হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।
অন্য একটি প্রয়োজনে [url=http://www.zmag.org/znet/viewArticle/18257]চমস্কির এই সাক্ষাতকারটিকে [/url]নিবন্ধ আকারে অনুবাদ করতে হয়েছিল। এখানে প্রশ্ন মুছে দিয়ে তা তুলে দিলাম।
.................................................................................
এক অর্থে যুক্তরাষ্ট্র একটি মুক্ত সমাজ। বিশ্বের যেকোনো জায়গার থেকে এখানে মুক্তচিন্তা বেশি সুরক্ষিত। কিন্তু আমেরিকা একটি নিয়ন্ত্রিত সমাজও বটে। ব্যবসায়ীরাই এখানে সমাজকে চালান। তাঁদের আদর্শ থেকে সামান্য বিচ্যুতিকেও খুব বিপজ্জনক ভাবা হয়।
রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতাবান শ্রেণীও এ বিষয়ে অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর। অন্যদিকে জনগণ অধিকারের বিষয়ে বামের দিকে ঝুঁকে থাকে। এ রকম অবস্থায় সামান্য ভিন্নমতও বিপর্যয় নামাতে পারে বলে ক্ষমতাবানরা ভীত। তাই মত প্রকাশের সীমারেখা খুব সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে। সুতরাং আমেরিকার সমাজ মুক্ত হলেও তা কঠোরভাবে শাসকদের নিয়ন্ত্রণবাদী মতাদর্শের অধীন।
বাইরে থেকে আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে টেকসই ও স্থিতিশীল ভাবা হলেও সেখানকার শক্তিশালী গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা সামান্য ভিন্নমতও সহ্য করতে নারাজ। এটা হলো গড়পড়তা কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা। সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে, নইলে সর্বনাশ হবে। বাস্তবত, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা তত পোক্ত নয়। এখানে অধিক সংখ্যায় নিপীড়ন চলে।
পেন্টাগনের দলিলগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়Ñ যদিও খুব সামান্যই প্রকাশিত হয়েছে। তাও অন্য উদ্দেশ্যে। জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই সেখানে মোদ্দা কথা।
এর একটা কারণ হলো, ব্যবসায়ীদের দিক থেকে পণ্যসর্বস্বতার চাপ। গত শতকের বিশের দশকেই তারা বুঝতে পারে যে, যদি জনগণকে ভেঙেচুরে আত্মকেন্দ্রিক ও ব্যক্তিসর্বস্ব করে তোলা না যায়, যদি তাদের ফ্যাশনের মতো ঠুনকো বিষয়ে আসক্ত করা না যায়, তাহলে তারা ব্যবসায়ী শ্রেণীর বিরুদ্ধে খেপে উঠবে।
এখনো আমেরিকার ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করে, দেশটা চালাচ্ছে কয়েকটি স্বার্থপর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী; জনগণের কথা তারা চিন্তাই করে না। ৯৫ শতাংশ জনগণ মনে করে, জনমতের প্রতি সরকার দায়বদ্ধ নয়। জনগণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিন্দুমাত্র একাত্মতা বোধ করে না। এ রকম অবস্থায় প্রতিটি মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে রাখা গেলে, তাদের দৃষ্টি কেবল ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে সেঁটে থাকলে, তাদের পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা গেলে, তারা আর সমালোচনায় কান পাতবে না। তাহলে তাদের ভাবনাচিন্তাও নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
এ রকমটাই চলে আসছে আমেরিকায়।
ইউরোপের গণমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, ওবামা জনগণের প্রতিনিধি এবং নির্বাচনী প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু গণতন্ত্রেরই প্রমাণ মিলছে। কিন্তু গত ১৫ ফেব্রুয়ারির সুপার টুয়েসডের কথাই চিন্তা করুন। সেদিনের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকার শিরোনাম ছিল: ভোটাররা প্রার্থীদের ব্যক্তিচরিত্রের ওপর জোর দিচ্ছে। এর কিছু পরই একটা জরিপে দেখানো হয়, ব্যক্তিচরিত্র নয়, বরং চার ভাগের তিন ভাগ ভোটারই জনজীবনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রার্থীদের অবস্থান জানতে আগ্রহী।
এটা ওই শিরোনামের একদম বিপরীত এবং জরিপটি গণমাধ্যম চেপে যায়। পার্টি ম্যানেজাররা খুব সতর্কভাবে সত্যিকার প্রসঙ্গকে চাপা দিয়ে রাখছেন আর ভুয়া ইস্যুতে জনগণকে মাতানোর চেষ্টা করছেন। ভোটাররা বহু দশক ধরে প্রতীতি জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থার পে ভোট দিতে আগ্রহী। কিন্তু এ ধরনের প্রসঙ্গের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পার্টি ম্যানেজাররা কিংবা আরও সঠিকভাবে বললে, পাবলিক রিলেশন ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে একটা পণ্যের বিজ্ঞাপন বানায়, সেভাবেই তারা একেকজন প্রার্থীর ভাবমূর্তি জনমানসে গেঁথে দেয়।
যেমনটি মুক্তবাজারি আলোচনায় বলা হয় যে, সব পণ্যের প্রচার হলে মানুষ তার মধ্য থেকে সঠিকটা বেছে নিতে পারবে। কিন্তু কার্যত আমরা দেখি ফোর্ড কোম্পানির গাড়ি চড়ে একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী স্বর্গে চলে যাচ্ছেন; এর মধ্যে ঐ গাড়ি সম্পর্কে সত্যিকার তথ্যাবলি থাকে না। তারা সত্য গোপন করে মোহ জাগানিয়া কথাবার্তা চালায়। এর ফলে ক্রেতারা কিছুই বুঝতে পারে না এবং এ রকম নির্বোধ অবস্থায় তারা ভুল পছন্দের পেছনেই ছোটে। নির্বাচনে প্রার্থীদের বেলাতেও একই জিনিস ঘটে।
সেখানে সত্যিকার প্রসঙ্গগুলো সামনে আনা হয় না, আনা হয় নেতাদের ব্যক্তিচরিত্র। দেখা যাবে ইরাক যুদ্ধ বা বেকারত্ব সমস্যা বা স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থীদের অবস্থানের সঙ্গে জনগণ একমত নন। পিউ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি গবেষণা বলছে, নির্বাচনী সংবাদের শীর্ষে ছিল এক পাদ্রির মন্তব্য, দ্বিতীয় স্থানে ছিল সুপার ডেলিগেটদের বিষয়ে ওবামার মন্তব্য। অথচ রাষ্ট্রনীতির বিচারে এগুলো ফালতু প্রসঙ্গ। আসল প্রসঙ্গ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কোনো সংবাদই আসেনি।
আমেরিকার ব্যবসায়ী শ্রেণী জনমানস বোঝায় প্রচুর গবেষণা চালিয়ে এখন জনগণের ভাবনাচিন্তা নিয়ন্ত্রণে সম। গত নির্বাচনে দেখা গেল যে, বুশকে সমর্থনকারীরা ভুল বুঝে তাঁকে ভোট দিয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, নির্বাচনী প্রচার আর পণ্যের প্রচার এখানে সমান প্রতারণামূলক। এ রকম অবস্থায় ওবামার প্রতি সমর্থন প্রমাণ করে যে, মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচতে চাইছে।
আর মওকা বুঝে মিডিয়া জনগণের ক্ষোভ ধারণ করার জন্য ওবামাকে নকল বীর হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে।
নিশ্চিতভাবেই আমেরিকা ফ্যাসিবাদী দেশ নয়। কিন্তু এখানকার প্রচারকৌশলের সঙ্গে ফ্যাসিবাদী কৌশল মিলে যায়। আসল ব্যাপারটা হলো, নাতসিরা মার্কিন গণমাধ্যমের প্রচারকৌশলটা গ্রহণ করে নিজেদের কাজে লাগিয়েছিল। একটি জিনিসকে বারবার বলে যাও, একসময় দেখবে সেটাকে কেমন মোহনীয় মনে হচ্ছে।
বিশের দশকেই মার্কিন মিডিয়া এসব জিনিস শিখে ফেলে। আজকে পণ্যের প্রচার, ব্যবসায়ীদের আদর্শের প্রচার সেই পুরোনো কৌশলেই চলছে। যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরোতে চায়, সেখানে ওবামাও বলছেন, তিনি অবস্থা বদলাবেন। কিন্তু বদলে কী করবেন তা জানাননি। বাস্তবে তিনিও ওই সব ব্যবসায়ীরই প্রতিনিধি।
অবহেলিত মানুষ একজন ত্রাতা খুঁজছে, আর ওবামা বলছেন, তিনি তাদের লোক; যদিও এর কোনো প্রমাণ নেই। অন্যদিকে ম্যাককেইন লাগামছাড়া ঘোড়া হয়ে উঠতে পারেন, পারেন বুশের থেকেও খারাপ হতে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলেন। আমেরিকায় সত্যিকার গণতন্ত্র থাকলে কয়েক দশক আগেই জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতো। বুশ, ওবামা, ম্যাককেইনÑতিনজনই ইরানকে হুমকি দিয়ে যাওয়ার পপাতী।
কিন্তু ৭৫ শতাংশ মার্কিনি ইসরায়েলের মতো ইরানেরও পরমাণু অধিকারের পক্ষে তারা মার্কিন-ইরান-ইসরায়েল প্রতিটিরই নিরস্ত্রীকরণ চায়। পেন্টাগনে জনমতের প্রতিফলন হলে ইরান সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান আমরা দেখতে পেতাম।
এ রকম একটি সময়ে বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটা ধাঁধা দেখা দিয়েছে। যখন বিশ্বে মার্কিন প্রভাব পতনশীল, তখন নিজস্ব প্রভাববলয় সৃষ্টির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ইউরোপ উত্তরোত্তর আমেরিকার মতো হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সম্ভাবনা খুইয়ে ফেলছে।
রাজনীতি হয়ে উঠছে লোক দেখানো নাটক আর গণমাধ্যম প্রতারক। এটা বুঝতে আমাদের দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার দিকে তাকাতে হবে। ইউরোপে জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি ছিল চূড়ান্ত বর্বর। সতের শতকে সম্ভবত জার্মানির ৪০ ভাগ মানুষই যুদ্ধে নিহত হয়। বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতার পথে ইউরোপ বর্বরতার সংস্কৃতি নির্মাণ করেছে, প্রযুক্তি বানিয়েছে মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য।
এসবের বলে সে দুনিয়া জয় করেছে। ছোট্ট দ্বীপ ব্রিটেন দুনিয়ার মালিক হয়েছে। বেলজিয়ামের মতো ছোট দেশ কঙ্গোতে হত্যা করেছে এক কোটি মানুষ। চরম বর্ণবাদী উগ্রতায় এসব সম্ভব হয়েছে। আর এর চূড়ান্ত পরিণতিতে ঘটেছে দুটি বিশ্বযুদ্ধ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শান্তি আসার কারণ এই নয় যে, তারা শান্তিবাদী হয়ে গেছে। কারণ, তারা বুঝেছে আরেকটি যুদ্ধ মানে তারা সুদ্ধ ধ্বংস হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মতায় রদবদল হয়ে আমেরিকা পরাশক্তি হিসেবে হাজির হলো। যুদ্ধে সবাই যখন তিগ্রস্ত, তখন একমাত্র আমেরিকাই এ থেকে বিপুল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিয়েছে। যুদ্ধের শেষে দেখা গেল, আমেরিকার হাতে চলে এসেছে দুনিয়ার অর্ধেক সম্পদ।
তার শিল্প উৎপাদন বেড়ে গেল চার গুণ। সেখান থেকেই তারা বিশ্বাধিপতি হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়, যে বিশ্বে তারা ছাড়া কারও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করা হবে না। যুদ্ধের পর ইউরোপে ফ্যাসিবাদ বিরোধী, বিশুদ্ধ গণতন্ত্রী, প্রতিবাদী ও শ্রমিক আন্দোলনের ঢেউ ওঠে। যুদ্ধজয়ী আমেরিকা ও ব্রিটেনের পয়লা কাজ হয় একে গুঁড়িয়ে দেওয়া। এভাবে বিশ্বের সর্বত্র ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনকে ধ্বংস করে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে রা করা হয়।
ইউরোপ ঠিক করে যে আমেরিকা তাদের পূর্বতন পন্থায় বিশ্বকে চালাবে, আর এর সুফলের ভাগ তারা নেবে।
কিন্তু র্যাডিকাল গণতন্ত্রীরা ইউরোপ থেকে মুছে যায়নি। বাস্তবত, মার্কিনিদের থেকে ইউরোপীয়রা বেশি ভালো জীবন যাপন করে। তাদের স্বাস্থ্য বেশি ভালো, তারা বেশি লম্বা, তাদের অবসর ও সামাজিক নিরাপত্তা বেশি। সত্তরের দশকে শিল্পোন্নত দুনিয়ার মধ্যে আমেরিকাতেই শ্রমঘন্টা ছিল সবচেয়ে বেশি কিন্তু মজুরি ছিল সবচেয়ে কম।
ইউরোপ এখন বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার দায়িত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দিয়ে আরাম ভোগ করছে। আজ ইউরোপে যে আমেরিকানাইজেশন দেখা যাচ্ছে, সেটা আসলে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের ফল। এরা খুব খুশি মনে আমেরিকার অনুগামী সেজেছে।
জনগণ বিকল্প পথ খুঁজছে, কিন্তু কেউ তাদের পাশে যাচ্ছে না। তাই আমি বলি যে, আমেরিকা বামপন্থী সংগঠেনর জন্য স্বর্গভূমি হয়ে উঠতে পারে।
১৯৬০-এর আন্দোলনমুখর পরিস্থিতির থেকে অনেক বেশি মানুষ এ মুহূর্তে কোনো না গুরুতর বিষয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক মার্কিন নাগরিক তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে। অজস্র মার্কিনি, এমনকি পাদ্রিরাও রিগান প্রশাসনের অত্যাচারের শিকার হওয়া মানুষকে সহায়তা করতে ল্যাটিন আমেরিকায় যাচ্ছে। আমার মেয়েও নিগারুগুয়ায় অত্যাচারিত লোকজনের হয়ে কাজ করছে এবং তারা যাচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে তাদের রা করতে। বিকৃত করে যাকে বলা হয় বিশ্বায়নবিরোধী আন্দোলন, সেই বৈশ্বিক-ন্যায়বিচারকামী আন্দোলনও এখন আমেরিকায় খুবই জোরালো।
এ আন্দোলন শুরু করেছিল ভারত ও ব্রাজিলের কৃষকেরা। আজ তা উন্নত দুনিয়ার প্রধান সামাজিক আন্দোলন। সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসে এ রকমটা আগে কখনোই ঘটেনি। আজকে সত্যিকার আন্তর্জাতিক আন্দোলন গড়ে ওঠার লণ পরিপক্ব হচ্ছে। আমি ওয়ার্ল্ড সোশাল ফোরামে গিয়েছিলাম।
আমি ব্রাজিলে গিয়ে ভায়া ক্যাম্পেনসিয়ার কর্মীদের সঙ্গে থেকে বিরাট উদ্দীপনা নিয়ে ফিরেছি। এটাই সত্যিকার বিশ্বায়ন। এখানে সব দেশের মানুষ আছে, তারা একত্র হয়ে শিখছে, আবার যার যার দেশে গিয়ে সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। এটা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এ থেকে সামনের দিনের কর্মপন্থা বেরিয়ে আসবে।
আমি প্রতিরোধের এই বিশ্বায়ন নিয়ে আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্রে নিজেকে কোণঠাসা মনে করি না। প্রতিদিন আমার কয়েক ঘন্টা সময় চলে যায় লোকজনের মেইলের জবাব দিতে। দুনিয়ার নানা কোণা থেকে তাঁরা আমার কাছে লেখে। তখন মনে হয় আমি জনগণের ভীড়ের মধ্যে আছি।
আমি আমার ঘরের দেয়ালে তিনটি ফটোগ্রাফ আছে। একটি হলো বিশ্বের ভয়ংকরতম শ্রমিক হত্যার দৃশ্য। একশ’ বছর আগে চিলির ইকুয়ীকুতে চরম অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে করতে খনি শ্রমিকরা সামান্য মজুরি বৃদ্ধির জন্য মিছিল করে। ব্রিটিশ খনি মালিক তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে একটি স্কুলে ঢোকায়, তাদের সভা করতে দেয়। তারপর দরজা আটকে ছেলে-বুড়ো-নারী-শিশু সবাইকে মেশিনগান দিয়ে হত্যা করে।
ছবিটা ওই গণহত্যার স্মরণে নির্মিত একটি শহীদ মিনারের। আজকের চিলির তরুণরা ওটা বানিয়েছে। আরেকটি ছবি একটা চিত্রকর্মের। এক জেস্যুইট পাদ্রী ওটা আমাকে দিয়েছেন। ছবিতে আর্চবিশপ রোমেরো দাঁড়িয়ে আছেন।
১৯৮০ সালে তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁর সামনে চারজন নের্তৃত্বস্থানীয় বুদ্ধিজীবী। এঁদেরও মার্কিনের ভাড়াটে খুনীরা আরো হাজার হাজার হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বিনাশ করে। তাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যুর-দেবতা- রিগ্যান। ছবিটা আমি ওখানে রেখেছি নিজেকেই মনে করিয়ে দিতে যে, ওটাই হলো আসল বাস্তবতা।
আশির দশকে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে এরকম অজস্র হত্যকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের উত্থান থামিয়ে দেয়া হতো। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, আমেরিকার প্রায় কেউই এসব ঘটনার কথা জানে না। ইউরোপের ১০ শতাংশ মানুষ জানে আর ল্যাটিন আমেরিকার প্রত্যেকেই জানে। ল্যাটিন আমেরিকার আজকের তরুণরা আবার ইতিহাস খুঁড়ে বাস্তবকে জাগাচ্ছে। ইতিহাস আর বাস্তব খুবই বিপজ্জনক।
তরুণরা এই বিপদের পথে গিয়ে আবার জাগছে, তারা চাইছে তাদের অতীতকে ফিরে পেতে, চাইছে আদর্শবাদের উজ্জীবন, এবং তারা কিছু করতে চাইছে। আমার জন্য এটুকুই যথেষ্ঠ। আমি বলবো, নিজেকে সক্রিয় ও আশাবাদী রাখবার জন্য এটুকু কম কী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।