কাব্য-দিনের কথাঃ স্পর্শের আগুনে! অন্যদিগন্ত: www.fazleelahi.com
'প্রিয়' শব্দটি আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্ব বহন করে। বয়সের বিভিন্ন ট্রাফিকে এসে আমরা পেয়ে থাকি নানা রকম 'প্রিয়' সিগনাল, তাতে কখনো বা পরিবর্তিত হয় ভালবাসার কক্ষপথ, কখনো বন্টন হয়, কখনো বা হয় বিচ্ছেদ। বিবিধ রকমফের নিয়ে নয়; বরং যে শেকড় থেকে আমাদের উৎপত্তি, আমাদের শুরু, তাদের সম্পর্কে বলবো, তাদের অনুভবকে অনুভুতিতে নিয়ে আসার চেষ্টায় চেষ্টিত হবো তাদের অবস্থানে পৌঁছানোর পূর্বেই।
মানব জীবনের প্রারম্ভটা এমন থাকে যে, দু'এক বছরকাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া জীবনের ঘটনাগুলো প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন কারো পক্ষেও সম্ভব নয় মনে রাখা। অসহায়ত্বের চরম পর্যায় থেকে শুরু হয় আমাদের পার্থিব এ জীবনের।
যাদের থেকে আমাদের আগমন, তারাই থাকেন তখন আমাদের কেবলমাত্র অবলম্বন। আমাদের প্রতিটি নড়াচড়া তারা রপ্ত করে নেন, হাত-পা ছুঁড়লে বুঝে নেন কি হয়েছে আমার, কান্নায় এগিয়ে দেন বুকের নির্যাস, বর্জ্য নিষ্কাষনে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেননি কখনো; বরং তাতে দেরি বা অনিয়ম করলে দুঃশ্চিন্তার অন্ত থাকে না, প্রতিটি সন্তানকে পেয়ে থাকেন বহু কষ্টের বিনিময়ে, তারপর লালনে পালনে সে এক স্বপ্নীল জগত যেন বাস্তবে এসে ধরা দেয় তাদের নিকট। -এই তো আমাদের পিতা-মাতা।
জগতের নানা রঙ তাদের যেদিকেই টেনে নিয়ে যাক না কেন, রংধনুর সবটুকু রঙকে যেন তারা আলাদা করে রাখেন সন্তানের বড় হবার স্বপ্নের কৌটায়। আমার মাকে ছোট বেলায় অনেক আবেশ, অনেক আদর, অনেক স্নেহমাখা চোখে আমার প্রতি চেয়ে বলতে শুনেছি বহুবার: "ক'বে বড় হ'বি..."।
শিক্ষা-দীক্ষায়, আদবে-আচরণে, সৌন্দর্যে-গঠনে নিরন্তর সাধনা যাদের, তারাই হলেন বাবা-মা। প্রথম যাদের মুখ থেকে ভাষা শিখি, যাদের সদাচারণ দেখে সচ্চরিত্রতার দীক্ষা পাই, যাদের নিরন্তর সাধনার ফলে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠি আমরা পৃথিবীর আলো-বাতাসে; কখনো কি তাদের মনের ভাবনাগুলো, আবেগ-অনুভুতিগুলো, আশা-আকাংখাগুলোকে উপলব্দি করার চেষ্টা করেছি আমরা?
অনেকে হয়ত করছি, আবার হয়ত নগণ্যরা ছাড় কেউই করছি না। কিন্তু সময়ের একটা সীমানা অতিক্রান্ত হবার পর আমরা সকলেই সে ভাবনায় ভাবিত হয়ে উঠি। কেননা, তখন আমরা পৌঁছে যাই আজকের পিতা-মাতার অবস্থানে। পার্থক্য হলো- তখন হয়ত আমরা অনেক অনেক অনেক আফসোস করে ফিরি, যদি বাবা-মাকে বুঝতে পারতাম, যদি তাদের ভালবাসা আর মমতাগুলোকে যথার্থ উপলব্দি করতে পারতাম....কিন্তু ফিরে আসার কোন সুযোগ থাকে না তখন, থাকে কেবলি আরো আরো সামনে চলে যাওয়ার সুযোগ, যেতে না চাইলেও জীবনের সাথে বেঁধে দেয়া স্রষ্টার অমোঘ প্রহরী আমাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সম্মুখে ঠেলে দেয়; যার নাম "বয়স"!
মনে পড়ে, যখন স্কুলে পড়ছিলাম, প্রতিটি বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পর মা খাবার দিয়ে পাখা ঘুরাতেন আর নিয়মিত বলা কথাগুলো বলে যেতেন: 'বাবা, স্কুলে যাও, কোন মেয়ের দিকে তাকাবা না, চুরি করবানা কোনদিন, সদা সত্য কথা বলবা, গুরুজনদেরকে সালাম দেবে.....ইত্যাদি ইত্যাদি'।
শুনতে শুনতে কথাগুলো মুখস্থ হয়ে যেত। একদা যে মা আমাকে মেয়েদের দিকে তাকাতে পর্যন্ত বারন করেছেন, তিনি সেদিন আমার নিকট জানতে চাইছেন: 'বাবা, তোমার কোন পছন্দ আছে কি?' শুধু জানতে চাওয়াই নয়; আমাকে এতটুকু অনুমতিও দিয়ে দিয়েছেন যে, 'চাইলে নিজে নিজেই বিয়ে করে নিতে পার'।
অথচ এ প্রজন্মের কিশোর, যুবক যারা তারা অপরিপক্কতার কারণে হোক কিংবা সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হোক, অন্য একজন মেয়ের জন্য কিংবা নিছক নিজের কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য কতভাবেই না পিতা-মাতাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে, সমাজের কাছে, স্বজনের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে দিচ্ছে। তাই বলে, প্রেমিকার ভালবাসাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে না কোনভাবেই। ভেবে দেখলে দেখা যায় যে, অসময়ে-অপ্রাপ্ত বয়সে কিংবা অবৈধ প্রেমের জন্য হত্যার মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যায়; আবার বৈধ বৈবাহিক প্রেমকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্বজনদের কত প্রচেষ্টা, কত তদবীর, তাছাড়া বৈধ প্রেমের সূত্রপাত ঘটানোর জন্যই তো বিয়ের আয়োজন, কত আনন্দ, কত উল্লাস হয়, কত খুশী হন বাবা-মায়েরা.....।
অতএব চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, মেয়েদের উত্যক্তকরণ থেকে নিয়ে ধর্ষণ-হত্যা ইত্যকার অপরাধে যারা লিপ্ত, তারা যদি একটি বারের জন্যও সেই শিশুকাল থেকে নিয়ে বাবা-মায়ের আদর-স্নেহ, কষ্টগুলোকে স্মরণ করে এবং উপলব্দি করার চেষ্টা করে, তবে কি পারবে কোন অসৎকর্মে লিপ্ত হতে? হয়ত পারবে তারা, যাদের উপলব্দি করার মত অনুভূতি নেই, যারা এ স্বল্প বয়সেই তা হারিয়ে ফেলে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
শুনো প্রজন্ম! ভালবাসা মানুষকে বদলে দিতে পারে, কিন্তু তোমরা যদি তা উপলব্দিই করতে অক্ষম হও; তবে নিঃসন্দেহে তোমরা পঙ্গুত্ব বরণ করেছ। অতএব, যে কোন দুষ্কর্মের পূর্বে পিতা-মাতার স্নেহ-মমতাকে স্মরণ কর অন্তত!
২৮.০২.২০০৮, মদীনা মুনাওয়ারা, সউদী আরব।
ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।