পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
( লেখাটা বড় হয়ে গেলো বলে ক্ষমাপ্রার্থী আর যারা কষ্ট করে পড়ছেন , তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা । )
এই প্রথম কোন পাগলের নাকি কান্নার সাথে আমি সম্পূর্ণ সহমত । শেখ মুজিব আসলেই নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে এনেছিলেন । এই লোকটা একক কারিশমায় একটা জাতির জন্য যা অর্জন করছেন , তার যেমন তুলনা হয় না , তাকে আসলেই পিতা মানি , তেমন তাঁর জঘন্য অপরাধ গুলোকেও আমি মাফ করতে পারি না ।
হ্যাঁ , অপরাধ , মুজিব এর কিছু অমার্জনীয় অপরাধ আছে ।
সমগ্র বাঙালী জাতি সেই সব অপরাধের মাশুল গুনে চলেছে আজ ৩৭ বছর । আরও কয় শত বছর এই মাশুল গুনতে হবে কে জানে!
মুজিবের অন্য যে কোন অপরাধের চেয়ে সবচেয়ে বড় যেই অপরাধটা আপামর বাঙালী জাতির ভাগ্যাকাশে একটা প্রায় চিরস্থায়ী রাহু গ্রাসের মারাত্মক বিষ টেনে এনেছে , তা হলো , রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রজ্ঞাকে পিছনে ফেলে ছাপিয়ে ওঠা তাঁর তীব্র মানবিক বোধ । তিনি সকল কিছুকে তুচ্ছ করে বাংলাদেশের মানুষকে এত বেশি ভালোবেসেছিলেন এবং মানুষের ভালোবাসা এত বেশি পেয়েছিলেন , যে বাংলার মাটিতে কেউ কোন দিন তাকে হত্যা করার কথা চিন্তা করতে পারে , এ তিনি কোন দিনই বিশ্বাস করতে পারেন নাই । তিনি কি রবার্ট ব্রাউনিং এর কবিতা পড়েছিলেন?
An old story
I
It was roses, roses, all the way,
With myrtle mixed in my path like mad:
The house-roofs seemed to heave and sway,
The church-spires flamed, such flags they had,
A year ago on this very day.
II
The air broke into a mist with bells,
The old walls rocked with the crowd and cries.
Had I said, "Good folk, mere noise repels--
But give me your sun from yonder skies!"
They had answered, "And afterward, what else?" . . . . . .
ব্রাউনিং কবে লিখে গিয়েছিলেন এই জাতীয় বীরের কথা ? ৭৫ এর কত আগে ? বাঙালী জাতি মুজিবকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলো , যেখানে প্রতিদিন তাঁর জন্য কবর খোড়া হতো আর পরিবর্তন করা হত হত্যার সিদ্ধান্ত । কিন্তু , সেই মুজিব এর প্রতিই এই জাতির কিছু মানুষ কি আশাভঙ্গের দায় চাপায়নি ? ব্রাউনিং এর জাতীয় বীরের কি সেই অবস্থা হয়নি যা মাত্র সাড়ে তিন বছরে মুজিবের হয়েছিলো ?
There's nobody on the house-tops now--
Just a palsied few at the windows set;
For the best of the sight is, all allow,
At the Shambles' Gate--or, better yet,
By the very scaffold's foot, I trow. . . . . . . 20
V
I go in the rain, and, more than needs,
A rope cuts both my wrists behind;
And I think, by the feel, my forehead bleeds,
For they fling, whoever has a mind,
Stones at me for my year's misdeeds.
কিন্তু কেন এই পরিবর্তন ? কেন মুজিবের এক কথায় সাত কোটি মানুষ যেখানে অত্যাধুনিক অস্ত্র আর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খালি হাতে জীবন দানে ঝাপিয়ে পড়েছিলো , সেই একই জাতির উপস্থিতিতেই তাঁকে সপরিবারে কেউ হত্যা করতে পারলো ?
যা সম্ভব হয় নাই পাকিস্তানে বসে ৭১ সালে , তাই কেন, কি ভাবে সম্ভব হলো ৭৫ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ? হ্যাঁ , এই সুযোগটা তৈরী করে দেওয়ার জন্যই মুজিবের কোন ক্ষমা নেই ।
অন্তত আমার কাছে নেই ।
৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের পরে আরো অনেক সিদ্ধান্তের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা দিয়ে দেশ গঠনে ও স্বাদ্ভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। অথচ , মুজিব জানতেন, পূর্ব বাংলায় তৎকালীন পরাশক্তিদের চরসহ , পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক গুপ্তচর ও দালাল কাজ করতো। বিভিন্ন সময় এই সব সংস্থাদের উপস্থিতির কথা বিভিন্ন প্রামান্য দলিলে পাবেন । এরা টাকা দিয়ে, ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে , আরও নানা উপায়ে সমাজ ও রাষ্ট্র যন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের লোক বসিয়ে রেখেছিলো ।
৭১ এ গঠিত রাজাকার , আল বদর , আল শামস বাহিনীর অনেকেই তখন বাংলাদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অথবা গর্তে লুকিয়েছে ।
এই সব দালালদের স্বাভাবিক বিচার কি তখন সম্ভব ছিলো ?
কখনোই না। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ । খাবার নেই, ফসল নেই , দৈনন্দিন জীবন যাপনের কোন উপকরন নেই । চারিদিকে ধ্বংস আর লাশের স্তুপ ।
ভারতীয় সেনাবাহিনী নেপো হয়ে দই মারা তালে আছে । আমেরিকা নাখোশ । পাকিস্তান যুদ্ধে হেরে গিয়ে ফুঁসছে কি ভাবে বাংলাদেশকে শেষ করে দেওয়া যায় ( ১৪ই ডিসেম্বরের হত্যা দ্রষ্টব্য ) । আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পায়নি তখনো । একটা শিশু সরকারের পক্ষে তখন যুদ্ধাপরাধীদের ধরে ধরে বিচার করা ছিলো সবচেয়ে কঠিন কাজ ।
তার উপর যেই সব বিদেশী রাষ্ট্রের স্বার্থ "পাকিস্তানের " সাথে জড়িত ছিলো তারাও ক্রমাগত চাপ দিয়ে চলেছে " সাধারন ক্ষমা" ঘোষনা করার ।
একলা মুজিব চিনতেন না কারা অপরাধী , কারা নয় । কিন্তু বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য "মুক্তি" জানতো । গ্রামের লোকেরা জানতো । পাড়া প্রতিবেশীরা জানতো ।
কিছু না , অস্ত্র জমা দিতে না বলে যদি মুজিব বলতেন , মুক্তিযোদ্ধারা যেন আগে এই সব দালালদের ধরে শাস্তি দেয় । তারপর ২-১ বছর পরে অস্ত্র জমা দেয় । এই কথাটা প্রকাশ্যে বলা সম্ভব ছিলো না , বুঝি , আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারনে। কিন্তু , চুপ চাপ কানে কানে বুঝিয়ে দিলেই তো মুক্তিযোদ্ধারা যা বোঝার বুঝে নিত ।
কিন্তু , মুজিব মাহাথিরের মত কঠোর হতে পারলেন না ।
এমন কি সাচ্চা মুসলমানের মত চোখের বদলে চোখ , হাতের বদলে হাত - ভাবতে পারলেন না । তিনিও মানুষের " শুভ প্রবৃত্তি ও পরিবর্তনের " উপর বিশ্বাসী রইলেন আর আমরা পেলাম এক দঙ্গল মোনাফেক ।
এই মোনাফেকরা সাড়ে তিন বছর ধরে তাদের বিদেশী ও প্রাক্তন প্রভুদের সহায়তায় একটা শিশু রাষ্ট্রের সর্ব প্রকার সর্বনাশ সাধন করলো । মড়ার উপরে খাড়ার ঘা হয়ে খাবারের জাহাজ এলো না । অনেক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি কাগুজে রয়ে গেলো ।
যথা সময়ে লুকনো সাপ গুলো মাথা তুলে মারতে শুরু করলো মুক্তিযোদ্ধাদের । ( মুক্তিযোদ্ধারা জমা দিলেও , কোন পাকিস্তানী দালাল কিন্তু অস্ত্র জমা দেয় নাই) । আবারো মুখমুখি দাঁড়িয়ে গেলো মুক্তিকামী জনগণ আর অস্ত্রধারী দালাল গোষ্ঠী ।
মুজিব এই দেশটাকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও মধ্যবিত্ত যেই সংকীর্ণতা থেকে বের হতে পারলেন না , তা হলো আওয়ামী নেতাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ । যুদ্ধটা ছিলো সাধারন মানুষের , অস্ত্র ছিলো সাধারন মানুষের হাতে ---- সেই সাধারন মানুষ এর কাছে থেকে দেশ শাসনের ক্ষমতাটা রাজনৈতিক নেতাদের হাতেই রেখে দেওয়াটা মুজিবের দ্বিতীয় ভয়াবহ ভুল ।
এখনো , টাকা ঢেলে মানুষের সমর্থন আদায় আর নমিনেশন লাভের সেই কুচক্র থেকে আমরা বের হতে পারিনি । যদিও প্রক্রিয়াটা হতে পারতো , দলের নমিনেশন সেই পাবে , যাকে নির্বাচনে দাঁড় করাবে গ্রাম ও শহরের সাধারন নাগরিকরা ।
মুজিবের মৃত্যুর জন্য মুজিব নিজেই দায়ী । আসলেই দায়ী । কারন , মানুষকে বেশি বেশি ভালোবাসতে গিয়ে এই বোকা লোকটা ৭১ সালেই যেই রাজাকার , আল বদর , আল শামস ও পাকি দালালদের প্রত্যেকটাকে হত্যা করাটা নিশ্চিত করা দরকার ছিলো , সেইটা করতে দেয় নাই ।
আর আমরা , এই ৩৭ বছর পরে , সেই পরাজিত শত্রুর আস্ফালন শুনি একটা জিতে নেওয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের সঙ সদে ।
শেখ মুজিবের মত নেতা এই জাতির জীবনে কয়েক শত বছরে একজনই এসেছিলেন । তিনি পারতেন এই দেশটাকে " কাল কেউটের শাপমুক্ত করতে " । তিনি পারতেন , রাজা , উজির কিংবা সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবার , যারা আদতে ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করে এসেছেন হাজার বছর ধরে , সেই সব পরিবার তান্ত্রিক শাসন থেকে দেশ শাসনের ভারটা সাধারন মানুষের হাতেই "সিস্টেমেটিক" পদ্ধতি তুলে দিতে । কারন, সাত কোটি মানুষ তার কথা শুনতো , মানতো ।
কারন সাত কোটি মানুষকে পৃথিবীর কোন পরাশক্তি ঘাটানোর সাহস করতো না । কিন্তু , মুজিব অকল্পনীয় ক্ষমতা , মানুষের দেওয়া ভালোবাসা আর আনুগত্যের ক্ষমতা , লাভ করেও এই কাজ দুটো করেন নাই ।
তার মানবিক আবেগ তাঁকে দিয়েছে এক অভিশপ্ত মৃত্যু আর এই জাতিকে দিয়েছে এক অনিশ্চিত অভিশপ্ত অস্তিত্ব ।
না পিতা , তোমার ক্ষমা নেই ।
কেন তুমি আর একটু নিষ্ঠুর হলে না ?
কেন তুমি মানুষের ভিতরের লোভী দৈত্যটাকে ভুলে গেলে ?
কেন তুমি মীর জাফর , ঘষেটি বেগম , ক্লাইভদের কথা ভুলে গেলে ?
তোমার দুইটা অপরাধের কারনে এই জাতি পিছিয়ে গেলো শত বছর , তোমার মৃত্যুর সাথে সাথে বাক্সবন্দী হলো একটা জাতির আশা আকাঙ্খা পূরনের একমাত্র আগুন।
আমরা কি আর কোন দিন পাব আর একটা শেখ মুজিব ? আর একবার প্রমিথিউসের আগুন?
এই অনিশ্চিত অভিশাপে ঠেলে দেওয়ার জন্যই , হে পিতা , তোমার ক্ষমা নেই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।