হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র বেগম খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসএ একটি লেখা লিখেছেন এই খবর জানতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। এবং লেখাটি পড়ার পর আরো আনন্দে এই পরম দুঃখময় দিনকালেও আমার মুখের হাসি দুই কান বিস্তৃত হয়েছে। তবে আবার তার পরেই হতাশা, দুঃখবোধ ও আশংকায় ডুবে গেছি।
প্রথমে আনন্দিত হয়েছিলাম যে বর্তমান দুনিয়ার নয়া ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামোয় প্রভু রাষ্ট্রের সামনে তার দাস রাষ্ট্রের দালাল শাসক ঠিক কিভাবে নিজের চাওয়া পাওয়া তুলে ধরেন তার একটা নমুনা পাওয়া যাবে, যেটা কাটাছেড়া করা যাবে। সচোরাচর এই বিষয়গুলা রূদ্ধদ্বার বৈঠকে হয়, টিভি মিডিয়ায় যা দেখায় তাও টুকরা টুকরা দেখায়, প্রায়ই কোন কথা থাকেনা।
কিন্তু এযে জ্বলজ্যান্ত লেখা, যেটাকে কাটাছেড়া করে দালালীর নমুনাগুলা তুলে আনা যাবে। আর পড়ার পরে আরো আনন্দিত হলাম এই কারনে যে আমি বড়জোর টাকি মাছ আশা করেছিলাম, কিন্তু বিরাট একটা বোয়াল মাছ ধরা পরেছে। লেখার আনাচে কানাচে, আবেগে আকাঙ্খায় এবং প্রতিটি ছত্রে ছত্রে দালালী ঝড়ে পরছে। এই দালালী করার ক্ষেত্রে মিথ্যাচার, তোষামোদি এবং চুরান্ত রকম অপরাজনৈতিক এবং অগনতান্ত্রিক ও অনেতৃত্বসূলভ বক্তব্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। লজ্জায়, অপমানে, হতাশায় আমার মাথা হেট হয়ে গেছে।
এই মুহুর্তে রাগে ফুশছি।
প্রথমেই শুরু করা হয়েছে মিথ্যাচার দিয়ে। বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাকি বাংলাদেশের অন্যতম প্রথম স্বিকৃতীদানকারী রাষ্ট্র। চুরান্ত মিথ্যাচার। বাংলাদেশকে স্বিকৃতী দেয়া ১০২ টি রাষ্ট্রের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪৮তম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগে দুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ৪৭টি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বিকৃতী দিয়েছে। তাইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম প্রথম কিভাবে হয়? তারা প্রথম ৫০এর ভেতরে আছে বলে? তাইলে দ্বিতীয় ৫০কে কি বলা যায় অন্যতম দ্বিতীয় স্বিকৃতীদানকারী রাষ্ট্র? বলা ঠিক হবেনা, কারন তা অতিকথন হবে। সত্য এড়িয়ে এই অতিকথন খালেদা জিয়া কেনো করলেন? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়টাতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি সামরিকভাবেও পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে, এবং তারা বাংলাদেশকে স্বিকৃতী দেয়া প্রথম ৫টা, ১০টা এমনকি ২০টা রাষ্ট্রের মধ্যেও পরেনা। তারা বাংলাদেশকে যখন স্বিকৃতী দিয়েছে ততদিনে বাংলাদেশ নিজের স্বিকৃতী আদায় করে নিয়েছে, একের পর এক অন্যান্য রাষ্ট্রের সহায়তা ছিলো সেসময় শ্রেফ আনুষ্ঠানিকতার বিষয়। তাহলে এই মিথ্যাচার, এই অতিকথনএর কারন কি? খালেদা জিয়া এটা কেনো করলেন?
আমি জানি কেউ কেউ বলবেন যে এটা খালেদা জিয়া লেখেন নাই, ওনাকে কেউ লিখে দিয়েছে।
সেটা হতে পারে, দুনিয়ার অনেক বড় রাজনীতিকের লেখাই কেউ না কেউ লিখে দেয়। তা দিলেও সেটা ঐ রাজনীতিকের নিজের অভিমতই থাকে, লেখক সেখানে পরামর্শক অথবা উপদেষ্টা হিসাবে থাকতে পারেন। এমনকি এধরণের লেখা পুরো রাজনৈতিক দলটির অথবা এর নেতৃত্বের সম্মিলিত অভিমতও হতে পারে। খালেদা জিয়া এবং বিএনপির আন্তঃসম্পর্ক হিসাব করলে এই চিঠিটি আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারন খালেদা জিয়া একটা প্রতিকএর মতো যেই প্রতিকটি জিয়াউর রহমান নামক জণপ্রিয় নেতার প্রতিক হিসাবে এবং সেই নেতার জণপ্রিয়তা থেকে শক্তি গ্রহণ করে বিএনপি নামক রাষ্ট্রটির প্রতিনিধীত্ব করেন।
(ফ্রাঞ্জ ফাঁনোর জণপ্রিয় নেতাতত্ত্ব বিষয়ে যাদের ধারণা আছে অথবা আমার লেখায় পড়েছেন তারা বিষয়টি পরিস্কার বুঝবেন)। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ার পার্সন হওয়ার ক্ষেত্রে তার একটাই যোগ্যতা ছিলো, আর তা ছিলো জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হওয়া। জিয়া মিথএর উপর ভর করে, খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে এই দলটি সংগঠিত হয়, পরিচালিত হয়। বিএনপির মূল নেতৃত্ব আর খালেদা জিয়া তাই একসুতায় গাথা। খালেদা জিয়া এবং বিএনপি আসলে একে অপরের পরিপূরক, খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি নাই, একারনেই এখন খালেদা জিয়ার বিকল্প হিসাবেই তারেক জিয়ার মিথ তৈরি করা হচ্ছে।
কারন শহীদ জিয়ার মিথ, তার পরিবার ছাড়া বিএনপির কোন অস্তিত্ব থাকবেনা এবং এই বিষয়টি এইলেখার আরেকটি জায়গায় প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে যা পরে আলোচনা করবো। জিয়া মিথ মুক্ত নয় এই লেখাটির শিরনামও। পুরো লেখায় জিয়াউর রহমান বিষয়ে কোন আলোচনা নাই, কিন্তু লেখার শিরনাম বাংলা করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে “জিয়াঃ বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ধন্যবাদহীন ভূমিকা”। পুরো লেখায় না থাকলেও শিরনামে জিয়ার এই নাম জুরে দেয়ার অর্থ যারা খুঁজে পাবেন না তাদেরকে অবশ্যই বিএনপি দলটির সাথে জিয়া শব্দটির সম্পর্ক নিয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হবে, যাতে তিনি আবিস্কার করবেন যে বিএনপি ও জিয়া শব্দটি আসলে একটি আরেকটির প্রতিশব্দ। এই লেখাটির একটি উপনামও আছে, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় “দুর্নিতী ও চুরি একটি সজিব রাষ্ট্রকে নির্জিব করে ফেলছে”।
জিয়া শব্দের আবশ্যিক ব্যাবহারেরে সাথে সাথে শিরনাম ও উপনামে ‘গণতন্ত্র’ ‘দুর্নিতী’ এজাতীয় শব্দকে আলঙ্কারিকভাবে ব্যাবহার করা হয়েছে যেটা আমাদের এদেশের রাজনৈতিক দলগুলা নিয়মিতভাবেই করে থাকে। অথচ এই বিষয়গুলা যে তাদের চর্চায় নাই শ্রেফ ফাপা বূলি ও অভিযোগেই আছে তার প্রমান যেমন ইতিহাসে আছে তেমনি এই লেখাতেও আছে।
লেখার প্রথম প্যারাতেই ঔপনিবেশিক দাসত্বের মানসিকতা পুরো মাত্রায় ধরা পরেছে। লেখার প্রথম প্যারাতে খালেদা জিয়া উল্লেখ করেছেন যে গত বছর আমেরিকা বাংলাদেশের প্রতি উদাসিন ছিলো এবং এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বশ্বতা যুক্তরাষ্ট্রের বদলে দুনিয়ার অন্যান্য উদিয়মান সুপার পাওয়ারের দিকে ঝুকে গেছে। জ্বি, বশ্বতার কথাই বলেছেন, বন্ধুত্বের কথা বলেন নাই।
যিনি এই চিঠীটা লিখেছেন তিনি এতোটাই দাসমানসিকতার একজন ব্যক্তি যিনি সাধারণ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার এবং লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসে আছেন। alliance শব্দটা ব্যাবহার করতে পারতেন, ব্যাবহার করেছেন allegiance শব্দটি, যারে বলে একবারে সরাসরি বশ্যতা, কোন লুকাছাপা নাই, কোন কূটনৈতিক শব্দের মারপ্যাচ নাই, সরাসরি খালেদা জিয়া বলছেন “বাংলাদেশ কিন্তু ২০১২ সালে অর্থনৈতিক ভাবে অন্য কিছু শক্তির দাসত্বের দিকে ঝুকছে, ২০১৩ সালেও কি এমনি চলবে? আমেরিকা কি কিছুই করবেনা? এটা হলো খালেদা জিয়ার প্রশ্ন। তার লেখার ভাষায়, “Yet in the past year, relations have been strained to the point where the United States may be accused of standing idle while democracy in Bangladesh is undermined and its economic allegiance shifts toward other growing world powers” । বিষয়টা কি হলো? নির্বাচনে জেতার জন্যে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা লাগে, এই নিয়া অভিযোগ অথবা কানাঘুষা পুরনো। যে কোন সচেতন ও সৎ ব্যক্তি স্বিকার করবেন যে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র ট্যাগ পাওয়া দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক নানান শক্তির প্রভাব ও স্বার্থের বিষয় আছে।
কিন্তু এসবে বরাবরি কিছু রাখঢাক থাকে, রাজনৈতিক নেতারা লোক দেখানোর ছলে হলেও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, দেশপ্রেম জাহির করতে চান, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের কথা বলেন। কিন্তু এই লেখায় আমরা পাচ্ছি একেবারে খোলামেলা দালালী, এবং সেই দালালীর প্রধান বিষয়টাযে অর্থনীতি সেটাও স্বিকার করা হয়েছে। ২০১৩ সাল কেনো গুরুত্বপূর্ম? কারন নির্বাচন। লেখাটি ছাপা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুপরিচিত পত্রিকায়। উদ্দেশ্য পরিস্কার, খালেদা জিয়া তথা বিএনপি এখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠির দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছেন, বলছেন যে আমরা কিন্তু অন্যদের দাস হয়ে যাচ্ছি, আমাদেরকে আপনাদের দাস বানান।
আমাদের দলকে নির্বাচনে জিতিয়ে দিন, দিলে আমরা আপনার দাসানুদাস হয়ে থাকবো। খালেদা জিয়া ইনভেস্টর খুজছেন, যিনি বা যারা এবছর বিএনপিকে নির্বাচনে জিততে ইনভেস্ট করবে, অতঃপর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের জ্বালানী ও অন্যান্য সেক্টর লুটেপুটে খাবে, তবে অবশ্যই বিএনপিকে হালুয়া রুটির কিছু ভাগ দেবে। আবার কোন ইনভেস্টর যদি বাংলাদেশকে না চেনে সেই হিণ্যমনতা থেকে একেবারে শুরুতেই খালেদা জিয়া উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ হলো এমন একটি দেশ যে দেশের জনসংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন (বিরাট বড় বাজার) এবং দেশটির অবস্থান ইন্ডিয়া ও মায়ানমারের মাঝখানে (এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক সমসাময়িক আগ্রহের কারনে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল )।
প্রথম প্যারাটিকেই পুরো লেখার সারমর্ম বলা যায়। তাও পুরো লেখার আরো কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
লেখায় বিভিন্ন প্রসঙ্গ এসেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে যে বিষয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য সহমতে পৌছাতে পারেন নাই, সেই বিষয়গুলার ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন খালেদা জিয়া। যেমন ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস এবং পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ। আমরা জানিযে এই বিষয়গুলাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সন্তুষ্ট না, তবে এর পেছনে আরো নানান কাহিনী আছে। টিফা চুক্তি থেকে শুরু করে এশিয়া এনার্জি এমন নানান ইস্যুতে এবং বঙ্গপোসাগরের উপর কর্তৃত্ব প্রসঙ্গেও আওয়ামীলীগ সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
তবে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা যে তাদের ছিলো বা আছে তা বিশ্ব ব্যাংক বিষয় সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির একেকবার একেকরকম বক্তব্য শুনলেই বুঝা যায়। আওয়ামীলীগ সরকারের সমস্যা অন্য। তারা সবাইকে সন্তুষ্ট করতে চায়, সবার সাথেই তাল দিয়ে চলতে চায় এবং কম বেশী সবার দালালীই করতে চায়। তার উপর আবার দেশের ভেতরে অব্যাহত সচেতন সমাজের চাপ আছে। তাই সরকার চাইলেও যখন খুশি যা খুশি করতে পারেনাই।
এতে যুক্তরাষ্ট্র গোস্যা করেছে, গোস্যা করে উদাসিন থেকেছে। এখন খালেদা জিয়া সেই মান ভাঙাতে গেছেন। নির্বাচনে জিততে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেম তার দরকার।
আবার জামাত ইসলামীকেও বিএনপির দরকার। বিএনপির বর্তমান সমস্যা অস্তিত্বের সমস্যা।
বিভিন্ন কারনে বিএনপি ধারণা করছে যে জামাত ইসলামীকে ছাড়া সে নির্বাচনে জিততে পারবেনা, তাই যুদ্ধপরাধীদের বিচার বানচালের হরতালেও তার সমর্থন থাকে। আবার সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের সাপোর্ট করার উপায়ও নাই, তাতে তরুন প্রজন্মের চোখে ভিলেন হতে হবে। এখানেও তাই খালেদা জিয়া আমেরিকাকে মোড়ল মেনেছেন। তিনি বলছেন যে শেখ হাসিনা নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করছে বিচারের নামে, এবং এক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরি কামনা করছেন।
পুরো লেখার বড় অংশ জুড়েই বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের নানান ধরণের নেতীবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে দুর্নীতি, হত্যা, গুম কিছুই বাদ যায়নাই। সরকারের এসব অপকীর্তির ফিরিস্তি দিয়ে বিচার চেয়েছেন। সরাসরি বাংলাদেশের উপর নানাবীধ চাপ এবং এমনকি অর্থনৈতিক অবরোধ দাবি করেছেন।
তবে আমি এই লেখাটি আর একটি প্যারায় ফোকাস করেই শেষ করতে চাই। বাকিটা পাঠকের নিজ নিজ পাঠের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।
এই প্যারাটি খুবি গুরুত্বপূর্ণ। ঈতিপূর্বে প্রথম প্যারার নানা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা যা বলেছি তার কিছু বিস্তারিত আলাপ এই প্যারাতে আছে এবং সেইসাথে বিএনপির প্রকৃত দাবি দাওয়া চাওয়াটুকুও আরো পরিস্কার হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ভাষায়, “Bangladesh’s neighbor Burma is emerging from exile with the visit of President Obama in the aftermath of his re-election. India continues its growth as the world’s largest democracy. If Bangladesh succumbs to the rule of one family, it would be a major step backward for the region. Southeast Asia is now a region full of hope because of the freedoms America has helped foster. Under a caretaker government, the people ofBangladesh have the chance to express their will through the ballot box.
দক্ষীন এশিয়ার বর্তমান গুরুত্বের কথা খালেদা জিয়ার বারবার উল্লেখ না করলেও চলে। তিনি সেটা করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছেন যে খালি মায়নমার আর ইন্ডিয়ার প্রতি নজর দিলেই চলবেনা, মাঝখানে বাংলাদেশের দিকেও নজর দিতে হবে।
এবং এই নজরটা কিভাবে দিতে হবে তার প্রেসক্রিপশনও খালেদা জিয়া দিয়ে দিয়েছেন। তিনি খুব স্পষ্ট করেই বলছেন “If Bangladesh succumbs to the rule of one family”, ওয়ান ফ্যামিলি কথাটূকু বোল্ড করে দিলাম। এই চিঠীর সততা আমাকে মুগ্ধ করেছে। খালেদা জিয়া এবং বিএনপি এখানে সৎ। খালেদা জিয়া বলতে চান যে বাংলাদেশকে খালি একটা পরিবার লুটেপুটে খাবে তা হবেনা, এতে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে, আরো পরিবারকে ভাগ দিতে হবে।
আরো পরিবার বলতে শিরনামেই পরিবারের মার্কেটিং করা হয়েছে, জিয়া পরিবার। পুরো লেখায় বারবার গণতন্ত্র নিয়ে চাপাবাজি করে শেষপর্যন্ত মূল ভাবটা লুকানো যায়নাই। খালেদা জিয়া বলছেন, বাংলাদেশে খালি বঙ্গবন্ধু পরিবারের শাসন চললে হবেনা, জিয়া পরিবারেরও ভাগ চাই। অর্থাৎ জিয়ার নাম বেঁচে যারা খায় তাদেরও ভাগ চাই, যারা বঙ্গবন্ধুর নাম বেঁচে খায় তাদের পাশাপাশি।
লেখাটি শেষ হয়েছে আরেকটা পরিস্কার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
It is time for the world, led by America, to act and ensure that democracy is saved in Bangladesh. আমেরিকান নেতৃত্বাধীন দুনিয়াকে খালেদা জিয়া আহবান করছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে, রক্ষা করে তার পরিবারকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের মতো শাসন শোসনের সুযোগ দিতে। এক্ষেত্রে শুধু আমেরিকা না বরং আমেরিকার নেতৃত্বাধীন অন্যান্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপও তিনি বাংলাদেশে কামনা করছেন। দক্ষীন এশিয়ায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের উইংএর সবচেয়ে বড় শক্তি ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়াকে মাঝখানে রেখেই সর্বশেষ কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশকে ডিল করছে যুক্তরাষ্ট্র। খালেদা জিয়ার যেই ‘world, led by America র কথা বলছেন সেই ওয়ার্ল্ডের স্থানীয় মোড়ল হলো ইন্ডিয়া।
অর্থাৎ লেখাটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে হলেও খালেদা জিয়া ইন্ডিয়ার প্রতিও নিজের আনুগত্ব এখানে ঘোষনা করে রাখলেন, যদিও কিছুদিন আগে ইন্ডিয়া সফরেই তিনি সেটা করেছিলেন।
বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যার সমর্থক গোষ্ঠির বড় অংশই মূলত আওয়ামী বিরোধী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরপর আওয়ামী-বাম নেতৃত্ব যে প্রশ্নগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারেনাই, সেসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে বিএনপির জন্ম। এদেশের একটা বড় সংখ্যক মানুষের মাঝে ইন্ডিয়া বিষয়ক ভয়, ঘৃণা ইত্যাদি অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করে, সেই ঘৃনা আর ভয়ের উপর ভর করে, ইন্ডিয়া বিরোধীতার ধোয়া তুলে এই দলটির জন্ম। বরাবরি সংস্কৃতি এবং বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি অনাগ্রহী এই দলটির একটি তরুন সমর্থক শ্রেণী এখন গড়ে উঠেছে যারা বুদ্ধিবৃত্তির মাধ্যমে দলটির রাজনৈতিক আদর্শ ও কাজকে ব্যাখ্যা করতে আগ্রহী, এদের বড় অংশই জামাতের সাথে বিএনপির জোট বিষয়ে আগ্রহী না।
বিএনপিকে যারা গণমানুষের রাজনৈতিক দল হিসাবে দেখে, তারাও এই জোটের বিষয়ে বরাবরি বিএনপির ভেতরকার সমালোচক। কিন্তু ঈতিপূর্বে আমরা দেখেছি রুট লেভেলের সমর্থক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক গুনগ্রাহীদের বদলে নির্বাচনে জেতার জন্যে জামাতের উপর দলটি বেশি নির্ভর করতে পছন্দ করেছে। এবং এবার দেখা যাচ্ছে এদেশের কোটি কোটি জনগণের উপর তার বিন্দুমাত্র কোন ভরশা নাই, তিনি নির্বাচনে জিততে চাইছেন খোলা মাঠে যুক্তরাষ্ট্র, ইন্ডিয়ার দালালী করে। এই করে দলটি যদি ভালো দর দাম করতে পারে তাইলে হয়তো সামনের নির্বাচনে জিততে পারে, কিন্তু জনগণের দল হিসাবে এই দলটির বিলুপ্তি হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।