আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার ব্লগখানি কৌতুহল ভরে
১...........
পদার্থবিজ্ঞান বই খুঁজে না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত লেখাটির কোন শিরোনাম স্থির হয়নি। বইয়ের খোঁজে খাটের পাশের কালিঝুলিমাখা শেলফটায় ব্যাপক তল্লাশি চলছে । তেলাপোকার কয়েকটি পুরনো বস্তি উচ্ছেদ ছাড়া আপাতত প্রাপ্তির খাতা শুন্য । সেন্টিগ্রেড থেকে ফারেনহাইটে কনভার্শনের সূত্রটা মনে পড়ছে না , বইয়ের ১১ নম্বর অধ্যায়ে সূত্রটি ছিল । দরদর করে ঘামছি , অভিযান স্থগিত ।
ধরে নিচ্ছি ৩৭ ডিগ্রীতে ১০০/১০১ জাতীয় কোন ফারেনহাইট হবে । নেটে দেখতে পারি , কিন্তু সার্চ করার মত ধৈর্য্যটুকুও নেই । ল্যাপটপ জানান দিচ্ছে , তার শরীরে চার্জ নামক প্রাণশক্তির অভাব অনুভূত হচ্ছে , কাজেই যা লিখবো তা যেন তাড়াতাড়ি লিখে ফেলি ।
২...........
ভিজে জবজবে বা চুপচুপে হওয়ার বেলায় আমি রীতিমত দিগ্বিজয়ী । বাসে যেদিন কেবল একজন দরদর করে ঘামতে থাকে , সে একজনটি হই আমি ।
ঘামার ব্যাপারটি যেদিন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে , সেদিন আমি পানিশুন্য হয়ে পড়ি । শীতের আগমনে সবার শেষে যে ঘরটায় ফ্যান বন্ধ হয় , সেটিও আমার ঘর । আমার শরীরে জলের অভাব হলেও বাতাসে যে মোটেও জলীয় বাষ্পের অভাব নেই , সেটা আমার আঠালো শরীর থেকে ঠিকই টের পাচ্ছি । ফিজিক্স বই থাকলে পরিমাণটা জানিয়ে দিতাম , আপাতত কেবল জানিয়ে রাখি , আপেক্ষিক মানটা ৯০ এর আশে পাশে ৪/৫ দিন ধরে ঘোরাঘুরি করছে।
৩...........
বাজারে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে মাসাধিককাল ।
চোখ বুঁজে সব ছেড়ে দিয়ে রেখেছি বাবার উপর। কিন্তু বিধিবাম ,দিন পঁচিশেক আগে মেইলে অর্ডার ,অফিসের এসির বাতাস ছেড়ে আমাকে সাইটে যেতে হবে । চৈত্রের কাঠফাটা রোদে ঘুরে বেড়িয়েছি নারায়ণগঞ্জ , ময়মনসিংহ , কিশোরগঞ্জ , মুন্জিগঞ্জের শহর আর গ্রামাঞ্চল ।
গত সপ্তাহের বুধবার থেকে চালের বাজার ছাড়িয়ে আগুনের তেজ ছড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতিতে , তখন থেকে প্রমাদ গুনছি । হঠাৎ যেন এক পশলা বৃষ্টি, পরবর্তী ৬ দিনের জন্য দু'টো ট্রেনিংয়ে অ্যাসাইন করা হয়েছে , সাথে ৪ দিন উইকএন্ড ।
বনানীর ৫ স্টার হোটেলে বসে অন্তত এয়ারকুলারের বাতাস খেতে পারবো ।
৪...........
বিপত্তিটা বেঁধেছে আজ । সকাল ৯ টায় ঘামে জবজবে হয়ে কনফারেন্স রুমে ঢুকেছি । কয়েকমিনিটের মাঝে প্রতিদিন যে ঘাম শুকিয়ে যায় , আজ মনে হচ্ছে সেটা বরফে কনভার্ট হয়ে যাবে । দুপুর পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করি ।
আশপাশে তাকিয়ে দেখি কোরিয়ান ইনস্ট্রাকটরসহ সবার অবস্থা রীতিমত সঙ্গীন।
দুপুরের দিকে এক হোটেল অ্যাটেন্ডেন্ট কে খুঁজে বের করেছি
.........আমাদের এসিটা কমিয়ে দিন তো , অসহ্য রকমের ঠান্ডা লাগছে সবার ।
.....ওকে স্যার , জাস্ট অ্যা মিনিট ।
ব্যাঙ্কয়েট হলে এসে দেখি শীত মোটেও কমেনি । মন মানে না,তবুও নিজেকে প্রবোধ দিই ,শীত কমে গেছে ।
বিকেলের স্ন্যাকস ব্রেকের সময় অ্যাটেন্ডেন্টকে পাওয়া গেলো ।
........আপনি এয়ার কুলারটা কমাননি ?
........ না , স্যার , আপনাদের মাঝে একজন বলে গেছে , এসিটা বাড়িয়ে দিতে ।
মনে মনে ভাবি , আমাদের মাঝে কে সে তুষার মানব ?
বিস্ময় চেপে বলি:
........এমন দাবদাহের মাঝে, শীতে দাঁতে দাঁতে কপাটি লেগে যদি আমাদের মাঝে কেউ যদি অজ্ঞান হয়ে যায় , চারপাশে টিভি ক্রুদের সমাবেশ লেগে যাবে বুঝতে পারছেন??
খানিক পর কফির কাপ হাতে অ্যাটেন্ডেন্টের দিকে এগিয়ে আসেন শামীম ভাই ।
......আপনাকে না টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিতে বললাম , শীতে তো মারা পড়বো ।
শামীম ভাই , এই তবে বাড়ানোর ঘটনা ।
টেম্পারেচার বাড়ানো / এসি কমানো গুবলেট হয়ে গেছে ।
৫...........
মরুভূমিতে খুব ভয়াল ধরণের চামড়া ঝলসে দেয়া এক বাতাস বয় , যার ভদ্রস্থ নাম লু হাওয়া । ভালো করে লু হাওয়া চিনতে চাইলে ঢাকার কোন অভিজাত শপিং মলের সামনে পার্কিং এরিয়ায় চলে যেতে পারেন। সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমের বড় কুলিং ফ্যানগুলো আপনাকে লু হাওয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে ।
ট্রেনিং শেষে বাসার পথ ধরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সির সামনে দিয়ে হাঁটছি ।
হঠাৎ দমকা তপ্ত লু হাওয়া যেন চামড়ায় ফোস্কা পড়ানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। চারপাশে অনেক বহুতল ভবনের মাঝে , আমার চোখ কোন সেন্ট্রাল কন্ডিশনিং সিস্টেমের কুলিং ফ্যান খুঁজে বেড়ায় । কিছু খুঁজে পাই না ,বুঝতে পারি দমকাটা প্রাকৃতিক ।
৬...........
বাসার কাছাকাছি এসে ব্যস্ত এলাকাটা কেমন যেন নিঃশব্দ নির্জন শোনায়। নির্জনতা ভেঙ্গে দু'একটা পাখি ডেকে উঠে ।
ব্যস্ত সন্ধ্যায় পাখির ডাক খুব অলুক্ষণে , ইলেকট্রিসির অভাবে এলাকা জুড়ে ফ্যানগুলো নিস্তব্ধ হয়ে গেলে পাখির কলকাকলিতে চারপাশটা এমন মুখরিত হয়ে উঠে । তার মানে ঘরে ঢুকলে দেখবো ...............
৭...........
জবজবে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে বসে আছি । অন্ধকারে বারান্দায় বসে চাঁদ দেখছি । গাছের একটা পাতাও নড়তে দেখি না, শেষ কবে বাতাসকে এমন স্থির হয়ে থাকতে দেখেছি মনে পড়ছে না। কে জানে বিকেলের সেই লু-হাওয়াই হয়তো সারাদিনের একমাত্র দমকা হাওয়া ।
৮...........
বন্ধুর এসএমএস , "অনেক গরম না ?" । রাগে ফেটে যেতে ইচ্ছা হয় , সংয্ত হই ।
আমার রিপ্লাই:
প্রচন্ড শীতে দাঁতে দাঁতে কপাটি লেগে যাচ্ছে । নাভানা টাওয়ার থেকে রুম গরম করতে হিটার কিনে এনেছি । কিসের কি ? হিটার জ্বালানোর ইলেকট্রিসিটি কোথায় ?
অনেকদিন গরম পানিতে গোছল করা হয়না ।
চুলাটাও জ্বালিয়ে রেখেছি , কিন্তু লাইনে পানি কোথায় ?
বড়লোক যদি হতাম,ফায়ারপ্লেসের পাশে বসে আজ আগুন পোহাতাম
গুহাবাসী লাগছে নিজেকে , খুব সম্ভবত আদিম যুগে ফিরে গেছি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।