আমার এই স্মৃতিচারণমূলক লেখায় হয়তো অনেকেই বিরক্ত হচ্ছেন। শুধুমাত্র পাঠকের দলে থাকলে আমিও বিরক্ত হতাম এবং লেখাটা এড়িয়ে যেতাম খুব ভালভাবেই। কিন্তু আমি এখন আর শুধুমাত্র পাঠক নই, লেখকের কাতারে সবার পেছনে হলেও আমার স্থান হয়েছে। আর এই গ্রন্থমেলাতেই স্থানটা পেয়েছি আমি। তাই এর গুরুত্ব আমার কাছে অসীম।
স্মৃতিগুলো মহামুল্যবান।
গতরাতে নিজের লেখা উপন্যাস পড়েই বাজিয়ে দিলাম সাড়ে তিনটা। পরবর্তীদিনের কাজের কথা স্মরণ হওয়া মাত্র পড়া অসম্পূর্ণ রেখেই চোখ বুজতে হল আমার। সকালে যখন ঘুম ভাঙল, রীতিমত হতচকিয়ে গেলাম। প্রায় বারটা বাজে।
দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজ সারতে থাকলাম। গোসল সারতেই যোহরের আযানের ধ্বনি শোনা গেল। নামায আর খাওয়া সেরে পা বাড়ালাম গ্রন্থমেলার উদ্দেশ্যে।
আজ এমন কিছু কাজ করতে হবে, যা জীবনে করিনি। আর একারণেই মনে প্রচণ্ড শঙ্কা।
আমার একটা বাজে অভ্যাস হল, নতুন যেকোনো কাজ, যার সম্পর্কে ধারণা থাকে না আমার, সেই কাজ করার আগে রীতিমত ভীত-সন্ত্রস্ত থাকি। আজও তাই। তিনটা নাগাদ বাংলা একাডেমীতে পৌঁছে সোজা চলে গেলাম তথ্যকেন্দ্রে। সেখানে মোড়ক উন্মোচনের তারিখ আর সময় নির্ধারণ করলাম। আগামীকাল বিকেল পাঁচটায় সময় নির্ধারিত হল।
মোড়ক উন্মোচন করবেন অধ্যাপক সুব্রত কুমার দাস। সেই সাথে একটা ফর্ম পেলাম যা পুরন করে একটা বইসহ জমা দিতে হবে একাডেমীতে। ফর্মটা সংগ্রহ করে লেখক কুঞ্জে যেয়ে বসলাম, পুরন করব বলে। জীবনে এই প্রথম লেখক কুঞ্জে ঢুকলাম। এর আগে যতবার বইমেলায় এসেছি, লেখক কুঞ্জে ঢোকার সাহস হয়নি কখনও।
কারন সেখানে দেশের মাথারা আড্ডা দেন। আজ আমি সর্ব পেছনের কাতারের মানুষ হলেও লেখক। অতএব আমার অধিকার আছে সেখানে বসার। চুপচাপ ফর্ম পুরন করে দ্রুত ছুটলাম ফটোকপি দোকানের সন্ধানে। ফটোকপি করে তথ্যকেন্দ্রে বই এবং ফর্ম জমা দিয়ে আস্তে আস্তে যেয়ে বসলাম আলোচনা মঞ্চের সামনে।
সেখানে তখন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান চলছে। চুপচাপ পুরো অনুষ্ঠানটা উপভোগ করলাম। তারপর সন্ধ্যে নাগাদ লেখক কুঞ্জে যেয়ে বসলাম আবার। সেখানে তখন উপস্থিত অভিনেতা আব্দুল আজিজ, কবি জাহানারা জিনা এবং লেখক রহমান মুস্তাফিজ। চুপচাপ উনাদের কথা শুনছিলাম বসে।
লেখক কুঞ্জে বসার কারন আমার দুটো। বড় বড় লেখক যারাই আসেন না কেন গ্রন্থমেলায়, সবাই একবার হলেও ঢুঁ মারেন লেখক কিঞ্জে। আর তাছাড়া এই কুঞ্জের ঠিক মুখেই জাগৃতি প্রকাশনীর স্টল।
অনেকক্ষণ চুপচাপ লেখকদের আড্ডা শোনার পর এগিয়ে গেলাম নির্লজ্জের মত তাদের দিকে। নিজে থেকেই পরিচিত হলাম।
উনারা নতুন লেখক হিসেবে আমাকে বেশ উৎসাহ দিলেন। এর মাঝে কবি জাহানারা জিনা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আদরও করে দিলেন। অভিনেতা আদবুল আজিজ যখন জানতে পারলেন, আমি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, ভ্রূজোড়া কপালে তুলে বলে বসলেন, নতুন হুমায়ূন আহমেদ অথবা মুহম্মদ জাফর ইকবাল। কথাটা তিনি খোঁচা দিতে বললেন না আসলেই মন থেকে অবাক হয়ে বললেন, বুঝতে পারলাম না। তবে উনাদের সবার সকল মন্তব্য আমি আশীর্বাদরূপেই গ্রহণ করলাম।
এখানে আমার সাথে উনাদের সম্পর্ক অনেকটা গাছতলা আর পাঁচতলার মত। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে উনারা বেরিয়ে পড়লেন বিভিন্ন স্টল ঘুরবেন বলে আর আমি পা বাড়ালাম বাসার পথে। বাইরে বেরিয়ে অনেকক্ষণ পর একটা সিগারেট ধরালাম। মাথাটা ঝিম ধরে গেল সাথে সাথে বহুক্ষণ পর রক্তে নিকোটিন পৌছা মাত্র। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, যত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করুক সবাই, আমি আমার পথে এগিয়ে যাব।
আজ সকাল থেকে একটা কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, বড় যদি হতে চাও, ছোট হউ তবে। কথাটা আমি কাজে পরিনত করব। এখন আপাতত মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, কাল মোড়ক উন্মোচন। ভালয় ভালয় সব সম্পন্ন হলেই বাঁচি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।