যদ্দুর মনে পড়ে ৭৫ সাল। আমরা তখন চাঁদপুরে। দেশে বেশ অভাব। বাবা সরকারি চাকুরে। যা আয় হয়, তাতে আমাদের ৭ জনের সংসার বড় কষ্টে চলে।
দিনে দুই বেলা রুটি আর এক বেলা ভাত খেতাম আমরা। রুটির সাথে আলু ভাজি, ভাতের সাথে একটা তরকারি আর ডাল।
৭৫ সালের আগস্ট মাস। ১৫ তারিখ বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে মেরে ফেলা হলো। সবার মধ্যে আতঙ্ক।
কখন যে কী হয়, কিছুই বলা যাচ্ছে না। বাবা আমাদের পাঠিয়ে দিলেন গ্রামের বাড়ি। গ্রামে এসে আমাদের একদম ভালো লাগছিলো না। গ্রামের জীবনে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম না। তার উপর কারেন্ট নেই, খেলার সাথী নেই।
বাচ্চাদের কথা কিসস্যু বুঝি না। অল্প দিনেই হাঁপিয়ে উঠলাম আমরা ভাইবোনেরা।
এর মধ্যেই ঈদ ঘনিয়ে এলো। আমরা অপেক্ষায় আছি, কবে বাবা বাড়ি যাবেন আমাদের জন্য নতুন জামা নিয়ে। বাবা বাড়ি এলেন ঠিকই, আমাদের জন্য জামা আর নিয়ে যেতে পারেন নি।
কেনো পারেন নি, সেটা জানতে পারিনি। তবে মা আমাদের ভাই বোনদের ডেকে বলেছিলেন-‘শুনো, তোমরা তো শহর থেকে এসেছো। । ঈদে নতুন জামার জন্য মন খারাপ করছো। অথচ আমাদের বাড়িতেই দেখো-বেশিরভাগ লোক দুই বেলা খেতে পারছেন না।
ঈদের জামা তো পরের ব্যাপার...। আগামী ঈদে তোমাদের সবাইকে নতুন জামা কিনে দেবেন বলেছেন- তোদের বাবা’।
মা’র কথা শুনে রাগে আর অভিমানে আমরা ভাই বোনেরা কেঁদে ফেল্লাম। মা নিজেও কাঁদলেন আমাদের সাথে। মা’র কান্না আমাদের ক্ষাণিকটা শান্ত করলো।
ঈদ নিয়ে কতো স্মৃতি মনে পড়ছে...। আজ মা নেই, বাবা নেই। আমরা ভাই বোনেরা যে যার মত সংসার করছি। সবাই ঢাকায় আছি। প্রায়ই আমরা ৬ ভাই বোন কোনো না কোনো বাসায় মিলিত হই।
আড্ডা, হৈ চৈ, খাওয়া-দাওয়া হয়। আমাদের ৬ ভাই বোনের ১০ সন্তান। এ ওর বাচ্চাকে জামা-কাপড় দেই ঈদে। একেকটা বাচ্চার ৫/৬ সেট নতুন জামা হয়। ওদের আনন্দ দেখি...নিজেরা আনন্দিত হই...স্মৃতির জাবর কাটি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।