সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পর ছোট একটা পোস্ট (Click This Link) দিছিলাম সামহয়ারইনে। আমাদের নেয়া তার একটা সাক্ষাৎকার আছিল। সেইটা ব্লগে, পত্রিকায় দিছিলাম। এইসব লেইখা, ছাপায়া ভাবছিলাম আর আমার বলার কী আছে? স্যারের সম্পর্কে নতুন কইরা এখনি কিছু বলার নাই।
পরে যখন স্মৃতি তৈরি হবে। যখন অভিজ্ঞতা হবে তখন মিলায়ে মিলায়ে দেখে স্যারকে নিয়া কিছু বলবো। মানুষের মৃত্যু হলে নাকি মানব থেকে যায়। সেলিম আল দীনের মৃত্যু হইলেও মানব রয়ে গেছে। মানবোত্তীর্ণ না হইলে খোলা মনে কিছু বলা যায় না।
আমি তার দেহান্তরের পর মানবান্তরের অপেক্ষায় আছি কিছুদিন।
কিন্তু কিছু বিষয় নিয়া কথা না কইলে শান্তি পাইতেছি না।
স্যার খুব প্রশংসা পছন্দ করতেন। প্রশংসা নিয়া তার ভীষণ অবসেশন আছিল। তার কোনো লেখা না পড়া কোনো নাটক না দেখা কোনো ব্যক্তি যদি এমনিতেই এসে তার প্রশংসা করতো তাইলেও তিনি বর্তে যেতেন।
উনি জীবনে বহু জিনিশরে চ্যালেঞ্জ কইরা বসছেন। কিন্তু প্রশংসারে কোনোদিন প্রশ্ন করছেন বইলা আমি দেখি নাই। আলতু-ফালতু প্রশংসায়ও তিনি ভীষণ রকম মুগ্ধ হয়া যাইতেন। স্যারের দুর্ভাগ্য জীবিত কালে উনি যত প্রশংসা পাওয়ার কথা ছিল ততোটা পান নাই। এখন যদি দেখতেন তাইলে খুব খুশী হইতেন।
প্রশংসার পাশাপাশি আরেকটা জিনিশ তিনি খুব পছন্দ করতেন, সেইটা হইলো উপাধি ও বিশেষণ। রবীন্দ্রপরবর্তী নাটকের উজ্জ্বলতম উত্তরাধিকার, নাটকের কবিগুরু এইরকম কিছু বিশেষণ তার জীবিতকালেই চালু হইছিল। তবে স্যার যে জিনিশটা খুব চাইতেন সেইটা হইলো, কেউ তারে কবি বলুক। বহু বিশেষণ তিনি পাইলেও কারো মন থিকা কবি কথাটা শুনেন নাই বইলা তার একটা আক্ষেপ আছিল।
স্যারের মৃত্যুর পর মরদহের সাথে সাথে তাকে নিয়ে আমাদের মনের সকল গ্লানি, অভেযোগ অমুক-তমুক আমরা কবর দিয়া ফেলছি।
তাকে সম্মান সহকারে বিদায় দিছি। সামনে তার লেখা আছে। সেইগুলা নিয়া কোনো একদিন ক্রিটিকাল আলোচনা শুরু হবে সেই অপেক্ষায় আছি। কিন্তু পরিস্থিতি দেইখা মনে হইতেছে সেইটা সুদূর পরাহত। সেলিম আল দীনকে কবর চাপা দেওয়া হইছে মাটি দিয়া।
আর তার রচনাবলীরে কবর দেওয়ার কাজ চলতেছে বিশেষণ দিয়া। আশপাশে সেলিম আল দীন কাল্টের উদ্ভব হইতেছে। সেলিম আল দীনের নামে পাঠচক্র শুরু হইছে। ভাল উদ্যোগ। তাকে আচার্য, নাট্যাচার্য এইসব উপাধি দেওয়া হইতেছে।
সাহিত্যে পদ-পদবির কোনো স্থান নাই। আচার্য মানে বাংলা নাটকে কোনো পোস্ট ক্রিয়েট হইছে কি না তাও আমি শুনি নাই। আমি এইসব দেইখা একেবারে তব্দা মাইরা গেছি। হুমায়ুন আজাদ কইছিলেন, এই জাতি হইলো মুর্খের জাতি। এদের যদি কন, আপনে কিছু না।
তাইলে এরা বিশ্বাস করবে আপনে কিছু না। আবার যদি কন, আপনে মহাজ্ঞানী। তাইলে এরা একদিন আপনের সাথে সাথে আপনারে মহাজ্ঞানী কওয়া শুরু করবে। সেলিম আল দীনকে মুর্খরা যখন বিশেষণের কবরে শায়িত করতেছে তখন আমার হুমায়ুন আজাদের কথা মনে হইলো। সেলিম আল দীনকে নিয়ে যে মন্দির গড়ে তোলার কাজ চলতেছে, সেই মন্দিরে তার মূর্তি স্থাপনের আগেই তাকে আমাদের বইয়ের তাকে নামায়ে আনতে হবে।
পূজারিদের প্রতি অনুরোধ, আপনেরা থামেন। আসেন কিছু কথা, তর্ক, আলোচনা হউক। মানুষরে বিশেষণ দিয়া বুঝা যায় না। বিশেষণ ছাড়া আলাপে আসেন।
ছবি : ফেসবুকের ড্রামা অ্যান্ড ড্রামাটিক্স গ্রুপ থিকা অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলাম।
উদাহরণ দেওয়ার প্রয়োজনে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।