আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ থেকে আমি আর শুধুমাত্র ব্যাচেলর নই

If you donot see bangla, download: http://www.omicronlab.com/avro-keyboard-download.html

আজ থেকে আমি আর শুধুমাত্র ব্যাচেলর নই, আমার স্ট্যাটাস পাল্টে গেছে। নাহ, বিয়ে করিনি। ওটারতো ইচ্ছে থাকলেও সময় নেই, আর যেদিন সময় আসবে সেদিন বোধহয় আর ইচ্ছে থাকবে না। যাই হোক, আসল কথাটা বলেই ফেলি- আমার মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেছে। আজ থেকে আমি এস.এস.সি, এইচ.এস.সি এবং বি.এস.সি ডিগ্রি ছাড়াও এম.এস.সি ডিগ্রির মালিক বনে গেছি! সারাদিনের ঘটনাটা এই বেলা খুলে বলি।

বেলা ১১টা ছিল ডিফেন্সের জন্য নির্ধারিত সময়। মাসখানেক পর তাই আজ আমাকে ভোর সাড়ে ৯ টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। ল্যাপটপটাকে বগলদাবা করে ঠিক ১০ টায় ৫০২ নম্বর রুমে গিয়ে হাজির। আমাকে মাসুদ হাসান স্যার বেশ ভালোভাবে জানেন, তাই অন্তত ২ ঘন্টা আগে উপস্থিত হতে বলেছিলেন। রুমে গিয়ে লাইট, ফ্যান, পর্দা, প্রজেক্টর সবকিছু টেস্ট করে দেখলাম।

প্রজেক্টর যথারীতি আমার ল্যাপটপকে দেখে স্ট্রাইক ঘোষণা করেছে। কিছুতেই ডিসপ্লে আসছেনা। ল্যাব এ্যাটেনন্ডেন্ট সালেহ ভাই নেটওয়ার্ক ল্যাব থেকে ছুটে এসে আমার চেয়েও তিনগুন বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে সেটার সাথে যুদ্ধ করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর তার সাথে এসে যোগ দিলেন মোস্তাফিজ ভাই। কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমাকে বুয়েটের যাবতীয় সকল স্টাফই খুব স্নেহ করে থাকে।

আমার ডিফেন্সের দিন তাই তাদের টেনশন বেশি। দুজন মিলে প্রাণপণ চেষ্টা করে পৌণে ১১টার মধ্যে আমার ল্যাপটপের এক্সটেনশন কর্ডের সকেটটা ভেঙ্গে ফেললেন। অবশেষে নতুন এক্সটেনশন বোর্ড নিয়ে এসে সব সমস্যার সমাধান করা হলো। ১১টা বাজতে তখন কয়েক মিনিট বাকি। ঠিক ১১টায় আমার সুপারভাইজার, শ্রদ্ধেয় ডক্টর মাসুদ হাসান স্যার এসে জানালেন- 'নির্জন, এক্সটারনাল স্যার আসতে দেরি করছেন।

মনে হচ্ছে সাড়ে ১১টার আগে শুরু করা যাবেনা'। উল্লেখ্য যে, বুয়েটের সি,এস,ই তে মাস্টার্সটাকে কোয়ালিটি রক্ষার্থে অনেক বেশি কঠিন করা হয়েছে। দুই দফা (প্রোপোজাল ও প্রি-ডিফেন্স) প্রেজেন্টেশন আর ভাইভার পর একজন ছাত্র ডিফেন্স দেবার জন্য অনুমতি লাভ করে। এরপর একটা নির্দিষ্ট দিনে একজন এক্সটারনাল সহ পাঁচজন ডক্টরেট করা সিনিয়র টিচারের উপস্থিতিতে ছাত্রকে তার থিসিস ডিফেন্ড করতে হয়। আমার ক্ষেত্রে এক্সটারনাল হলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির শ্রদ্ধেয় ডক্টর হায়দার আলী স্যার।

মাসুদ স্যার ছাড়া ইন্টার্নাল বাকি তিনজন টিচার হলেন- ডক্টর মোস্তফা আকবর, ডক্টর মাহমুদা নাজনীন ও হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট ডক্টর সাইদূর রহমান। এক্সটারনাল স্যার যখন ডিপার্টমেন্টে আসলেন তখন বেলা সোয়া ১২ টা। ঠিক তখনই জানা গেল সাইদূর স্যার নিখোঁজ। প্রায় আধা ঘন্টা পর তাকে লোকেট করা সম্ভব হলো। ডিফেন্স শুরু হল বেলা পৌণে ১টায় ৫০২ নম্বর রুমে অনেক ক্লাস নিয়েছি।

সেখানে সাধারণত ৫০/৬০ জন ছোট ছোট হবু ইঞ্জিনিয়াররা থাকে যাদের সাথে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মজা করতে করতে কখন ঘন্টা পার হয়ে যায়, টের পাওয়া যায়না। আজকের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। প্রেজেন্টেশন শুরু করেছি, কিন্তু এক এক মিনিটকে এক এক যুগ মনে হচ্ছে। টানা ৪৫ মিনিট ধরে ননস্টপ লেকচারের পর যখন থামলাম তখন মনে হলো এই গলা দিয়ে আগামী ৪৫ ঘন্টা আর কোন কথা বলতে জান বেরিয়ে যাবে। তবে শ্রোতাদের অভিব্যক্তি ভালোই মনে হলো।

সবাই বেশ ক্লান্ত, প্রশ্নত্তোর পর্বে মনে হচ্ছে কেউ আগ্রহী হবে না- এই অর্থে ভালো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে একে একে সবাই মনের খায়েশ মিটিয়ে প্রশ্ন করা আরম্ভ করল। এক্সটার্নাল স্যার তো একরকম বলেই বসলেন যে, থিসিসের টাইটেলটাই নাকি ভুল। 'নাইস প্রজেকশন' কথাটা তার কাছে মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ মিসলিডিং। আমি বিনয়ের সাথে তার সব যুক্তি মেনে নিলাম।

এরপর শুরু করলেন মোস্তফা আকবর স্যার। তাঁকে প্রেজেন্টশনের সময় তেমন মনযোগী মনে না হলেও দেখা গেল তিনি তার প্রশ্নগুলো অতি যত্ন করে খাতায় লিখে রেখেছেন। লিস্ট দেখে দেখে তিনি প্রতিটি প্রশ্ন করলেন আর আমিও ভাঙ্গা গলায় ভুল-শুদ্ধ মিশিয়ে উত্তর করে তাকে মোটামুটি সন্তুষ্ট করে ফেললাম। এরপর ম্যাডাম তার স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে যা জিজ্ঞাসা করলেন তাতে মনে হলো তিনি প্রেজেন্টেশনে অলরেডি মুগ্ধ, তাই আমাকে আর বেশি কিছু বলার নেই। অতঃপর সাইদূর স্যার আমার থিসিসের লিমিটেশন নিয়ে একটা প্রশ্ন করেই ছেড়ে দিলেন।

কাকতালীয় ব্যাপার কিনা জানিনা, আমার কেন যেন সবসময় মনে হতো 'লাইন সেগমেন্টের অর্ডারিং' নিয়ে আমাকে কেউ না কেউ প্রশ্ন করেবেই। আগেই প্রস্তুত থাকায় উত্তর দিতে গিয়ে তাই আর কোন সমস্যা হলনা। বেলা ২ টার সময় আমাকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হলো। এরপর টানা ১৫ মিনিট তারা নিজেদের মাঝে আলোচনা পর্যালোচনা করলেন এটা ঠিক করতে যে, এহেন একজন ছাত্রকে মাস্টার্স ডিগ্রি দেয়া হলে তা কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর কতটুকু ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আছে। আলোচনার পর রুম থেকে মাসুদ স্যার বেরিয়ে এসে দূর থেকে আমাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাতে লাগলেন।

আমি সেটার মানে বুঝে উঠতে পারছিলাম না- এটা কি তিনি আমাকে কাঁচকলা দেখাচ্ছেন, নাকি এটা পাস করেছি তার শুভ সংকেত? ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকলাম। আমাকে দেখে এক্সটার্নাল স্যার দন্ত বিকশিত করার চেষ্টা করে ছেড়ে দিয়ে দরাজ গলায় ঘোষনা করলেন- 'শাহরিয়ার, অন বিহাফ অফ দিস বোর্ড অফ এক্সামিনারস, আই ডিক্লেয়ার দ্যাট- ইউ হ্যাভ সাক্সেসফুললি কম্পলিটেড দ্যা রিকুয়ারমেন্টস ফর ইওর এম,এস,সি ইঞ্জিঃ ডিগ্রি- কংগ্রাচুলেশন'। আমি তাৎক্ষণিক ভাবে সবগুলি দাঁত বের করে তাদের প্রতি অন্তর থেকে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। মনে মনে নিজেকে বললাম, দীর্ঘ এক মাস পর আজ রাতে আমি একটু ঘুমোতে চাই। (আমার ডিফেন্সের প্রেজেন্টেশনটি আমার নিজস্ব সাইটে পাওয়া যাবে।

মূল থিসিসটি স্যারের অনুমতি নিয়ে পরবর্তিতে আপলোড করা হবে। )


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।