দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি ,তাই যাহা আসে কই মুখে ।
রসগোল্লার হাঁড়িটা ঠকাস করে টেবিলের উপর রেখে মিনমিনে চেহারার ছেলেটা রিনরিনে গলায় বলল,''কাকাবাবু কেমন আছেন ? চিনতে পারছেন আমাদের ? বাড়ির আলমারিগুলো কি সব ওপরতলায় ?''
রাতবিরেতে দরজা খুলে অচেনা যুবকের গলায় আত্মীয়তা যতই
থাক,ভাবগতিক বিশেষ সুবিধের ঠেকেনি ঘোষ দম্পতির । প্রশ্ন করেছিলেন,তা বাবা তোমরা কে বটে ? আসা হচ্ছে কোত্থেকে ? উত্তর শুনে বৃদ্ধ দম্পতির শিড়দাঁড়া দিয়ে যেন ঠান্ডা রক্তের স্রোত নেমে গেল । পিছনে দাঁড়ানো এক যুবক বলে উঠল,''বুঝলেন না,আমরা হলাম ডাকাত । ''
অবস্থা বুঝে সেই যুবক সেধেই বলে,''ভ্য় পাবেন না ।
আমরা অভদ্র নই । দেখুন না,আপনাদের জন্য মিষ্টি নিয়ে এসেছি । ''
নৈহাটির শ্যামাশ্রীপল্লির বাসিন্দা নিমাই ঘোষের বাড়িতে মিষ্টি হাতে 'ভদ্র ডাকাত' দল এমনই সৃষ্টিছাড়া কান্ড ঘটিয়েছে । পরে অবশ্য রসগোল্লার বদলে হাতে উঠে এসেছে রিভলভার । বৃদ্ধ দম্পতিকে বাথরুমে বেঁধে রেখে চম্পট দেয় জনা ছ'য়েকের ডাকাত দলটি ।
নিয়ে গিয়েছে কয়েক হাজার টাকা,কিছু গয়না আর পোঁটলা-বোঝাই শাড়ি,জামাকাপড় ।
নিমাইবাবুর স্ত্রী মৃদুলাদেবী বলেন, ''রাত তখন ৯টা হবে । ডাকাডাকি শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখি জনা ছ'য়েক অল্পবয়সী ছেলে । রাস্তায় আলো না-জ্বলায় মুখগুলো ভালো দেখতে পাইনি । মিষ্টির হাঁড়ি হাতে এক জন এগিয়ে এসে বলল,কাকাবাবু আছেন তো ? আমি উত্তর করতে না করতেই তিন জনে এগিয়ে গেল ঘরের দিকে ।
আমাকে বলল আঁইশতলা থেকে আসছে ওরা । কাকাবাবুর সঙ্গে না কি মাছের ব্যবসা নিয়ে কথা আছে । ''
নিমাইবাবুর এক সময় মাছের ব্যবসা ছিল বটে । তা চলতও বেশ রমরমিয়েই । কিন্তু বছরখানেক আগে একমাত্র ছেলে মারা যান ক্যানসারে ।
তাঁরই চিকিৎসায় বহু টাকা ব্যয় করেছিলেন ঘোষ দম্পতি । ভাল করে 'হোমওয়ার্ক' করে না-আসায় সে সব খবরাখবর ছিল না ডাকাতদের কাছে । তাই আলমারি ফাঁক করে এক ডাকাতকে বলতে হল, ''আপনার তো ব্যবসা ছিল কাকাবাবু । অনেক টাকা থাকার কথা । সে সব কোথায় ? আলমারি ফাঁকা কেন?''
বৃদ্ধ জবাবে বলেছিলেন, ''ছেলের চিকিৎসা করতেই তো সব খরচ হয়ে গিয়েছে ।
'' প্রায় সান্ত্বনার ঢঙে এক জন বলে ওঠে, ''দুঃখ করবেন না । যা শাড়ি জামাকাপড় আছে,তা-ই না-হয় নিয়ে যাই । '' বিছানার চাদর দিয়ে সত্যি সত্যিই বোঁচকা বেঁধে সে সব নিয়েই পালায় তিন যুবক ।
বৃদ্ধ দম্পতিকে যখন বাথরুমে হাত বেঁধে ফেলে রেখে যাচ্ছে ডাকাতেরা,তখন মৃদুলাদেবী বলেছিলেন, এ ভাবে ফেলে রেখে গেলে যে বেঘোরে মারা পড়ব বাবা । এক যুবক হেসে জবাব দেয়, ''ঘাবড়াবেন না ।
একটু বাদেই সবাই এসে হাতের বাঁধন খুলে দেবে । এটা আমাদের কাজ,তাই করলাম । ''
কথাটা একেবারে মিথ্যেও বলেনি । দু'জনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে কিছু ক্ষণের মধোই উদ্ধার করে তাঁদের । খবর দেওয়া হয় পুলিশকে ।
রসগোল্লার হাঁড়ি টেবিলে রেখেই বিদেয় হয়েছিল ডাকাতেরা । ঘোষ দম্পতির তা মুখে রোচেনি, বলাই বাহুল্য । সেটি নিয়ে গিয়েছে পুলিশ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।