আমার বয়স তখন নিতান্ত অল্প।
আমার মায়ের স্কুলের চাকরী। আমাকে দাইমা ধরনের একজন মহতী নারীর কাছে রেখে , তিনি স্কুল করতেন। এমন খারাপ লাগত! মায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। " জইন্নার মা দাদি" ( যার কাছে আমাকে রেখে যাওয়া হত) আমাকে নিয়ে সারা পাড়া ঘুরে বেড়াতেন।
এর বাড়ি ওর বাড়ি , এই পাড়া ! ঐ পাড়া! সত্যি একসময় আমি আমার মায়ের কথা যেতাম ভুলে। আমি " ডাবল মাস্টার" এর ছেলে হওয়াতে বিভিন্ন বাড়িতে খাতির যত্ন মন্দ হতনা।
আমার মনে আছে, যে বাড়িতেই আমি আর আমার " জইন্নার মাও দাদি" গেছি , কিছুনা কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। কেউ একটু মাস্টার এর বেটা বলে গাল টিপে দিয়েছে। আবার তরুনি কিশোরি অথবা জুয়ান স্বাস্থবতি বউরা নানান রকম খচরামিও কম করত না।
আমি অনেকেরই ছিলাম "সুয়ামি" । আমাকে নিয়ে কীসব বলাবলি হত আর সবাই হেসে গড়াগড়ি যেত। ব্যাপার গুলো তখন কিছুই বুঝতামনা। এখনও যে বুঝি তাও নয়। তবে এই টুকু বোধ হয়েছে, সম্পর্কিয় খুচরা-পিচ্চি বয়স এর দেবরদের , ভাই সম্পকীয়দের নিয়ে বোধ হয় বেশ আদি কৌতুক এর
চাল রয়েছে আমাদের অঞ্চলে।
আজ এতদিন পরে আমার জইন্নারমাও দাদির কথা খুব মনে পড়ছে।
তার ইন্তিকালের আগের বেশ কয়েক বছর তিনি পক্ষাঘাতজনিত কারণে শয্যাশায়িত জীবন যাপন করেছেন। আমি তখন ক্লাস ধরেছি। সেটা মধ্য নব্বই এর কথা। আমি প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় একবার আবার স্কূল থেকে আসার সময় একবার তাকে দেখে আসতাম।
তার প্রাণ ভরা দোয়া সারা গায়ে আক্ষরিক অর্থেই মেখে আসতাম। তিনি সামান্ন হাটতে পাড়তেন লেংচে লেংচে। আমি করতাম কি তার পরেও তার কোলে ওঠার বায়না ধরতাম।
মুরুব্বিরা আপত্তি করতেন। কিন্তু জইন্নারমাও দাদি আমাকে ঠিকই কোলে নিতেন।
তিনি প্রথমে পা ছড়িয়ে মাটিতে বসতেন, তার পর আমাকে নিতেন কোলে। তিনি আমার সাথে এমনভাবে মিশে ছিলেন যে , মাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম , তিনি আমার আপন দাদি কিনা।
তাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতী । কিন্তু কেন যেন লিখতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।
শুধু বুকের মধ্যে খচখচ করে এটা ভেবে যে " আহা দাদি এখন আমাকে দেখে কত খুশি হতেন!" তার বড় স্বপ্ন ছিল , আমাকে বড় দেখবেন।
আমি আমার আব্বা মার চেয়েও বড় পাশ দিয়ে বড় মাস্টার হব! আমি হয়ত, আব্বা মার চেয়েও বড় পাশ দেব , কিন্তুু মাস্টার তো হতে ইচ্ছা হয়না দাদি!
এই দেশে মাস্টার হওয়া অনেক কষ্টের জীবন দাদি! তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।