সুখের দিনে তোমার কথা ভাবি....দুখের সাথে একলা রয়ে যাই....
বাড়ির সিঁড়িটায় বসে গায়ে তেল মাখতে মাখতে রনি দীপ্তদের বাড়ির দিকেই তাকিয়ে ছিল। রনি কখনও ভাবেনি বন্ধুরা এত স্বার্থপর হতে পারে। বন্ধু বলে বন্ধু! সেই ন্যাংটা কালের। ছোটবেলায় মা বলতেন খবরদার দীপ্তের সাথে মিশবিনা। ও খুব পেঁকে গেছে।
টিভিতে "বুস্টার" অন নেই বলে ছবি আসছে না এটা একটু মাথা ঘামালেই বোঝা যায়। এতক্ষন চুপ করে ছিল, চুপ করেই থাকতো! কেন অন করে দিতে গেল! যদি টিভিটার কিছু হয়ে যেত! বৌটার পেট ফোলা দেখে বলল কিনা ঐ বৌটার বাচ্চা হবে! ইঁচরে পাঁকা। সত্যিইতো, এটা আমাকে না জানালেই নয়! এত ওস্তাদি মারার কি দরকার? এই পাঁকামির জন্য মাঝে মাঝেই মা ওর সাথে মিশতে না করতো।
টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতিই রনির মনে ভীড় করে আসে। দীপ্ত ছেলেটা মন্দ ছিল না।
কিন্তু একটু পাঁকা। জীবনের অনেক সত্যি খুব তাড়াতাড়ি কি করে যেনো জেনে যেত! মায়ের ভয়ে রনি অনেক কথাই শুনতে চাইতো না। তবে ইচ্ছে করতো খুব। মায়ের শাসন ছিল খুব কড়া। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার চাপও অনেক।
বাবা বাংলা মিডিয়ামে পড়াবেন না বলে এই ভিনদেশে এসে বাড়ি করেছিলেন। বাবা মায়ের সন্মান রক্ষার প্রচেষ্টায় প্রচুর, প্রচুর পড়তে হত রনিকে। দীপ্ত একনাগারে কখনও পড়তে বসতো বলে রনির জানা নেই। স্কুলের সময়টা বাদ দিয়ে ওকে সারাদিন হয় কোন গাছে, নয়তো পাড়ার বদমাশ ছেলেগুলোর সাথে ছুটোছুটি করতেই বেশী দেখা যেতো। পড়ার বইয়ের চাইতে কিসব বই ওগুলো ঠাকুমার ঝুলি, শুকতারা পড়েই সময় কাটাতো দীপ্ত ।
রনি কখনও ওগুলোতে উৎসাহ পায়নি। মা পড়তেও দিতেন না। স্কুলের অনেক পড়া। একগাদা বই পরীক্ষার আগে পড়ে শেষ করতে হবে। তবে একটা কথা ঠিক, দীপ্ত কখনো পরীক্ষায় প্রথম দুজনের মধ্যে নেই শোনা যায়নি।
কি জানি! বাংলা মিডিয়ামে পড়াশুনো সহজ বলে মনে হলেও স্কুল ফাইনালের আগে রনির তা কোনভাবেই মনে হয়নি।
দীপ্তদের ঐ নিম গাছটা রনির খুব মনে পড়ে। মায়ের আদেশে ওর গাছে ওঠা মানা। পড়ে গিয়ে যদি হাত পা ভেঙ্গে যায়! অনেক চেষ্টা করেও দীপ্ত ওকে গাছে ওঠাতে পারেনি। গাছের ডালে বসে গাড়ি গাড়ি খেলার মজা বোঝাতে কিছুদিন পর পরই দীপ্ত গাছটার ডাল কেটে ফেলতো।
মাটিতে পরে থাকা ডালগুলোতে বসে গাড়ি গাড়ি খেলতে খুব মজা। ড্রাইভার হয়ে গাছের নুইয়ে পড়া ডাল গুলো ঝাঁকাতে খুব ভালো বাসতো রনি। স্বেচ্ছায় হার স্বীকার করে দীপ্ত সব সময় কন্ডাকটার নয়তো খালাসী। ছেলেটা পারতোও! গাছের ডাল না কাটলেই ওর খালাসী হতে হতো না। কি জানি, দীপ্তকে এই ব্যাপারটায় একটু বোকাই মনে হয় রনির! আড়চোঁখে নিজের ভাড়ার গাড়িটার দিকে একটু তাকায় রনি।
ক্লাস প্লেটটা ভীষন ঝামেলা করছে, বডিটাও ঠিক করাতে হবে, চলার সময় বাজে আওয়াজও হচ্ছে। রোজ রোজ প্যাসেঞ্জারের গালি শুনতে ভালো লাগে না।
একটা মেয়েকে ওদের বাড়ির উঠানে দেখা যাচ্ছে। রাণু হয়তো। আর রাণু, কত রাণু দীপ্তের জীবনে এসেছে গেছে।
জীবনে নাকি মানসিক শান্তিটাই সব। শ্যালী কে এক কথায় ভুলে গেল! আঁতেলমার্কা কথা, বলেছিল ওকে বিয়ে করলে বাহ্যিক সব সুখ পেলেও মানসিক শান্তি পাওয়া সম্ভব নয়। মেয়েটাও ওসব মন-টনের তোয়াক্কা না করে বলে দিয়েছে তোমার চেয়ে অনেক হ্যান্ডসাম ছেলে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। ছেলেটা বেকার ৬ বছর মেয়েটার জন্য নষ্ট করলো। বেচারা।
শ্যালীকে খুব ভালবাসতো ছেলেটা। অনেক ঝামেলাও হয়েছে। আর ওই ঝামেলার মাঝে পরে মায়ের কাছে অনেক বকা খেয়েছে রনি। দীপ্তের সাথে দুই বছরের মতো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। মা একেবারেই প্রেম ভালবাসা পছন্দ করতেন না।
ভয়ে প্রেম নামের শব্দটি রনির অভিধানেও স্থান পায়নি। মাথাও ঘামায়নি এসব নিয়ে। হিসাবে দীপ্তেরই অকালে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। কোথা থেকে কিযে হয়ে গেল। ফুসফুসের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিশ্বাস পুরোপুরি বেরিয়ে না আসতেই চিল চিৎকারে রনির স্মৃতিরা ছিটকে পালায়।
" ব্যাপারটা কি তোমার?, স্নান করার নাম নেই। সারাদিন একটু বসতে পারি না আর বাবু আয়েশ করে গায়ে তেল মাখছেন। " বাকি নিশ্বাসটুকু এক ঝটকায় বের করে কুয়োর দিকে পা বাড়ায় রনি। রান্নার গ্যাসটা এনে দিয়ে গাড়ি সাজাতে যেতে হবে। বিয়ে বাড়ির ভাড়া আছে।
(ক্রমশ......)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।