আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘর ছাড়ার মরশুম

দ্য ওয়ে আই ফিল ইট...

কুড়ি বছর পার হতে হতে অন্তরার মতো নম্রচোখ মেয়েদের মায়াবি এক মা-বাবা আর ছোট্ট পুতুলিকে ঘিরে অনেক স্মৃতি জমে যায়। স্কুল-কলেজ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা অন্তরাকে ভীষণ এক ক্রাউডেড হৈ-চৈ মানুষের মধ্যে ফেলে দেয়। বিকেলের আধো-অন্ধকারে অন্তরা মাঝে মাঝে ভীষণ এই ভীড়ের দঙ্গলে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে কল্পচোখ তাকে এক নম্র পুরাতন দৃশ্য দেখায়। সেখানে ভীষণ মায়াবি এক মা-বাবা আর আদরের ছোট্ট বোন অথবা ভাই। আধো-অন্ধকারে নিচু হয়ে সহজেই চোখ মোছে অন্তরা।

অন্তরার চোখ মোছার গল্প অতঃপর বাড়তে থাকে। অল্প গা-গরম, পা মচকে ফেলা কিংবা হাতে গরম পানি ছলকে পড়ার মৃদু খবরগুলো অনিচ্ছায় বাবা-মায়ের কানস্থ হলে মিছে বকুনি আর বিপুল উৎকন্ঠার দুজোড়া চোখের কল্পনায় অন্তরার চোখ মোছাটা একরকম নিত্যনৈমিত্তিক হয়। ছোট বোনটাও ভীষণ বেকুব হয়ে অন্তরার বাড়ি ফেরার সংবাদে মিছেমিছি ছোট্ট ঘরটা সাজাতে থাকে। টেবিলে প্রিয় ফুলদানি, আয়নাটা ঝকঝকে হওয়া চায় আর সিডি প্লেয়ারের পাশে পছন্দের লোপামুদ্রা কিংবা রবীন্দ্র সঙ্গীত। এসব দেখে দেখে অন্তরা যমুনা হয়েছে প্রায়ই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ঘর ছাড়ার দিন অন্তরা বোঝেনা ঠিক, কিন্তু গোপনে অগোচরে বড় এক সত্যের রিহার্সেল হয়ে যায়। ক্যাম্পাসের নিয়ন রঙিন সময় জীবনের অনেকগুলো পাতাকে রঙে মাখামাখি করে খুব দ্রুত উড়িয়ে নিলে একদিন হঠাৎই ঘর ছাড়ার মরশুমের মুখোমুখি হয় অন্তরা। দিকবিদিক জুড়ে সুপাত্রের সন্ধান চলে। আর অবাক! ছোট্ট বোনটির আম ভর্তা আর হাজারো খুনসুটির গল্প ভুলে অন্তরাও কিভাবে যেন অচেনা এক পুরুষের জলরঙ পোর্টেট এঁকে চলে মনে মনে। এরপর হয়তো কোন অঘ্রাণে, হয়তো কোন প্রচন্ড কৃষ্ণচূড়ার দিনে এক অনিবার্য ট্রাজেডির সময়-ক্ষণ নির্ধারণ হয়।

সভ্যতার সঞ্জিবন প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রকৃতিই যেন অদ্ভুত এই ট্রাজেডির পুণর্জন্ম দিয়ে চলে প্রতিদিন। পরিধান আর বান্ধবদের আনন্দ-গুঞ্জনে অন্তরা অতঃপর একদিন রঙিন হয়। বিপুল কোলাহল, রঙিন বাতি আর ঝাঁঝাল ঘ্রাণে বাতাস মৌ মৌ ভারি হয়। অন্তরার মায়ের আঁচল আর বাবার রুমাল গোপনে গোপনে ভিজতে থাকে দারুণ। অন্তরা কিন্তু কিভাবে কিভাবে দেখে সবই।

অতঃপর নিঃসাড় অনুভূতির টিপসই আর খাবারের বিপুল উচ্ছৃষ্টের ঘ্রাণের ভেতর দিয়ে সূর্য অস্ত গেলে বেলিফুলের ঘ্রাণে ভারি এক ঝকঝকে গাড়ির সামনে এলোমেলো দাঁড়ায় কতক আধো-উদভ্রান্ত মানুষ। গাড়ির দরজা গলে অচেনা এক ভুবনে ঢোকার আগে নিঃসাড় মায়ের বুকে শেষবারের মতো ঢলে পড়ে অন্তরা। আর পাথর-মায়ের শাড়ি লবণ-জলে ভাসিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে এক মিথ্যা আশ্বাসই দিয়ে চলে শুধু--“দু-দিন পরেই তো চলে আসছি মা। ” [অদ্ভুত এক বিষাদ আর বেদনা নিয়ে লেখাটি আমার উপর চড়াও হয়েছিল। লিখে তবেই কিছুটা মুক্তি পেলাম।

আসলে এই লেখাটি কোন নারীর হতে পারতো। কিন্তু মনে হয় কোন বিষাদময় সত্য তা কখনও হতে দেবে না। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।