একজন ইউনুস খান বেঁচে থাকতে চান গণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং উদ্যেগ গ্রহণের মাঝে।
@চিকনমিয়া ভাইয়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা পূর্বকঃ
ছেলেটার ওজন প্রায় আশি কেজি তাই ক্লাসের সবাই তাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। আসলে চতুর্থ শেণীতে আশি কেজি, ওজনটা একটু বেশীই। সেজন্য তাকে অনেকেই অনেক নামে ডাকে এবং ক্ষেপায়। সেও মাঝে মাঝে খুব বেশী ক্ষেপে যায়।
ব্যতিক্রমও কিছু আছে।
এই যেমন একটা মেয়ে ছিল নামটা ঠিক এই মুহুর্ত্তে মনে করতে পারছিনা সে তাকে আদর করে মুটো ডাকত। মুটোদা তুমি কত ভালো আমারে দুইটা ধইন্যাপাতা আইন্যা দেওনা বড়ই ভত্তা খাব। ঐ সময় আবার স্কুলের ধারে জগাদের বাড়ির পাশের ক্ষেতে ছাড়া ধইন্যাপাতা পাওয়া যায়না। জগার মা সবসময় ঐ ক্ষেত পাহাড়া দিত।
মুটোদা তবুও চুরি করে ধইন্যাপাতা আইন্যা দিত, খাতির জমাইতে চাইতো। এক-দুইবার ধরাও খেয়েছে। তবে ঐ কানে ধরে উঠবস ছাড়া তেমন বড় কোন শাস্তি পেতে হয়নি। আসলে এই মেয়েটার জন্য মুটোদা সবই করতে পারে।
প্রতিরাতেই স্বপ্নে মেয়েটা এসে মুটোদার কাছে ধইন্যা পাতা চাইত।
এভাবে ভালোই কাটছিল। একসময় মুটোদার মনে হলো এবার বিষয়টা জানানো দরকার। মুটোদা প্রস্তুতি নিয়ে স্কুলে রওনা হলো আজকে সে বলেই ফেলবে। টিফিনের সময় যখন মুটোদা ৫হালি কলা, ১ডজন ডাব, দুইসের দুধ দিয়ে টিফিন সারছিলো তখন ঐ মেয়েটা এসে বলতে লাগলো আচ্ছা মুটো তোমারে কেডা বিয়া করব? তুমি যে মোটা। মুটোর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
কয় কি? তাইলে আমার কি হবে। বলেই কেদে দিল। ঐ যে সিনেমায় অনেক সময় দেখায়না মোটা এক বালক মুখে চার-পাচটি কলা নিয়া কান্না করছে ঠিক সেই রকম একটি দৃশ্য। মুটো অনেক কষ্ট পেলো।
বাড়িতে আসার সময় রাস্তার ধারের গোলাপ গুলোকেও গেন্ধা ফুলের চেয়ে বেশী কিছু মনে হচ্ছেনা।
এমন সময় দেখে পাশের বাড়ির কইশ্যা ভাইকে তার বাবা মারছে আর বলছে এই সব ছাই-পাশ খেয়ে খেয়ে শরীরের অবস্থা কি করেছিস। শরীরটা চিকন হইতে হইতে কি অবস্থা। মুটোদা তখন নাচতে শুরু করল পাইছি...... পাইছি.....। একদিন বিকালে মুটোদা কইশ্যা ভাইকে ধরল তাকেও যেন কলকি টানার সময় নিয়া যায়। কইশ্যা ভাইতো একথা শুনে মুটোর কানে ধরে দিলো এক চর।
মুটো যতটুকু না ব্যাথা পাইছে তারচেয়ে বেশী মনে আঘাত পাইছে। এই জীবনে বুঝি আর চিকনা হওয়া হইলোনা? এই জীবনে বুঝি তোমারে পাওয়া হইলোনা।
পাঁচ বছর পরের ঘটনা। মুটো মোটাই রয়ে গেল। ওজন প্রায় ১৮০ কেজি।
তখন দশম শ্রেণীতে পড়ে। কোন মেয়েদের সাথে মুটো এখন আর কথা বলেনা। একদিন একটি মেয়ে এসে বললো মুটো বড়ই বর্ত্তা খাবা, খাইলে যাও কয়েকটা ধইন্যাপাতা নিয়া আসো। এইভাবে মেয়েটার সাথে মুটোর ভাল জমে গেল। মেয়েটাও কেমন জানি তারদিকে আড়চোখে তাকায়, দুষ্টুমি করে, মাঝে মাঝে বলে মুটোদা তোমারে একটা কথা বলতে চাই।
সাহস পাইনা। যদি তুমি রাগ করো। মুটোদা শুনতে চাইলেও কখনই বলেনা। মুটোতো বুঝতে পারে এইবার হবে তার গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করে। দু-একবার চেষ্টাও করেছে গাওয়ার জন্য।
কিন্তু যেই শুরু করে তখনি কোত্থেকে এসে দু-চারটি কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করে।
একদিন ঐ মেয়েটি মুটোদাকে এসে বলছে আজকে তোমাকে ঐ কথাটা বলবো। বাড়িতে যাওয়ার সময় আমারে নিয়া যেও। মুটো তখন উদাস হয়ে গেল। ক্লাসেও আনমনে থাকতে থাকতে কল্পনায় ঐ মেয়ের সাথে বাংলা সিনেমার মতো নাচ শুরু করলো।
যেই শুরু করলো "বেদের মেয়ে জোন্সা আমায় কথা দিয়েছে" তখনি কানে ঘেউ ঘেউ আওয়াজ ভেসে আসলো। মুটোর কল্পনা ভেঙ্গে যায়। দেখে স্যার একটা দুই হাত লম্বা লাঠি নিয়ে দাড়াইয়া আছে। কি ক্লাসে বেদের মেয়ে আজকে তোরে বুঝাচ্ছি। পাঁচ-পাঁচটি লাঠি ভাঙ্গলো তবুও মুটোর কিছুই হইলোনা।
যাওয়ার সময় রাস্তায় অপেক্ষা করছে ঐ মেয়েটার জন্য। কিন্তু মেয়েটি আসলোনা। মুটো অনেক কষ্ট পেলো।
ঐ দিন রাত্রে মুটোর অনেক জ্বর হলো। ভাগ্যকে অনেক দোষারুপ করতে লাগলো মুটো হওয়ার জন্য।
হঠাৎ দেখে একটি মেয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মুটোতো অবাক। মেয়েটি বললো আমি হলাম ভাগ্যদেবী। এই নাও ধইন্যাপাতা। এগোলো লুকিয়ে খেয়ে ফেলো।
এইভাবে দুইমাস প্রতিদিনই ভাগ্যদেবী এসে তাকে কয়েকটি ধইন্যাপাতা এনে দেয় আর মুটো লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়ে ফেলে। ভাগ্যদেবী শেষবার যখন আসলো দেখে মুটো শুকিয়ে একদম চিকন হয়ে গেছে। ভাগ্যদেবী মুটোর মাথায় হাত দিয়ে বললো চিকনমিয়া..... চিকনমিয়া..... দেখো তুমি এখন কত চিকন হয়ে গেছো...... এখন থেকে তুমি হলে চিকনমিয়া। চিকনমিয়া দেখলো সত্যি সত্যি অনেক শুকিয়ে গেছে। সে ভাগ্যদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
যাওয়ার সময় ভাগ্যদেবী শুধু একটি কোথায় বললো বেশী কিছু আশা করোনা।
তাইতো চিকনমিয়া গেয়ে উঠে বেশী কিছু আশা করিনা।
[নাম সমাচার এর আগের পর্বটা ছিলো "আরিফ থেকে আনা" ভাই কে নিয়ে
Click This Link
]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।