পৃথিবীকেন্দ্রীক দর্শণের একটা সাধারণ অনুমাণ ছিলো পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র, এই সমস্ত মহাবিশ্ব আদতে পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। এই অনুমাণ ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে তাও অর্ধ সহস্রাব্দ পেরিয়ে গেলো, তবে এই দর্শণের উপজাত সমস্ত ভ্রান্তি থেকে মানুষ এখনও বাহির হয়ে আসতে পারে নি।
পৃথিবীকেন্দ্রীক দর্শণের উপজাত ধারণা হলো মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, যেহেতু পারস্পরিক যোগাযোগ এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষের টিকে থাকবার সম্ভবনা অনেকাংশে বেড়েছে, ক্রমাগত পরিশীলনে এখন মোটামুটি নিশ্চিত প্রকৃতি যদি চুড়ান্ত প্রতিশোধ না নেয় তবে মানুষ নামক প্রজাতি আরও অনেক দিন ধরেই প্রকৃতিকে মৃদু এবং চরম আঘাত করতেই থাকবে।
মানুষ মানুষের তৈরি সংজ্ঞা অনুসারেই একটি প্রাণী। নিছক একটা প্রাণী এই সত্যটা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলো না মানুষ ,যখন ডারউইন বিবর্তনের ধারণাটা সামনে নিয়ে আসলো তখনও, এমন কি বিবর্তনতত্ত্ব অনেকভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরেও এখনও এই সত্য মেনে নিতে প্রস্তুত নয় মানুষ।
মানুষের অধিকার এবং মানুষের কর্তব্য বিষয়ে বিবেচক মানুষেরা এমন সব অলিখিত বিধি তৈরি করেছে যে মানুষের পশুবত আচরণের স্বাধীনতা অনেকাংশেই খর্ব হয়েছে।
পুঁথি পুরাণ ঐশী গ্রন্থ এবং সামাজিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ, নানাবিধ উপায়ে সমাজের অগ্রসর মানুষেরা সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের প্রজাতি কতটা সফল ভাবে এবং আন্তরিকতার সাথে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বজায় রেখে পৃথিবীতে বসত করতে পারে এই নিয়ে বিভিন্ন বিধি বিধান কল্পনা করেছেন এবং এসবের প্রায়োগিক উপযোগিতাও প্রমাণ করেছেন।
প্রায়োগিক উপযোগিতা অস্বীকার করবার উপায় নেই, মানুষের অসহায় অবস্থায় অন্তত এখনও সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া হয়, মানুষ যেকোনো দুর্বল মানুষের উপরে সবলের অত্যাচারজনিত বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাকেও একটা নির্দিষ্ট বিচারিক কাঠামোর ভেতরে এনে অনেকাংশে রদ করেছে। একটা আইনী কাঠামো রয়েছে এবং সেই আইনী কাঠামোকে পরিচালনার জন্য যুথবদ্ধ মানুষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহনের সাথে সাথে সেগুলোকে সুষ্ঠু রূপে পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্বসম্পন্ন মানুষের জোগান দিয়েছে।
রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমনই একটা পরীক্ষিত কাঠামো, যেখানে মানুষের খাদ্য এবং নিরাপত্তা এবং অন্যসব চাহিদা একটা বিনিময় সূত্রে নির্ধারিত হয়।
সেখানে অর্থনীতি নামক একটা বিষয় প্রচলিত, সেই অর্থনীতি এই বিনিময় প্রথা এবং ধরণটাকে যাচাই করে, বাছাই করে এবং পরিচালনা করে, কার কতটুকু প্রাপ্য, কার কতটুকু ভুমিকা হবে, এইসব নির্ধারণ করে অর্থনীতি।
অর্থনীতি নিয়েই আসলে ভাবনাটা পরিচালিত হচ্ছে বর্তমানে।
মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের মদে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এমন কি অনেকে মানুষের চেয়ে উন্নত জীব মহাবিশ্বে থাকা সম্ভব এমন ধারণাটাকেও নাকচ করে দিয়েছেন। মানুষ বর্তমানে উপগ্রহ- গ্রহ-নক্ষত্র সবই বিপনন করছে।
চাঁদের জমি বিক্রী হচ্ছে, সে জমির কাঠা ২০ টাকা। চাঁদে যাওয়ার একটা সমূহ সম্ভবনা ফালাও করে প্রচারিত হচ্ছে, সে জমির ইজারা নিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের অধিকার অর্জন করেছে এমন কতগুলো দেশের কাছ থেকে যারা মহাশূণ্য অভিযানের সাথে যুক্ত। কিন্ত বাংলাদেশ কিংবা মায়ানমার কিংবা ভিয়েতনাম কিংবা কেনিয়ার কাছে তারা চাঁদের জমির অধিকার নেয় নি। আশ্চর্য অর্থনীতির খেলা।
যারা অর্থনৈতিক ভাবে সবল তারা পৃথিবীর সম্পদের অধিকার নিয়ে নিচ্ছে এবং মহাজাগতিক সমস্ত সম্পদও তারা করায়ত্ব করছে।
একটা তারা নিজের নামে করতে ১৫ ডলার লাগে। সব কিছুই বিক্রী হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। তবে একটা সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে ভালো লাগে, মানুষের মতো যোগ্যতা সম্পন্ন প্রাণী মহাবিশ্বের অন্তত ১ লাখ স্থানে পাওয়া সম্ভব, সৈরজগতে গ্রহ ৯টি, সেখানে ১টি সুজলাসুফলা, এমন কি মঙ্গলেও ক্ষুদ্রাকৃতীর জীব জন্মানোর সম্ভবনা নাকচ করা যাচ্ছে না। অর্থ্যাৎ প্রাণী শুধুমাত্র আমাদের পৃথিবীর অনন্য বৈশিষ্ঠ্য নয়।
এমন সৈরজগতসম্পন্ন নক্ষত্র, সেখানে প্রাণের উন্মেষের সম্ভবনা এবং প্রায় অকল্পনীয় নক্ষত্রপূঞ্জের সংখ্যা বিবেচনা করে অন্তত ১ লক্ষ আসলে অনেক ন্যুনতম হিসেব।
সেইখানেও যদি একই পর্যায়ে চলে যায় সভ্যতা- অন্তত আমরা যেভাবে সভ্যতাকে চিহ্নিত করি আমাদের অভিজ্ঞতায়, তবে সেখানেও একই রকম প্রবনতা বিদ্যমান-
আন্তঃনাক্ষত্রিক লড়াই কি তবে নক্ষত্রের দখল নেওয়া এবং সেটাকে প্রতিহত করতে গিয়ে শুরু হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।