উন্নত দেশে ব্যক্তি স্বাধীনতা
এ্যমট্র্যকে করে রেটোন, নিউ মেক্সিকো থেকে
বিকাল ৫-৩০, মে ২৪, ২০০৮ খৃঃ
গতকাল সকাল থেকে এ্যপার্টমেন্ট খালি করতে ব্যস্ত। ক্যলিফোর্নিয়াতে এ্যপার্টমেন্ট সু্ন্দর পরিপাটি যে অবস্থায় নিয়েছেন ঐ অবস্থায় ফিরিয়ে না দেন, তা'লে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা ভাড়া নেবার সময় যে জমা বা ডিপজিট ''মানি'' রেখেছিলেন, তার কিয়দংশ অথবা পুরোটাই রেখে দিতে পারেন। শুনেছি নানা অজুহাতে এ্যপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ কিছুটা রাখবেনই। যত কম বিয়োগ হয় তাই সকাল থেকে এ্যপার্টমেন্ট পরিষ্কার কাজে নিয়োজিত হলাম। সকাল সাতটা থেকে এই কাজ করতে করতেই ১০টা বেজে গেল।
সারে দশটায় বলে রেখেছি এ্যপার্টমেন্ট হস্তান্তরের কাগজপত্র সই করার জন্য আাসব। বেকার্সফিল্ড থেকে এল এ যাবার এ্যমট্র্যক পরিচালিত বাস ছাড়বে বেলা ১:৫৫ মিনিটে। আগে গিয়ে যাতে সহজে লাগেজ বুক করতে পারি, তাই সাড়ে এগারটার মধ্যে যাবার অর্থাৎ এ্যপার্টমেন্ট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এগারটার সময় সহ সুপার এ্যপার্টমেন্ট চেক করে বললো 'মাইনর ক্লিনিং' লাগবে। কিছুটা লাগবে সেটা আমিও জানি, কারন কোন ভ্যকুয়াম ক্লিনার কিনিনি এ্যপার্টমেন্ট পরিষ্কার করার জন্য।
স্বল্পকালীন থাকা হবে দেখে কর্তৃপক্ষের সহায়তাই এ্যপার্টমেন্ট পরিষ্কার করানোর ব্যবস্থা করিয়েছিলাম।
পরে 'ডিপজিট' পরিমান থেকে ঐ কাজটুকু করার জন্য কিছুটা রেখে বাকিটুকুর চেক চাইতে গেলে, বললো, পাঠিয়ে দেবে। ঠিকানা নিল টরন্টোর। আমি ধরে নিয়েছি এই বাকী অর্থ পাবার আশা এখন কম।
বেকার্সফিল্ড থেকে শিকাগো পথে ট্রেন হলো লস এঞ্জেলেস থেকে শিকাগো সরাসরি।
বেকার্সফিল্ড থেকে লস এঞ্জেলেস পর্যন্ত এ্যমট্র্যকের বাসে করে। বাস অন্য দিনের তুলনায় প্রায় ভর্তি ছিল। আমার সংগে ছিল একটি হালকা ভাঁজ করা যায় এরকম একটি বেড। এটি ফেলতে চাচ্ছিলাম না, সংগে নিলেও ঐটি লাগেজ হিসাবে বুক করা গেল না, কারন ঐ বেডটির কোন কভার বা আচ্ছাদন ছিল না। আমি বললাম হাতে করে নিতে পারি।
বললো চেষ্টা করতে পার।
এল এ পৌঁছুলাম ট্রেন ধরার প্রায় দের ঘন্টা আগে। খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম, ১২ নং প্ল্যটফরম থেকে শিকাগোর ট্রেন ছেড়ে যাবে। হাতে দু তিনটা লাগেজ থাকলে আর একা ভ্রমন করলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় বাথরুম করতে গিয়ে। কারন আপনার লাগেজ এ সকল শহরে কোন জায়গাতে মালিকানা বিহীন অবস্থায় ফেলে যেতে পারবেন না।
তা হলে নিরাপত্তার লোক এসে ওগুলো সন্দেহজনক বিবেচনা করে সম্ভবত ধংস করার স্থানে পাঠিয়ে দেয় বলে শুনেছি। এই শতর্ক উপদেশ প্রথমে আমি পাই ১৯৯৪খৃঃ লন্ডনে হিথরো বিমান বন্দরে যাবার সময়ে। তখন ইংল্যান্ডে চলছিল আইরিশ সন্ত্রাশ/স্বাধীনতা বাহিনীর সন্ত্রাশী/স্বাধীনতা তৎপড়তা । (দুটি শব্দ ব্যবহার করলাম দুই সরকার বা গোষ্ঠীর তৎপড়তা ও কার্যক্রমের শুধুমাত্র উল্লেখ করার জন্য)। কারন লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে ঐ সময়ে বিভিন্ন প্রকারের দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা পাওয়া যেত।
তাই এজতেমায় যাবার মত, বিছানা, সুটকেস নিয়েই আমাকে বাথরুমে যেতে হয়েছিল। বাথরুমের স্থানের অবশ্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম ও ছবি আছে । 'এল এ' তে অবশ্য সুন্দর আকর্ষনীয় এটার নামঃ ''Restrooms'', কারও এখানে Rest হয় কি না, জানি না তবে বিভিন্ন বর্জ পদার্থ নিঃস্বরনের ফলে আরাম পাওয়া যায় তা নিশ্চয়ই। এখানে খারাপ লাগে কিছুটা যখন পুরুষদের মুত্র ত্যাগের পাশাপাশি লাগোয়া ''ইউরিনালে'' কোন পার্টিশান থাকে না, আমি অবশ্য পাবলিক এই রকম জায়গায় নিজের অংগ প্রদর্শনে রাজী নই। আরও আশংকাজনক হলো যখন মল ত্যাগের স্থানে যদি কোন দরজা থাকে না, (যেমনটি পেয়েছিলাম এ্যমট্র্যক ওশানসাইড রেল স্টেশনে)
ঠিক করে রেখেছিলাম ফোল্ডিং হালকা(চার কেজি ওজন হবে) বিছানাটি যতটুকু নেয়া যায়, নেব; যেখানে নিতে একেবারে দেবে না ঠিক ঐস্থানেই ফেলে দেব যদি কোন অনুরোধ কাজ না করে।
পোনে সাতটায় ট্রেনে আহোরন করি। ট্রেনের নাম ''Southwest Chief''. প্রথমে আমি এই ট্রেনের লাইনে দাড়াইনি, কারন আমি যাব ''North east'', পরে দেখলাম ''Southwest Chief'' ই শিকাগোতো যায়। ''কোচক্লাশ'' দোতলায় আমার সিট পরে। আমার পাশে বসা মহিলা, আলাপ করে জানলাম শিকাগো হয়ে ওয়াশিংটন যাবে। বেশি কথা বলতে রাজী হলো না, বললো সে ইংরেজী কম জানে, অন্য কথায় সে হিস্পানিক বা স্প্যনিশ ভাষায় কথা বলে।
যেহেতু সহযাত্রীর সংগে কথা হবে না, তাই 'আইল' এর ওপাশে দুজন সম্ভবত পঞ্চাশোর্ধ ভদ্রমহিলার সাথে আালাপ করতে চাইলাম। প্রথমজন সানন্দেই কথা বললেন। স্কুলে কম্পউটার শিখান তথা প্রোগ্রামিং। কেউ কম্পুটার সন্মন্ধে কথা বললে, তাকে আমি 'লিনাক্স' সন্মন্ধে আগ্রহী করার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রে তাই হোল, জানলাম যে তিনি লিনাক্স ও ওপেন সোর্স সন্মন্ধে অবগত ছিলেন না।
সারারাত ভ্রমন করতে হবে বিধায় অধিকাংশ যাত্রী ঘুমানোর প্রয়োজনীয়তায় ব্যস্ত। মোটামুটি সবাইকেই দেখলাম কম্বল গোছের কিছু সংগে বহন করতে। ঐ কম্বলের প্রয়োজনীয়তা রাতেই প্রমানিত হল, আমার সাথে শীতের জ্যকেট থাকায় অতোটা শীতের ভয় ছিল না। এ্যরিযোনা রাতে পার হওয়ার সময়ই অনুভব করি যে, ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের তাপ মনে হল ০ডিগ্রী সেলসিয়াস না হলেও কাছাকাছি চলে এসেছে। ট্রেনে সম্ভত অর্ধেক যাত্রী, আমার পাশের ভদ্রমহিলা উঠে অন্য সীটে চলে গেল, আমিও দুই সীট নিয়ে আরামে ঘুমাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নিজের মালামাল সংগে নিয়ে যাত্রীদের বিরক্ত উদ্রেক করার মোটেও ইচ্ছা ছিল না।
সহযাত্রী ভদ্রমহিলা রাত সারে দশটা পর্যন্ত না দুটো সীট নিয়েই ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
যে কয়টি স্টেট বা ''রাষ্ট্র'' এই ট্রেন পারি দেবে, সে গুলো হলো
ক্যলিফোর্নিয়া
এ্যরিযোনা
নিউ মেক্সিকো
কলরাডো
ক্যনসাস
মিযোউরি
আয়োওয়া এবং শেষে
ইলিনয় (যার প্রধান শহর শিকাগো)
'রেটনে' পৌঁছুলাম এল এ থেকে প্রায় ২৪ঘন্টা ট্রেন যাত্রার পর। এটি লাস ভেগাস এর পরের শহর। ইতি মধ্যে রাতে পারি দিয়েছি এ্যরিযোনা ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি তুষারাচ্ছন্ন পাইন গাছের বনের মাঝ দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। ক্যমেরা ভোরের ছবির জন্য ঠিক করে কিছু ছবি নিলাম।
কিন্তু দেখলাম ঝাপসা আসছে। কাজ নেই তার থেকে ভিডিও নিই। তাই করলাম। এ্যরিযোনা তে তুষারপাত হয় এটাই জানা ছিলনা আমার। তাও আবার মে মাসের শেষ দিকে।
এ্যরিযোনা মানে মরুভূমি। কতকিছুই নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসযোগ্য না এটা হয়তো তারই উদাহরন।
আগেই বলেছি আমার পাশের সিটে বসা মহিলা মেক্সিকো 'অরিজিন'। কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করাতে বললো, সে ইংরেজী ভাল জানে না। আইলের অন্য পাশে সিনিয়র দুই মহিলা ইংরেজী ভাষী হওয়াতে তাদের সংগেই আলাপ শরু করেছিলাম।
দু' জনেই নিউ মেক্সিকো র এ্যলবারকারকিতে নামবেন। তাদের জন্য এল এ থেকে এটা ষোল ঘন্টা যাত্রা। রাতে প্রথম জন জানালো তিনি কম্পুটার প্রোগ্রামিং স্কুলে শিখান তবে নিজে অতটা আগ্রহী নন।
ট্রেনে ভ্রমন দৃশ্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ পৃথক কম্পার্টমেন্ট। সকাল বেলা প্রথমোক্ত মহিলা ওখানে চলে গেলেন, তাই উনার সংগে আর আলাপ হল না।
অন্য মহিলা, যিনি জানালার ধারে বসা ছিলেন, এবার তিনি নিজে থেকেই আলাপ শরু করলেন। কারন গতকাল রাতে কিছু লিনাক্স ও ওয়েব সাইট বানানো নিয়ে একটু আলাপ হচ্ছিল, কথায় কথায় উনি জানালেন 'জিনিওলজি' র ওপর ওনার ওয়েব সাইটটি। 'জিনিওলজি' কি জিনিষ ওটা জানার জন্য আমার আগ্রহও বেড়ে গেল। যা জানা গেল, তা সম্পূর্ণ নতুন এক বিদ্যার ভূবন। তিনি বললেন, 'ডি এন এ' ম্যচ করিয়ে পূর্ব পুরুষের বিরাট এক ইতিহাস এই বিদ্যা দিয়ে আরোহন সম্ভব।
যতটুকু জেনেছি, তাতে করেই আমার মনে হয় গল্পের বই ই লিখা যায়। তার থেকে তার তৈরী ওয়েবসাইট নিলাম।
পর্ব- ১ (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।