দ্য কাপালিক ইজ ব্যাক
কাতার সত্যিকার ভাবেই একটা কসমোপলিটান দেশ। এর নির্মানশিল্পের ক্ষেত্রটা এত বিশাল যে অনায়াসে পুরো দেশটার উপর একটা "আন্ডার কন্সট্রাকশন" সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া যায়। আপনি যে এলাকাতেই যান সেখানেই দেখবেন উঠছে নতুন নতুন বাড়ী। এই শিল্পের শ্রমীকের চাহিদা মিটাতেই মূলত সারা পৃথিবী থেকে স্রোতের মত লোক আসছে এদেশে। এছাড়া অন্যান্য সেক্টরতো আছেই।
ভাষাগত ভাবে দেখলে এদেশে মানুষদের তিনভাগে ভাগ করা যায়। কাতারী এবং আফ্রিকা মহাদেশের মানুষদের ভাষা আরবী। উপমহাদেশের সবার সাধারণ ভাষা হচ্ছে হিন্দি। আর ওয়েস্টার্নদের ইংরেজি।
এখানে আসার আগে কাতারের কিছু বড় বড় বিল্ডিংএর ছবি দেখে ভেবেছিলাম এখানকার সবাই বোধ হয় হাইরাইজ বিল্ডিংএ বাস করে।
এসে দেখি চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টা। রাজধানী ছাড়া অন্য কোথাও বড় কোন বিল্ডিংই নেই। আর পুরো রাজধানী হচ্ছে বিদেশীদের দখলে। এরা নিজেরা থাকে রাজধানীর বাইরে। এদের বাসভবন হচ্ছে ডুপ্লেক্স ভিলা।
আগে এদেরকে সরকার থেকে যেসব বাড়ী বানিয়ে দিত সেগুলো ছিল এক তলা ভবন। এবছর থেকে নতুন যেসব বাড়ী হচ্ছে সেগুলোও সব হচ্ছে ডুপ্লেক্স ভিলা। যেদিকেই তাকাবেন আপনার দৃষ্টি কোন না নির্মানাধীন ভবনের উপর পরবেই!
এদেশে উপস্থিত আফ্রিকানদের বেশীরভাগ হচ্ছে মিশরী। এরা শিক্ষিত এবং কর্মঠ। এখানকার অফিস-আদালতগুলোর উঁচু পদগুলো সব এদের দখলে।
ভাষা আরবী এবং শিক্ষিত হওয়ার পুরো সুবিধাটাই এরা পাচ্ছে। কাতারীরা এদের মর্যাদাও দেয় অনেক। সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং ছোটবেলায়ই খুব ভালো ক্বোরআন শিখে। এদের যে কেউ মসজিদে নামাজ পড়ানোর সাজস রাখে। হয়ও তাই।
মসজিদে যেসব মুসুল্লি জামায়াতের পরে আসে, তারা যখন জামায়াত পরে তখন সেখানে কোন মিশরী উপস্থিত থাকলে সেই সাধারনত নামাজটা পড়ায়।
নির্মানশিল্পেও এদের উপস্থিতি অনেক। তবে তাদের সবাই ট্রেডসম্যান। লেবার খুব কমই আছে। কন্ট্রাকটারও আছে প্রচুর।
এছাড়াও আছে বড় বড় ট্রাক ও ট্রেইলারের ড্রাইভার। এদের আরেকটা গুন হচ্ছে এরা নাম্বার ওয়ান ফটকাবাজ। কথায় এদের সাথে পারা মুশকিল। কথায় কথায় বলবে " ও আল্লাহ্!" মানে "আল্লাহর কসম!"। এরা যদি কোন দেয়ালের ইট গাঁথে, সেটাতে পেরেক ঠুকতে গেলে পুরো দেয়ালটাই পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিশাল।
তারপরেও এরা কাজ পায় মুখের জোরে। কাতারীদের সাথে দেখা হলে গালে চুমা-টুমা দিয়ে এমন গ্যাস দেয়, কাজ না দিয়ে উপায় কি? অবৈধ ট্যাক্সিও চালায় অনেকে।
আফ্রিকানদের পরে মিশরীদের পরে হচ্ছে সুদানীরা। এরা সাধারনত অফিসে চাকরী করে। অসম্ভব ভদ্র এবং সৎ।
কাতারে এদেরকেই সবচেয়ে ভালো মানুষ বলা যায়। এদের পোশাক হচ্ছে কলার ছাড়া বড় সাদা পাঞ্জাবী যার দুই কাফ অসম্ভব ঢোলা। মাথায় পুরোটা গোল করে প্যাঁচানো সাদা পাগরী। এরা আরবীর সাথে ইংরেজীটাও মোটামুটি ভালোই জানে।
ইংরেজী মিশরীরাও জানে তবে সেটা হয় মারাত্মক ইংরেজী।
একটা উদাহরন দেই। এখানকার ড্রাইভিং স্কুলগুলো ছাত্রদের ফ্রি ট্রান্সপোর্ট ফ্যাসিলিটি দেয় স্কুলে যাতায়াতের জন্য। আমি একবার স্কুলে ক্লাশ শেষে সাইটে যাওয়ার জন্য এরকম এক বাসের মিশরী ড্রাইভারকে ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করছি, মাইজার যায় কোন বাস? সে আমাকে বলে "তিন"। ভাবলাম উপমহাদেশের লোক দেখে বোধ হয় হিন্দিতে বলেছে। তারপরেও কনফার্ম হওয়ার জন্য আবার ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করি "থ্রি"? সে না বোধক মাথা নেড়ে আবার বলে "তিন"।
ইংরেজি বুঝে নাই ভেবে আমি এবার হাতের তিন আঙ্গুল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করি, "থ্রি"? সে এবার ক্ষেপে গিয়ে দুই হাতের দশ আঙ্গুল দেখিয়ে আমাকে বলে "তিন, তিন"! এরপর পাশে বসা আরেক মিশরীকে আরবীতে বলছে, দেখ ইংরেজী বললাম তাও বুঝে না! আর দু'জনে কি হাসি। আমাকেই উল্টা মদন বানিয়ে দিয়েছে। তার ইংরেজি "টেন"-এর উচ্চারন হয়ে গিয়েছে "তিন"। বুঝেন এবার অবস্থা! এই কারনে এদেশে বাঁচতে হলে সবার আগে শিখতে হয় আরবী।
বিদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী লোক নিঃসন্দেহে ভারতীয় উপমহাদেশের।
এর মধ্যে আছে ভারতের মালবারী, পাকিস্তানের পাঠান, বাঙ্গালী, নেপালী, এবং শ্রীলঙ্কান। এদের সবার কমন ভাষা হচ্ছে হিন্দি। হিন্দি সিনেমা অপছন্দের কারনে হিন্দি ভাষাটা জানতাম না। প্রথম প্রথম এখানে এসে হিন্দি বুঝিনা বললে উপমহাদেশের লোকেরা রীতিমতো টিটকারী করতো।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।