আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়ে .. শুধু সময়টা ভুলে যাও..

এলেমেলো কথাবার্তা tutul@amrabondhu.com

আজ একটা মেইল পেলাম... আমার বান্ধবীর... তার অনুমতিক্রমেই মেইলটা শেয়ার করছি আপনাদের সাথে... স্বাভাবিক ভাবেই তার পরিচয় প্রকাশ হলো না। মেইলটা পড়ে খারাপ লাগলো। আচ্ছা, এই পৃথিবীটা কবে মানুষের বাসযোগ্য হবে? একটা মেয়ে নির্ভয়ে বাচতে পারবে? --------------------------------------------------------------------------- অনেকেই আমার সাথে কথা বলার সময় বলে, আমি নাকি খুব পিচ্চি একটা মেয়ে । আপনি ও মাঝে মাঝে আমাকে তাই বলেন । কিন্তু, আপনাদের মাঝে অনেকেই জানেনা যে, পিচ্চি এই মেয়েটা জীবনের এই অল্প সময়ে অনেক কিছু দেখে ফেলেছে ।

এমনও অনেক কিছু আমি দেখেছি যেটা মানুষ কখনো তার প্রিয়জনের জন্য আশা করবে না । সে যাইহোক... আচ্ছা, আজ যদি আমি পিচ্চি একটা মেয়ে হই, তাহলে আজ থেকে নয় বছর আগে আমাকে আপনি কি বলতেন? নিশ্চয়ই “বাচ্চা মেয়ে”, তাই না? হা হা হা... হ্যা, তখন আমি মাত্র ১৩ বছরে পা দিয়েছি, হঠাত একদিন আমারই এক সেকেন্ড কাজিন আমাকে নিয়ে গেল তার বাসায় । সেই পিচ্চি আমি তখনো বুঝিনি যে, আমার কাজিন আমার সাথে কি করতে চাচ্ছে । বুঝলাম তখন, যখন আমার শরীরে আমি একটা হাতের অনাকাঙ্খিত ছোয়া অনুভব করলাম । সেদিন আমার শরীরে একটা মানুষের হাতের অনাকাঙ্খিত ছোয়া, প্রথমবারের মত আমাকে এটা উপলব্ধি করিয়েছিল যে, “আমি আর ছোট নেই, আমি বড় হয়ে গেছি”।

কারন, সেদিন তার হাতের স্পর্শ থেকে আমি নিজের অজান্তেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম । একটা বাজে অনুভুতি হচ্ছিল তখন আমার মনের মাঝে । মনে হচ্ছিল, “এই মানুষটা না আমার কাজিন? তাহলে সে আমার সাথে এরকম করছে কেন?” আমার ঐ প্রশ্ন একটা প্রশ্নই রয়ে গেছে। কারন, সেদিন আমি আমার সেই কাজিন এর হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি নিজেকে। একটা মানুষ যাকে তার বোনের মত স্নেহ করেছে, সে কিভাবে সেই মেয়েটার সাথেই এমন করতে পারে.........কিছুদিন আগেও আমি তা বুঝিনি।

আমি এতদিন ভাবতাম, আমার মত যেসব মেয়ে তাদের ভাই অথবা ভাই সমতুল্য মানুষের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছে, তাদের মত দুঃখ বুঝি আর কারো নেই। আসলেই এই দুঃখটা অনেক বড়। আর লজ্জায়, ঘৃনায় এটা কাউকে বলতে না পারার দুঃখটা আরও বড়। কিন্তু, সেদিন আমি এমন একটা সত্যের মুখোমুখি দাড়ালাম, যার তুলনায় নিজের দুঃখ গুলোকে অনেক ছোট মনে হতে লাগলো। আমি তখন গ্রামের বাড়ি- সিলেট।

সবাই বেড়াতে গিয়েছি, তাই কাজিনদের মাঝে একটা আনন্দের সাড়া জেগেছে। কিন্তু, কেন জানি বেশি মানুষের মাঝে আমার থাকতে ভাল লাগেনা। নিজেকে সরিয়ে সরিয়ে রাখতেই আমি অভ্যস্থ বিধায় কাজিনদের ভির থেকে সরে আমি গিয়ে ঢুকলাম চাচার বাসার স্টোর রুমে। বিশাল বড় রুম, কিন্তু অনেকদিন যাবত এই রুম বন্ধ, অনেক গুমোট একটা গন্ধ রুমে। জানালা খুলে দিলাম সব কয়টা, বাতাস এসে রুমটাকে ভরিয়ে তুললো।

মনে হলো,-“রুমটার নিশ্চই অন্য রকম লাগছে আজ!”। আমি বসে পরলাম মাটিতে। পাশেই দেখলাম কিছু পত্রিকা পরে আছে। দুইটা পত্রিকার স্তুপ, “প্রথম আলো” আর “সিলেটের ডাক”। সিলেটের ডাক সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা।

তাই প্রথম আলো হাতে না নিয়ে ওটাই নিলাম। পুরনো পত্রিকা সব, তবুও পড়ছিলাম। এক এক করে পত্রিকা নামিয়ে রাখছি, এর মাঝে হঠাত চোখ গেল একটা শিরনামে- “এক কণ্যার ২৪ বছরের অন্ধকার জীবনের করুন কাহিনী”। পড়া শুরু করলাম... পড়তে পড়তে কখন নিজের অজান্তে কেঁদেছি, জানিনা আমি। পত্রিকার কাটিংটা নিয়ে এসেছি, আপনাকে দিলাম।

তবুও আমি কি আপনাকে বলবো ঐ শিরনামের নিচে কি লেখা ছিল? অস্ট্রিয়াতে একটা মেয়ে ১৯৮৪ সালে নিঃখোজ হয়। মেয়েটির নাম এলিজাবেথ। অনেক খোজাখুজি করেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তার পরিবারও তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলো অনেক আগেই। কিন্তু, আজ ২৪ বছর পর মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।

হ্যাঁ, মেয়েটি বেঁচে আছে। তাহলে কোথায় ছিল মেয়েটি এই ২৪ বছর? মেয়েটি গত ২৪ বছর আর কোথাও না, বরং নিজের বাবা’র বাসার আন্ডার গ্রাউন্ডে ছিল। আর এখন সে সাত সন্তানের জননী। তার সন্তানদের বাবা আর কেউ নয়, তার সন্তানের বাবা আর তার নিজের বাবা একই মানুষ!! হায়! এমনো মানুষ গড়েছেন আল্লাহ্‌? আজ তো নিজের কষ্ট গুলোকে অনেক অনেক খুব ছোট মনে হচ্ছে আমার । বরং হাসি পাচ্ছে নিজেরই উপর।

কারন, আমি আমার ভাই সমতুল্য মানুষের খনিকের শারীরিক সন্তুষটির শিকার হয়ে কতইনা কেঁদেছি গত ৯ বছর, একবার নিজেকে মেরেও ফেলতে চেয়েছি এই আমি । অথচ, এই মেয়েটি গত ২৪ টি বছর প্রতিনিয়ত তার নিজের বাবা’র শারীরিক সন্তুষটির শিকার হয়েও অন্ধকার একটি ঘরে বেঁচে ছিল! সে আসলে কি? মানুষ নাকি মহামানবি? একটা মানুষের পক্ষে এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব? যদি এলিজাবেথ বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে আমার দুঃখ তো কোন দুঃখই না । আমি সেদিন আমি আমার সেই প্রশ্নটার উত্তর পেয়েছিলাম । নয় বছর আগে আমার কাজিন কেন আমার সাথে এরকম করেছিল, তার উত্তর আজ আমার জানা হয়ে গেছে । আজ আমার কষ্টটা অনেক কম ।

কারন, যদি একজন বাবা (না পশু) তার মেয়েকে ২৪ বছর আটকে রেখে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষন করতে দ্বিধা বোধ না করে, তাহলে আমার কাজিন তো কমই করেছিল । আর আল্লাহ্‌’র কাছে হাজার কোটি সুকরিয়া যে, উনি আমার বাবাকে আমার সামনে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন, এলিজাবেথের বাবা’র মত একটা পশু হিসেবে নয়। -------------------------------------------------------------------------------- সরি.. এখন শুধু ঘৃণা প্রকাশ ছারা আর কিছুই করার নেই..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.