আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খড়কূটোয় বেঁধেছি প্রাণ

আমার একলা আকাশ.... নিজেরে ইদানিং মৃত দাঁড়কাক বলেই মনে হয়। ঘুম থেকে উঠে চমকে যাই। মাথাটা খুব ফাঁকা লাগে। ভাবনার জগত্টা বড় অচেনা মনে হয়। কিছুই যেনো করার নেই আমার! যখন খুব ছোট ছিলাম ঘুম ভাঙার পর ভাবতাম, আজ আমাকে ড্রইং পেন্সিল কিনে দেবার কথা, আজ ইচ্ছে মতো ছবি আঁকবো কিংবা আজ আমাকে জামা কিনে দেবে।

সব্বাইকে পড়ে দেখাবো। নতুন জামা পড়া হয়ে গেলে সবাই বলতো, -মেয়েটা শ্যামলা হলে কি হবে সব রঙেই যেনো রাজকুমারি! তাই শুনেই আহলাদে আটখানা মেয়েটা। এভাবেই খূশি খুশি মনে সকাল শুরু হতো আমার। একের পর এক মজায় কেটে যেতো সমস্তটা সময়। জীবন থেমে থাকেনা বলেই এক সময় বড় হলাম।

তবে আট দশটা মেয়েদের মত নয়। স্বাধীনতা ছিল প্রচুর। কিন্তু নিজে থেকেই তেমন বাইরে যাওয়ার অভ্যেস ছিলনা। তাই অন্য সবার মত কেন যেন বয়সের তুলনায় মানষিকভাবে কম,বেড়ে উঠলাম। মনটা ছোটদের মতই থেকে গেলো।

হঠাত্ই কিভাবে যেনো আমার জীবনে আশির্বাদ হয়ে এলে তুমি। ''আমার তুমি- নিজেকে একটা রুটিনে বেঁধে ফেললাম। এখন আর পেন্সিল, জামার আনন্দে দিন পাড় করিনা। যেনো তুমিই সব। আমার ভোর, আমার দুপুর, আমার সোনাঝরা বিকেল।

তোমার আনন্দেই সকালের ঘুম ভাঙে, রাতের পাখিরা ঘরে ফেরে। যেদিকে তাকাই যেনো সব পাখিরা আমার সাথে কথা বলে উঠে। ওরা শুধু তোমার গল্প শুনতে চায়। আমিও পরম উত্সাহে তোমার নামে গান বাঁধি, গল্প লিখি। আরো কত পাগলামি।

তখন দিন শুরু হওয়ার একটা মানে ছিল। দিন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কত্ত কাজ ছিলআমার। তোমাকে ম্যাসেজ লিখতে হবে! তোমাকে কি বলবো, কি বললে খুশি হবে, আনন্দ পাবে তাই নিয়েই যেনো আমার চিন্তার শেষ নেই। কত্ত ব্যস্ত আমি। কত ব্যস্ততায় কাটতো আমার সকালগুলো।

তোমাকেই করে নিয়েছিলাম জীবনের আরাধ্য! আমার সাধনা, ধ্যান, জ্ঞান। হঠাত্ করেই সেই সাধের জীবনে ধস নেমে এলো। ছোট্ট একটা ঝড়ে প্রাণ হারাইনি ঠিকি সে ঝড় আমায় সারাজীবনের জন্য পুঙ্গু করে দিয়ে গেলো। আমি পা হারালাম হাত হারালাম চোখ জোড়াও হারালাম! চলতে গিয়ে বারবার হোচট খেতাম! হাত দিয়ে স্পর্শ করেছি কিছু, কিন্তু সেটা অনুভূতিহীন। দেখেও যেনো আর কিছু দেখতে পেতোনা পোড়া চোখজোড়া।

এভাবেই জীবনটা থেমে গেলো ২০০৮ এ! কেমন নিস্তব্ধ, নিরব, নিথর দেহে একেকটা দিন পাড় করেছি আমি। জীবন থেকে ছয়টা মাস থেকে গেলো জীবনের আড়ালে। স্মৃতিহীন হলাম আমি। আবার আচমকা কিভাবে যেনো খূঁজে পেলাম তোমাকে। এ যেনো মাঝসমুদ্রে জীবন বাঁচাতে ছোট্ট কোন খড়কূটো।

তাই ধরেই ভেসে চললাম দিনের পর দিন। তোমার কাছে আর বড়সড় কোন স্বপ্ন চাইনি আমি.. খুব কম চাওয়াই আমার জন্য বাঁচার প্রেরণা হয়ে গেলো। দিন রাত নীলখামে ভরে রাখতাম হাজার না বলা কথা। তুমি হয়েছিলে সে লেখার প্রাণ। আমার জীবনে রাত শেষে উঁকি দিল পূর্বাকাশে লাল রঙা টুকটুকে ভোর।

ঘুম ভেঙেই তোমায় নিয়ে ভাবনায় বসা। এ তো কোন যেসে কাজ নয় স্বয়ং তোমাকে নিয়ে ভাবতে বসা। তোমাকে কল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে বসিয়ে রাত দিন নিছকই স্বপ্ন বোনা। তুমি টেরও পেলেনা তোমার একটু স্পর্শে ফিরে পেলাম হারানো চোখ, ভাঙা পাঁজর। তুমি জানতেও পারলেনা কিভাবে একেকটি রাত হয়ে উঠলো একেকটি রাঙা সকাল।

তোমার দেয়া ছোট্ট ছোট্ট চিরকুটের উত্তরগুলোই হয়ে গেলো আমার মহাঔষধ। এখন আমি আবার আগের মতো ভোর দেখতে পাই। ঘুম ভেঙে গেলে বিছানায় শুয়ে এক নিমিষেই সারাদিনের রুটিন তৈরি করতে পারি। আবারো মনে হতে থাকে আমারও কিছু করার আছে! জীবনের মানেটা অনেক বড় কিছু না হলেও তেমন ছোট কিছুও নয়। আবার সঙ্গ দিতে লাগলাম সাধের কৃষ্ণচূড়াটাকে, আমার গোল্ডফিস দুটোকে, আকাশকে, বাতাসকে।

আমার সাধনার কবিতাগুলোকে। তোমার কাছ থেকে রোজ সংগ্রহ করা কথার ফুলঝুরিতে একেকেটা শব্দ বুনে যেতাম। কবিতায় ঠাঁই পেলে তুমি। আমি ভাসছিলাম তোমার দেয়া ছন্দগুলোরস্রোতে। অথচ কোন এক কালো জাদুর ছোঁয়ায় মাঝপথে আবারো ছন্দহীন করে দিলে তুমি! এখন আবারো সকাল হয় আলোহীন, ঘুমভাঙে স্বপ্নবিহীন।

মৃত দাঁড়কাকের মত পড়ে রই শব্দহীন। । গল্পটার নাম হতে পারতো $$দাদাই$$  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.