাড়ির খোলা দরজা দিয়ে তাকে কিছুক্ষন পর পরই সালাম এবং তার জবাব দিতে হচ্ছিল।
শেষ পর্যায়ে বাজারের চা-দোকানে জনগনকে ঘিরে গোলাম রব্বানী বসেছিলেন। একজনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়ে দিলেন - তিনি সর্বদা জনগণের পক্ষে থাকবেন, দেশের ও মানুষের সেবা করে তিনি দেখিয়ে দিবেন এখনো কিছু ভালো মানুষ রয়ে গেছে।
সর্বশেষে পর্দায় ফুটে উঠা বাক্যাবলী থেকে জানা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের শেষে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে, সুতরাং গোলাম রব্বানীর সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়নি এখনো।
পুরো ডকু জুড়ে যে ব্যাপারটি তুলে ধরা হয়েছে যে জনগণের নায্য দাবী অহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদায় হয়েছে। কিন্তু এ শুধু আন্দোলনের বর্ণনা মাত্র, সমগ্র আন্দোলন ৫০ মিনিটে আবদ্ধ করা হয়েছে।
আন্দোলনের শুরু কোথায়, তার যোক্তিকতা কতটুকু, কিংবা পুরো আন্দোলনের সামগ্রিক বিশ্লেষণ - কোন কিছুই পাওয়া যায় নি কানসাটের পথে প্রামান্য চিত্রে। ফলে শুধুমাত্র এ ডকুমেন্টারী থেকে পুরো আন্দোলনের চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। কানসাটবাসীদের অনুসৃত পদ্ধতিই কি সমাধান নাকি এর থেকেও ভালো সমাধানের চেষ্টা করা উচিত সে জানি না কিন্তু কানসাট বাসী মনে করে সকল ক্ষেত্রের দুর্ণীতি এর মাধ্যমেই দূর করা সম্ভব।
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে একটা কথা বেশ ভালো ভাবে খেটে য়ায় - "যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ" । গোলাম রব্বানী, যার ভাষণ যে কোন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে কোন অংশে কম জ্বালাময়ী নয়, এখন পর্যন্ত লঙ্কায় যাননি, তাই রাবণ হবেন কিনা সেজন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে!
লেখাটি সিনেমাখোর গ্রুপে প্রকাশ করা হয়েছে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।