[বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান কথাশিল্পী মাহমুদুল হককে নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তা।
দীর্ঘ লেখা পোস্ট করার জন্য আগে থেকেই পাঠকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি। ]
জিগাতলার যে বাসাটিতে থাকতেন তিনি, সেটি এতোই সাধারণ আর বৈশিষ্ট্যহীন যে কারো পক্ষে ধারণা করাও সম্ভব নয়- এখানে বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ মাহমুদুল হক বসবাস করেন। আপনি যদি কখনো যান সেখানে, মৃদুহাস্যে আপনাকে সম্ভাষণ জানাবেন তিনি, অপরিচয়ের দূরত্ব কয়েক মিনিটেই কেটে যাবে তাঁর আন্তরিকতায় এবং অচিরেই মেতে উঠবেন তুমুল আড্ডায়- ভেসে যাবেন তাঁর গল্পের স্রোতে। তাঁর লেখার মতোই তাঁর কথা বলার ঢংটিও যাদুকরি, একবার সেটি শুরু হলে আপনার বেরিয়ে আসা কঠিন হবে।
৫/৬ ঘণ্টা এমন এক ভঙ্গিতে গল্প চলবে যে, আপনি বুঝতেই পারবেন না- কখন এতোখানি সময় কেটে গেছে! কিন্তু যদি বলেন- আপনি তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে এসেছেন, তিনি কোনোভাবেই আর কথা বলবেন না, আপনার অনেক প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যাবে, উত্তর মিলবে না। কী এক অজানা কারণে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন তাঁর অতিপ্রিয় সাহিত্যের জগৎ থেকে! 'বাংলা গদ্যে প্রভুত্ব করার ক্ষমতা' নিয়ে যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন, আমাদের সেই বটু ভাই গত ২৪ বছরে তিনি কিছুই লেখেননি (একটিমাত্র গল্প ছাড়া)। প্রায় দু-দশক ধরে স্বেচ্ছানির্বাসন বেছে নিয়েছেন। এখন প্রায় সারাদিনরাত নিজের ঘরে একা বসে থাকেন তিনি, কোথাও যান না, কারো সঙ্গে মেশেন না, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন না, তবে কেউ তাঁর বাসায় গেলে খুশি হন, আড্ডায় মেতে উঠতে পছন্দ করেন, গল্পের স্রোতে ভাসিয়ে দেন তাকে_ যদি সুস্থ থাকেন। কতো বিষয় নিয়ে যে কথা বলেন তিনি! বিশেষ করে যখন তাঁর লেখক জীবনের স্মৃতিচারণ করেন তিনি, তখন যেন ৫০/৬০/৭০ দশকের ঢাকা শহর, এর সাহিত্যিক পরিমণ্ডল আর সাহিত্যের মানুষগুলো একেবারে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
বহুদিন আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, বুঝে উঠতে চেয়েছি- কেন এতো শক্তিশালী কলমটিকে তিনি খাপবন্দি করে রেখেছেন! এ বিষয়ে তিনি মুখ খুলতে চান না মোটেই, প্রশ্নটি করলে এড়িয়ে যান, গল্পের মুখ ঘুরিয়ে দেন এমনভাবে যে প্রশ্নকর্তা ভুলেই যান- তিনি কী প্রশ্ন করেছিলেন! তবু একদিন কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে তিনি এ বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন, বলেছিলেন তাঁর ক্লান্তির কথা, ব্রেকডাউন অব কমিউনিকেশনের কথা-
লিখতে লিখতে একসময় একঘেঁয়েমিতে ভুগছিলাম আমি, তাছাড়া এসবকিছুকে ভীষণ অর্থহীনও মনে হচ্ছিলো আমার কাছে। কি করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কি, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কী না-_ এইসব আর কি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালোলাগেনি। অবশ্য একেবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম তা নয়। এরকম তো সব লেখকেরই হয় যে, মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যাত্নও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিলো।
কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে ফিরে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি... তোমাকে একটা গল্প বলি শোনো- ডাক্তার নন্দী নামে এক ভদ্রলোক আমার মায়ের চিকিৎসা করতেন। খুব অদ্ভুত মানুষ ছিলেন তিনি। পশুপাখির সঙ্গে কথা বলতেন, মনে হতো তিনি ওদের ভাষা বোঝেন, অন্তত তাঁর কথা বলার ধরনটা ওইরকমই ছিলো। তাঁর পোষা কুকুর ছিলো, সেগুলোকে তিনি সন্তানের মতো ভালোবাসতেন, আমি তখন টিয়েপাখি পুষতাম, তিনি আমাদের বাসায় এসেই আগে টিয়েকে আদর করতেন, কথাবার্তা বলতেন।
তো ওই ভদ্রলোক আমার কাছ থেকে বই নিয়ে যেতেন পড়ার জন্য। একদিন তিনি বললেন- 'আমার কি মনে হয় জানো? মনে হয় আমরা সময় কাটাবার জন্য, ক্লান্তি দূর করার জন্য এসব বইটই পড়ি, অথচ এসব যারা লেখেন তাঁদেরও একসময় আর এগুলো ভালো লাগে না। বুঝলে, ক্লান্ত লাগে, ক্লান্ত লাগে। ' তাঁর এই কথাটা আজকাল আমার খুব মনে পড়ে। আমারও এখন ক্লান্ত লাগে, ভীষণ ক্লান্ত লাগে।
জীবনটাকে ভীষণ অর্থহীন মনে হয়। আর তাছাড়া, লিখে কি হয়? লেখালেখি করে কি কাউকে কমিউনিকেট করা যায়? মিউজিক বরং অনেক বেশি কমিউনিকেটেবল ল্যাংগুয়েজ। লেখালেখিতে যা কিছু বলতে চাই তা বলা হয়ে ওঠে না, আমি অন্তত বলতে পারিনি। যেটুকু বলেছি তা-ও যে বোঝাতে পেরেছি বলে মনে হয় না। যাকে বলে ব্রেকডাউন অব কমিউনিকেশন সেটা আমাদের প্রায় সবার জীবনে ঘটে, আমার জীবনেও ঘটেছে।
কী বলতে চেয়েছিলেন তিনি- এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন। কিন্তু যা কিছু বলেছেন তার মাধ্যমে কিই-বা বোঝাতে চেয়েছেন- আমরা অন্তত সেটুকু খুঁজে দেখার চেষ্টা করতে পারি। মাত্র সাতটি উপন্যাস মাহমুদুল হকের- 'জীবন আমার বোন' 'কালো বরফ' 'নিরাপদ তন্দ্রা' 'খেলাঘর' 'অনুর পাঠশালা' 'মাটির জাহাজ' এবং 'অশরীরী' দুটো গল্পগ্রন্থ- 'প্রতিদিন একটি রুমাল' ও 'নির্বাচিত গল্প' আর একটিমাত্র কিশোর উপন্যাস- 'চিক্কোর কাবুক'। এছাড়াও অগ্রন্থিত উপন্যাস আছে একটি, অগ্রন্থিত গল্পও প্রায় শ' খানেক, রয়েছে হারিয়ে যাওয়া তাঁর প্রথম উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিও।
এই লেখাটি তাঁর পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন নয়।
বরং তাঁর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দিকে একটু চোখ ফিরিয়ে দেখা।
আমাদের চারপাশে যে ভাষাহীন বিপুল সৃষ্টিজগৎ রয়েছে তাদেরকে দিয়ে তিনি কথা বলিয়েছেন তাঁর গল্প-উপন্যাসে । তাঁর রচনায় পাখি কথা বলে, কথা বলে বৃক্ষ ও নদী, ফুল ও পাতা। এমনকি জড়জগৎকেও তিনি করে তোলেন অনুভূতিসম্পন্ন।
'কালো বরফ' থেকে কিছু অংশ পড়ে দেখা যাক-
যা কিছু নিঃশব্দ, যা কিছু শব্দময়, যা কিছু দৃশ্যগোচর, দৃশ্যাতীত, সবকিছুই একজোট হয়ে হাত ধরাধরি করে ঘিরে ধরে; অদভুত এক বাজনার তালে তালে আসত একটি রাত মোমের মতো গলে পড়ে...পোকা (আবদুল খালেক) শোনে, শুনতে পায়।
পোকা পোকা হয়ে যায়। (কালো বরফ, পৃ.৩৮)
নিঃশব্দ বা শব্দময়, দৃশ্যগোচর বা দৃশ্যাতীত জগৎটির মধ্যে তিনি কীভাবে প্রাণসঞ্চার করেছেন, তার কিছু নমুনা দেখা দেয়া যাক।
...ঐ গাছটার সঙ্গে কথা বলতাম। গাছটা উত্তর দিত না ঠিকই, কিন্তু জন্তুর কানের মতো চওড়া চওড়া পাতা নেড়ে খুব মনোযোগ দিয়ে সব শুনতো।
(কালো বরফ, পৃ.৩৪)
...একটা মাছরাঙা গলাপানিতে নামা হিজলের ডালে গিয়ে বসলো।
এটা একটা সম্পর্ক... অলিখিত- যুগ যুগ ধরে এইভাবে চলে আসছে সবকিছু। না বসলেও চলে মাছরাঙার, একটা আধডোবা খাড়া কঞ্চির ওপর বসলেও তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়, তবু হিজলের একটা শাখা, গোছা গোছা পাতার মনোরম একটা আড়াল সে যখন বেছে নেয়, তখন এক ধরনের নির্ভরশীলতা সত্য হয়ে ওঠে। বড় ক্ষণিকের এই সম্পর্ক, তবু দিব্যকান্তি। (কালো বরফ, পৃ.৬৫-৬৬)
বুনো ঝাঁঝে মাথা ঝিমঝিম করে। এই গাছগুলোর প্রাণ আছে।
এক একটা ছেঁড়া পাতার গায়ে হালকা নিঃশ্বাসের গন্ধ, 'আমাকে মারলে'- এই রকম। ... রেখার নিজেকে খুব হালকা মনে হলো। গা জড়াজড়ি করা কদমের বন তাকে পথ ছেড়ে দিচ্ছে, এক একটি লতা খুশিতে উপচে উঠে দোল খেয়ে বলছে, তাহলে তুমি এসেছো, এতোদিন পর মনে পড়লো আমাদের... (কালো বরফ, পৃ.১১৮)
...গোটাগ্রাম জুড়ে ছিল কদমের বন, বর্ষার নদী ধীরে মন্থর গতিতে ফেঁপে ফেঁপে উঠে শেষে কদমের বনে গিয়ে ইচ্ছে করে পথ হারিযে 'এ আমার কি হল গো' ভান ধরে ছেলেমানুষিতে মেতে উঠতো। এখন গ্রাম কি গ্রাম উজার; দেশলাইয়ের কারখানা গিলে ফেলেছে সবকিছু। কদমের সে বনও নেই, নদীর সেই ছেলেমানুষিও নেই; এখন ইচ্ছে হলো তো এক ধারসে সব ভাসিয়ে দিলো, সবকিছু ধ্বংস করে দিলো, 'আমি তোমাদের কে, আমার যা ইচ্ছে তাই করবো' ভাবখানা এমন।
(হৈরব ও ভৈরব/ প্রতিদিনি একটি রুমাল)
জড়জগৎকেও তিনি কীভাবে অনুভূতিসম্পন্ন করে তোলেন, তার একটি উদাহরণ-
...কি অবিরল নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলো মা। এমনকিছুই ছিল না, যার কোনো প্রয়োজন নেই, যা কখনো সংসারের কোনো কাজে লাগবে না। সবকিছু ছিলো আদরের। ... তুচ্ছ কুটোগাচা থেকে হাত-বেড়ি-খুন্তিরও অভিমান ছিল, তারাও বোধহয় মা বলে ডাকতে শিখেছিল। মনে হতো অপরাধী, ঘটিবাটির কাছে, ঘরদোরের কাছে, বিছানা-বালিশ-লেপ-তোষকের কাছে।
সামান্য যে ফেনফেলা গামলা, হাঁড়িধরা ন্যাতা, ঘরপোছা ন্যাতা, তিল তিল করে সে অপরাধের কথা তাদেরও বোধহয় এক সময় জানা হয়ে যেতো। (কালো বরফ, পৃ.৬৭)
এরকম নমুনা আরও প্রচুর দেয়া যাবে, আর না বাড়িয়ে বরং শেষ করা যাক আরেকটি উদাহরণ দিয়ে-
যহন মনিষ্যি আছিলো না, তহন বাজনা আছিলো, পর্বত বাইজা উঠছে, জল বাইজা উঠছে, মাটি বাইজা উঠছে, ধরিত্রি বাইজা উঠছে, বাইজা উঠছে আকাশ বাইজা উঠছে মনুষ্যজন্ম, বাইজা উঠছে মনুষ্যধর্ম, বাইজা উঠছে মানবজীবন, ...বাবু হুনতাছেন? ঢাকে কেমনে কথা কইতাছে হুইনা দ্যাহেন। দশখুশি বাবু, চৌদ্দমাত্রা, মানবজীবন কথা কইতাছে বাবু! দশখুশি বাবু, চৌদ্দমাত্রা, মনুষ্যধর্ম বোল তুলতাছে, আখিজলে আখিজলে, টলমল টলমল, ধরাতর ধরাতল, রসাতল, হা
(হৈরব ও ভৈরব/ প্রতিদিনি একটি রুমাল)
প্রিয় পাঠক, আমি কয়েকটিমাত্র উদাহরণ দিয়ে বিষয়টির প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ খুঁজে পাবেন।
আমাদের চারপাশের এই বিপুল সৃষ্টিজগৎ- যা কিছু নিঃশব্দ, যা কিছু শব্দময়, যা কিছু দৃশ্যগোচর, দৃশ্যাতীত- তার সবকিছুরই যে নিজস্ব ভাষা আছে, আমরাই কেবল তা বুঝতে পারি না; তিনি যেমন সেদিকে আমাদের চোখ ফিরিয়েছেন তেমনি সেই ভাষাটিকে বুঝতে চেয়েছেন, চেয়েছেন এই সৃষ্টিজগতের সঙ্গে মানুষের অলিখিত দিব্যকান্তি সম্পর্কটি আবিষ্কার করতে।
প্রায় শত বছর আগে আমাদেরই আরেক মহান মানুষ, বিশ্ব-ইতিহাসের এক অতুলনীয় বিজ্ঞানী, জগদীশ চন্দ্র বসুও এই সম্পর্কগুলো বুঝতে চেয়েছিলেন।
তাঁর এক মাত্র বাংলা বই 'অব্যক্ত' থেকে কয়েকটি পংক্তি উদ্ধৃত করে এই লেখা শেষ করবো।
গাছের প্রকৃত ইতিহাস সমুদ্ধার করিতে হইলে গাছের নিকটই যাইতে হইবে। সেই ইতিহাস অতি জটিল ও বহু রহস্যপূর্ণ। সেই ইতিহাস উদ্ধার করিতে হইলে বৃক্ষ ও য্র্েন্ত্রর সাহায্যে জন্ম হইতে মৃতু্য পর্যন্ত মুহূর্তে মুহূর্তে তাহার ক্রিয়াকলাপ লিপিবদ্ধ করিতে হইবে। এই লিপি বৃক্ষের স্বলিখিত এবং সাক্ষরিত হওয়া চাই।
ইহাতে মানুষের কোনো হাত থাকিবে না; কারণ মানুষ তাহার স্বপ্রণোদিত ভাব দ্বারা অনেক সময় প্রতারিত হয়। (নির্বাক জীবন/ অব্যক্ত)
গাছের ইতিহাস বুঝতে হলে গাছের কাছেই যেতে হবে, এবং এই ইতিহাস 'বৃক্ষের স্বলিখিত এবং সাক্ষরিত' হতে হবে- মানুষ নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে যদি গাছের ইতিহাস উদ্ধার করতে গেলে ভুল হবে কারণ, 'মানুষ তাহার স্বপ্রণোদিত ভাব দ্বারা অনেক সময় প্রতারিত হয়'- এই কথা বলে তিনি মানব-ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি জগদীশ-প্রবর্তিত এই ধারাটি পরবর্তীকালে আর অনুসরণ করা হয়নি। আসলে তাঁর সমকালে (এবং পরবর্তীকালেও) কেউ তাঁকে বুঝতেই পারেন নি। দেশেও নয়, বিদেশেও নয়।
সত্যি কথা বলতে কি, তাঁর ধারায় তিনিই প্রথম এবং শেষ বিজ্ঞানী। তাঁর কোনো পূর্বসুরী নেই, নেই উত্তরসুরীও। যাহোক, যে ইতিহাস গাছের নিজের হাতে লেখা ও সাক্ষর করা, জগদীশ সেটির পাঠোদ্ধার করেছিলেন কীভাবে, তার একটি নমুনা-
আগে যখন একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে যাইতাম, তখন সব খালি-খালি লাগিত। তারপর গাছ, পাখি, কীট-পতঙ্গদিগকে ভালোবাসিতে শিখিয়াছি, সে অবধি তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, যাহা আগে পারিতাম না। এই যে গাছগুলি কোনো কথা বলে না, ইহাদের যে আবার একটা জীবন আছে, আমাদের মতো আহার করে, দিন দিন বাড়ে আগে এসব কিছুই জানিতাম না।
এখন বুঝিতে পারিতেছি। এখন ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখ-কষ্ট দেখিতে পাই। জীবনধারণ করিবার জন্য ইহাদিগকেও সর্বদা ব্যস্ত থাকিতে হয়। কষ্টে পড়িয়া ইহাদের মধ্যেও কেহ কেহ চুরি ডাকাতি করে। মানুষের মধ্যে যেরূপ সদগুণ আছে, ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।
বৃক্ষদের মধ্যে একে অন্যকে সাহায্য করিতে দেখা যায়, ইহাদের মধ্যে একের সহিত অপরের বন্ধুত্ব হয়। তারপর মানুষের সর্বোচ্চ গুণ যে স্বার্থত্যাগ, গাছে তাহাও দেখা যায়। মা নিজের জীবন দিয়া সন্তানের জীবন রক্ষা করেন। সন্তানের জন্য জীবনদান উদ্ভিদেও সচরাচর দেখা যায়। গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র।
(গাছের কথা/ অব্যক্ত)
এই লেখাটুকু পড়ে মনে কি হয় না যে, জগদীশ চন্দ্র বসু গাছের অলিখিত-অশ্রুত ভাষাটিও পাঠ করতে পেরেছিলেন!
পাঠক, মাহমুদুল হকের যে লেখাগুলোর উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, পড়লে মনে কি হয় না- আমরা জগদীশ চন্দ্র বসুরই কণ্ঠস্বর শুনছি একজন লেখকের জবানে!
[উৎসর্গ : লুবনা লিরা প্রিয়জনেষু, অলিখিত-অমীমাংসিত-অকথিত দিব্যকান্তি সম্পর্কটিকেও যে দৃশ্যমান করে তুলতে পারে। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।