আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ্যমট্র্যকে লস এঞ্জেলেস থেকে শিকাগো

উন্নত দেশে ব্যক্তি স্বাধীনতা

এ্যমট্র্যকে লস এঞ্জেলেস থেকে শিকাগো ''ডাইনিং লাউঞ্জ'' ==== স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে সব ধরনের খাবার আমার জন্য সহনশীল নয় বিধায় আমাকে প্রয়োজনীয় খাবারও কিছুটা সংগে বইতে হয়েছিল। তবুও এত বড় ভ্রমনে সুসজ্জিত ডাইনিং কার এ কোন একটা খাবারের পর্ব সম্পন্ন করার ইচ্ছে রয়েই গেছিল। জানি খাবারের দামও বেজায় বেড়ে থাকবে। কারন ''ছিল্লা, কাইট্টা, লবন লাগায়া দিমু''; ''চা - গরম''; বা ''ঝাল-মুড়ি””'' '' চানাচুররররররর....'' ইত্যাদি কারও সাক্ষাত এমনকি এই দেশের রীতি অনুযায়ীও পাওয়া যাবে না। কারন নিশ্চয়ই এ্যমট্র্যকের নিয়মানুসারে সম্ভবত কোন প্রকারের এ জাতীয় বিক্রী বা প্রচারনা নিষিদ্ধ।

লস এঞ্জেলেস এর ''ইনফরমেশন'' কাউন্টারে নিজের আই ডি দিয়ে টিকেট পুনরায় চেক করানোর সময় যখন জিজ্ঞেস করল ''ডিনার রিজার্ভেশন'' লাগবে কি না? আমি সরাসরি ''হাঁ'' বলে দিলাম। বাঙ্গালী হিসাবে আমরা ''ডিনার'' খাই সেই রাত নটা কিংবা দশটাতে; সেই পুরানো বদভ্যাসটা এই উত্তর এ্যমেরিকা এসেও বদলাতে পারিনি। - জিজ্ঞেস করলো, '' কটার সময়?''। - আমি বললাম, ''রাত নটায়। '' - বললো,'' রাত সারে আটটায় শেষ ডিনার কল হবে''।

‍ - ''সবচেয়ে প্রথমটা সাতটায়'' মানে ট্রেনে আরোহনের সাথে সাথেই। বাঙ্গালী হিসাবে শেষের সময়টাই বাছাই করলাম। সংগে সংগে রিজার্ভেশানের একটা চিরকুটও আমাকে ধরিয়ে দিল। সাতটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে থেকেই ট্রেনের স্পীকারের মাধ্যমে ডিনারের জন্য কল করা শুরু করল। আরও জানালো ''রিজার্ভেশান'' ছাড়া কোন আসন দেয়া যাবে না।

সারে আটটার কল দিতেই আমি আমার ল্যাপটপের ব্যগটা সহ ট্রেনের সম্মুখ ভাগে রওয়ানা দিলাম। কারন এটার মধ্যেই সবচেয়ে মূল্যবান দলিলটা বর্ডার পারি দেবার জন্য রয়েছে। জীবনে সর্বপ্রথম বিদেশে (জাপান) যাবার সময় আমার বহুবার বিদেশে ভ্রমনে অভিজ্ঞ সেজ মামা কড়া সতর্ক করে বলে দিয়েছিলেন, ''বিদেশে পাসপোর্ট তোমার লাইফ লাইন। ওটা সর্বপ্রথম সংরক্ষন করবা''। সে কথা আজও স্মরন করে দায়িত্ব টা পালন করে যাচ্ছি।

অন্য চারটা ব্যগের যে কি হবে পাশে না থাকলে, সেটা কাউকে জানাতেও পারছি না, কারন কেউ কাউকে সেরকম দায়িত্ব দিতে দেখলাম না। বাংলাদেশের ট্রেনে আত্মীয়রা প্রায়ই জানাতেন, বার্থের ওপরে শোয়া ব্যক্তিটা নিশ্চুপে স্যুটকেস কেটে শাড়ী বা অন্যন্য কিছু নিয়ে গেছে। ডাইনিং রুমে তথা লাউঞ্জে যাবার সময় ''অবজাভেটরি লাউঞ্জ'' দিয়ে যেতে হয়। অর্ধেক ছাদে কাঁচ ঢাকা কম্পার্টমেন্টটা রাতের বেলায়ও দেখতে অপূর্ব লাগলো। বসার অর্ধেক স্থানে ''সুইভেল'' সোফা চেয়ারগুলো বাইরের দৃশ্য উপভোগ করার জন্য সাজানো।

বাকী অর্ধেকে ডাইনিং চেয়ার – টেবিলের ন্যয় সাজানো। এই সন্ধ্যা বেলায়ও অনেককে বসে দৃশ্য উপভোগে নিয়োজিত দেখলাম। - ডাইনিল লাউঞ্জে পৌঁছুতে সরাসরি জিজ্ঞেস করল, '' স্যর ডু য়ু হ্যাভ এ রিজার্ভেশান?''‌ দুপাশে মুখোমুখি চারজন জরে বসার জন্য টেবিলগুলো পাতানো। সাদা চাদর দিয়ে টেবিল কভার দেয়া। প্রত্যেকটি টেবিলেই ফুল সহ ফুলদানি দেয়া রয়েছে।

''এ্যপেটাইজার'' হিসাবে ইংলিশ ডিনারের ন্যয় বান, ট্র্যভেল মাখন ও সালাদ পরিবেশন করতে দেখছি। সবাই বেশ ব্যস্ত। - বললাম, '' ইয়েস, আই ডু, দ্য নেইম ইজ ফেরদাউস'' তালিকায় আমার নাম দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হোল। অগ্যতা পকেট থেকে চিরকুট বেড় করে তার হাতে দিলাম। তারপর আমার নাম খুঁজে পেল; '' ও মিঃ ফারনান্ডেজ'', যদিও কাটাকাটির পর আমার নাম ''ফেরদাউস'' ই লিখা ছিল।

যাক মনে মনে বললাম, ''ফেরদাউস'' ই হোক কিংবা ''ফারনান্ডেজ'' ই হোক, বাবা খাবার দরকার। স্প্যনিশ নাম হিসাবে ''ফারনান্ডেজ'' নামটা এই ক্যলিফোর্নিয়া অঞ্চলে বেশ প্রচলিত। ইউনিফর্ম পরা এক ব্যস্ত মহিলা ''ওয়েট্রেস'' এসে আমাকে একটা টেবিলে নিয়ে গেল। ওটার জানালার ধারে বসে একজন ইতিমধ্যেই তার ''বারগার' জাতিয় ডিনার পেয়ে গেছেন। দেখে মনে হল ''হিস্পানিক'', কারন চুল কাল, বপু সামান্য প্রস্ফুটিত এবং কাল ফ্রেঞ্চ কার দাড়ি।

খুব মজা করে খাচ্ছিলেন। - মহিলা এসে জিজ্ঞেস করলো,'' হোয়াট উড য়ু লাইক টু হ্যভ?'' তারপর গড় গড় করে একগাদা লিষ্টের নাম বলে গেল। যার বেশ কিছু একেবারে নতুন মনে হোল। আরও বলল,'' Our sea food specialty is red shrimps and tilapia''। মনে মনে ভাবলাম আজকাল তিলাপিয়া মাছটারও শক্তি বেড়েছে, ওটা সমুদ্রে যাওয়ার শক্তি ও সৌভাগ্য ও রাখে।

নিশ্চয়ই মিঠা পানির ট্যংকিতে তিলাপিয়া মাছকে চাষ করে, সমুদ্রে ছেড়ে তারপর ধরেছে। হয়তো এতে করে মাছের স্বাদ আরও বেড়ে। এ্যমেরিকা তো কত কিছুই পরীক্ষা ‌- নিরীক্ষা করে। এটাও হয়তো তার একটা অংশ। ভাগ্যিস, মুদ্রিত মেনু সামনেই ছিল।

আমি চয়ন করি ভেজিটেরিয়ান একটি ডিশ। দাম ১৩.৫০ ডলার। সংগে তিলাপিয়া। অনেক দিন একটি ফুল ভেজিটেরিয়ান ডিশ খাইনি, ভালই হবে। ''ওয়েট্রেস'' ভদ্রমহিলা চলে গিয়ে প্রথমে নিয়ে আসলেন ''Appetizer''।

কিছু লতা পাতার মাঝে তাই আমি পনির জাতীয় সালাদ ড্রেসিং ঢেলে বাহ্যিকভাবে মনের আনন্দে 'বিসমিল্লাহ' বলে খাওয়া শুরু করি। মাখন দিয়ে বান রুটিটা খেতে ভুলিনি। ১৩.৫০ ডলার তো খেতে হবে। বাইরে ''বুফে'' খাবারও এত দামি না। বেকার্সফিল্ড এ ১০ ডলারে বুফে খাবারে সারাদিনের খাবার খাওয়া যেত।

ইতিমধ্যে সামনে বসা হিসপানিক এ্যমেরিকান দেখলাম খাচ্ছেন আর অনেককেই ''Hi'' করছেন। ভাবলাম উনি বুঝি এই পথে নিয়মিত যাত্রী। কিছুক্ষন পর সাদা সে এক এ্যমেরিকানকে ''হায়'' বলতেই সে ও দেখলাম ডিনার করতেই এসেছে। তাকে ''ওয়েট্রস'' ভদ্রমহিলা হিস্পানিক ভদ্রলোকের সংগেই বসিয়ে দিলেন। এমনভাবে দুজনে কথা বলা শুরু করলেন, যেন দুজনে অনেকদিনের পরিচিত।

শুরুতেই ''লেকার্স'' জিতলো না অন্য পক্ষ জিতলো সেই আলাপ; অনেকটা ১৫ বছর আগের আবাহনি - মোহমেডানের ফুটবলের লাথালাথি। এখানের খেলার আমার কোন আকর্ষন নেই। এটা আমার মতে নির্ভর করে উঠতি বয়সে আপনি কোন খেলার সংগে পরিচিত হয়েছিলেন। আমার আকাঙ্খিত ভেজিটেরিয়ান খাবার ''সামুদ্রিক'' তিলাপিয়া মাছ সহ চলে এল। সংগে অবশ্য ''mashed potato'' ।

খাবারের একি আয়তন!! আট ইঞ্চি ব্যসের সাদা সিরামিক থালার মধ্যে ২ইঞ্চি ব্যসের 'ভেজিটেবল' যার মধ্যে গোটা পাচেক বড়বটি সেদ্ধ, গোটা পাচেক, গাজর টুকরা সেদ্ধ এবং ঐ আয়তনের মধ্যেই কিছু ভুট্টা ও মটরশুটি সেদ্ধ। ''mashed potato'' টা তার পাশেই ২ইঞ্চি গোলার্ধে সাদা থালায় শোভা মন্ডিত করল। সামুদ্রিক তিলাপিয়াটা অবশ্য অন্য আকারে সাজিয়ে থালায় দেয়া হয়েিছল। ওটাই আকারে একটু বড় দেখাচ্ছিল। লম্বায় ৪ইঞ্চি, পাশে ১ইঞ্চি ওপরে টমেটো সস জাতীয় 'গ্রেভি' ঢেলে ''fillet'' মাছটাকে কবর দিয়ে রেখেছিল।

এতকিছু আয়োজনের পরও সাদা সিরামিক থালাটার অর্ধেক পরিসরই চকচক করে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে চাইছিল। আমি আশ্বস্ত হলাম থালাটা অন্ততঃ জিবানুমুক্ত করে পরিষ্কার করা হয়েছে। খাওয়া শুরু করেছি, প্রথমে তিলাপিয়াটা, শব্জি ও পরে ''mashed potato'' মানে আলু ভর্তা। না এইদিকটায় কোন কার্পন্য হয়নি। তিনটা আইটেমই সুস্বাদু।

‌ - হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেন বলছে, ''How is your food?'' তাকিয়ে দেখি হিস্পানিক এ্যমেরিকানই প্রশ্নটি করেছে। - আমি বললাম, ''Good, good, I am a vegetarian, that's what I need'', অবশ্য তার সারে সাত ডলারের পনীর বার্গারের খাবারটা থালা ভরিয়ে রেখেছিল। তাদের কথোপকোথন শুনছিলাম, হিস্পানিকজন আলাপে মনে হল সিনিয়র সেলস পার্সন, বছরে ৭০,০০০ ডলার বেতন; আমার সদ্য শেষ হওয়া চাকুরী থেকে বেশ উর্ধে। সাদাজন হলেন এখানকার পুলিশ বিভাগের কারেকশান ডিপার্টমেন্টে, তার আয় 'ওটি' মিলিয়ে ৯০,০০০ডলারে। পুরো ডাইনিং লাউঞ্জই এই শেষ সময়েও বেশ ব্যস্ত।

যাদের 'রিজার্ভেশান' নেই, তাদেরকেও বসিয়ে দিতে ডাইনিং লাউঞ্জের কর্মীরা ব্যস্ত। বিল চলে আসল, দেখলাম ১৬.৫০ ডলার আমার বিল, বুঝলাম সংগে সামুদ্রিক তিলাপিয়াটার জন্য তিন ডলার বাড়তি। আমি অপেক্ষা করলাম হিস্পানিক ভদ্রলোকের জন্য, কারন তারও খাবার শেষের দিকে। টিপস কত দিতে হবে জানিনা। জাপানে কোন স্থানে টিপস দেবার নিয়ম নেই।

এ্যমেরিকাতে নিউ ইয়র্কে ট্যাক্সি ড্রাইভার ভাইয়েরা তো শুনেছি ১০% থেকে ২০% টিপস না দিলে আপনাকে একটা গালিই দিয়ে বসবে। অবশ্য বাংলাদেশীরা চাইবে না, দিলে ভাল, না দিলে নেই আশা করি এটাই আমাদের স্বভাব। নিউ ইয়র্কে এখন প্রচুর বাংলাদেশী ট্যক্সি চালক আছেন, এই তথ্য দিয়েছেন বেকার্সফিল্ড এর শরীফ ভাই, যার ভ্যলী প্লাজায় একটি দোকান আছে। সামনের পক্ষ যখন ১ডলার টিপস দেয়, আমিও একই পরিমান টিপস রেখে ডাইনিং লাউঞ্জ থেকে একেবারে পেছনে আমার বগির দিকে হাটা শুরু করি। "পর্ব ‌= ২;" "(চলবে)"


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.