মনুষ্যত্বহীন মানুষ যন্ত্রের গল্প
ঢাকা শহর বদলে যাচ্ছে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা। আরবান কনসেপ্টের আড়ালে মানুষের মধ্যে বাড়ছে দূরুত্ব আর প্রাইভেট গাড়ি নির্ভর জীবনযাত্রা শহরের মানুষগুলোর জীবনের একাকীত্বকে আরোও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ক্রমেই মানুষগুলোর জীবন আমি আর তুমির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এ শহরের সকল কিছু আজ বিক্রয়যোগ্য প্রেম, ভালবাসা, অনুভূতি সবই এখানে টাকার অংকে মাপা যায়। আর এই হিসেব মেলানোর জন্য গজিয়ে ওঠেছে গুটিকয়েক অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, পরিকল্পনাবিদ।
যেন অল্প কিছু মানুষের লিঃ কোম্পানী হয়ে পড়ছে প্রিয় শহর।
প্রিয় ব্লগার
এই গল্প একজন রাসেলের। রাসেল পরিচয় সে একজন হকার । শহরের বিভিন্ন স্থানে সে সবব্জী বিক্রি করে। প্রতিদিনের মত আজো সে ফুটপাতের ধারে তার পণ্যের প্রসরা সাজিয়ে বসেছে।
কিন্তু একটা কালো রঙের প্রাইভেট কার রাসেলের বাসার স্থান ও পুরো ফুটপাত জুড় পার্কিং করতে চায়। দৈত্য সুলভ প্রাইভেটকার বিকট হর্ণ ব্যবহার করে জায়গা দখল করতে চাইছে। প্রাইভেট কারটির পার্কিংয়ে রাসেলের মৃদু আপত্তি । কারণ গাড়িটি একটু দূরে পাকিং করলে গাড়ির কোন সমস্যা হবার নয় আর এই ফুটপাত গাড়ি পার্কিংয়ে জায়গাও নয়। এই মৃদু অপত্তি রাসেলের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।
দৈত্যকার গাড়ি থেকে নেমে আসে দুইজন স্বাস্থ্যবান ছেলে। নিমিশেই তারা রাসেলের সব মালামাল রাস্তায় ছুড়ে ফেলে। টেলিভিশনের রেসলিং দেখে-শেখা মারের অনুকরনে তারা রাসেলকে মারছে । অনেক লোক দেখছে এই মানুষ মারার খেলা। দৈতকার গাড়ির জানালা একটু নামিয়ে সুন্দরী কন্যাদ্বয় বার বার দেখছিল তাদের নায়কদ্বয়ের রেসলিং।
নায়কদ্বয়ের এই বীরত্বকে বার বার উৎসাহ দিয়ে চলছে তাদের বিচিত্র অঙ্গভঙ্গিতে।
অসহায় রাসেলের ছোটভাইটা বার বার আকুতি জানচ্ছে আশেপাশের মানুষগুলোর কাছে ভাইকে বাচাঁনোর জন্য। মানুষগুলোর নিরবতা, চোখের সামনে ভাইয়ের নিশ্চিত মৃত্যু ভাবনাটা হয়ত এই শহর আর শহরের মানুষের প্রতি অবিশ্বাসই জন্ম দিচ্ছিল.............. ।
তার আকুতি কী কোনভাবে ভাইয়ের মৃত্যু রুখতে পারবেনা?
মহা প্রতাপশালী এই নগর ক্ষমতাবান পুত্রদের কাছে অসহায় শতশত মানুষের মনুষ্যত্ব, বিবেকের বন্দীত্ব আর রূপসী কন্যাদ্বয়ের বেহালীপনা নিয়ে আশা করি আগামী সংখ্যায় লিখব........................................
আর এই নিয়ে আমার আন্দোলনের শুরু, শুরু আগামীর নতুন স্বপ্নের । আমার বিশ্বাস এই গল্পের বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে আপনারা সবাই একমত হবে আমার সাথে।
আর আমাদের গুটি কয়েক মানুষের স্বপ্নের আন্দোলন নিশ্চয় রূপ নিবে, হাজারো মানুষের অধিকার আদায়ে দাবীতে।
আসুন গল্পের শুরু,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ঢাকা শহরটা যেন আজ মানুষের জন্য নয় । গাড়ি জন্য এ শহর । এ শহর নিয়ে শুধু তখনই হতাশ হই যখন দেখি শহরের মানুষগুলো থেকেও শহরে চলাচলকারী প্রাইভেট গাড়িকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। সবাই কে পরিকল্পিতভাবে বানানো হচ্ছে প্রাইভেট গাড়ির দাস।
শহরের বাড়িগুলোতে একটা শিশুর খেলার জন্য জায়গা নেই, জায়গা নেই জীবনের অপরিহার্য একটা গাছ লাগানোর জায়গা, কিন্তু কর্তৃপক্ষ সোচ্চার গাড়ি জায়গা ( পাকিং প্লেস) তৈরি জন্য। প্রতিটি বাড়ীতে পাকিং প্লেস তৈরিতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ১০টাকার বিনিময়ে মতিঝিলের সারাদিনের জন্য গাড়ি পাকিং করতে দেওয়া হয় । অনেক রাস্তায়, ফুটপাতে প্রাইভেট কারকে পাকিং করতে দেওয়া হয়। দেওয়া হয় না শুধু হকার বসতে।
একটা হকার একটা গাড়ি থেকে কম জায়গা নেয়, কিন্তু তার এই ব্যবসার ঘিরেই অনেকগুলো প্রাণের স্পন্দ নির্ভরশীল। সংবিধান, গণতন্ত্র, আইন কিসের অধিকারে ধনীর গাড়ি ১০ টাকায় / বিনামূল্যে সারাদিন রাস্তায় পার্কিং সুবিধা পায়। প্রতিটি হাকারও সারাদিনে ১০ টাকা কেন ৫০টাকা দিতে রাজি। শুধুমাত্র অল্প একটু জায়গা প্রয়োজন তার ব্যবসার জন্য। পাশাপাশি তার এই পন্যের উপর নির্ভর ঢাকার একটি বিরাট জনগোষ্ঠী।
যেখানের যানজটের কথা বলে হকার বসতে দেওয়া হয় না সেখানে কিভাবে প্রাইভেট কার পাকিং দেওয়া হয় বিনামূল্যে। তখন কি রাস্তা সংকুচিত হয় না?
যে শহরে প্রতিদিন হাজারো মানুষ না খেয়ে ঘুমাতে যায় সেই শহরে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা ভর্তুকী দেওয়া হয় প্রাইভেট কারে পিছনে। আর এই প্রাইভেট কার ব্যবহার করছে গুটি কয়েক লোক যা ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯শতাংশ। ৯শতাংশ মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করতে ঢাকা শহরের রাস্তা অর্ধেকের বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের জন্য। বাকি রাস্তায় চলি আমরা সবাই ৮১শতাংশ লোক ।
কী সমাধান ? কেউ বলে ২৫% রাস্তা দরকার । এত ঘনবসতি পূর্ণ দেশে কী ২৫% রাস্তা তৈরি সম্ভব? তাহলে মানুষ থাকবে কোথায়? পৃথিবীর অনেক শহরে ৩০% রাস্তা থাকার পরও যানজট । আবার ৬% থেকে কম রাস্তা নিয়েও যাতায়াত ব্যবস্থায় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে অনেক শহর। যে শহরে রাস্তা কম সে শহরে কীভাবে গুটি কয়েক ব্যক্তির যাতায়াত সুবিধাকে প্রাধান্যই প্রধান হয়। ঘর বাড়ী, অফিস আদালত সবকিছূ ভেঙ্গে রাস্তা তৈরি সম্ভব নয়।
তাই ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনার সিন্ধান্ত নিতে হবে ৬% রাস্তাকে ঘিরেই। এই সীমাবদ্ধতার মাঝেও কর্মের সুযোগ করে দিতে হবে হকার রাসেলের মত হাজারো ব্যক্তিকে । নিয়ন্ত্রণ করতে গুটি কয়েক ব্যক্তির বাহন। অধিক পরিমাণ পাবলিক পরিবহণ, রিকশা, সাইকেল, পথচারীবান্ধব ফুটপাত তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাবে মানুষ গাড়ি নয়।
আসুন আমরা সচেতন হই। এ শহর নিয়ে হাজার অভাব অভিযোগের মধ্যেও যেন আমরা না ভুলি এ শহর আমাদের । এ নিয়ে শহর ঘিরে প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমাদের নগর জীবনে প্রভাব ফেলে। তাই শহর বিষয়ে আমার এগিয়ে আসি। এগিয়ে আসি এ শহরে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে।
এগিয়ে আসি দূষণমুক্ত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে।
বিঃ দ্রঃ মহা প্রতাপশালী এই নগর ক্ষমতাবান পুত্রদের কাছে অসহায় শতশত মানুষের মনুষ্যত্ব, বিবেকের বন্দীত্ব আর রূপসী কন্যাদ্বয়ের বেহালীপনা নিয়ে আশা করি আগামী সংখ্যায় লিখব........................................
মনুষ্যত্বহীন মানুষ যন্ত্রের গল্প ২য় পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।