...
আমাদের আবহা’র পাশেই সৌদি আরবের সর্বোচ্চ চূড়া “জাবাল আল সুদা” (The Black Mountain)। ওখান থেকে নীচে তাকালেই পাহাড়ের পাদদেশে “রিজাল আলমা” গ্রাম। উপর থেকে দেখলে মনে হয় ছবির মত সুন্দর একটি গ্রাম। কিন্তু সেখানে যাবার উপায় নেই। উপায় নেই বললে ভুল হবে, উপায় একটা অবশ্যই আছে।
ভয়ংকরতম একটা রাস্তা ধরে নীচে নামতে হবে।
গত দু’বছর ধরে অপেক্ষায় আছি যদি কোনভাবে সেখানে যাবার সুযোগ হয়। কিন্তু কোন বাংলাদেশি ড্রাইভার আমাদেরকে নিয়ে সেখানে নামতে সাহস করেনি। সৌদি ড্রাইভারদের বিশ্বাস করতে পারছিলাম না- ফ্যামিলি নিয়ে যাব, যদি কোন সমস্যা করে? আর আমাদের মাঝে যাদের গাড়ী আছে তাদেরতো সেখানে নামার সাহসই হবে না।
এভাবেই কেটে গেল ২ টি বছর।
ঘটনাক্রমে এক সৌদি’র সাথে পরিচয় হল। তার নাম মহসিন, আমার পরিচিত এক টিএ’র বড় ভাই। সে নিজে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। ইংরেজি একদমই বুঝে না, ২/১ টি ইংরেজি শব্দ হয়তোবা বুঝে। ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলতে হয়।
আলাপে আলাপে জানতে পারলাম তার গ্রামের বাড়ী “রিজাল আলমা”। আমি এই সুযোগ নিতে ভুল করলাম না। তার কাছ থেকে কথা আদায় করলাম যে, আমাদেরকে “রিজাল আলমা” নিয়ে যেতে হবে। সে রাজী হল কিন্তু কোন নির্দিষ্ট দিন তারিখ বলতে পারল না।
একদিন দুপুরে সে আমার অফিসে এসে হাজির।
জিজ্ঞেস করল, আজ তার গ্রামে যেতে পরব কিনা। কোন কিছু না ভেবেই আমি এক বাক্যে রাজী হয়ে গেলাম। সে জানাল, বিকাল ৩ টায় আমার বাসার সামনে অপেক্ষা করবে। সাঈদকে ফোন দিলাম, ২ ঘণ্টার নোটিশে একমাত্র সেই তৈরি হতে পারবে। সাঈদ রাজী।
মহসিন যথা সময়েই আমার বাসার নীচে হাজির হয়েছে। সাঈদ, শিমু এবং আমি ও শাকিলা রওনা হলাম রিজাল আলমা’র পথে।
১৩৩১-১৩৩২ সালে মুসা আল কেনানি’র শাসনামলে রিজাল আলমা “হালা” প্রদেশের রাজধানী ছিল। ১৯৮৪ সালের দিকে রিজাল আলমাবাসীরা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে রাখতে “আল আলওয়ান” প্রাসাদকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করে। ৪০০ বছর প্রাচীন “আল আলওয়ান” প্রাসাদকেও সংরক্ষণ করাটা জরুরী হয়ে গিয়েছিল।
গ্রামের সবাই তাদের কাছে যা কিছু ছিল তাই দিয়েই জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করে। মহিলারা তাদের প্রাচীন অলংকার জাদুঘরে দিয়ে দেয়। আর এভাবেই রিজাল আলমা এখন অন্যতম পর্যটন স্থান। প্রতি বছর হাজার হাজার টুরিস্ট গ্রীষ্মের ছুটিতে রিজাল আলমা বেড়াতে আসে।
জাবাল সুদা’র উপর হতে রিজাল আলমা যাবার রাস্তাটি দেখতে একদম সাপের মতো লাগে।
আমরা সেখানে যাচ্ছি মূলতঃ ২ টি উদ্দেশ্য- ভয়ংকর রাস্তা ধরে নামার অভিজ্ঞতা ও ৪০০ বছর প্রাচীন প্রাসাদটি দেখা।
আবহা থেকে ১ ঘন্টা’র পথ। সাঈদকে মহসিনের পাশে বসালাম। সাঈদ টুকটাক আরবি বলতে পারে, মহসিনের সাথে কথা চালিয়ে নিতে পারবে। মহসিনের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ী, ফোর হুইল ড্রাইভ।
রাস্তার প্রতিটি বাঁক তার চেনা। বীর বীক্রমে সে রিজাল আলমা রাস্তায় নেমে পড়ল। আমরা সিট বেল্ট বেঁধে সতর্ক রইলাম। কিন্তু মহসিন খুবই দক্ষতার সাথে নীচের গ্রামে পৌছে গেল। নীচে নেমে যাওয়ায় একটু গরম লাগছিল।
মহসিন বার বার দুঃখ প্রকাশ করল তার গাড়ীতে এসি নেই বলে। সে তো আর জানেনা, এখানে আসতে পেরেছি তাতেই আমরা খুশী।
আমরা গ্রামের ভেতরে ঢুকে গেলাম। রাস্তার পাশে সব্জি চাষ করা হয়েছে। এখানে ওখানে পুরনো কিছু বাড়ীও আছে।
এমন জায়গায় আমাদের ইউনিভার্সিটিরও একটা ক্যাম্পাস আছে। রাস্তায় প্রাণ চাঞ্চল্য খুব একটা দেখলাম না। এখানকার প্রত্যেকেরই উপরে ঠান্ডা এলাকায় বাড়ী আছে, মাঝে মাঝে তারা গ্রামে বেড়াতে আসে। মহসিন আমাদেরকে নিয়ে একটি টানেলের ভেতর ঢুকে গেল। টানেল শেষ করে কিছুদূর এগোতেই দেখতে পেলাম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে “আল আলওয়ান” প্যালেস।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।