আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৭ বছর আগে যাকে ভালোবেসেছিলাম

আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার ব্লগখানি কৌতুহল ভরে

খুব শখ ছিল একটা টিয়া পাখির ,ছিল যত্ন করে কথা শেখানোর স্বপ্ন। একটা সময় মনের গহীনে স্বপ্নসমাধির শেষ সারিতে স্বপ্নটাকে সমাহিত করেছিলাম। আব্বুকে করা কেবল একটি আব্দার হয়তো আমার অনেক স্বপ্নে প্রাণ এনে দিতে পারতো , কিন্তু কথাগুলো কিছুতেই বলা হতো না । টিয়া পাখির স্বপ্নটা যখন মরে গেছে , ঠিক সে সময় নাসেরদের বাসায় জারে রাখা ছোট গোল্ড ফিশটাকে দেখলাম । সমস্ত বাসা আলোকিত করে রাখা গোল্ড ফিশটিকে ভীষণ ভালোবেসে ফেললাম।

শয়নে স্বপনে তখন আমার নিজের একটা গোল্ড ফিশের কথা ভাবনা, কিন্তু নীরব থাকার অপরাধে স্বপ্ন আমার অকাল প্রয়াণের পথযাত্রী হলো । দিনমান মন খারাপ করে বসে থাকি , ঠিক এমন সময় দেখা পেলাম তার । যাকে পেলাম , তার রুপ নেই , নেই কোন লাবণ্য নেই গোল্ড ফিশের মত কোন আভিজাত্য । হয়তো ভরদুপুরে নদীতে সাঁতার কেটে বেড়ানোর সময় কোন জেলের জালে আটকে গেছে । আমাদের বাসায় এসেছে আব্বুর বাজারের ব্যাগে বড় মাছটার সাথে সঙ্গী হয়ে ।

ব্যাগের ফাঁক দিয়ে ছোট কালো আঁষটে মাছটাকে নড়তে দেখতেই সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাছটা তুলে নিলাম। বাগানে ফেলে দেয়া সিরাপের ছোট বোতলটা খুঁজে আনলাম , ভালো করে পরিস্কার করে পানি ভরলাম । ছোট বোতল সাঁতার কেটে বেড়াবার কোন সুযোগ ছিল না ,জায়গার অভাবে মাছটা বেঁকে থাকতো । সারাদিন বোতলটা থাকতো খাটের নিচে । মাঝে মাঝে মনে হত মাছটা বড় একা , কথা বলার কেউ নেই ।

সূর্যের মুখ দেখাতে আর নিঃসঙ্গতা কাটাতে বোতলটা বাগানে এনে মুক্ত বাতাসে রাখতাম । দুপুর আর রাতের খাবার থেকে খানিকটা ভাত নিয়ে বোতলে দিতাম । মাঝে মাঝে ঘাস কেটে বোতলে দিতাম , ঘাস দেখে মাছ হয়তো মনে করবে নদীতেই আছি । প্রতিদিন পানি বদলে গোছল করাতাম। নাম দিলাম তার "ফিশি" ।

খুব অবাক লাগে যখন ভাবি বাঁকানো শরীর নিয়ে ফিশি দিব্যি বেঁচে ছিল । একদিন ঠিক হলো , এক সপ্তাহের জন্য আমরা বাইরে বেড়াতে যাবো । কালো আঁশের ফিশির মায়া কাটিয়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছিল । মনে মনে ভেবেছিলাম পকেটে করে বোতলটা ঢুকিয়ে নিয়ে যাবো । অনেক ছোট ছিলাম বলে হয়তো প্যান্টের পকেটটাও অনেক ছোট ছিল ।

ছোট সে পকেটে আমার ফিশির বোতলের জায়গা হলো না । যাবার সময় ঘনিয়ে আসলো , তাড়াহুড়া করে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে নতুন পানি ভরে দিলাম । খাবারের কোন কষ্ট যেন না হয় , সেজন্য ভাতের হাড়ি থেকে অনেকটা ভাত বোতলে ভরে দিলাম । ৭ টা দিন অনেক টেনশনে কাটলো । ৭ দিন পর যখন ফিরে এসেই দৌড়ে খাটের নিচ থেকে বোতলটা বের করলাম ।

বুকটা কেঁপে উঠলো । ফিশিকে বোতল থেকে বের করলাম । ভাত পচে পানি ঘন হয়ে গেছে , শরীর বাঁকিয়ে রাখা আমার প্রিয় মাছটার কানকোর ওঠানামা গেছে ..............


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।