বুড়িগঙ্গার তীর দখল করে ইট, পাথর ও সিমেন্টের জমজমাট কারবার চলছে। ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নদীর তীরেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ। পাশাপাশি বানানো হয়েছে ক্লাবঘর।
দখল উচ্ছেদ করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
অভিযোগ রয়েছে, এ ব্যবসায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ হাজি সেলিমসহ স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী জড়িত।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করে যেকোনো ধরনের ব্যবসা ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গার টাংকির ঘাটে দেড় শ শতক পরিমাণ নদীর তীর দখল করে ইট, পাথর ও সিমেন্টের বস্তা রাখা হয়েছে। এসব মালামাল নদী ও বেড়িবাঁধ সড়কপথে আনা-নেওয়া করছেন শ্রমিকেরা। আর কাছাকাছি রয়েছে রিকশা ও ভ্যানের দুটি গ্যারেজ। দুটি গ্যারেজে রয়েছে চার শতাধিক রিকশা ও ভ্যান।
প্রতিটি রিকশা ও ভ্যান থেকে দিনে ১০ টাকা করে ‘ভাড়া’ আদায় করা হয়। এ ছাড়া টাংকির ঘাটের পশ্চিম পাশে (চেয়ারম্যান ঘাটসংলগ্ন) রয়েছে আরেকটি রিকশার গ্যারেজ। সেখানেও রয়েছে প্রায় দেড় শ রিকশা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাজি সেলিম তাঁর লোকজন দিয়ে নদীর তীর দখল করে ইট, পাথর ও সিমেন্ট রেখে ব্যবসা করছেন। অবৈধ রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁরাই।
জানতে চাইলে হাজি সেলিম অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাংকির ঘাটের ইট, পাথর ও সিমেন্টের ব্যবসা আমার না। নদী দখলের সঙ্গেও আমি জড়িত নই। ওই এলাকায় অনেকেই আমার নামে ব্যবসা করছেন। ’
আপনার নামে অন্যরা অন্যায়ভাবে ব্যবসা করে কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিজের ব্যবসা দেখাশোনারই সময় পাই না। আরেকজনেরগুলো দেখব কীভাবে।
’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাজি সেলিমের এসব পণ্য বেচাকেনা ও গ্যারেজের দায়িত্বে রয়েছেন জুলহাস মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। ওই প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর জুলহাস বলেন, ‘এ বিষয়ে লেখালেখি করে লাভ নাই। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষও এখানে আইসে ফেল মারছে। কারণ, টাংকির ঘাট থেকে বরাবর নদীর ওপার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পুরো নদীটির মালিক হাজি সেলিম। ’
জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পুরোনো বাড়ির ইট-বালু ও ময়লা-আবর্জনা টাংকির ঘাট, আলীর ঘাট ও চেয়ারম্যান ঘাটে ফেলে নদী দখলে মেতে ওঠে একটি গোষ্ঠী।
এতে এখন আর ওই ঘাটগুলোতে নৌকা-ট্রলার ভিড়তে পারে না।
নদী দখলের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত করতে কাজ চলছে। আমরা ইতিমধ্যে কিছু দখলমুক্ত করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই টাংকির ঘাট ও আলীর ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হবে। ’
নদীতে ক্লাবঘর: বুড়িগঙ্গার আলীর ঘাটে প্রায় ১২ শতক নদী তীর দখল করে ক্লাবঘর বানানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ ক্লাবটি ভাঙতে কয়েকবার অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, আলীর ঘাটের ওই ক্লাবটি ভাঙতে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু হাজি সেলিমের সমর্থকদের বাধার কারণে বারবার ব্যর্থ হতে হয়েছে।
ঢাকা মহানগরের ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্লাবঘর ও নদী দখলে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে, নতুন দখল ঠেকাতে এবং যথাস্থানে সীমানা খুঁটি বসানোর জন্য প্রয়োজনে মামলা করা হবে।
এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।