বাবা মা বড় ভাই য়ের জন্য ভেঙেচুরে পাত্রী দেখছেন। আমি অবাক হয়ে যাই। কেন বিয়ে করতে হবে এত তাড়াতাড়ি? বিয়ে করার ব্যাপারে তার আগ্রহও দেখার মত। প্রথমে খানিকক্ষণ না না, তারপর হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে ক্ষান্ত দেওয়া এ সবই যে তার ভাণ তা আমি হলফ করে বলতে পারি। আসলে তার ভিতরে দুকূল ছাপিয়ে আনন্দের বন্যা বইছে।
সেই বন্যার পানি তার শিশুতোষ চেষ্টার কোন বাধই মানছেনা। বারেবারেই প্রকাশে সীমানায় বিশ্রীভাবে আছড়ে পড়ছে। আর আমি বিরক্তের চূড়ান্ত হচ্ছি।
এই এলাকার কোন মেয়ের সাথে যে বিয়ে হবে না তা বলাই বাহুল্য। কারণ এখানকার কোন মেয়েই নাকি ভাইয়ার পছন্দ না।
আসল কথা এই এলাকার সব মেয়েকেই তার বাজিয়ে দেখা শেষ। এখন আবার উনি লাজুক সেজেছেন। আমি হম্বিতম্বি করলেই বলে, আরে ধুর, বিয়ে করবো নাকি? বাবা মায়ের কথায় একটু লাফাচ্ছি আরকি।
কিন্ত তার লাফঝাপ বন্ধ হচ্ছে না। আমাকে একদিন ইতস্তত করে বলে তুই মাকে একটু বলবি, যে মেয়ে সম্পর্কে ইদানীং তারা খোজ খবর করছেন তাকে আমার পছন্দ না।
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভাব ধরে বললাম, তুমি না বললে এমনিতেই লাফাচ্ছ, বিয়ে টিয়ে করবা না! তাহলে এই নিয়ে তোমার মাথাব্যথা কেন?
সে কাচুমাচু হয়ে বলে, আচ্ছা থাক বলা লাগবে না।
ভাইয়ার আগ্রহ দেখে আমার গা রি রি করে। একটা মেয়ে তার জীবনে এলে কি লাভ হবে তার? এমনিতে তার বাচ্চা কাচ্চার জন্য দরদ কখনো দেখিনি। তাহলে? বউয়ের কোমড় জড়িয়ে ঘোরার লোভেই কি ?
আসলে ভাইয়ার বিয়ের কথায় আমি এত রাগ করছি কেন সেটাও একটা রহস্য। তার বয়স হয়েছে, টাকা পয়সা হয়েছে, দু চারটা মেয়ের সাথে প্রেম করাও হয়েছে, এখন তার দরকার বিয়ে করে থিতু হোয়া।
অফিস থেকে লক্ষী ছেলের মত বাসায় ফেরা। এমন করতে করতে একদিন কিভাবে কি হল কিছুই বুঝলাম না এমন একটা নির্দোষ ভঙ্গি করে বাবা মা কে ইনিয়ে বিনিয়ে বাচ্চা কাচ্চা হওয়ার খবরটা দেওয়া। তারপর বাচ্চা কাচ্চা সামলানো। উইক এন্ডে হল্লা করে বেড়াতে যাওয়া, ছবি তোলা। একপাশে বাবা, আরেক পাশে মা।
মাঝখানে মেয়ে। মেয়ের চুলে দুইটা ঝুটি। একটা বাবার দিকে তাক করা অন্যটা মার দিকে। অসহ্য! কোন মানে হয় এই সবের? ফাক তালে মা আবার এসে বলে গেল, রেডী থাক। নেক্সট তুই।
আমি রাগে গজগজ করতে থাকি।
ভাইয়ার বিয়ের দিন যন্ত্রণার চূড়ান্ত হল। মেয়ের বয়স আমার সমান। কিন্তু তার বান্ধবীদের বয়স মনে হয় তারো কম। গায়ে হলুদে তাদের নাচ দেখে আমার ভাই এর বয়সটাও মনে হয় ধুপধাপ করে কমে গেল।
সেও সমান তালে নাচলো । তাল বলা ভুল হল। বাবা পরে ভিডিও দেখে হতভম্ভ হয়ে ভাইয়াকে বললো, তোকে কি চাবি ঘুরাইয়া ছাইরা দিছিল?
আমার ভাবীর ছোট বোনকে আমি বেশ কিছুদিন পড়িয়েছিলাম। আমি নাচছি না দেখে সে তার দুষ্টুমি সিক্ত হাত দিয়ে আমার প্রাণহীন হাতটি ধরে টানাটানি করলো কিছুক্ষণ। শিক্ষক হয়ে ছাত্রীর সাথে নাচানাচি! অসম্ভব।
তারচেয়ে বড় কথা হিন্দী গান আমার দুচোখের বিষ। প্রশ্নই আসে না। আন স্মার্ট গালি খেলাম ছাত্রীর কাছে। তাও ভালো, নাচতে হয়নি।
বিয়েতে ছাত্রীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এল।
গিয়ে দেখি বুরহানী দিয়েছে। এইটা আমার দুই চোখের বিষ। বুরহানী কত বিশুদ্ধ পানি দিয়ে বানানো এই বলে অনেক্ষণ সাধাসাধি চললো। কিন্তু আমি অনড়। বললাম যমযম কুপের পানি দিয়ে বুরহানী বানালেও আমি খাবোনা।
ছাত্রী আমার স্তম্ভিত। দুই লিটারের একটা কোকের বোতল কোথ্থেকে জোগাড় করে এনে আমাকে দিল। পুরো কমিউনিটি সেন্টারে সবার হাতে বোরহানীর গ্লাস। আর আমি তার মধ্যে দুই লিটারের কোকের বোতল হাতে নিয়ে ঘুরছি।
বিয়ের রাতে আমার ডাক পড়লো ছবি দেখার জন্য।
আমি ভুলেও ওই পথে পা বাড়াই নি। একটু পরেই চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বপূর্ণ খেলা আছে। টিভির সামনে থেকে আমাকে হাতি দিয়েও টেনে কেউ নিতে পারবে না। হাতির দরকার পরলো না। টিভিটা ভাইয়াদের ঘরে।
নতুন বউ জামাইকে বসিয়ে রেখে খেলা দেখার প্রশ্নই আসেনা। উপরন্তু যেখানে ওরা অন্য একটা প্রিয় খেলা নিজেরাই খেলার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।
আমি স্বার্থপরের মত ভাইয়ার বিয়ের রাতে গৃহত্যাগ করলাম। মনের সুখে খেলা দেখে বন্ধুর বাসায়ই রয়ে গেলাম। সেই দিন একটা উপলব্ধি হল।
আমি বিয়ে করলে আমার বউ নির্ঘাত এই খেলাকে তার প্রতিদ্বন্দী মানবে। ঝগড়া করে বাড়ি মাথায় তুলবে। আমি মরে গেলেও এই ইপিএল আর চ্যাম্পিয়নস লীগের খেলা দেখা ছাড়তে পারবো না। বিয়ের খ্যাতা পুরি।
ভাইয়ার সাথে আগে যাও দুই একটা কথা হত বিয়ের পর তাও হয়না।
বউকে নিয়ে সবসময় ব্যস্ত। মাঝে মাঝেই সে তার বউ কত ভালো তার নমুনা দেখাতে চায়। আমি পাত্তা দেইনা।
তবে ভাইয়া বেশ সুখে আছে বোঝা যায়। ঠিকমতই বাধা টাইয়ের নট টা অযথাই আরেকটু ভালো করে বেধে দেওয়া, খন্ড খন্ড খুনসুটি, দুর্বোধ্য চোখ নাচানি এগুলো শুধু আমার সামনেই চলে।
আড়ালে কি হয় কে জানে। তবে সুখের ব্যাপারটা স্পষ্ট। ভাইয়ার ক্ষীণতনুতে স্বাস্থ্যের জোয়ার এসেছে। ঘরের প্রতি টানও বেড়েছে। আমাকে যন্ত্রণা দেওয়াও কমেছে।
তবু আমি আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করি কবে শুনবো ঘরে আরেকজন আসছে।
বিয়েটা আসলেই কি তবে অনেক সুখের? যার জন্য পৃথিবীর সব ছাড়া যায়? বিয়ে হলে দুইটি মানুষের স্থায়ী সঙ্গী হয়। সেই সঙ্গ বন্ধুত্ব বা বাবা মার সঙ্গ থেকে কতটুকু আলাদা? আমার এত প্যাচের হিসাব কষতে ভালো লাগে না। তবু কষি।
ভাবীর মনে হয় বাচ্চা হবে।
একদিন দেখলাম ভাইয়া ভাবীকে একরকম কোলে নিয়ে ঘরে ঢুকছে। আমাকে দেখেই ধপাস করে ভাবীকে সোফায় ফেললো। ভাবী একটু মনে হয় ব্যথাও পেলো। ভাইয়া এত লজ্জা পেয়েছে যে ওদিকে তাকাতেও পারছেনা। লজ্জা পাশ কাটাতে আমার কাছে হেন তেন খোজ খবর করা শুরু করলো।
আমি ভাইয়া ভাবীকে একা রেখে জলদি জলদি সরে পরি। ভাইয়া এবার ভাবীর ব্যথা কমাক।
তবে তাদের এখন আর অসহ্য লাগে না। ভাইয়ার মাথা ব্যথা করছে শুনলেই ভাবী সবার অলক্ষ্যে একটা নাপা এনে ভাইয়ার হাতে দেবে। ভাইয়া প্রত্যেকদিন বাসার সবার জন্য এটা সেটা আনেন তা শুধু ভাবীর জন্য কিছু একটা আনার অজুহাতেই।
আমার খটকা লাগে। ভাইয়ার সুখ আমাকেও ছুয়ে যায়। বিয়ে হলে আমারো কি এমন সুখ হবে? গভীর রাতে উত্তেজনাপূর্ণ খেলাগুলো দেখার সময় কেউ একজন কি মগভর্তি গরম কফি এনে আমার পাশে বসে আমারই বিপক্ষ দলকে সাপোর্ট করে আমাকে রাগাতে চাইবে? নাকি নির্লজ্জের মত আমিও খেলা ছেড়ে তার পিছে পিছে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করবো? বসে আমি তাই আজ ভাবি।
বাস্তবে আমার ভাইয়া এমন না। সে বিয়ে না করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কোনও দিন করবে কি না কে জানে। বাবা মায়েরও তেমন কোন মাথা ব্যথা দেখিনা। বিষয়টা আমার ভালই লাগার কথা। তবু মাঝে মধ্যেই খেলা দেখতে দেখতে অথবা প্রিয় কোন হেভী মেটাল গান শুনতে শুনতে আমি হাই তুলি। জীবনটা একঘেয়ে হয়ে গেল।
বিয়ে টা করলে মনে হয় মন্দ হতনা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বিয়ের ঘটনাগুলো সত্য। আমার পরিচিত এক বড় ভাই এর বিয়ের সময়ের ঘটনা এগুলো। সে ভাইয়ার সাথে আমার নিজের ভাইয়ার কোন মিলই নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।