যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
বিগত ৩০শে নভেম্বর ২০০৪ “জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪” জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। গত ১৩ জুন, ২০০৬ এ “জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (সংশোধনী) আইন” পাশ হয়েছে। ৩ জুলাই ২০০৬ তারিখ হতে নতুন আইন কার্যকর করা হচ্ছে। এ আইন অনুসারে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
জন্ম নিবন্ধন কী?
জন্মের পর কোনো ব্যক্তির জন্ম সম্পর্কিত তথ্য যেমন-নাম, লিঙ্গ, জন্মস্থান ও তারিখ, পিতা-মাতার নাম ও জাতীয়তা ইত্যাদি নিবন্ধকের কার্যালয়ে রক্ষিত নিবন্ধন বহিতে লিপিবদ্ধ করে উক্ত ব্যক্তিকে জন্ম সনদপত্র প্রদানের প্রক্রিয়া।
নতুন আইনে যেসব ক্ষেত্রে জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে :
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি;
বিবাহ নিবন্ধন;
পাসপোর্ট প্রাপ্তি;
ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি;
সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী;
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি;
জমি রেজিষ্ট্রেশন এবং
বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য ক্ষেত্র।
বিধি দ্বারা অতিরিক্ত যেসব ক্ষেত্রে জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে :
ব্যাংক একাউন্ট খোলা;
আমদানী বা রপ্তানী বা উভয় লাইসেন্স প্রদান;
গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুত সংযোগ প্রদান;
ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) প্রদান;
ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রদান;
বাড়ির নক্সা অনুমোদন;
গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন;
ট্রেড লাইসেন্স প্রদান;
জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি।
তবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (সংশোধনী) আইন মোতাবেক নতুন আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ১ বছর পর্যন্ত এসব বাধ্যবাধকতা থেকে জনগণকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
নতুন আইনের বিশেষ সুবিধা বা ছাড় : “নিবন্ধক নির্ধারিত ফি গ্রহণপূর্বক জন্ম সনদ প্রদান করবেন। তবে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার ২ বছরের মধ্যে কোনো ফি ছাড়া জন্ম নিবন্ধন করা যাবে।
"
নতুন আইন মোতাবেক নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করবেন:
ক) ইউনিয়ন এলাকা : ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান;
খ) পৌর এলাকা : পৌর চেয়ারম্যান বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি;
গ) সিটি কর্পোরেশন : মেয়র বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি;
ঘ) ক্যান্টনমেন্ট এলাকা : ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ও
ঙ) বিদেশে : সংশ্লিষ্ট দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি।
যারা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সহায়তা করবেন :
১) ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং সচিব;
২) গ্রাম পুলিশ;
৩) সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কমিশনার;
৪) ইউনিয়ন পরিষদের, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মী;
৫) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী;
৬) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষকগণ ;
৭) কোনো সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে উহার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ;
৮) কোনো গোরস্থান বা শ্মশানঘাটের তত্ত্বাবধায়ক ;
৯) নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী;
১০) জেলখানায় জন্ম ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তত্কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি;
১১) পরিত্যক্ত শিশু বা সাধারণ স্থানে পড়ে থাকা পরিচয়হীন মৃতব্যক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা;
১২) নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
নিবন্ধক কে?
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা হাই কমিশনার নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করবেন।
নিবন্ধকের দায়-দায়িত্ব :
সকল শিশুর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করা;
নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফরম সরবরাহ;
সার্টিফিকেট, নিবন্ধন বহি, জন্ম ও মৃত্যু সনদ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ;
জন্ম-মৃত্যু রেকর্ড বা নিবন্ধন বহি সংরক্ষণ করা;
জন্ম সনদ ইস্যু ও সরবরাহ করা;
নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের স্টক নিয়ন্ত্রন;
নিবন্ধন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি কর্মসূচী গ্রহণ; নিবন্ধন অগ্রগতি মূল্যায়ন;
কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে বা অন্যবিধ উপায়ে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন বহিতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ;
স্বাস্থ্যকর্মী বা পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর নিকট হতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন পত্র সংগ্রহ এবং জন্ম সনদ বিতরণের জন্য প্রেরণ।
নিবন্ধকের ক্ষমতা :
নিবন্ধক নিজে বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা জন্ম তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারবেন; তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিদর্শক নিযুক্ত করতে পারবেন; নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ নিবন্ধন না করালে নিবন্ধক নোটিশ পাঠাতে পারবেন; তদন্তের স্বার্থে নিবন্ধন বহি তলব করতে পারবেন ও সাক্ষী প্রদানের জন্য কাউকে ডাকতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া :
জন্ম নিবন্ধন আইন অনুযায়ী ৩টি প্রক্রিয়ায় জন্ম নিবন্ধন করা যাবে। এগুলো হলো :
(ক) নিবন্ধকের কার্যালয়ে এসে সরাসরি উপস্থিত হয়ে নিবন্ধন করানো
(খ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় জন্ম নিবন্ধন;
(গ) ইপিআই/স্বাস্থ্য কর্মীদের সহায়তায় জন্ম নিবন্ধন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নতুন জীবন/ বিধি দেখা অথবা নিবন্ধকের কার্যালয় অথবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
প্রথম আলো, ৩ রা জুলাই, ২০০৬
মোঃ সফিকুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক (উপ-সচিব), জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগ
উৎসঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।